আফসোস নিয়েও বিশ্বকাপে আরও বেশি ম্যাচ জিততে চান নিগাররা
Published: 22nd, September 2025 GMT
শ্রীলঙ্কার বিমান ধরতে হবে আগামীকাল। উদ্দেশ্য নারী বিশ্বকাপ। তার আগে আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনের পর হওয়া সফর-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে একটা আফসোসই শোনা গেল বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানার কণ্ঠে। আফসোসটা বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের আগে কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে না পারা।
কোচ সারওয়ার ইমরানের পাশে বসেই সেই আফসোসের কথাটা বললেন নিগার, ‘অবশ্যই বড় দলের সঙ্গে খেলতে পারলে ভালো হতো। আদর্শ প্রস্তুতি হয়তো হয়নি।’
সঙ্গে অবশ্য বলেছেন, অনুশীলন ক্যাম্পের ঘাটতিটা দূর করার চেষ্টা করেছেন তাঁরা, ‘বাংলাদেশে যত ধরনের ফ্যাসিলিটি আছে, সব কটি আমরা পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা যতগুলো ক্যাম্প করেছি, সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। যেটা হয়নি, সেটা নিয়ে চিন্তা করছি না। যেভাবে প্রস্তুত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, আমার মনে হয় ক্রিকেটাররা সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’
বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে না পারা নিয়ে যদিও–বা আক্ষেপ থেকে যাচ্ছে, তবু বিশ্বকাপে কিছু ম্যাচ জিততে চায় বাংলাদেশ নারী দল।
কোচ সারওয়ার ইমরান তাঁর দলের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়েই বললেন সেটা, ‘আমাদের লক্ষ্য ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলা ও ভালো খেলা। আমাদের দুটি ম্যাচে ভালো সুযোগ আছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এ ছাড়া অন্যান্য দলের সঙ্গেও…। আমরা কাউকে বড় করে দেখছি না। প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলব। গত বিশ্বকাপে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি। এবার আরও কিছু ম্যাচ জেতার জন্য যাচ্ছি।’
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের বিপক্ষে হেরেছে নিগারের দল। নিগার অবশ্য বলেছেন, তাঁরা অনূর্ধ্ব-১৫ ছেলেদের দলের বিপক্ষে পূর্ণশক্তির দল নামাননি। সঙ্গে স্বীকার করেছেন, তাঁরা নিজেরাও পারেননি প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে।
তবে কোচ সারওয়ার বলেন, ‘আমরা কিন্তু ওদের সঙ্গে ৪৯ রানেও অলআউট হয়েছি, বিকেএসপিতে। দিনে দিনে আমাদের উন্নতি হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৫ দলের যে ফিল্ডিং, সেখানে আমরা ধরা খেয়েছি বলা যায়। ওদের বোলিং, ফিল্ডিং খুব ভালো ছিল।’
খুব বেশি আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে না পারার হতাশাটা নিগার বলেছেন অন্য এক প্রসঙ্গেও, ‘আমরা একটি সিরিজ খেলেছি, এরপর তিন-চার মাস আর খেলিনি। একটি ব্যাটিং ইউনিটকে ভালো উইকেটে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে হয়। পাকিস্তানে যখন খেলেছিলাম, এক ম্যাচ বাদে আমরা সব ম্যাচে দুই শর বেশি রান করেছি, যদিও সাধারণত আমাদের গড় ১৮০।’
নিগারের চোখে এর অর্থ—বাংলাদেশের ব্যাটারদের ভালো উইকেটে বড় রান করার সামর্থ্য আছে। সঙ্গে দলের বোলিং আক্রমণের ওপরও ভরসা রাখছেন তিনি। ‘সামনে চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু আইসিসি টুর্নামেন্টে ভালো উইকেটে খেলার জন্য এটা দারুণ সুযোগ’, বলেছেন অধিনায়ক।
৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু নারী বিশ্বকাপ এবার হবে ভারত ও শ্রীলঙ্কায়। ২ অক্টোবর কলম্বোয় পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশের মেয়েরা। লিগ পর্বে বাংলাদেশের বাকি ছয়টি ম্যাচই ভারতে। মূল বিশ্বকাপ শুরুর আগে শ্রীলঙ্কা আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন মেয়েরা।
কোচ বলেছেন, ‘সেখানে আমরা দলকে আবার পর্যালোচনা করতে পারব, ভিন্ন কম্বিনেশন চেষ্টা করতে পারব। আমরা দলের প্রতিটি দিক নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা দুর্বলতাগুলো কাটানোর চেষ্টা করছি। অধিকাংশ ট্রেনিং সেশনে ম্যাচ সিনারিও নিয়েও কাজ করেছি।’
বিশ্বকাপ সামনে রেখে বিসিবির পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে মেয়েদের। নিগার ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন সেটাকে, ‘এত অল্প সময়ে অত বেশি কাজ করা যায় না। তবু বলব যে ভালো অভিজ্ঞতা। উনি পাওয়ার হিটিং শেখাতে চেয়েছেন। তবে এত অল্প সময়ে আসলে মানিয়ে নেওয়াটা কঠিন। আমরা যে ফরম্যাট খেলতে যাচ্ছি, অবশ্যই সেখানেও পাওয়ার হিটিং দরকার আছে। ছোট-ছোট কিছু কাজ, যেগুলো তিনি করে গেছেন, ক্রিকেটাররা সেগুলো ব্যবহার করতে পারলে অবশ্যই ম্যাচে অনেক কাজে লাগবে।’
বিশ্বকাপের দল থেকে অফ স্পিনার সুমনার বাদ পড়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কোচ আজ সেটারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘সুমনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দিন লেগেছে আমাদের। নির্বাচকদের সঙ্গে আমি এবং অধিনায়কও ছিলাম। পাকিস্তানের সঙ্গে যখন আমরা খেলি, তখন ওদের বাঁহাতি ব্যাটার অপরাজিত ছিল। ওই সময় অধিনায়ক যখন সুমনাকে বল করতে বলল, সুমনা বোলিং করেনি। ঢাকাতে হোক বা প্রস্তুতি ম্যাচে হোক, বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে ও বোলিং করতে পারে না। আমাদের মূল খেলা হলো পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। আমাদের একজন অফ স্পিনার লাগবে, যে বাঁহাতি ব্যাটারকে বল করতে পারে।’
এ ব্যাপারে নিগারের কথা, ‘আমরা সুমনা আর নিশিতাকে অনুশীলন ও প্রস্তুতি ম্যাচে পর্যবেক্ষণ করেছি। নিশিতাকে এগিয়ে রাখা হয়েছে, কারণ, সে আমাদের কাছে ভালো মনে হয়েছে। সে খুব নির্ভুল অফস্পিনার। দলের যা চাহিদা, তা দিতে পারে। এটা নয় যে সুমনা ভালো খেলোয়াড় নয়, তার সামনে আরও অনেক সুযোগ আছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ত ব শ বক প দল র ব আম দ র বল ছ ন অবশ য
এছাড়াও পড়ুন:
রাবি উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর হওয়া হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এই কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আরো পড়ুন:
বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় জাবির ৮ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
হাবিপ্রবিতে ঘুষের অভিযোগে দুদকের অভিযান
শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দাবি, শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) যারা শিক্ষকের গায়ে হাত দিয়েছে তাদের বহিষ্কার করতে হবে। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা (পোষ্য কোটা) নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষায় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন বলেও জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল আলিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-শিক্ষকদের ওপর সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলাকে আমরা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখি। এমন জঘন্য কর্মকাণ্ড কোনো আদর্শবান শিক্ষার্থীর কাজ হতে পারে না। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা এবং ছাত্রত্ব বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করুন।”
অফিসার্স সমিতির সভাপতি মুক্তার হোসেন বলেন, “উপ-উপাচার্যহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দের উপর যে ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে, তেমন নিদর্শন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। যারা এ কার্যকলাপে জড়িত, তাদের ছাত্রত্ব অবিলম্বে বাতিল করা হোক এবং তারা প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুক। আমরা প্রশাসনের দ্রুত ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়া চালানোর দাবি জানাই। যদি তা না হয়, আমরা সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান নেওয়ার দিকে যেতে বাধ্য হবো।”
এর আগে, রাবিতে কর্মরতদের সন্তানদের ভর্তির জন্য আগে থেকেই ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একের পর এক আন্দোলন শুরু করেন।
সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ১৮ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে জরুরি অ্যাকাডেমিক কমিটির সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় ১০ শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আবার টানা আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মাঈন উদ্দিনসহ প্রশাসনে থাকা তিনজন কর্মকর্তা জুবেরী ভবনে শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। পরে জুবেরী ভবনে উপ-উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে সেখানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাতে জুবেরী ভবনের সামনে থেকে অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হন। পরে গভীর রাতে হল থেকে বের হয়ে এসে ছাত্রীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তারা মাঝরাত পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
পরে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব মধ্যরাতে বাসার প্রধান ফটকের সামনে এসে ঘোষণা দেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তি আপাতত স্থগিত। এ নিয়ে রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শনিবার রাতেই কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এদিন তারা ঘোষণা দেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় সন্তানদের ভর্তির সুযোগ না দিলে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে যাচ্ছেন তারা। তবে ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রাকসু নির্বাচন এ কর্মসূচির বাইরে থাকবে।
এ ঘোষণা পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত আছে।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী