ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক রিকশাচালকের চাবি কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদ করায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী মোজাহিদুল ইসলামসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত অন্য দুজনের নাম–পরিচয় পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম খাইরুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং আল-বেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র।

ভুক্তভোগী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল ফটক–সংলগ্ন একটা মোটরসাইকেল গ্যারেজে মোটরসাইকেল সারাতে যান খাইরুল। এ সময় এক রিকশাচালক ওই গ্যারেজের সামনে কান্নাকাটি করছিলেন। খাইরুল রিকশাচালকের কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে রিকশার ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জেরে তিনজন তাঁর রিকশার চাবি কেড়ে নিয়েছেন বলে জানান। অভিযুক্ত তিনজন একটু দূরে দাঁড়িয়ে ধূমপান করছিলেন। এরপর খাইরুল তাঁদের কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে রিকশার চাবি ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মোজাহিদুলসহ তিনজন খাইরুলকে বেধড়ক মারধর করেন। এতে খাইরুলের মাথা ফেটে যায় এবং তাঁর কান কেটে রক্ত বের হয়। এ ঘটনার পর আজ শুক্রবার খাইরুলের মাথা ফাটার রক্তাক্ত ছবি বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।

ভুক্তভোগী খাইরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযুক্ত তিনজনের কাছে গিয়ে পরিচয় দিয়ে তাঁর রিকশার চাবি ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। তখন হীরা ভাই (মোজাহিদুল) আমাকে গালাগালি দিয়ে বলেন “তুই কে তাঁর রিকশা ফেরত চেওয়ার?” তখন আমি বলি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী আমি। এরপরই তাঁরা তিনজন আমাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে হীরা ভাই এক দোকান থেকে রড নিয়ে এসে আমার মাথায় আঘাত করলে আমার মাথা ফেটে রক্তে ভেসে যায় এবং পাথর দিয়ে আমার বাঁ পাশের কানে ১০ থেকে ১২ বার আঘাত করেন। আমি কানে এখন কম শুনতেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী খাইরুলকে মারধর করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার খাইরুলের অভিযোগপত্র তাঁরা পেয়েছেন। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছেন। অভিযুক্তের পরিবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আগামী রোববার অভিযুক্ত এ ব্যাপারে অবস্থান জানাবেন। ওই দিনই বসে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত মোজাহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দীন বাবর বলেন, ‘সে ছাত্রদলের কেউ না। আমাদের এত বড় কমিটিতে তার নাম নেই। সে ২০১৪ সালের দিকে রাজনীতি করত। সে আমাদের কেউ না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম ত নজন

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তর না চব্বিশ—এই বিতর্ক অনাহূত

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে চব্বিশের জুলাইয়ের আন্দোলনের বিরোধ নেই। তবে অনেক মূল্য দিয়ে অর্জিত চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পর মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব বিষয়ে সংস্কার করা প্রয়োজন ছিল, তা করতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘লাল জুলাইয়ের কবিতা’ শিরোনামে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য উঠে আসে। সাধারণ সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পীসমাজের সদস্যরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘চব্বিশ একাত্তর বাহান্ন, হারতে দেব না কখনো’।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দীন। তিনি বলেন, এ দেশের মুক্তিকামী জনগণ যে আশা নিয়ে আন্দোলন করেছিল, এক বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়েছে কি? এই সরকার বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নিরাপত্তা, শিক্ষাব্যবস্থার কোনো সংস্কারই আনতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বেকার সৃষ্টির কারখানা।

এ সময় তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে জুলাই ঘোষণাপত্র কার্যকর নিয়ে সংশয়ের কথা। জুলাই আন্দোলনে মুখের অবয়ব হারানো খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে গঠিত এই সরকার। আহতদের সুচিকিৎসার ও পুনর্বাসন ছিল তাদের দায়িত্ব; কিন্তু তা হচ্ছে না। এখনই যদি আমাদের অবস্থা এমন হয়, তাহলে পরবর্তী সরকারের কাছে আমরা কী প্রত্যাশা করব।’

অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, একশ্রেণির মানুষ একাত্তর আর চব্বিশের মধ্যে বিতর্ক তৈরি করছে। এটি সম্পূর্ণ অনাহূত ও অশ্রদ্ধার প্রদর্শন। তিনি বলেন, এই সংগ্রামকে ধারণ করতে গিয়ে বিগত সংগ্রামকে ভুলে গেলে ভবিষ্যতের সংগ্রাম ২৪–এর সংগ্রামকে ভুলে যাবে। অ্যাটর্নি জেনারেল এ সময় আগের বক্তাদের ক্ষোভের সূত্র ধরে বলেন, ‘এক বছর পর এমন হতাশার কথা শুনতে হবে, তা ভাবিনি।’ গত এক বছরে পুলিশ কোনো গায়েবি মামলা করেনি বা গুমের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।

জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান বলেন, শেখ হাসিনার আমলের ১৬ বছরে দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও পরিণত হয়েছিল ক্যাডারদের সংগঠনে। তাঁরা দখলের রাজনীতি করেছেন। দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছেন। সেই সব সংস্কৃতিকর্মীই জুলাই আন্দোলনের সময় হতাহত মানুষের পক্ষ না নিয়ে সরকারকে সমর্থন করে গেছেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল সমবেত আবৃত্তি। শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন ‘লাল জুলাইয়ের কবিতা’র তিন উদ্যোক্তা আঞ্জুমান লায়না নওশিন, ফাহমিদা সূচনা ও অনন্যা মাহমুদ। গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো লাল জুলাইয়ের কবিতা মঞ্চস্থ করার সময়ের বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন তাঁরা।

জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার এই আয়োজন শুরু হয়। এরপর মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থান স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ