বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বর্তমান সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, তার প্রায় ৯৯ শতাংশ প্রস্তাব বিএনপি অনেক আগেই জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিল।

আজ শনিবার দুপুরে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথাগুলো বলেন।

রাজধানীর উইলস লিটলস ফ্লাওয়ার স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আজকে যেসব রিফর্ম নিয়ে কথা হচ্ছে, বর্তমান সরকার রিফর্ম কমিটি গঠন করেছে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিচ্ছে—এই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে যেসব প্রস্তাব, তার ৯৯ শতাংশই বিএনপি আড়াই বছর আগে জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিল।’

তারেক রহমান বলেন, ড্যাবের কাউন্সিল প্রমাণ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই—এমন বক্তব্য পুরোপুরি সত্য নয়। তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে দেশকে পরিচালিত করেছেন। তাই বর্তমান প্রজন্মের দায়িত্ব হচ্ছে সেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা, ধীরে ধীরে তার ভিত শক্ত করা।

চিকিৎসকদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ৩১ দফার মধ্যে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে যে প্রস্তাব রয়েছে, তা বাস্তবায়নে চিকিৎসক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার একা এসব বাস্তবায়ন করতে পারবে না। দলীয় সংসদ সদস্য বা নেতারাও পারবেন না। আপনাদের প্রত্যেকের সহযোগিতা প্রয়োজন। ড্যাবের প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি কাউন্সিলরের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।’

তারেক রহমান বলেন, গত ১৫ বছরে হাজারো মানুষ খুন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে। অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে, নিখোঁজ হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা হলো একটি স্বস্তির বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, ‘যদি সবাই মিলে সেই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করি, তাহলে নিশ্চয়ই একটা ভিন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। দেশটি সবার, তাই দেশ গড়ার দায়িত্বও সবার।’

আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাতে মুখ দেখাদেখি বন্ধ না হয়: তারেক রহমান০৬ আগস্ট ২০২৫

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ। আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ভিসি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ।

আরও পড়ুননভেম্বর-ডিসেম্বরে ফিরছেন তারেক রহমান, বিএনপি ভোটে জিতলে হবেন প্রধানমন্ত্রী০৭ আগস্ট ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব ব এনপ র ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

সংবিধান সংস্কার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত: ড. কামাল হোসেন

সংবিধান সংস্কার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল। বিগত ৫৩ বছর যাবৎ এই সংবিধানে নানা পরিবর্তন হয়েছে। সংবিধান সংস্কার একটি সংবেদনশীল বিষয়, এ প্রক্রিয়া অবশ্যই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ড. কামাল হোসেন। তিনি অসুস্থ থাকায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।

বর্তমান পটভূমিতে সংবিধান পর্যালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তবে যেকোনো সংস্কারের সময় আমাদের মনে রাখতে হবে, সংবিধান আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি, বাংলাদেশের সব মানুষের ত্যাগ ও একতাবদ্ধ আকাঙ্ক্ষার ফসল। কোনো ব্যক্তিই এককভাবে সংবিধান পরিবর্তন করার অধিকার রাখেন না। সংস্কারের প্রস্তাবগুলোতে অবশ্যই জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হতে হবে এবং সমাজের বর্তমান চাহিদার সঙ্গে আমাদের মৌলিক মূল্যবোধের সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।’

সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ এবং গণতন্ত্রহীনতার জন্য শুধু সংবিধানকে দায়ী করার প্রবণতা থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানান ড. কামাল হোসেন। সেখানে সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিগত সময়ে দেশের যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের ফলে জন–আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলোর সংস্কার জরুরি বলে উল্লেখ করেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারলে গণতন্ত্র কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে না।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের মধ্য দিয়ে লেখা হয়েছে। সেই সংবিধান অক্ষত থাকবে। এটার ওপর হাত দেওয়ার সাধ্য এই সরকারের নেই।’

সংস্কারের বিষয়গুলো জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান সুব্রত চৌধুরী। সংস্কার নিয়ে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য এই সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আপনি তাদের (ছাত্রদের) রাজনীতির মাঠে নামিয়ে এবং তাদের আবার তৃতীয় শক্তি বানিয়েছেন। বিএনপি, জামায়াত আবার এনসিপি। বাংলাদেশে যেন আর কোনো রাজনৈতিক দল নেই। মামার বাড়ির আবদার।’

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের বিপথগামী করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘তাদের পরিবার-পরিজনকেও আপনি অসম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছেন। আজকে সব জায়গায় তাদের নিয়ে কথাবার্তা হয়, নানান জায়গায় তারা অপকর্ম করছে। তারা সরকারের বিভিন্ন জায়গায় বসে বসে, সরকারের অংশীদারত্ব তারা উপভোগ করছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় পদ–পদবি নিচ্ছে, নিয়োগ–বাণিজ্য করছে, ট্রান্সফার করছে, ব্যবসা–বাণিজ্য করছে।’

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, নারীপক্ষের সভাপতি শিরীন হক প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমাদের আত্মপরিচয়ের সংকট নিরসন করেছেন জিয়াউর রহমান: রিজভী
  • ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির ঐক্য বিনষ্ট হলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ফেরার শঙ্কা তৈরি হবে’
  • ৭ নভেম্বর: ঐতিহাসিক বাস্তবতা, গণতন্ত্র ও বিএনপির প্রাসঙ্গিকতা
  • আমরা অন্য দলে আত্মগোপন করে গুপ্ত দল করিনি: আহমেদ আযম খান
  • বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আবার ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে: মির্জা ফখরুল
  • ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর আজ
  • সংবিধান ও আইন অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ বিএন‌পি 
  • সংবিধান সংস্কার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত: ড. কামাল হোসেন
  • তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের পেছনে ছিল রাজনৈতিক বিদ্বেষ: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে: নজরুল ইসলাম খান