পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়তে না বললে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত কিম
Published: 22nd, September 2025 GMT
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি তার দেশের ওপর পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের দাবি বাদ দেয়, তবে আলোচনায় বসতে তার কোনো আপত্তি নেই। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য উত্তর কোরিয়া কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করবে না।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ এ তথ্য জানিয়েছে। খবর রয়টার্সের।
আরো পড়ুন:
প্রেমের গুঞ্জনের মধ্যেই কার বিয়েতে হাজির হচ্ছেন জায়েদ-মাহি?
বন্দীদের ফিরিয়ে না নিলে ভেনেজুয়েলা ‘ভয়াবহ পরিণতি’ ভোগ করবে: ট্রাম্প
রবিবার সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলিতে দেওয়া ভাষণে কিম বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে, আমার এখনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সুন্দর স্মৃতি মনে আছে।” ট্রাম্পের এর আগে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন দুই নেতার মধ্যে তিনবার বৈঠক হয়েছিল।
কিমের মন্তব্য এমন সময়ে এলো, যখন দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন উদারপন্থি সরকার ট্রাম্পকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপ পুনরায় শুরু করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে শান্তি আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর এই প্রথম কিম সরাসরি ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ করলেন।
কিম বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে অযৌক্তিক দাবি ত্যাগ করে ও বাস্তবতা মেনে নেয় এবং প্রকৃত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় না বসার কোনো কারণ নেই।”
মার্কিন ভিত্তিক থিংকট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ র্যাচেল মিনইয়ং লি বলেন, “এটি একধরনের পূর্বপ্রস্তুতি। এটি কিমের ট্রাম্পকে মার্কিন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নীতি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান, যার অর্থ হলো, যদি যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ দাবি ত্যাগ করে, তাহলে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে আবারো মুখোমুখি আলোচনায় বসতে পারেন।”
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় অনীহা প্রকাশ করেন কিম। তিনি দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘প্রধান শত্রু’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া আসলে পারমাণবিক যুদ্ধের প্রস্তুতি। তাই পারমাণবিক অস্ত্র উত্তর কোরিয়ার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অপরিহার্য।”
অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “উত্তর কোরিয়া বছরে ১৫–২০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে। এই উৎপাদন স্থগিত করার জন্য যেকোনো চুক্তিই শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।”
তিনি বলেন, “এর উপর ভিত্তি করে, আমরা পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের জন্য মধ্যমেয়াদি আলোচনায় এগিয়ে যেতে পারি এবং দীর্ঘমেয়াদে, একবার পারস্পরিক আস্থা পুনরুদ্ধার করা হলে এবং উত্তর কোরিয়ার শাসন-নিরাপত্তা উদ্বেগ হ্রাস পেলে, আমরা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।”
তবে কিম ধাপে ধাপে সমাধানের প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। উত্তর কোরিয়ার নেতা বলেন, “বিশ্ব জানে, কোনো দেশ নিরস্ত্রীকরণে রাজি হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র কী করে। তাই আমরা কখনো পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়ব না।”
নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে কিম বলেন, “নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য শিক্ষা হয়েছে। এতে আমরা আরো শক্তিশালী ও সহনশীল হয়েছি।”
২০০৬ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষার পর থেকে উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞাগুলো সামরিক উন্নয়নের জন্য তহবিল সঙ্কুচিত করলেও, পিয়ংইয়ং পারমাণবিক অস্ত্র এবং শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ক ম জ উন য ক তর ষ ট র প রস ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আফসোস নিয়েও বিশ্বকাপে আরও বেশি ম্যাচ জিততে চান নিগাররা
শ্রীলঙ্কার বিমান ধরতে হবে আগামীকাল। উদ্দেশ্য নারী বিশ্বকাপ। তার আগে আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনের পর হওয়া সফর-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে একটা আফসোসই শোনা গেল বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানার কণ্ঠে। আফসোসটা বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের আগে কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে না পারা।
কোচ সারওয়ার ইমরানের পাশে বসেই সেই আফসোসের কথাটা বললেন নিগার, ‘অবশ্যই বড় দলের সঙ্গে খেলতে পারলে ভালো হতো। আদর্শ প্রস্তুতি হয়তো হয়নি।’
সঙ্গে অবশ্য বলেছেন, অনুশীলন ক্যাম্পের ঘাটতিটা দূর করার চেষ্টা করেছেন তাঁরা, ‘বাংলাদেশে যত ধরনের ফ্যাসিলিটি আছে, সব কটি আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা যতগুলো ক্যাম্প করেছি, সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। যেটা হয়নি, সেটা নিয়ে চিন্তা করছি না। যেভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, আমার মনে হয় ক্রিকেটাররা সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’
বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে না পারা নিয়ে যদিও–বা আক্ষেপ থেকে যাচ্ছে, তবু বিশ্বকাপে কিছু ম্যাচ জিততে চায় বাংলাদেশ নারী দল।
কোচ সারওয়ার ইমরান তাঁর দলের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়েই বললেন সেটা, ‘আমাদের লক্ষ্য ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলা ও ভালো খেলা। আমাদের দুটি ম্যাচে ভালো সুযোগ আছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া অন্যান্য দলের সঙ্গেও…। আমরা কাউকে বড় করে দেখছি না। প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলব। গত বিশ্বকাপে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি। এবার আরও কিছু ম্যাচ জেতার জন্য যাচ্ছি।’
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের বিপক্ষে হেরেছে নিগারের দল। নিগার অবশ্য বলেছেন, তাঁরা অনূর্ধ্ব-১৫ ছেলেদের দলের বিপক্ষে পূর্ণশক্তির দল নামাননি। সঙ্গে স্বীকার করেছেন, তাঁরা নিজেরাও পারেননি প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে।
তবে কোচ সারওয়ার বলেন, ‘আমরা কিন্তু ওদের সঙ্গে ৪৯ রানেও অলআউট হয়েছি, বিকেএসপিতে। দিনে দিনে আমাদের উন্নতি হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৫ দলের যে ফিল্ডিং, সেখানে আমরা ধরা খেয়েছি বলা যায়। ওদের বোলিং, ফিল্ডিং খুব ভালো ছিল।’
খুব বেশি আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে না পারার হতাশাটা নিগার বলেছেন অন্য এক প্রসঙ্গেও, ‘আমরা একটি সিরিজ খেলেছি, এরপর তিন-চার মাস আর খেলিনি। একটি ব্যাটিং ইউনিটকে ভালো উইকেটে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে হয়। পাকিস্তানে যখন খেলেছিলাম, এক ম্যাচ বাদে আমরা সব ম্যাচে দুই শর বেশি রান করেছি, যদিও সাধারণত আমাদের গড় ১৮০।’
নিগারের চোখে এর অর্থ—বাংলাদেশের ব্যাটারদের ভালো উইকেটে বড় রান করার সামর্থ্য আছে। সঙ্গে দলের বোলিং আক্রমণের ওপরও ভরসা রাখছেন তিনি। ‘সামনে চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু আইসিসি টুর্নামেন্টে ভালো উইকেটে খেলার জন্য এটা দারুণ সুযোগ’, বলেছেন অধিনায়ক।
৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু নারী বিশ্বকাপ এবার হবে ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। ২ অক্টোবর কলম্বোয় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশের মেয়েরা। লিগ পর্বে বাংলাদেশের বাকি ছয়টি ম্যাচই ভারতে। মূল বিশ্বকাপ শুরুর আগে শ্রীলঙ্কা আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন মেয়েরা।
কোচ বলেছেন, ‘সেখানে আমরা দলকে আবার পর্যালোচনা করতে পারব, ভিন্ন কম্বিনেশন চেষ্টা করতে পারব। আমরা দলের প্রতিটি দিক নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা দুর্বলতাগুলো কাটানোর চেষ্টা করছি। অধিকাংশ ট্রেনিং সেশনে ম্যাচ সিনারিও নিয়েও কাজ করেছি।’
বিশ্বকাপ সামনে রেখে বিসিবির পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে মেয়েদের। নিগার ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন সেটাকে, ‘এত অল্প সময়ে অত বেশি কাজ করা যায় না। তবু বলব যে ভালো অভিজ্ঞতা। উনি পাওয়ার হিটিং শেখাতে চেয়েছেন। তবে এত অল্প সময়ে আসলে মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন। আমরা যে ফরম্যাট খেলতে যাচ্ছি, অবশ্যই সেখানেও পাওয়ার হিটিং দরকার আছে। ছোট-ছোট কিছু কাজ, যেগুলো তিনি করে গেছেন, ক্রিকেটাররা সেগুলো ব্যবহার করতে পারলে অবশ্যই ম্যাচে অনেক কাজে লাগবে।’
বিশ্বকাপের দল থেকে অফ স্পিনার সুমনার বাদ পড়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কোচ আজ সেটারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘সুমনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দিন লেগেছে আমাদের। নির্বাচকদের সঙ্গে আমি এবং অধিনায়কও ছিলাম। পাকিস্তানের সঙ্গে যখন আমরা খেলি, তখন ওদের বাঁহাতি ব্যাটার অপরাজিত ছিল। ওই সময় অধিনায়ক যখন সুমনাকে বল করতে বলল, সুমনা বোলিং করেনি। ঢাকাতে হোক বা প্রস্তুতি ম্যাচে হোক, বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে ও বোলিং করতে পারে না। আমাদের মূল খেলা হলো পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। আমাদের একজন অফ স্পিনার লাগবে, যে বাঁহাতি ব্যাটারকে বল করতে পারে।’
এ ব্যাপারে নিগারের কথা, ‘আমরা সুমনা আর নিশিতাকে অনুশীলন ও প্রস্তুতি ম্যাচে পর্যবেক্ষণ করেছি। নিশিতাকে এগিয়ে রাখা হয়েছে, কারণ, সে আমাদের কাছে ভালো মনে হয়েছে। সে খুব নির্ভুল অফস্পিনার। দলের যা চাহিদা, তা দিতে পারে। এটা নয় যে সুমনা ভালো খেলোয়াড় নয়, তার সামনে আরও অনেক সুযোগ আছে।’