পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ বেলুচিস্তানে তিন সপ্তাহের জন্য মোবাইল ফোনের ডেটা সেবা স্থগিত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু হামলার জন্য অভিযুক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাদেশিক সরকার ও এক সরকারি কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।

বেলুচিস্তান খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ প্রদেশ। সেখানে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো খনিজ সম্পদে বড় হিস্যা দাবি করে আসছে। কিন্তু তা পূরণ না হওয়ায় গত কয়েক মাসে সেখানে সন্ত্রাসী হামলা বেড়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করেই অধিকাংশ হামলা চালানো হচ্ছে। জবাবে সেনাবাহিনীও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছে।

এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার একটি আদেশ জারি করেছে, যার একটি কপি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। আদেশে বলা হয়েছে, প্রদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত মোবাইল ডেটা সেবা বন্ধ থাকবে। পাকিস্তানের এই প্রদেশেই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রয়েছে।

শুক্রবার প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ বলেন, ‘এই সেবা বন্ধ করার কারণ হলো সন্ত্রাসীরা তা ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদান করছে।’

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভৌগোলিকভাবে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তানে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৮৫ লাখ। আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্তবর্তী এই প্রদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ। অন্যদিকে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ২৪ কোটির সামান্য বেশি।

এর আগে গত মাসের শেষ দিকে নিরাপত্তা হুমকির কথা উল্লেখ করে ইরানে সড়কপথে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল পাকিস্তান।

কয়েক দশক ধরে বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, পাকিস্তান সরকার প্রাদেশিক সম্পদের ন্যায্য হিস্যা থেকে তাদের বঞ্চিত করছে।

প্রদেশটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো সাধারণত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, চীনের নাগরিক এবং চীনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্থাপনা বা প্রকল্পে হামলা চালিয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি তারা উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদেরও নিশানা করা শুরু করেছে।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার সড়কে পুঁতে রাখা একটি বিস্ফোরকের বিস্ফোরণে এক সেনা কর্মকর্তা ও দুজন সেনা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করা হয়েছে।

এই হামলায় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িকে নিশানা করা হয়েছিল। বেলুচিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোষ্ঠীটি সম্প্রতি বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার ওপর হামলারও দায় স্বীকার করেছে।

বেলুচিস্তানেই গোয়াদার বন্দর অবস্থিত। চীনের বিআরআইয়ের অংশ হিসেবে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানে মোট ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে চীন। বিশ্বব্যাপী চীনের প্রভাব বিস্তার করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

পাকিস্তান সরকারের অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দেশ ভারত এসব বিদ্রোহীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, যাতে অঞ্চলটিকে অস্থিতিশীল করে রাখা যায় এবং বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু নয়াদিল্লি এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে।

চলতি বছরের মার্চে বালুচ লিবারেশন আর্মি একটি রেললাইন উড়িয়ে দেয় এবং একটি ট্রেনের ৪০০-এর বেশি যাত্রীকে জিম্মি করে। ওই হামলায় ৩১ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে ২৩ জন ছিলেন সেনাসদস্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত প রকল প ক সরক র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প–মামদানি কি সমানে সমান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে প্রিয় কাজগুলোর একটি হলো—নতুন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে নামা।

কিন্তু দেশটির নিউইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির মধ্যে কি ট্রাম্প এবার নিজের সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়ে গেছেন?

এই রিপাবলিকান নেতার সঙ্গে তরুণ ডেমোক্র্যাট সমাজতান্ত্রিক মামদানির মুখোমুখি লড়াই ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করতে পারে।

মনে হচ্ছে, মামদানিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে ট্রাম্প বেশ আনন্দই পাচ্ছেন। তিনি তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় এই মেয়রের নাম নিয়ে তিনি ঠাট্টা করছেন। এমনকি নিউইয়র্ক শহরের জন্য ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকিও দিচ্ছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির ‘ট্রানজিশন’ দলের সবাই নারী২০ ঘণ্টা আগে

কিন্তু মামদানি দেখিয়েছেন, ট্রাম্পের মতো কৌশলেই তিনিও খেলতে জানেন।

রিয়েলিটি টিভি তারকা থেকে রাজনীতিক রূপে আবির্ভূত হওয়া ট্রাম্পকে অন্য কেউ ছাপিয়ে যান—এমনটা দেখা তাঁর জন্য সহজ কোনো বিষয় নয়। কিন্তু ৩৪ বছর বয়সী মামদানি সেটিই করে দেখালেন।

গত মঙ্গলবার রাতের বিজয় সমাবেশে মামদানি বলেছিলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার কয়েকটা শব্দ আছে—আওয়াজটা বাড়িয়ে দিন!’

মামদানির বক্তব্য শেষ হতেই তাঁর সমর্থকেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।

পরদিন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন, ট্রাম্প সত্যিই মামদানির ভাষণ দেখেছিলেন তাঁর এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির জয়ে ভারতের মুসলিমরা খুশি হলেও বিজেপি-সমর্থকেরা চুপ কেন৩ ঘণ্টা আগে

‘আমাদের মধ্য দিয়েই যেতে হবে’

ট্রাম্প ও মামদানি এমন প্রতিদ্বন্দ্বী, যাঁরা অন্তত কিছুটা হলেও একে অপরের উপস্থিতি থেকে পরস্পর লাভবান হচ্ছেন।

বামপন্থী মামদানি তাঁর পুরো নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পকে একধরনের ভয়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি তাঁকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেছেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ট্রাম্পকে তিনি সেসব বাড়িওয়ালার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যাঁরা নিউইয়র্কবাসীর পকেট কাটছেন।

মামদানি নিজেকে একটি প্রতিরোধশক্তির অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন। যে প্রেসিডেন্ট তাঁর ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন, ডেমোক্র্যাট–নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধেই মামদানির এই প্রতিরোধ।

বিজয় সমাবেশে মামদানি বলেছিলেন, ‘আমাদের কারও কাছে যেতে হলে আপনাকে (ট্রাম্প) আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’

আরও পড়ুনমামদানিপত্নী কে এই রমা, কীভাবে তাঁদের প্রেম–পরিণয়২০ ঘণ্টা আগে

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের আক্রমণে চাপে থাকা ডেমোক্র্যাটদের জন্য মামদানি যেন প্রতি-আক্রমণের বহু প্রতীক্ষিত সুযোগ এনে দিয়েছেন।

অন্যদিকে ডানপন্থীদের কাছে মামদানি এখন ট্রাম্পের জন্য একদম আদর্শ প্রতিপক্ষ, যাঁর বিরুদ্ধে তাঁরা ইচ্ছেমতো আক্রমণ চালাতে পারেন।

নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির ভোটে পরাজয়ের পর রিপাবলিকানরা যখন ধাক্কা সামলাচ্ছিলেন, তখন বুধবার মায়ামিতে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকানদের এখন বেছে নিতে হবে—কমিউনিজম নাকি বাস্তববোধ।’

আরও পড়ুনমামদানি স্বপ্ন দেখছেন, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন০৬ নভেম্বর ২০২৫

‘সতর্কতার লালবাতি’

তবে এই লড়াই শুধু কথার নয়; ঝুঁকি অনেক বেশি।

ট্রাম্প একাধিকবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, তিনি তাঁর প্রিয় শহর নিউইয়র্ককেও লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগোর মতো ফেডারেল নজরদারির আওতায় আনবেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বললেন, ‘যদি সে (মামদানি) কমিউনিস্ট হয়, তাহলে তো শহরে তেমন কোনো কাজ হবে না। তাই নিউইয়র্কের জন্য যেসব সেতু, টানেল আর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা–ও প্রয়োজন হবে না।’

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অনেকে আশঙ্কা করছেন, তিনি হয়তো আগুন নিয়ে খেলছেন। কারণ, মামদানির উত্থান ঘটেছে সেই জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকটকে ঘিরে, যা এখন ভোটে রিপাবলিকানদের বিপদে ফেলছে।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানিকে বেছে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প০৬ নভেম্বর ২০২৫

সাবেক হোয়াইট হাউস কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন পলিটিকোকে বলেন, ‘ট্রাম্পের জন্য সব জায়গায় সতর্কতার লালবাতি জ্বলছে। সবাই বুঝে নিক, তাঁদের সামনে এখন সত্যিকারের এক যোদ্ধা এসেছেন।’

তবে ট্রাম্প ও মামদানি দুজনই ইঙ্গিত দিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ পর্যন্ত এই সংঘাত হয়তো কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।

ট্রাম্প একদিকে বলছেন, তিনি নিউইয়র্ককে ভালোবাসেন বলে মামদানিকে ‘সফল হতে সাহায্য করতে চান’। আবার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মামদানিকে উপদেশ দিচ্ছেন, ‘ওয়াশিংটনের প্রতি একটু শ্রদ্ধাশীল হও।’

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির ঐতিহাসিক জয়ের রহস্য কী০৫ নভেম্বর ২০২৫

আর মামদানিও জানেন, যদি ট্রাম্প ফেডারেল তহবিল বন্ধ করেন, তাহলে বিনা মূল্যে বাস পরিষেবা, শিশুযত্ন কেন্দ্র বা সিটি কর্তৃপক্ষ পরিচালিত মুদিদোকানের মতো তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন কঠিন করা হয়ে যাবে।

গত বুধবার মামদানি বলেন, ‘আমি এখনো আগ্রহী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে, কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে নিউইয়র্কবাসীর সেবা করতে পারি।’

আরও পড়ুনবিজয়ভাষণে ট্রাম্পকে মামদানি বললেন, ‘আওয়াজ বাড়ান’০৫ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ