গণিতের ভয় জয়ে প্রতিদিন চর্চা করতে হবে
Published: 20th, September 2025 GMT
ছবি: শাহাদাত হোসেন
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
উপকূলীয় মৎস্যশিল্পে চাই শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ
মৎস্যভিত্তিক শিল্পে সংকট থাকলেও এ খাতের সম্ভাবনা ব্যাপক। এ সম্ভাবনাময় খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হলে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন জরুরি। শ্রমিকদের বিষয়েও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শ্রমিক বাঁচলে শিল্প টিকবে, আবার শিল্প টিকলে শ্রমিকেরও জীবন-জীবিকা সুরক্ষিত থাকবে। শ্রমিক শোষণের নানা রূপ এখনো রয়েছে। এখান থেকে মুক্তির পথ বের করতে হবে।
গতকাল শনিবার খুলনা নগরের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথাগুলো বলেন বক্তারা। ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় কর্মজীবী নারী ‘উপকূলীয় মৎস্যভিত্তিক শিল্পের সম্ভাবনা ও সংকট’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এ আয়োজনে প্রচার সহযোগী হিসেবে ছিল প্রথম আলো।
আলোচকেরা বলেন, শ্রমিকদের নিবন্ধন ও ডেটাবেজ জরুরি, যাতে তাঁদের তদারকি, উন্নয়ন এবং প্রয়োজন হলে পুনর্বিন্যাস করা সহজ হয়। এটি হলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং তাঁদের গুরুত্বও স্পষ্ট হবে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক—দুই ধরনের শ্রমিককেই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নাজমুল আহসান বলেন, উৎপাদন না বাড়লে মৎস্যভিত্তিক কোনো শিল্পই টেকসই হবে না। বর্তমানে চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে এতে দুঃখের কিছু নেই; কারণ, মালিকেরা অনেক আগেই ব্যবসার খাত পরিবর্তন করেছেন, আর শ্রমিকেরা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে পেশা বদল করছেন। এমনকি চাষিরাও বেঁচে থাকার তাগিদে নতুন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। রপ্তানিকারকেরা দীর্ঘদিন ধরে ভেনামি চিংড়ি চাষের কথা বলে আসছেন। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে, পরে বাণিজ্যিকভাবে সরকার এর অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু প্রত্যাশিত উৎপাদন এখনো মেলেনি।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি এস হুমায়ুন কবির বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোতে নারীদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও বৃত্তির সুযোগ বাড়াতে হবে। কর্মক্ষেত্র ও কমিউনিটি পর্যায়ে নারীবান্ধব ও নিরাপদ পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা জরুরি। পরিবেশবান্ধব পর্যটন, হস্তশিল্প এবং দূরবর্তী কাজের মতো বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগকে উৎসাহিত করতে হবে। এ জন্য সুলভ ইন্টারনেট, ডিজিটাল সাক্ষরতার প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর খুলনার উপমহাপরিদর্শক সানতাজ বিল্লাহ বলেন, ‘এই অঞ্চলে আমরা সাধারণত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিটের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকি। তবে উপকূলীয় মৎস্যভিত্তিক শিল্পের আওতায় আরও অনেক কিছু রয়েছে—যেমন হ্যাচারি, মৎস্য আড়ত, ঘের ইত্যাদি। এগুলোর বেশির ভাগ এখনো নিবন্ধনপ্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কোনো বিধিমালার মাধ্যমে যদি এ খাতগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনা যায়, তাহলে বিশেষ উপকার হবে।’
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মোহাম্মদ জালালউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের দেশে শতাধিক হ্যাচারি রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র তিনটি হ্যাচারিতে এসপিএফ (রোগমুক্ত বিশেষ পোনা) উৎপাদন করা হয়। এসপিএফ পোনা ছাড়া অন্য পোনা যখন চাষিদের হাতে যায়, তখন মাছ মারা যায়, রোগবালাই দেখা দেয় এবং কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া যায় না। এসপিএফ পোনার সরবরাহ কম থাকার কারণে আমাদের রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই হ্যাচারিতে এসপিএফ পোনা উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে।’
আলোচনায় ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন বলেন, হিমায়িত খাদ্যপণ্য শিল্প নতুন কোনো শিল্প নয়। তারপরও কিন্তু মালিক এবং শ্রমিকপক্ষের মধ্যে বিশ্বস্ততার সংকট রয়ে গেছে। কেন এখনো এটা রয়ে গেছে বা আমরা কী করতে পারি, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।’
কর্মজীবী নারীর অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা বলেন, ‘যেহেতু আমাদের অনেক শ্রমিক মাছ খাতে কাজ করেন, সেহেতু এটাকে শুধু কৃষি খাতে নিয়ে যাওয়াটা যৌক্তিক হবে না; বরং কোন কোন মন্ত্রণালয় এটার সঙ্গে সম্পর্কিত, তাদের সবাইকে নিয়েই ভবিষ্যতে একটা পরিকল্পনা করা দরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়—এই চারটা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই এই কাজে আমাদের সামনে রাখতে হবে।’
সভায় ধন্যবাদ জানান কর্মজীবী নারীর সাধারণ সম্পাদক শারমিন কবীর। আলোচনায় আরও অংশ নেন সি ফুড এক্সপোর্ট বায়িং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল সুজন আহমেদ, খুলনা মহানগর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মো. মজিবুর রহমান, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি খালিদ হোসেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রওনক হাসান, প্রথম আলোর খুলনা প্রতিনিধি উত্তম মণ্ডল, সলিডারিডাড নেটওয়ার্কের প্রোগ্রাম অফিসার মশিউর রহমান, সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট তামিম আহমেদ, ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের সিনিয়র ম্যানেজার মোসফেকুর রহমান, রেডি টু কুকের উদ্যোক্তা প্রেমা হাজরা, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর খুলনার শ্রম পরিদর্শক শেখ মহিদুর রহমান।
গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।