বাড়ির পাশের কবরস্থানে সাংবাদিক তুহিনের দাফন সম্পন্ন
Published: 8th, August 2025 GMT
সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের (৩৮) দাফন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় নিজ বাড়ির পাশের সামাজিক কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) মাগরিবের নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে, গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় জুমার নামাজের পর তুহিনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে তুহিনের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
নাটোরে প্রাইভেটকার চালককে হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার ১
সাংবাদিক তুহিন হত্যায় জড়িতদের শাস্তি দাবি
সাংবাদিক তুহিন ভাটিপাড়া গ্রামের মো.
সন্তানের শোকে আহাজারি করা তুহিনের ৭৫ বছর বয়সী মা সাবিহা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে তুহিন বুধবার বলেছিল, আমি তোমাকে আগামী মাসে চোখের ডাক্তার দেখাব। ডাক্তার অপারেশন করানোর কথা বললে, অপারেশন করাব। আম্মা কোনো চিন্তা করো না। তুমি ভালো হয়ে যাবে।”
তুহিনের জানাজায় অংশ নেন গ্রামের বাসিন্দা ও স্বজনরা
ছেলের মৃত্যুতে পাগল প্রায় বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল বলেন, “কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো। আমি খুনিদের চাই না। তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, “তুহিনরা পাঁচ ভাই। প্রত্যকেই কাজের তাগিদে সিলেট ও গাজীপুরে থাকেন। তারা কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তুহিন খুব ভালো ছেলে ছিল। নিয়মিত বাবা-মায়ের সেবা ও খোঁজ খবর নিতেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।”
একই এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, “তুহিন সাংবাদিকতা পেশায় খুব ভালো করেছিল। অল্প সময়েই তিনি নাম-ডাক অর্জন করেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তুহিনের আয় বেশি ছিল। সংসারের হাল ধরেছিলেন তিনি। তুহিনের মৃত্যুতে স্ত্রী মুক্তা আক্তার দুই সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়বেন। সরকার যদি সহায়তা করে, তাহলে তুহিনের পরিবারের জন্য খুব ভালো হবে।”
স্বজনরা জানান, আসাদুজ্জামান তুহিন ২০০৫ সালে ফুলবাড়িয়া আল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০২ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি গাজীপুর ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স করে সেখানে ভাই জসিম উদ্দিনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। পরে ওষুধ কোম্পানি চাকরি নেন। ২০১২ সালে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন। তার বড় ভাই জসিম ২০০৯ বা ২০১০ সালে ক্যানসারে মারা যান।
বতর্মানে তুহিন ও তার অপর ভাই সেলিম গাজীপুরে বসবাস করছিলেন। সেলিম পরিবহন শ্রমিকের কাজ করেন। অপর ভাই জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজার টেকনাফে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং অন্য ভাই শাজাহান মিয়া সিলেটে থাকেন। তাদের দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বতর্মানে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা ও মা বসবাস করেন। তারা বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। ছেলেরাই তাদের দেখভাল করেন।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
ঢাকা/মিলন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ক্রিকেটারের সঙ্গে প্রেম, গোপনে পাইলটকে নায়িকার বিয়ে!
ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোনম বাজওয়া। দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয় করে অধিক খ্যাতি কুড়ালেও হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে খুব একটা শক্ত জায়গা করতে পারেননি এই অভিনেত্রী। বলিউডে পরিচিতি না পেলেও ব্যক্তিগত কারণে নানা সময়ে চর্চায় থেকেছেন সোনম। হিন্দি চলচ্চিত্রজগতে হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে পঞ্জাবি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি নামকরা অভিনেত্রী। বলিউডে পরিচিতি তৈরি করতে না পারলেও ব্যক্তিগত জীবনের কারণে সব সময় চর্চায় থেকেছেন অভিনেত্রী সোনম বাজওয়া। একাধিক ক্রিকেটারের সঙ্গে যেমন নাম জড়িয়েছে, তেমনি বলিউড বাদশা শাহরুখের ‘প্রেমিকা’ হতে চেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
১৯৮৯ সালের ১৬ আগস্ট ভারতের উত্তরাখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন সোনম। বাবা-মা, জমজ ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। তার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শৈশব থেকেই মডেলিংয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল সোনমের। সেরা সুন্দরী প্রতিযোগিতা জিততে চেয়েছিলেন। স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, সেখান স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে বিমানসেবিকা হিসেবে কিছু দিন কাজ করেন সোনম।
২০১২ সালে ‘মিস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন সোনম। বিজয়ী হতে না পারলেও সেই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছান। সেখান থেকে সোনমের জীবনের মোড় অন্যদিকে ঘুরে যায়। ২০১৩ সালে পাঞ্জাবি ভাষার একটি সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পান। পাঞ্জাবি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তারপর তামিল, তেলুগু ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেন সোনম। পাঞ্জাবি ভাষার একাধিক মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন।
বলিপাড়ায় কাজের সুযোগ পেতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয় সোনমকে। আশাভঙ্গও হয়েছিল তার। এক সাক্ষাৎকারে সোনম জানিয়েছিলেন, বলিউডের বড় একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনটি হিন্দি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন। পরে পরিচালক বেঁকে বসেন। চুক্তির সঙ্গে জড়িত প্রথম সিনেমার শুটিং শুরুর আগেই বাধার মুখে পড়েন। শুটিং শুরুর ছয় দিন আগে পরিচালক জানান, তিনি সোনমের উপর ভরসা করতে পারছেন না। পরে সোনমের তিনটি সিনেমার চুক্তি বাতিল হয়।
২০১৪ সালে মুক্তি পায় ফারাহ খান নির্মিত ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সিনেমাটির মোহিনী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিয়ে সুযোগ পাননি সোনম। শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেতে পারেন বলে অডিশন দিয়েছিলেন সোনম। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন দীপিকা পাড়ুকোন। শাহরুখের ‘প্রেমিকা’ হতে চেয়েও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি সোনমের।
ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের ভয় থেকে বলিউডের বেশ কিছু সিনেমার প্রস্তাব ফেরান সোনম। ফিল্ম কম্পানিয়নকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী বলেন, “ঘনিষ্ঠ দৃশে অভিনয় করতে হবে, এজন্য বলিউডের একাধিক সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়েছি। কারণ পাঞ্জাবি সিনেমার দর্শকরা আহত হতে পারেন। পরে বুঝতে পারি সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল।” ২০১৯ সালে আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত ‘বালা’ সিনেমার একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করেন সোনম। তাছাড়া ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্ট্রিট ড্যান্সার থ্রিডি’ সিনেমার একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। গানের দৃশ্যটি সিনেমায় না থাকলেও তা আলাদাভাবে ইউটিউবে মুক্তি পায়।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে রক্ষিত অগ্নিহোত্রী নামে এক পাইলটকে গোপনে বিয়ে করেন সোনম। দিল্লির বাসিন্দা রক্ষিতের সঙ্গে তিন বছরের সম্পর্ক ছিল তার। পরে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি সোনম। এর আগে সোনমের ব্যক্তিগত জীবন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ক্রিকেটার কেএল রাহুলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সোনম। ২০১৮ সালে ইনস্টাগ্রামে সোনম ও কেএল রাহুল পরস্পরের পোস্টে কমেন্ট চালাচালি করেন। এ নিয়ে নেটিজেনরাও চর্চা কম করেননি। পরে বলিউড অভিনেত্রী আথিয়া শেঠির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান এবং বিয়ে করেন কেএল রাহুল।
সোনমের নাম জড়িয়েছিল ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক শুভমন গিলের সঙ্গে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচে দুর্দান্ত দ্বিশতরান করেন শুভমন। বার বার বড় ইনিংস খেলে শিরোনামে এসে শুভমন যে সাফল্য অর্জন করেছিলেন, তার নেপথ্যে ছিলেন সোনম। পাঞ্জাবি ভাষার একটি চ্যাট শো সঞ্চালনা করতেন সোনম। সেই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় শুভমনকে। শুভমনের সঙ্গে হাত মেলান সোনম। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তা দেখেই গুঞ্জন চাউর হয়, সোনমের কারণেই শুভমনের পেশাগত জীবনে সাফল্য এসেছে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে সোনম লিখেছিলেন—“এসবই মিথ্যা।”
নতুন করে গুঞ্জন রয়েছে, নতুন করে সম্পর্কে জড়িয়েছেন সোনম কাপুর। তবে তার প্রেমিক পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রজগতের তারকা নন। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা তিনি। কিন্তু বলিপাড়ার সঙ্গেও তার কোনো যোগসূত্র নেই। যদিও এ নিয়ে টুঁ-শব্দ করেননি সোনম।
চলতি বছরে সোনম অভিনীত চারটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে তিনটি হিন্দি ভাষার সিনেমা। এগুলো হলো—‘হাউজফুল ৫’, ‘বাঘী ৪’, ‘এক দিওয়ানে কি দিওয়ানিয়ত’। বর্তমানে ‘বর্ডার টু’ সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সোনম। হিন্দি ভাষার এ সিনেমা ২০২৬ সালে মুক্তির কথা রয়েছে।
ঢাকা/শান্ত