নিরাপত্তার কারণে তিন সপ্তাহের জন্য মোবাইল ডেটা সেবা স্থগিত বেলুচিস্তানে
Published: 8th, August 2025 GMT
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ বেলুচিস্তানে তিন সপ্তাহের জন্য মোবাইল ফোনের ডেটা সেবা স্থগিত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু হামলার জন্য অভিযুক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাদেশিক সরকার ও এক সরকারি কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।
বেলুচিস্তান খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ প্রদেশ। সেখানে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো খনিজ সম্পদে বড় হিস্যা দাবি করে আসছে। কিন্তু তা পূরণ না হওয়ায় গত কয়েক মাসে সেখানে সন্ত্রাসী হামলা বেড়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করেই অধিকাংশ হামলা চালানো হচ্ছে। জবাবে সেনাবাহিনীও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছে।
এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার একটি আদেশ জারি করেছে, যার একটি কপি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। আদেশে বলা হয়েছে, প্রদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত মোবাইল ডেটা সেবা বন্ধ থাকবে। পাকিস্তানের এই প্রদেশেই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রয়েছে।
শুক্রবার প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ বলেন, ‘এই সেবা বন্ধ করার কারণ হলো সন্ত্রাসীরা তা ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদান করছে।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভৌগোলিকভাবে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তানে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ। আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্তবর্তী এই প্রদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ। অন্যদিকে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ২৪ কোটির সামান্য বেশি।
এর আগে গত মাসের শেষ দিকে নিরাপত্তা হুমকির কথা উল্লেখ করে ইরানে সড়কপথে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল পাকিস্তান।
কয়েক দশক ধরে বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, পাকিস্তান সরকার প্রাদেশিক সম্পদের ন্যায্য হিস্যা থেকে তাদের বঞ্চিত করছে।
প্রদেশটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সাধারণত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, চীনের নাগরিক এবং চীনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্থাপনা বা প্রকল্পে হামলা চালিয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি তারা উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদেরও নিশানা করা শুরু করেছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার সড়কে পুঁতে রাখা একটি বিস্ফোরকের বিস্ফোরণে এক সেনা কর্মকর্তা ও দুজন সেনা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করা হয়েছে।
এই হামলায় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িকে নিশানা করা হয়েছিল। বেলুচিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটি সম্প্রতি বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার ওপর হামলারও দায় স্বীকার করেছে।
বেলুচিস্তানেই গোয়াদার বন্দর অবস্থিত। চীনের বিআরআইয়ের অংশ হিসেবে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানে মোট ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে চীন। বিশ্বব্যাপী চীনের প্রভাব বিস্তার করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
পাকিস্তান সরকারের অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দেশ ভারত এসব বিদ্রোহীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, যাতে অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করে রাখা যায় এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু নয়াদিল্লি এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে।
চলতি বছরের মার্চে বালুচ লিবারেশন আর্মি একটি রেললাইন উড়িয়ে দেয় এবং একটি ট্রেনের ৪০০-এর বেশি যাত্রীকে জিম্মি করে। ওই হামলায় ৩১ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে ২৩ জন ছিলেন সেনাসদস্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত প রকল প ক সরক র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে জনগণের সঙ্গে সুবিচার ও সদয় ব্যবহার করতে হবে: স্বরাষ্ট্রসচিব
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে জনগণের সঙ্গে সুবিচার ও সদয় ব্যবহার করতে হবে। অহংকার, লোভ, হিংসা, পরচর্চা ও অন্ধ আনুগত্য বর্জন করে আরও উদ্ভাবনী কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
আজ শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে রাজারবাগ পুলিশ মিলনায়তনে ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা’ শীর্ষক বিশেষ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব নাসিমুল গনি সুরা সোয়াদ-এর ২৬ নম্বর আয়াত উল্লেখ করে বলেন, ‘হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলিফা বানিয়েছি, সুতরাং মানুষের মাঝে ন্যায়বিচার করো এবং ব্যক্তিগত খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না, নইলে তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দেবে।’
অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ পেশাদারত্ব ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসন্ন নির্বাচনকে দেশে-বিদেশে একটি দৃষ্টান্তে পরিণত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সাজ্জাত আলী আরও উল্লেখ করেন, গত বছরে বিশেষ করে মহানগর পুলিশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একসময় যে ভঙ্গুর অবস্থায় পুলিশ চলে গিয়েছিল, তা থেকে এখন অনেকটাই পেশাদারত্বে ফিরে এসেছে। এই পেশাদারত্ব আরও উন্নত করে দেশ ও জাতির সেবা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে বক্তব্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) ফারুক আহমেদ। অনুষ্ঠানে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পদবির পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।