স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে শুরু করে চব্বিশের অভ্যুত্থানে শ্রমিকেরা বড় মূল্য দিলেও তাঁদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রতিবারই দাবি আদায়ে তাঁদের মাঠে নামতে হয়। শ্রমিকদের অবদানের সঠিক মূল্যায়ন হয় না। রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও শ্রমিকদের তুলনায় মালিকদের উন্নয়নেই বেশি কাজ হয়।

আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। এতে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১ বছর: শ্রমিক আকাঙ্ক্ষা ও প্রাপ্তি’ নিয়ে আলোচনা হয়।

সভায় মূল বক্তব্য দেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপ্রধান ও শ্রম সংস্কার কমিশন সদস্য তাসলিমা আখতার। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ উৎখাতে শ্রমজীবীদের বড় মূল্য দিতে হয়েছে। অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর অংশীদার মালিকদের পালিয়ে যাওয়া, কারখানা বন্ধ রাখা, গ্রেপ্তারের মতো ঘটনার সঙ্গে অভ্যুত্থানের অর্জন নষ্ট করতে এ খাতে নানা তৎপরতাও ছিল। পাশাপাশি শ্রমিকেরাও নিজেদের দাবি আদায়ে মাঠে নামেন। সংঘর্ষ, গুলিতে নিহতের ঘটনাও ছিল।

তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমজীবী মানুষের আত্মত্যাগ সত্ত্বেও তাঁদের ভূমিকা নিয়ে সরকারি বা জনসমক্ষে যথাযথ স্বীকৃতি কম। নানা স্মৃতিফলক থাকলেও শ্রমিকদের স্মরণে কোনো ফলক নজরে পড়েনি। জুলাই ঘোষণা, ঐকমত্য কমিশন, জুলাই সনদের আলোচনায় শ্রমিক অধিকার–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে স্পষ্ট কোনো কিছু আসেনি।

এ সময় তাসলিমা আখতার কিছু দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো—শহীদদের তালিকা ও বিচারের অধিকার নিশ্চিত করা; মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; অন্যায্য চাকরিচ্যুতি ও কালোতালিকাভুক্তি বন্ধ করা; যৌন হয়রানি ও ক্ষমতার অপব্যবহার না করা; মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করা; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারে ও মামলার ক্ষেত্রে সতর্কতা, শ্রম আদালত–পরিদর্শক বৃদ্ধি ও বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা স্বচ্ছ করা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ জানান, কাজ করতে গিয়ে তিনি শ্রম খাতের নানা অজানা দিক সম্পর্কে জেনেছেন। তিনি বলেন, শ্রমিকদের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি রয়েছে। অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে যে আবেগ ও শক্তি ছিল, তাতে অনেক পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এ ছাড়া এই সরকারের কাছে খুব বেশি আশা করাও যায় না।

ছোট একটি বিষয় থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছিল উল্লেখ করে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, এর সঙ্গে মানুষের নানা আকাঙ্ক্ষা যুক্ত হয়েছে। কিন্তু মূল বিষয় ছিল বৈষম্য। তাই সমাজের বৈষম্যগুলোকে চিহ্নিত করে কাজ করতে হতো। নারী ও শ্রমিকদের ওপর আইন করে বৈষম্য করা হয়েছে। এসব জায়গা ধরে কাজ করা যেত। তিনি বলেন, সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে ইউনিয়ন, সামাজিক সংগঠন—সবকিছু বিভক্ত হয়ে যায়, দখল হয়ে যায়। ফ্যাসিবাদ বিলোপ করতে হলে এসব জায়গায় আগে পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো না বদলালে ফ্যাসিবাদ দূর হবে না।

শ্রমিকদের বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে ঘুরেফিরে দায় শ্রমিকদের ওপরেই চাপানো হয় বলে মন্তব্য করেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দীনা সিদ্দিকী। তিনি বলেন, রাষ্ট্র, সরকার কার পক্ষে এবং কার জন্য কাজ করছে, কার উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করছে, সেসব প্রশ্ন আনতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসান আশরাফ বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থা মুনাফা ও বাজারকেন্দ্রিক। বাংলাদেশের বাজার অনেক বেশি বৈশ্বিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। শুল্ক নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা যার উদাহরণ।

চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধেও কৃষিজীবী সমাজের অংশগ্রহণ ছিল বেশি। কিন্তু সব সময়ই শ্রমিকেরা এগিয়ে এলেও তাঁদের জীবনমানের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ব্যাপারটা এমন, যেন সবচেয়ে কম মজুরিতে কাজ করানো যায়। এ ব্যবস্থাটাই বৈষম্যমূলক।

আকলিমা আক্তার নামের একজন শ্রমিক বলেন, শ্রমিকদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন তিনি দেখছেন না। আগের মতোই ন্যায্য দাবি আদায় করতে গেলে ষড়যন্ত্র বলা হচ্ছে। পুলিশ লাঠিচার্জ করছে।

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহীম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন নাট্যকর্মী ঋতু সাত্তার, নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা দেব, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের যুববিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম ফকির, শ্রমিকনেতা নাজমা আক্তার প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ কর স হত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

টেকনাফে ইউপি সদস্য হত্যার ঘটনায় মামলা

কক্সবাজারের টেকনাফর উপজেলার সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মো. ইউনুস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে নিহতের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।

টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জায়েদ নূর মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলায় আট জনের নাম উল্লেখ এবং ৭-৮জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

গলা কেটে বিড়াল হত্যা, থানায় জিডি

স্ত্রী ও প্রেমিক মিলে হত্যা করে জহুরুলকে: পুলিশ

কোহিনুর আক্তারের অভিযোগ, তার স্বামী স্বামী ইউনুস সাবেক ইউপি সদস্য এবং টেকনাফ উপজেলা আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদের সভাপতি। গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাতে মো. আলম নামে এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে আটকে রাখা হয় ইউনুসকে। এরপর ৭০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ফেরত দেওয়ার কথা বললেও, ইউনুসের মরদেহ ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার হয়।

কোহিনুর আক্তার বলেন, “আমার স্বামীকে দাওয়াতের কথা বলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে আলম শফুর গ্রুপ। তাদের সঙ্গে তার কোনো টাকার লেনদেন ছিল না। তারা সকালে আমার স্বামীকে জীবিত ফেরত দেবে বলেছিল, কিন্তু পেলাম শুধু লাশ। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।”

গত বুধবার (৫ নভেম্বর) সকালে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার একটি ব্রিজের নিচ থেকে ভাসমান অবস্থায় সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ইউনুসের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ