‘আমি ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব।...আকবর সি-বিচে কীভাবে পড়ে ছিল তুই দেখছস? তুইও পড়ে থাকবি।’ গত ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধের দোকানিকে এভাবেই মুঠোফোনে হুমকি দেন ১৩ মামলার আসামি ‘সন্ত্রাসী’ মোহাম্মদ রায়হান। এরপর থেকে আতঙ্কে দিন কাটছে ওই দোকানির। রায়হানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রায়হান কারাগারে থাকা ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে কারাগারে থাকা ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক আরেক ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের অনুসারী। এই ‘সন্ত্রাসী’ দলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গত শুক্রবারও চাঁদার জন্য চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার এক ব্যবসায়ীকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে। মো.

ইউনুস নামের ওই ব্যবসায়ী নদী থেকে বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত খননযন্ত্রের ব্যবসা করেন। গুলিতে আহত হয়ে ওই ব্যবসায়ী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী ২০০০ সালে চট্টগ্রাম নগরে বহুল আলোচিত আট ছাত্রলীগ নেতা খুনের মামলার আসামি ছিলেন। মামলার রায়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান তিনি। ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলীর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। তিনি বিদেশে পালিয়ে থাকলেও তাঁর হয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে ছোট সাজ্জাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে। বর্তমানে কারাগারে থাকা ছোট সাজ্জাদের বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম রায়হান।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রায়হানের নামে নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। গত ১৩ জুলাই রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ইশান ভট্টের হাটে বোরকা পরে এসে যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও রায়হানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রায়হানের নামে নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। গত ১৩ জুলাই রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ইশান ভট্টের হাটে বোরকা পরে এসে যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও রায়হানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি কালুরঘাটের ওই ওষুধের দোকানিকে রায়হান হুমকি দেন এর আগের দিনের একটি ঘটনার সূত্র ধরে। ওই দিন রাতে দোকানটির সামনে কিছু ব্যক্তির মধ্যে মারামারি হয়। মারামারির সূত্রপাত হয় ওই দোকানির সঙ্গে এক ক্রেতার ঝগড়ার জেরে। রায়হান ফোনে অভিযোগ তোলেন, ওই দোকানি লোকজন নিয়ে এসে তাঁর অনুসারীদের মারধর করিয়েছেন। তবে দোকানি জবাবে বলেন, তাঁর সঙ্গে ঝগড়ার সময় বাইরে থেকে কৌতূহলী লোকজন এগিয়ে আসে। এ সময় এসব লোকজন রায়হান অনুসারীদের মারধর করেছে। মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাউকে তিনি চেনেন না।

কালুরঘাটে ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া ব্যক্তি সন্ত্রাসী রায়হান। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোহরায় ব্যবসায়ীকে গুলি করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরাও সাজ্জাদ ও রায়হানের লোক।আফতাব উদ্দিন, ওসি, চান্দগাঁও থানা

রায়হানের সঙ্গে ওই দোকানির মুঠোফোনে কথোপকথন হয়েছে ৫ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড। এর শুরুতেই অপর প্রান্ত থেকে রায়হান ওই ওষুধের দোকানিকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এরপর মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তাঁর সামনে হাজির করতে বলেন। নইলে ওই দোকানিকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। হুমকির সময় বারবার নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে রায়হান বলেন, তিনি ‘সন্ত্রাসী’ ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার আসামি। একপর্যায়ে চট্টগ্রামের ‘গুন্ডাদের’ ওই দোকানি চেনেন কি না, জানতে চান রায়হান এবং তাঁর পরিচয় না জানলে ‘সাজ্জাদ ভাই’কে জিজ্ঞেস করার কথা বলেন।

যে দোকানিকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাঁর নাম মো. রিদুয়ান। হুমকির ঘটনায় তিনি থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি বা মামলা করেননি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জিডি করিনি। তবে পুলিশ বিষয়টি জানে।’

এ বিষয়ে জানতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালুরঘাটে ব্যবসায়ীকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া ব্যক্তি সন্ত্রাসী রায়হান। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মোহরায় ব্যবসায়ীকে গুলি করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরাও সাজ্জাদ ও রায়হানের লোক।’

পুলিশ জানায়, হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি আবারও কারাগারে গেলে তাঁর অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছেন এই রায়হান।
ব্যবসায়ীকে হুমকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোহাম্মদ রায়হানকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

গত ২৩ মে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে ‘সন্ত্রাসী’ আকবর আলী ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুনের মামলার আসামি করা হয় রায়হানকে। আকবর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বলেও যান তাঁকে গুলি করেছেন রায়হান। এ ছাড়া ৩০ মার্চ বাকলিয়ায় জোড়া খুন, ২২ এপ্রিল রাউজানের গাজীপাড়ায় যুবদলকর্মী ইব্রাহিমকে গুলি করে হত্যা, গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের অক্সিজেন-হাটহাজারীর পশ্চিম কুয়াইশে দুই বন্ধু মো. মাসুদ ও মো. আনিছকে হত্যা, একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁওয়ে ইট-বালুর ব্যবসায়ী মো. তাহসীনকে হত্যায় রায়হানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় ক গত বছর র ওই দ ক ন ম হ ম মদ আগস ট নগর র ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

এনবিআরের আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি জানতে চেয়েছে সরকার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে ব্যবসায়ীদের কাছে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি জানতে চেয়েছে সরকার।

গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপর সব ব্যবসায়ী চেম্বার ও সমিতিকে তথ্য জানানোর জন্য আলাদা করে চিঠি দিয়েছে এফবিসিসিআই। এসব ব্যবসায়ী সংগঠনকে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এর আর্থিক পরিমাণ জানাতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—এই দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ বাতিলের জন্য গত মে-জুন মাসে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছেন। এর ফলে শিল্প, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্দর, আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদন, সেবা খাত লজিস্টিক ও সাপ্লাই চেইন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। বিশেষ করে আমদানিকারকদের শিল্পের কাঁচামাল ও উপকরণ এবং তৈরি পণ্য বন্দর থেকে খালাস করতে পারেননি। রপ্তানিকারকেরা সময়মতো রপ্তানি করতে পারেননি। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

এর আগে গত মাসে আন্দোলনে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সরকার একটি কমিটি গঠন করে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) যুগ্ম সচিব সৈয়দ রবিউল ইসলামকে আহ্বায়ক করে গঠিত ৯ সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটিতে অর্থ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, এনবিআর, আইআরডি, ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

এই কমিটির কার্যপরিধি হলো গত ২৮ ও ২৯ জুন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অফিস বন্ধ থাকায় রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ, দুই মাসব্যাপী শুল্ক, ভ্যাট ও কর বিভাগের কর্মচারীদের কর্মসূচি পালনের কারণে সব কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারের, কাস্টম হাউস, কাস্টমস বন্ড কমিশনারের এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তরসহ অন্য দপ্তর ও কর কার্যালয়ে রাজস্ব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং এই কর্মসূচি পালনের কারণে শুল্কায়ন কার্যক্রম এবং সব স্থলবন্দর ও নৌবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ক্ষয়ক্ষতিসহ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা।

গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—এই দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর পর থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারে দাবিতে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেন।

২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তাঁরা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তাঁরা। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হুমা কুরেশির ভাই খুন
  • ফ্রিজের বরফ দূর করার ৭টি সহজ উপায়
  • প্রথমে প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ, এরপর অনুসরণ করে ডাকাতি
  • গবির বাস মেরামতে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গড়িমসি
  • এনবিআরের আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি জানতে চেয়েছে সরকার
  • চালকের ‘ঘুমে’ নিহত ৭, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়নি
  • রাজশাহীতে নিরাপত্তারক্ষী ও শ্রমিকদের জিম্মি করে হিমাগারে ডাকাতি
  • রংপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন আকবর আর নেই
  • গণঅভ্যুত্থান দিবসের কর্মসূচিতে ফেনীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৫