চীনের দক্ষিণ-উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের পিংটো গ্রামে কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। শুক্রবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
শুক্রবার গুয়াংডং প্রদেশের এই গ্রামের রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত পানি দেখা গেছে। বাসিন্দারা তাদের ঘর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত আসবাবপত্র এবং গৃহস্থালীর যন্ত্রপাতি টেনে বের করে এনেছে। মুষলধারে বৃষ্টির কারণে গ্রামের চারটি বাড়ি ভেঙে পড়েছে।
গ্রামের ৫০ বছর বয়সী এক বাসিন্দা বলেন, “এখানকার বয়স্ক লোকেরা বলেছে তারা এখানে থাকা ১০০ বছরে এমন বন্যার সম্মুখীন হয়নি।”
এই বাসিন্দা জানান, বন্যার পানি আগে কখনো তার দোতলা বাড়িতে প্রবেশ করেনি, কিন্তু এবার তা হু হু করে ঢুকে পড়েছে এবং তার অনেক জিনিসপত্র ধ্বংস করে দিয়েছে।
গ্রামে কেউ মারা গেছে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি।
২ থেকে ৬ আগস্ট প্রাদেশিক রাজধানী গুয়াংজুতে রেকর্ড ৬২২ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে - যা আগস্টে শহরের গড় মাসিক বৃষ্টিপাতের প্রায় তিনগুণ। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বন্যার কারণে সেখানে কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছে।
সরকার বৃহস্পতিবার দুর্যোগ ত্রাণের জন্য ৪৩০ মিলিয়ন ইউয়ান নতুন তহবিল ঘোষণা করেছে। তবে পিংটোতে, গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, তারা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা পাচ্ছেন না।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
একাত্তর না চব্বিশ—এই বিতর্ক অনাহূত
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে চব্বিশের জুলাইয়ের আন্দোলনের বিরোধ নেই। তবে অনেক মূল্য দিয়ে অর্জিত চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পর মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব বিষয়ে সংস্কার করা প্রয়োজন ছিল, তা করতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘লাল জুলাইয়ের কবিতা’ শিরোনামে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য উঠে আসে। সাধারণ সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পীসমাজের সদস্যরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘চব্বিশ একাত্তর বাহান্ন, হারতে দেব না কখনো’।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দীন। তিনি বলেন, এ দেশের মুক্তিকামী জনগণ যে আশা নিয়ে আন্দোলন করেছিল, এক বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়েছে কি? এই সরকার বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নিরাপত্তা, শিক্ষাব্যবস্থার কোনো সংস্কারই আনতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বেকার সৃষ্টির কারখানা।
এ সময় তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে জুলাই ঘোষণাপত্র কার্যকর নিয়ে সংশয়ের কথা। জুলাই আন্দোলনে মুখের অবয়ব হারানো খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে গঠিত এই সরকার। আহতদের সুচিকিৎসার ও পুনর্বাসন ছিল তাদের দায়িত্ব; কিন্তু তা হচ্ছে না। এখনই যদি আমাদের অবস্থা এমন হয়, তাহলে পরবর্তী সরকারের কাছে আমরা কী প্রত্যাশা করব।’
অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, একশ্রেণির মানুষ একাত্তর আর চব্বিশের মধ্যে বিতর্ক তৈরি করছে। এটি সম্পূর্ণ অনাহূত ও অশ্রদ্ধার প্রদর্শন। তিনি বলেন, এই সংগ্রামকে ধারণ করতে গিয়ে বিগত সংগ্রামকে ভুলে গেলে ভবিষ্যতের সংগ্রাম ২৪–এর সংগ্রামকে ভুলে যাবে। অ্যাটর্নি জেনারেল এ সময় আগের বক্তাদের ক্ষোভের সূত্র ধরে বলেন, ‘এক বছর পর এমন হতাশার কথা শুনতে হবে, তা ভাবিনি।’ গত এক বছরে পুলিশ কোনো গায়েবি মামলা করেনি বা গুমের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান বলেন, শেখ হাসিনার আমলের ১৬ বছরে দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও পরিণত হয়েছিল ক্যাডারদের সংগঠনে। তাঁরা দখলের রাজনীতি করেছেন। দেশের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছেন। সেই সব সংস্কৃতিকর্মীই জুলাই আন্দোলনের সময় হতাহত মানুষের পক্ষ না নিয়ে সরকারকে সমর্থন করে গেছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল সমবেত আবৃত্তি। শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন ‘লাল জুলাইয়ের কবিতা’র তিন উদ্যোক্তা আঞ্জুমান লায়না নওশিন, ফাহমিদা সূচনা ও অনন্যা মাহমুদ। গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো লাল জুলাইয়ের কবিতা মঞ্চস্থ করার সময়ের বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন তাঁরা।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার এই আয়োজন শুরু হয়। এরপর মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থান স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।