জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে বিএনপির দুটি পক্ষ পৃথকভাবে শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ও বিকেলে এসব কর্মসূচি পালনের সময় দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদ্‌গার করে। এতে নেতা-কর্মী ও সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশা তৈরি হয়।

দুপুর ১২টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার বাসস্টেশন এলাকায় প্রথম শোভাযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন করে উপজেলা ও পৌর বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। তিনি শোভাযাত্রায় নেতৃত্বও দেন।

পরে বিকেল চারটার দিকে একই স্থানে পৃথক সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করে বিএনপির অপর একটি অংশ। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.

আবদুল্লাহ।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে শাহজাহান চৌধুরী ও আবদুল্লাহর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এতে উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। যদিও বর্তমানে উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারীরা। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন থেকে শাহজাহান চৌধুরী ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি হুইপও ছিলেন।

দুপুরে শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারীদের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান সিদ্দিকী। বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্র ও জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা হারালেও টেকনাফে দুর্নীতি, মাদক ও চাঁদাবাজি থেমে নেই।’ তিনি অভিযোগ করেন, ওসি প্রদীপের আমলে টেকনাফে ‘ক্রসফায়ারের রাজত্ব’ কায়েম হয়েছিল।

শাহজাহান চৌধুরী দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে গড়িমসি হলে অসহযোগ আন্দোলনসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘৪০ বছর ধরে আমি আপনাদের সেবা করে আসছি। আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে তারেক রহমানকে শক্তিশালী করতে হবে।’

টেকনাফে জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহর অনুসারীদের মিছিল। আজ বিকেলে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হজ হ ন চ ধ র ব এনপ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন ৩৮৫ শিক্ষার্থী 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ফাহমিদা আকতার। থাকেন ক্যাম্পাসের শামসুন নাহার হলে। তাঁর হলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ক্যানটিনে নিম্নমানের খাবার। এসব নিয়েই তিনি কাজ করতে চান। তাই হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। 

ফাহমিদা আকতার স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। প্রথম আলোকে এই শিক্ষার্থী বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। হলে যেসব সংকট রয়েছে, সেসব নিয়ে বিস্তারিত কাজ করবেন। এ জন্যই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

ফাহমিদাসহ ৩৮৫ শিক্ষার্থী সপ্তম চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। ইতিমধ্যে এই শিক্ষার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। তবে এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। তাঁদের অনেকেই ভোটারদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। কুশল বিনিময় করছেন। 

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরেছে কেন্দ্রীয় সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। শিক্ষার্থীরা একে বলছেন ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’। এই নির্বাচনে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঢল, যা প্রতিযোগিতার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। 

নির্বাচনে লড়তে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনিয়া ফাইরুজ হাসান। তিনি বিজয়-২৪ হল সংসদের যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তাসনিয়া প্রথম আলোকে বলেন, হলে আবাসনের চরম সংকট রয়েছে। একটি খাটে দুজন করে থাকতে হচ্ছে। নির্বাচিত হতে পারলে তিনি এ বিষয়ে কাজ করবেন। 

স্বতন্ত্রদের আগ্রহ 

এবারের নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯৩১ জন। এর মধ্যে চাকসুতে জমা পড়েছে ৪২৯টি। চাকসুতে ২৬টি পদে নির্বাচন হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে ১২টি প্যানেল। এসব প্যানেলের ২৫৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাকি ১৭০ জন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৪ জন, জিএস পদে ১১ জন ও এজিএস পদে ১১ জনের স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার কথা রয়েছে। 

অন্যদিকে ১৪টি হলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৮১ জন। এর মধ্যে ছাত্র হলে ৩৫৬ জন ও ছাত্রী হলে ১২৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। প্রতিটি হলে ভিপি ও জিএসসহ ১৪টি করে পদ রয়েছে। এখন পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ছাত্রদের ৭টি হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। 

হিসাব অনুযায়ী, ৭ হলে ছাত্রশিবিরের ৯৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। আর ৯ হলের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন ছাত্রদলের অন্তত ১৪০ জন। সব মিলিয়ে দুই সংগঠনের অন্তত ২৩৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাকি ১১৮ জন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন। 

ছাত্রীদের দুই হলে দুটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্যানেল থেকে ২৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সে হিসাবে ছাত্রী হলে স্বতন্ত্রভাবে লড়বেন ৯৭ জন। অবশ্য চূড়ান্ত সংখ্যা জানা যাবে আগামী বৃহস্পতিবার। 

দাবি আদায়ের ‘প্ল্যাটফর্ম’

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যা তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে সহযোগিতা করে। 

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আলীমুল শামীম চাকসুর সহদপ্তর সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চান। স্বতন্ত্রভাবেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনী ইশতেহারও প্রকাশ করেছেন গতকাল। শামীম প্রথম আলোকে বলেন, চাকসুর গঠনতন্ত্রে সহদপ্তর সম্পাদকের যে কাজ রয়েছে, তা তিনি করবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য ১১ দফা প্রকাশ করেছেন। ইশতেহার পছন্দ হলে তাঁকে ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা। 

জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা জোট বেঁধে ও একা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ