আগ্রহ বেশি শহরের কলেজে, মফস্সলে খালি থাকবে আসন
Published: 9th, August 2025 GMT
শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়া ও আসন ফাঁকা থাকার প্রবণতা অব্যাহত থাকায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এ বছর একাদশ শ্রেণির ১৭ হাজার ৮৭৫টি আসন কমানো হয়েছে। গত বছর বোর্ডের অধীন ২৯০ কলেজে আসন ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৪টি, এ বছর কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৬৪৯টিতে। আসন কমানো হলেও এবারও প্রায় ৩৩ শতাংশ আসন খালি থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। গত বছরও খালি ছিল ৩৫ শতাংশ আসন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পরিচিত ও ভালো কলেজগুলোয় ভর্তির চাপ বেশি থাকলেও মফস্সল এলাকার অনেক কলেজে আসন ফাঁকা থেকে যায়। এ বছর বোর্ডের অধীন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা—রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির কলেজগুলোয় মোট পাস করেছে ১ লাখ ১ হাজার ১৮১ জন শিক্ষার্থী। পাস করা সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও অন্তত ৫০ হাজার আসন খালি থাকবে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে এই পাঁচ জেলায় ভর্তি হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭৩১ শিক্ষার্থী, খালি ছিল ৫৮ হাজার ৭৯৩টি আসন।
চট্টগ্রাম বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক মোহাম্মদ ছরওয়ার আলম বলেন, অনেক কলেজ আসন বাড়ানোর আবেদন করেছিল। যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, কোথাও ভর্তি অর্ধেক বা তারও কম। তাই আসন কমানো হয়েছে।
পাস করা সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও অন্তত ৫০ হাজার আসন খালি থাকবে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে এই পাঁচ জেলায় ভর্তি হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭৩১ শিক্ষার্থী, খালি ছিল ৫৮ হাজার ৭৯৩টি আসন।চট্টগ্রামে আসন বেশি, চাপও বেশি
বোর্ডের হিসাবে, চট্টগ্রাম জেলা একাই ধারণ করছে ১ লাখ ৯ হাজার ১৯৪টি আসন। পাস করা সব শিক্ষার্থী এখানকার কলেজে ভর্তি হলেও আট হাজারের বেশি আসন খালি থাকবে। বাস্তবে অনেকে জেলার বাইরে বা অন্য বোর্ডের কলেজে চলে যান।
ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই চট্টগ্রাম নগরের সরকারি কলেজগুলোর দিকে ঝোঁকেন। সম্প্রতি চকবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী দোকানে বসে কলেজ ভর্তির আবেদন করছেন। তাঁদের পছন্দের তালিকায় চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, সিটি কলেজ ও সরকারি কমার্স কলেজ শীর্ষে।
নগরে সরকারি কলেজ ৮টি, আসন সাড়ে ৯ হাজারের বেশি। কলেজগুলোয় প্রতিবছর আসনের দ্বিগুণ আবেদন পড়ে। চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির আগ্রহ বেশি, ব্যবসায় শিক্ষায় সরকারি কমার্স কলেজ এগিয়ে। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই আসনের দ্বিগুণ আবেদন আসে। জিপিএ এবং প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি চূড়ান্ত হয়।
ঢাকায় যান ৭-১০ শতাংশ শিক্ষার্থী
বোর্ডের হিসাবে প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্য বোর্ডের কলেজে ভর্তি হন, বিশেষ করে ঢাকায়। ২০২৪ সালে পাস করেছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭ জন, ভর্তি হননি প্রায় ৮ শতাংশ। এ বছর পাসের হার কমায় এই হার আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকেরা।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষকসংকট ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে মফস্সলে ভর্তি আগ্রহ কম। তাই সেখানে আসন বেশি ফাঁকা থাকে। নিয়ম মেনে এবার স্বল্পসংখ্যক আসন কমানো হয়েছে।
ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষক-সংকট ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে মফস্সলে ভর্তি আগ্রহ কম। তাই সেখানে আসন বেশি ফাঁকা থাকে। নিয়ম মেনে এবার স্বল্পসংখ্যক আসন কমানো হয়েছেইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ, চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডআসন তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম ছাড়া বাকি চার জেলায় মোট আসন ৪২ হাজার ৪৭৫টি—এর মধ্যে কক্সবাজারে ১৮ হাজার ৬৮৫, খাগড়াছড়িতে ৯ হাজার ৫২০, রাঙামাটিতে ৮ হাজার ৭৯৫ ও বান্দরবানে ৫ হাজার ৪৭৫টি।
চট্টগ্রাম বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে আসন ৩২ হাজার ৪৮৯, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৫২ হাজার ২৭৫ ও মানবিক বিভাগে ৬৬ হাজার ৮৩৫টি। গার্হস্থ্যবিজ্ঞানে আছে মাত্র ৫০টি আসন, যা নগরের হালিশহরের গার্হস্থ্য অর্থনীতি সিটি করপোরেশন কলেজে। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম ধাপের আবেদন চলবে ১১ আগস্ট পর্যন্ত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ আসন খ ল প স কর র কল জ ভর ত র ন কল জ আসন ব সরক র এ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
ফারইস্ট লাইফের ৫৫ হাজার কর্মীর তথ্য পাচার, এই অভিযোগে আইডিআরএর সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৫৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য পাচার করা হয়েছে। কোম্পানিটি সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য পাঠায়। দাবি করা হচ্ছে, এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই।
গত বছর কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বদলের পর এ তথ্য পাচারের সন্ধান পায় প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আপেল মাহমুদসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কোম্পানিটির বর্তমান কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত আপেল মাহমুদ নিজেই বর্তমানে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অপর দুই অভিযুক্ত হলেন ফারইস্ট লাইফে কর্মরত তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ লোকমান ফারুক ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ওসমান গনি। অজ্ঞাতনামা আরও আসামির কথা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
কোম্পানিটির পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হিসেবে আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন ৪ আগস্ট সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর ১৯, ২১ ও ২২ ধারায় শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন।
জানতে চাইলে ফারইস্ট লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোম্পানির বর্তমান পর্ষদের সিদ্ধান্তেই মামলা হয়েছে। সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে আসামিরা তথ্য পাচার করেছেন। দেশি-বিদেশি কারও প্রতিষ্ঠানের কাছেও তাঁরা এ তথ্য বিক্রি করে থাকতে পারেন বলে আমাদের সন্দেহ।’
এত দিন পর মামলা করার কারণ জানতে চাইলে ফকরুল ইসলাম বলেন, এত দিন পর ধরতে পেরেছি। আর যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি সাবলাইন নামের কোনো কোম্পানি নেই। ফলে ধরে নেওয়া যায় এটি ভুয়া কোম্পানি।
ঘটনাটি একটু পেছন থেকে দেখতে হবে। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ অপসারণ করে নতুন ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মো. রহমত উল্লাহকে বানানো হয় চেয়ারম্যান। এ পর্ষদের দুই স্বতন্ত্র পরিচালক মো. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম ও বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হককে রাখা হয় পর্ষদে।
পরে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। মোজাম্মেল হক ও রফিকুল ইসলামকে নতুন পর্ষদেও রাখা হয়। এ ছাড়া পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া হয় বেক্সিমকো গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও জুপিটার বিজনেস লিমিটেডের মনোনীত প্রতিনিধি। বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে আসেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক শেখ মামুন খালেদ।
অন্যদের মধ্যে পর্ষদ সদস্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট ও রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক লাফিফা জামাল, বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান, সাবেক সংস্কৃতিসচিব ইব্রাহিম হোসেন খান প্রমুখ। স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত হয়ে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা হিসেবে পরিচিত শেখ কবির হোসেন। তথ্য পাচারের অভিযোগের ঘটনা এ পর্ষদের সময়ের। পটপরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শেখ কবির হোসেন কোম্পানিটি থেকে পদত্যাগ করেন। কাছাকাছি সময়ে পদত্যাগ করেন অন্যরাও।
এজাহারে যা আছেমামলার এজাহারে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করে ৫৫ হাজার ৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব গোপনীয় তথ্য সাবলাইন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ করেছেন। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক হিসাব, মুঠোফোল নম্বর, বেতন-ভাতা, কর্মচারীর পরিচিতি নম্বর ইত্যাদি। তথ্যগুলো সরবরাহ করায় ফারইস্ট লাইফের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন ও সম্পদ হুমকির মধ্যে রয়েছে।
এজাহারে আপেল মাহমুদের পরিচয় কোম্পানির সাবেক সিইও দেওয়া হলেও বর্তমানে যে তিনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য, তা উল্লেখ করা হয়নি। আপেল মাহমুদ আইডিআরএর সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর।
এজাহারে বলা হয়, ২০২৪ সালের ২৭ মে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময়ে তাঁরা বেআইনিভাবে কোম্পানির কম্পিউটারে প্রবেশ করে ৫৫ হাজার ৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যক্তিগত তথ্য সাবলাইন লিমিটেডের কাছে পাঠানোর জন্য সংগ্রহ করেন। সাবলাইনের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি আরও প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব তথ্য পাঠান আসামিরা।
আইডিআরএর সদস্য আপেল মাহমুদ গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ফারইস্ট লাইফের ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তখনকার পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তেই সাবলাইন লিমিটেডকে তথ্য দেওয়া হয়।
তবে আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন তা খণ্ডন করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবলাইনকে তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে আমরা পর্ষদ সিদ্ধান্তের কোনো প্রমাণ পাইনি। প্রমাণ দেখাতে পারলে সাবেক সিইওর দায় কিছু কমবে বলে মনে হয়।’