হাজী মোহাম্মদ দানেশ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
Published: 22nd, September 2025 GMT
দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ (হাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সন্ধ্যা থেকে অন্তত এক শ শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ সময় উপাচার্যের কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৈঠক করেন।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে প্রশাসন ভবনের ভিআইপি হলরুমে কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রায় ৪৫ মিনিট আলোচনা হয়। তবে কোনো ফলাফল না আসায় বৈঠক অসমাপ্ত থেকে যায়। পরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম এনামুল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর কবির, প্রক্টর শামসুজ্জোহা, ছাত্র উপদেষ্টা এস এম এমদাদুল হাসান প্রমুখ।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত ২৭ জুলাই হাকসু নির্বাচনের দাবিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাত একটার দিকে আট সদস্যের কমিটি গঠন করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দেন। আশ্বাসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন। তবে কমিটি গঠনের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন বা রোডম্যাপ ঘোষণার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আজ দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কমিটির সঙ্গে বৈঠক করলে কমিটি আশ্বস্ত করে, ২৪ সেপ্টেম্বর গঠনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হবে এবং নির্বাচনের বিষয়ে জানানো হবে। পরে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি শিক্ষার্থীদের বিকেলে ভিআইপি হলরুমে বসার আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী এ টি এম সিফাতউল্লাহ বলেন, ‘হাকসু নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে আজ বিকেলে আমাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আলোচনা হয়েছে। প্রশাসন সব পক্ষের উপস্থিতি না থাকার কথা জানিয়ে আগামী ২৪ তারিখ আবারও বসবে বলে জানায়। আমরা চাই গঠনতন্ত্র প্রস্তুতির কাজ চলতে থাকুক, তবে অন্তত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গঠনতন্ত্র ছাড়াই রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। অথচ আমাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মানেনি। রোডম্যাপ ঘোষণা না করা পর্যন্ত আমরা প্রশাসন ভবনের সামনেই অবস্থান করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শামসুজ্জোহা বলেন, ‘আজ অনানুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে, তবে আজ অধিকাংশই অনুপস্থিত ছিল। হাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠনতন্ত্রের খসড়াও করেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের জানিয়েছি, ২৪ সেপ্টেম্বর খসড়া গঠনতন্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃষ্টির মধ্যে অনশনে একদল শিক্ষার্থী, অসুস্থ দুজন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে বসেছেন এক শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে সামনে এই অনশন অব্যাহত রেখেছেন তিনি। রাতে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন আরও তিন শিক্ষার্থী। পরে আজ শনিবার সকালে একদল শিক্ষার্থী সেখানে যুক্ত হয়েছেন।
আজ শনিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে সামনে এসব শিক্ষার্থীদের অনশনরত অবস্থায় দেখা গেছে। পরে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুজন। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনপোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনাকে রাকসু বানচালের ষড়যন্ত্র বলছেন প্রার্থীরা১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫অনশন শুরু করা ওই শিক্ষার্থীর নাম আসাদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর ব্যানারে লেখা আছে—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামক বিষফোড়া পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে আমরণ অনশন ধর্মঘট’। রাতে আসাদুলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন আরবি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রমজানুল মোবারক, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সজিবুর রহমান এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সমাজকর্ম বিভাগের আরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া আজ সকালে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে যোগ দিয়েছেন। তাদের রমজানুল মোবারক ও সাঈদ নামের দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়।
অনবরত অবস্থায় আসাদুল ইসলাম বলেন, পোষ্য কোটা নামের বিষফোড়া আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটিকে নির্মূল করার জন্যই এই কর্মসূচি। পোষ্য কোটা বাতিল না করা পর্যন্ত তিনি অনশন ভাঙবেন না।
আরও পড়ুনপোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ২১ ঘণ্টা আগেরমজানুল মোবারক বলেন, রাকসুকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সুযোগ নিয়েছেন। তাঁরা পোষ্য কোটা বাতিলের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদও (রাকসু) চান।
আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে যান প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও ছাত্র উপদেষ্টা সহযোগী আমিরুল ইসলাম। কিন্তু তাঁদের কথাতেও অনশন ভাঙেননি শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই অনশন চালিয়ে যান তাঁরা।
আরও পড়ুনপোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে সাড়ে ৪ ঘণ্টা বিক্ষোভ, আজ দুপুরে নতুন কর্মসূচি১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ বিষয়ে আমিরুল ইসলাম আজ দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনশনরত দুই শিক্ষার্থী বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ পড়েছে। তাঁদের মেডিকেলে নিয়ে এসেছি। দুজনেরই ঠান্ডাজ্বর লেগেছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের একজনকে আবাসিক হল এবং অন্যজনকে মেসে দিতে যাচ্ছি।’
গত বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ শর্তে ফিরল পোষ্য কোটা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫