একটি কক্ষের ভেতর টেবিলের ওপর সাজানো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মুঠোফোন। রয়েছে আইফোনও। ঘুরে ঘুরে ফোনগুলো দেখছেন লোকজন। নিজের প্রিয় ফোনটি পেয়ে কেউ খুশিতে আত্মহারা। আবার কেউ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের মনসুরাবাদ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের (উত্তর) কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষের চিত্র এটি। আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মুঠোফোনগুলো প্রদর্শনীর জন্য রাখা হবে।

চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, লোকজন যাতে চুরি বা ছিনতাই হওয়া নিজের পছন্দের মুঠোফোন চিনতে পারেন, সে জন্য এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এরই মধ্যে আটজন প্রকৃত মালিককে শনাক্ত করা হয়েছে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে। আদালতের অনুমতিক্রমে তাঁদের মুঠোফোনগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। আর আদালতে আবেদন করাসহ সব কাজ পুলিশই করবে। পুরো কাজ শতভাগ স্বচ্ছতা, সততা ও পেশাদারির সঙ্গে করা হচ্ছে।

ডিবি কার্যালয়ে আসা কলেজছাত্রী রিয়া শ্রী দেবীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, গত ৫ জুলাই নগরের কোতোয়ালি মোড়ে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর ব্যাগ থেকে মুঠোফোনটি হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু জিডির তদন্তে কোনো অগ্রগতি ছিল না। মুঠোফোনটি পাবেন, সে আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পারেন, পুলিশ বেশ কিছু মুঠোফোন উদ্ধার করেছে। রোববার দুপুরে মনসুরাবাদ এসে তাঁর হারানো মুঠোফোনের শনাক্তকরণের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি বা আইএমইআই নম্বরের সঙ্গে পুলিশের উদ্ধার করা মুঠোফোনের নম্বর মিলে যায়। এরপর রিয়া মুঠোফোনটির মালিকানার কাগজ ও জাতীয়তার সনদ জমা দেন পুলিশকে।

রিয়া শ্রী দেবী আরও বলেন, হারানো মুঠোফোনটি পাওয়া গেছে বলে তিনি খুশি। আশা করছেন, আদালতের অনুমতিক্রমে কয়েক দিনের মধ্যে হাতে পেয়ে যাবেন।

নগরের বন্দর এলাকা থেকে আসেন ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান। তাঁর মুঠোফোনটি বাসে করে যাওয়ার সময় গত ১ আগস্ট চোর নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ডিবি কার্যালয়ে আসেন। কিন্তু তাঁর মুঠোফোনের আইএমইআই নম্বর পুলিশের উদ্ধার করা মুঠোফোনের সঙ্গে মেলেনি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরের কোতোয়ালি পুরোনো রেলস্টেশন ও চৈতন্যগলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডিবি পুলিশ ১৪৮টি চোরাই মুঠোফোনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন সোহেল মিয়া (৩৩), আবদুল হাকিম প্রকাশ রাকিব (২৭) ও মো.

ইয়াছিন (২০)।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তি তাঁর বাসা থেকে একটি মুঠোফোন চুরির অভিযোগ দেন ডিবির (বন্দর) কাছে। প্রায় এক মাস আগে তাঁর ফোনটি চুরি হয়। সেটি উদ্ধার করতে গিয়ে অভিযান চালিয়ে দুটি আইফোনসহ ১৪৮টি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাও ছিল। গ্রেপ্তার তিন আসামি নগরে বিভিন্ন সময়ে চুরি, ছিনতাই ও হারানো মুঠোফোন কম দামে কিনে বিক্রি করার কথা স্বীকার করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ঠ ফ নট নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মাথা ও শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন।

ওই শিক্ষার্থীর নাম আসাদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অনশনের সময় তাঁর পেছনে রাখা ব্যানারে লেখা ছিল—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে আমরণ অনশন ধর্মঘট’।

আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটাকে নির্মূল করার জন্যই আমার এ কর্মসূচি। জুলাই আন্দোলনে যে কোটার বিরুদ্ধে এত রক্তপাত, এত মৃত্যু, স্বৈরশাসকের পতন হলো, সেই কোটা আবার ফিরেছে। আমি কোটার পক্ষে নই। যদি কোটা দেওয়া হয়, সেটা কৃষক-শ্রমিক-মজুরের সন্তানদের দেওয়া হোক। এই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমার অনশন চলবে। আমি কোনো খাবার-পানি খাব না। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ আসেনি। রাতে এখানেই অবস্থান করব।’

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত ইস্যু। এটি অন্যায্য ও অযৌক্তিক একটি কোটা। তাঁরা প্রয়োজনে রক্ত দেবেন, তবু ক্যাম্পাসে এ কোটা ফিরতে দেবেন না। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন ঘিরে যখন ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখন এ সিদ্ধান্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না বলে তাঁরা জানান।

কোটা পুনর্বহালের বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত ২১ সেপ্টেম্বরের রাকসু নির্বাচনে শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। এ জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের ভর্তি উপকমিটি এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যা চান, সেটাই হবে। কারণ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় চান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাশবনে নারীর লাশ: ‘খুনি’ ঋণগ্রস্ত স্বামী, বলছে পুলিশ
  • বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন জরুরি, ফলাফলও সবার মেনে নেওয়া উচিত: মৌনির সাতৌরি
  • পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী