নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ মানুষ এক মাস ধরে অস্বাভাবিক জলাবদ্ধতার শিকার। বাড়ির চারপাশে হাঁটুপানি থেকে কোমরপানি, গ্রামীণ সড়কগুলো তলিয়ে আছে, চলাচলের একমাত্র উপায় এখন ডিঙিনৌকা। এটি শুধু বর্ষার স্বাভাবিক চিত্র নয়, বরং মানবসৃষ্ট এক ভয়াবহ দুর্ভোগের চরম বাস্তবতা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ ও পানিনিষ্কাশনের খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও চৌমুহনী পৌরসভার বেশির ভাগ মানুষ এখন ভুক্তভোগী। এই জলাবদ্ধতা শুধু যাতায়াতের দুর্ভোগই সৃষ্টি করছে না, এর প্রভাব পড়ছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না, ফলে পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় পানি জমে থাকায় শৌচাগার ব্যবহার করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এটি শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে ও তাদের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা দিচ্ছে।
আর্থিক সংকটে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। রিকশাচালকের মতো দিনমজুরেরা সারা দিন রিকশা চালিয়েও ১০০ টাকা আয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা নেই। সামগ্রিকভাবে এই জলাবদ্ধতা স্থানীয় অর্থনীতির ওপর এক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। প্রথমত, প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। শুধু শহরের বড় খাল নয়, বরং গ্রাম ও ইউনিয়নের ছোট খালগুলোও দখলমুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোরতা অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বসতি স্থাপন বন্ধ করতে হবে। কোনো ধরনের অনুমোদনের বাইরে যেন কেউ বাড়িঘর নির্মাণ করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখা জরুরি। তৃতীয়ত, জনগণকে সচেতন হতে হবে। নিজেদের দুর্ভোগের কারণ হিসেবে অন্যের দোষারোপ না করে সম্মিলিতভাবে খাল দখলমুক্ত করার আন্দোলনে শামিল হতে হবে।
বেগমগঞ্জের এই জলাবদ্ধতা একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়, প্রকৃতির ওপর মানুষের লাগাতার নিপীড়ন বন্ধ না হলে এমন দুর্ভোগ আরও বাড়বে। শুধু সরকারি উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, বরং জনগণের সচেতনতা, স্থানীয় নেতৃত্বের সদিচ্ছা ও প্রশাসনের কঠোরতাই পারে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে হিন্দুদের জমি দখলমুক্ত করতে মানববন্ধন
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের রেখে যাওয়া প্রায় আড়াইশত কোটি টাকা মূল্যের ৩ একর ৮৬ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে কাড়াকাড়ি।
ফলে এ জমি দখল মুক্ত ও বিএস জরিপে যেন কোন ব্যক্তির নামে রেকর্ডভূক্ত না করা হয় সে দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫ টায় মধ্য সানারপাড়া এলাকায় এ মানববন্ধন হয়।
মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, খোর্দ্দঘোষপাড়া মৌজার ৫ টি খতিয়ানে ৩ একর ৮৬ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন হিন্দুসম্প্রদায়। ১৯৪৭ সালে তারা চলে যান ভারতে। ফতুল্লার হরিহরপাড়ার মৃত মথুরা মোহন সাহার ২৪০ শতাংশ ও শ্রীবা চন্দ্র রায়ের ৭৪ শতাংশ জমির ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে আশির দশক থেকে দখল ও বেচা কিনা শুরু হয়।
অচেনা হিন্দু নারী-পুরুষদের দাতা বানিয়ে করা হয় ভূয়া দলিল। যার সংখ্যা ৫০ টির উপরে। ভুয়া দলিলে মালিক সেজে জমির চার পাশে গড়ে উঠে বসতি। তবে নবলক্ষী দেব্যার ৭২ শতাংশ খাস হিসেবে আরএস রেকর্ড হয়। ফলে বাকি ৩১৪ শতাংশ জমি ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করে ২০০৫ সালে দখলের চেষ্টা চালায় বিডিডিএল নামক একটি প্রতিষ্ঠান। তবে সুবিধা করতে পারেনি।
বর্তমান দরে প্রায় আড়াইশত কোটি টাকা মূল্যের এ জমিতে ২০২২ সালে নজর পড়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও নাসিকের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের। তিনি তার ঘনিষ্ট সহযোগী সাজু ডেভেলপার্স লিমিটেডের মালিক শাহজাহান সাজুকে নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় বসতিদের বাড়ি-ঘর ভেঙে উচ্ছেদ করেন।
পরে বালু ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় তারা সফল হতে পারেনি। মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলী বলেন, এ জমির উত্তরপাশে আমার বাড়ি ছিল।
৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলাম। বাদলের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে উচ্ছেদ করে দেয়। একই অভিযোগ করেন আরেক ভুক্তভোগী মো. ইমরান হোসেনসহ অনেকই। খাস ৭২ শতাংশের অধিকাংশই দখল হয়ে গেছে বলে দাবি করেন তারা।
মানববন্ধনে নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, সাজু ডেভেলপার্স ও সাবেক কাউন্সিলর বাদলের ক্যাডার বাহিনী অমানবিক তাণ্ডব চালিয়ে এ জমি দখল করে। পরে ভূয়া কাগজ বানিয়ে মালিক সেজে প্লট বানিয়ে বিভিন্ন লোকজনের কাছে বিক্রিও করেছে।
একই প্লট একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করার তথ্যপ্রমান রয়েছে। বিএনপির এ নেতা বলেন, অত্র এলাকায় কোন কবরস্থান নেই। এ জমি উদ্ধার করে সরকারি প্রয়োজনে ব্যবহার অথবা জনস্বার্থে কিছু অংশে কবরস্থান করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
সানারপাড়ের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংগঠন বর্ণালী সংসদের যুগ্ন সম্পাদক সুমন মুন্না বলেন, দেশের পটপরিবর্তনের পর এ জমি দখল করতে স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী কিছু নেতা উঠেপড়ে লেগেছে।
সাজু ডেভেলপার্সের লোকজনের সঙ্গে আাঁতাত করে সমঝোতার মাধ্যমে ভাগবন্টন করে চলমান বিএস জরিপে নিজেদের নামে রেকর্ড করার চেষ্টা শুরু করেছে। তাই সরকার ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি কোন ব্যক্তির নামে যাতে এ জমি রেকর্ড না হয়।
আরো পড়ুন
বন্দরে ইয়াবা ও গাঁজাসহ মাদক কারবারি দম্পতি গ্রেপ্তার
বন্দরে গ্যারেজে সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর, লুট : আহত ৪
বন্দরে সন্ত্রাসী হামলায় মা-ছেলে আহত
ফতুল্লার সেই বিএনপিকর্মী ইব্রাহিম মারা গেছেন
শব্দ দূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান, জরিমানা
নির্বাচনী সিলসহ গাজীপুরের ৫ বস্তা এনআইডি কার্ড ফতুল্লায় উদ্ধার
ছাত্র হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী এখন যুবদল নেতা!
সোনারগাঁয়ে বজ্রপাতে প্রাণ গেল কৃষকের
২৩১/১ বঙ্গবন্ধু সড়ক (৬ষ্ঠ তলা, লিফটের ৫)
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবন, নারায়ণগঞ্জ
নির্বাহী সম্পাদক: মোশতাক আহমেদ (শাওন)
ফোন:+৮৮০১৯৩৩-৩৭৭৭২৪
ইমেইল : [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ বা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
© ২০২৫ | সকল স্বত্ব নারায়ণগঞ্জ টাইমস কর্তৃক সংরক্ষিত | উন্নয়নে ইমিথমেকারস.কম