Prothomalo:
2025-08-08@04:51:57 GMT

এমন করুণ দশায় থাকবে উপজেলাটি?

Published: 8th, August 2025 GMT

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ মানুষ এক মাস ধরে অস্বাভাবিক জলাবদ্ধতার শিকার। বাড়ির চারপাশে হাঁটুপানি থেকে কোমরপানি, গ্রামীণ সড়কগুলো তলিয়ে আছে, চলাচলের একমাত্র উপায় এখন ডিঙিনৌকা। এটি শুধু বর্ষার স্বাভাবিক চিত্র নয়, বরং মানবসৃষ্ট এক ভয়াবহ দুর্ভোগের চরম বাস্তবতা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ ও পানিনিষ্কাশনের খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও চৌমুহনী পৌরসভার বেশির ভাগ মানুষ এখন ভুক্তভোগী। এই জলাবদ্ধতা শুধু যাতায়াতের দুর্ভোগই সৃষ্টি করছে না, এর প্রভাব পড়ছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না, ফলে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় পানি জমে থাকায় শৌচাগার ব্যবহার করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এটি শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে ও তাদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা দিচ্ছে।

আর্থিক সংকটে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। রিকশাচালকের মতো দিনমজুরেরা সারা দিন রিকশা চালিয়েও ১০০ টাকা আয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা নেই। সামগ্রিকভাবে এই জলাবদ্ধতা স্থানীয় অর্থনীতির ওপর এক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

আরিফুর রহমান স্বীকার করেছেন যে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের খালগুলো দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের নিজেদের উদ্যোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও সরকারি পর্যায়ে চৌমুহনীর বড় খাল পরিষ্কার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে, কিন্তু মূল সমস্যাটি রয়ে গেছে তৃণমূল পর্যায়ে।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। প্রথমত, প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। শুধু শহরের বড় খাল নয়, বরং গ্রাম ও ইউনিয়নের ছোট খালগুলোও দখলমুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোরতা অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বসতি স্থাপন বন্ধ করতে হবে। কোনো ধরনের অনুমোদনের বাইরে যেন কেউ বাড়িঘর নির্মাণ করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখা জরুরি। তৃতীয়ত, জনগণকে সচেতন হতে হবে। নিজেদের দুর্ভোগের কারণ হিসেবে অন্যের দোষারোপ না করে সম্মিলিতভাবে খাল দখলমুক্ত করার আন্দোলনে শামিল হতে হবে।

বেগমগঞ্জের এই জলাবদ্ধতা একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়, প্রকৃতির ওপর মানুষের লাগাতার নিপীড়ন বন্ধ না হলে এমন দুর্ভোগ আরও বাড়বে। শুধু সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, বরং জনগণের সচেতনতা, স্থানীয় নেতৃত্বের সদিচ্ছা ও প্রশাসনের কঠোরতাই পারে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

এক পরিবারে একই দিনে সাত কবরের শোক

এক পরিবারে একই দিনে খোঁড়া হয়েছে সাত কবর। তাদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে। জানাজা শেষে ওই কবরে শুইয়ে দেওয়া হবে তাদের। এই শোকে বিমর্ষ-বিমূঢ় পরিবারটি; শোকে স্তব্ধ এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার গভীর রাতে ওমান থেকে ফেরা লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম চওপল্লী গ্রামের বাহার উদ্দিনের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমেছে। তাকে আনতে ঢাকায় গিয়ে ফেরার পথে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাড়ির রাস্তার মাথায় বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে দুর্ঘটনায় নিহত হন তার পরিবারের সাতজন।

বাহার উদ্দিন বলছেন, তাদের বহনকারী হায়েস গাড়ির চালকের ঘুমের কারণে এই দুর্ঘটনায় পড়েন তারা। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খালে গিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যান।

আরো পড়ুন:

‘চালকের ঘুমই’ চিরঘুমে পাঠাল সাতজনকে

আশুলিয়ায় উল্টো পথে চলা রিকশাকে চাপা দিল লরি, নিহত ৩

নিহত সাতজনের পরিচয় জানিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন: বাহার উদ্দিনের মা মোরশিদা (৫৫), স্ত্রী কবিতা (২৪), মেয়ে মিম (২), নানি ফয়জুন্নেছা (৮০), ভাবি লাবনী (৩৩), ভাতিজি রেশমী (৮) ও লামিয়া (৯)।

নিহতদের মধ্যে বাহারের নানি ফয়জুন্নেছার দাফনের প্রস্তুতি চলছে তার গ্রামের বাড়িতে। আর ছয়জনের কবর খোঁড়া হয়েছে পশ্চিম চওপল্লী গ্রামে।

হায়েস গাড়ি খালে পড়ে যাওয়ার পর এলাকাবাসীর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহগুলো উদ্ধার করেন। 

উদ্ধারকারীরা বলেছেন, খালে পড়ে গাড়িটি পানিতে ডুবে যায়।

বাহার উদ্দিন, তার শ্বশুর ও আরো দুজন বেঁচে আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর মধ্যে বাহার বাড়ি ফিরেছেন। অন্য তিনজনের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।

বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বাহার।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয় তার। সেখানে আগে থেকে ঠিক করে রাখা হায়েস গাড়িটি প্রস্তুত ছিল। তবে চালককে তিনি বলেছিলেন, এত রাতে না গিয়ে ভোরে রওনা দিলে ভালো হতো।

তবে চালক বাহারের কথা শোনেননি। আস্তে-ধীরে চালানোর কথা বলে রওনা হন চালক। পথের মধ্যে চালককে ঘুমে ঢলে পড়তে দেখে তাকে বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দিলেও চালক তা উপেক্ষা করে গাড়ি চালাতে থাকেন। এই ঘুমের কারণেই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।

বাহার বলেন, “তিন বছর পর দেশে ফিরলাম। পরিবারের সবাই আমাকে আনতে গিয়েছিল। এখন তারা কেউ নেই। আমি একা হয়ে গেলাম।”

ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানান চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন। 

ঘটনাস্থল থেকে বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. লিটন দেওয়ান বলেন, “রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি খাল থেকে তোলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে আর কোনো মরদেহ নেই।”

বাহারের স্বজনদের মাতমে ভারী হয়ে উঠেছে পশ্চিম চওপল্লী গ্রাম। একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ঢাকা/লিটন/রাসেল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চালকের ‘ঘুমে’ নিহত ৭, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়নি
  • এক মাস ধরে পানির নিচে সড়ক-উঠান, ভোগান্তিতে মানুষ
  • এক পরিবারে একই দিনে সাত কবরের শোক
  • চালকের ঘুমই চির ঘুমে পাঠালো ৭ জনকে
  • বেগমগঞ্জে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে, নিহত ৭