‘আমি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব’
Published: 8th, August 2025 GMT
‘আমি ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব।...আকবর সি-বিচে কীভাবে পড়ে ছিল তুই দেখছস? তুইও পড়ে থাকবি।’ গত ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধের দোকানিকে এভাবেই মুঠোফোনে হুমকি দেন ১৩ মামলার আসামি ‘সন্ত্রাসী’ মোহাম্মদ রায়হান। এরপর থেকে আতঙ্কে দিন কাটছে ওই দোকানির। রায়হানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রায়হান কারাগারে থাকা ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে কারাগারে থাকা ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক আরেক ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের অনুসারী। এই ‘সন্ত্রাসী’ দলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গত শুক্রবারও চাঁদার জন্য চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার এক ব্যবসায়ীকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে। মো.
বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী ২০০০ সালে চট্টগ্রাম নগরে বহুল আলোচিত আট ছাত্রলীগ নেতা খুনের মামলার আসামি ছিলেন। মামলার রায়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান তিনি। ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। তিনি বিদেশে পালিয়ে থাকলেও তাঁর হয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে ছোট সাজ্জাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে। বর্তমানে কারাগারে থাকা ছোট সাজ্জাদের বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম রায়হান।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রায়হানের নামে নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। গত ১৩ জুলাই রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ইশান ভট্টের হাটে বোরকা পরে এসে যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও রায়হানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রায়হানের নামে নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। গত ১৩ জুলাই রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ইশান ভট্টের হাটে বোরকা পরে এসে যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও রায়হানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি কালুরঘাটের ওই ওষুধের দোকানিকে রায়হান হুমকি দেন এর আগের দিনের একটি ঘটনার সূত্র ধরে। ওই দিন রাতে দোকানটির সামনে কিছু ব্যক্তির মধ্যে মারামারি হয়। মারামারির সূত্রপাত হয় ওই দোকানির সঙ্গে এক ক্রেতার ঝগড়ার জেরে। রায়হান ফোনে অভিযোগ তোলেন, ওই দোকানি লোকজন নিয়ে এসে তাঁর অনুসারীদের মারধর করিয়েছেন। তবে দোকানি জবাবে বলেন, তাঁর সঙ্গে ঝগড়ার সময় বাইরে থেকে কৌতূহলী লোকজন এগিয়ে আসে। এ সময় এসব লোকজন রায়হান অনুসারীদের মারধর করেছে। মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাউকে তিনি চেনেন না।
কালুরঘাটে ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া ব্যক্তি সন্ত্রাসী রায়হান। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোহরায় ব্যবসায়ীকে গুলি করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরাও সাজ্জাদ ও রায়হানের লোক।আফতাব উদ্দিন, ওসি, চান্দগাঁও থানারায়হানের সঙ্গে ওই দোকানির মুঠোফোনে কথোপকথন হয়েছে ৫ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড। এর শুরুতেই অপর প্রান্ত থেকে রায়হান ওই ওষুধের দোকানিকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এরপর মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তাঁর সামনে হাজির করতে বলেন। নইলে ওই দোকানিকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। হুমকির সময় বারবার নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে রায়হান বলেন, তিনি ‘সন্ত্রাসী’ ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার আসামি। একপর্যায়ে চট্টগ্রামের ‘গুন্ডাদের’ ওই দোকানি চেনেন কি না, জানতে চান রায়হান এবং তাঁর পরিচয় না জানলে ‘সাজ্জাদ ভাই’কে জিজ্ঞেস করার কথা বলেন।
যে দোকানিকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাঁর নাম মো. রিদুয়ান। হুমকির ঘটনায় তিনি থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি বা মামলা করেননি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জিডি করিনি। তবে পুলিশ বিষয়টি জানে।’
এ বিষয়ে জানতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালুরঘাটে ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া ব্যক্তি সন্ত্রাসী রায়হান। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোহরায় ব্যবসায়ীকে গুলি করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরাও সাজ্জাদ ও রায়হানের লোক।’
পুলিশ জানায়, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি আবারও কারাগারে গেলে তাঁর অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছেন এই রায়হান।
ব্যবসায়ীকে হুমকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ রায়হানকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
গত ২৩ মে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে ‘সন্ত্রাসী’ আকবর আলী ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুনের মামলার আসামি করা হয় রায়হানকে। আকবর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বলেও যান তাঁকে গুলি করেছেন রায়হান। এ ছাড়া ৩০ মার্চ বাকলিয়ায় জোড়া খুন, ২২ এপ্রিল রাউজানের গাজীপাড়ায় যুবদলকর্মী ইব্রাহিমকে গুলি করে হত্যা, গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের অক্সিজেন-হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশে দুই বন্ধু মো. মাসুদ ও মো. আনিছকে হত্যা, একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁওয়ে ইট-বালুর ব্যবসায়ী মো. তাহসীনকে হত্যায় রায়হানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় ক গত বছর র ওই দ ক ন ম হ ম মদ আগস ট নগর র ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে মাদ্রাসায় দফায় দফায় শিক্ষার্থীকে নির্যাতন
রাজশাহীতে একটি মাদ্রাসায় দফায় দফায় এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার একটি কক্ষে জুহায়ের তাজিম (১৬) নামে ওই কিশোর শিক্ষার্থীকে পর পর দুই দিন কয়েক দফায় বেধড়ক পেটানো হয়। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
জুহায়ের তাজিম রাজশাহী মহানগরের কয়েরদাঁড়া খ্রিস্টানপাড়া মোড় এলাকার মাইনজ ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের হিফজ মাদ্রাসা শাখার শিক্ষার্থী। মাদ্রাসার স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমানের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিত শিক্ষার্থী তাজিম জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌর সদরের মুগনি শাহের ছেলে।
আরো পড়ুন:
নবীনদের বরণ করে নিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপসহ অক্সফোর্ডে পিএইচডির সুযোগ জাবি ছাত্রীর
এ ঘটনায় তাজিমের মা জাকিয়া সুলতানা রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মাদ্রাসার পরিচালক আইরিস পারভীন এবং স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে এজাহার দায়ের করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘গত ১৩ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমান তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার ছেলেকে নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন করেছেন। তিনি আমার ছেলের দুই হাত এবং দুই পায়ের উরু ও নিতম্বে বেত, পর্দার পাইপ ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এর ফলে আমার ছেলে মারাত্মকভাবে শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
‘‘এই ঘটনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আইরিশ পারভীনকে জানানো হয়। তবে তিনি পদক্ষেপ নেননি। বরং তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমান শুধু আমার ছেলেকেই নয়, মাদ্রাসার আরো অনেক শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করে চলেছেন।’’ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ইশতিয়াক, ইসমাইল এবং আবু সাঈদসহ অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্যাতিত শিক্ষার্থী তাজিমকে নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘‘স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমান আমার বিরুদ্ধে একটি নোংরা অভিযোগ আনেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে শ্রেণিকক্ষ থেকে তিনি আমাকে ডেকে নেন। এরপর একটি ছোট নির্জন কক্ষে নিয়ে যান। বেত, পর্দার পাইপ এবং লাঠি দিয়ে আমাকে বেধড়ক পেটান। পরের দিনও তিনি আমাকে একইভাবে মারধর করেছেন। কক্ষটি মাদ্রাসার টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত। এখানেই অন্য শিক্ষার্থীদেরও প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মসানসিকভাবে নির্যাতন করেন স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর।’’
তাজিমের মা জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘‘১৪ সেপ্টেম্বর আমরা বার বার ফোন দিলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ফোন ধরেনি। পরের দিন সন্ধ্যায় আমার ছেলে মাদ্রাসা থেকে গোপনে চলে আসে। এ সময় তাকে আসতে বাধা দেন পরিচালক আইরিস পারভীন এবং স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ। পরে একরকম জোর করে আমার ছেলে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে আসে। ছেলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা। খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কম কথা বলছে। তাকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি। তার ওপর যারা নির্যাতন চালিয়েছেন, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় জোর দাবি জানাচ্ছি।’’
নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমানকে ফোন দেওয়া হয়। না ধরলে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা এবং থানার এজাহার দায়েরের বিষয়টি জানিয়ে মেসেজ দিলে তিনি সাড়া দেন। তিনি লেখেন, ‘‘অভিযোগ কবে, কে করেছে, একটু বিস্তারিত বলবেন প্লিজ।’’ এরপর তিনি আর কোনো উত্তর দেননি। ফোন দেওয়া হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে অভিযোগ সম্পর্কে তার পরিপূর্ণ বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কিশোর তাজিমকে নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আইরিস পারভীন বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আমার বাবা-মা অসুস্থ থাকার কারণে আমি বাসায় ছিলাম। এ সময় স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ শিক্ষার্থী তাজিমকে মারধর করেছেন। এর আগেও তিনি শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছেন। তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি আমার কথা না মেনে আবারও নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ইমতিয়াজকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছি। আমি অনুততপ্ত এবং লজ্জিত। যেসব শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের পরিবারের কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছি।’’
নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/কেয়া/বকুল