নারীর পোশাক নাকি বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি: ধর্ষণের পেছনে কারণ কী
Published: 22nd, September 2025 GMT
বর্তমান সমাজের এক কলুষিত অধ্যায় ধর্ষণ। বাংলাদেশে ধর্ষণের সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিশু, কিশোরী, নারী এবং বৃদ্ধ নারীরা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এর পেছনে দায়ভার কার? নারীর পোশাক, নাকি বিকৃত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির?
সমাজে একশ্রেণির মানুষ রয়েছে, যারা নারীর ধর্ষণের পেছনে নারীর পোশাককে দোষারোপ করে। যদি নারীর পোশাকই ধর্ষণের পেছনের কারণ হতো, তাহলে শিশু ধর্ষিত হতো না, বৃদ্ধ নারীও ধর্ষিত হতো না। অনেকে মনে করে, বোরকা পরিধান করলে, নিজেকে কাপড় দ্বারা আবৃত করলে ধর্ষণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তবে এর কোনোটাই হয় না। ধর্ষণের জন্য কেবল ধর্ষক দায়ী। নারীর পোশাক নয়। সমাজের এই বিকৃত মনমানসিকতার কারণে নারীদের হেনস্তা হতে হচ্ছে। অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী আমরা জানতে পারি, শুধু গত কয়েক বছরে হাজারো নারী ও শিশুকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই ছিল স্কুলের পোশাক পরিহিত শিশু, কেউবা পরিবারের মধ্যে নিরাপদ মনে করা পোশাকেই। গ্রামাঞ্চলে যেখানে নারীরা বোরকা বা শাড়ি পরেন, সেখানেও এমন অপরাধ ঘটছে নিয়মিত। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষণাও দেখিয়েছে, পোশাক ধর্ষণের কারণ নয়; বরং মূল কারণ হলো অপরাধীর মানসিক বিকৃতি, সামাজিক অবক্ষয়, আর আইনের দুর্বল প্রয়োগ।
সমাজের বিকৃত মনমানসিকতা এবং বেড়ে চলা ধর্ষণ নারীদের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সমাজের বিকৃত মনমানসিকতা এবং এই ধর্ষণের পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমাজের মানুষের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। সমাজের মানুষেরা মনে করে, নারী কোনো মানুষ নয়; তারা হচ্ছে ভোগ্যপণ্য। তাই এমন ঘটনাগুলো ঘটে প্রতিনিয়ত। অশিক্ষা ও সচেতনতার অভাব ধর্ষণের পেছনে দায়ী।
সমাজের সবাইকে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ শেখানো হয় না; বরং তাকে দুর্বল ভাবা হয়। যার কারণে নারী পরিণত হয় ভোগ্যপণ্যে। দুর্বল বিচারব্যবস্থার ফলে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষকেরা কিছু টাকা জরিমানা দিয়েই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। ফলে অধিকাংশ সময় ধর্ষিতারা বিচার চাইতেও আসছে না। মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও শাস্তির নিশ্চয়তা না থাকায় অপরাধীরা ভয় পায় না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষ নারীর ওপর জোর খাটাচ্ছে। রাজনীতি বা প্রভাবশালী পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় অনেক ধর্ষক তৈরি হচ্ছে। তারা থেকে যাচ্ছে আইনের বাইরে।
পারিবারিক বৈষম্যও ধর্ষণে ভূমিকা রাখে। ছেলেদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়, মেয়েদের সীমাবদ্ধ করা হয়। এতে ছেলেদের মধ্যে আধিপত্যবোধ জন্ম নেয়। মিডিয়ার অসুস্থ প্রভাব নয়, অসুস্থ দর্শক ধর্ষণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছে। কোনো কনটেন্টকে অনেকে বিনোদন হিসেবে দেখে, আবার কেউ বিকৃত চিন্তার খোরাক বানায়।
সমাজে নারীদের দোষারোপ করা যতটা সহজ, দোষীকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া ততটাই কঠিন। হয়তো দোষীকে শাস্তি দিতে না পারার ব্যর্থতা থেকে তারা নারীকে দোষারোপ শুরু করে। কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজে ধর্ষণের প্রবণতা কমানো যেতে পারে এবং সমাজের বিকৃত মনমানসিকতার পরিবর্তন আনা যেতে পারে মানসিকতার পরিবর্তন করার মাধ্যমে। শিক্ষা, পরিবার ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে নারীকে সম্মান করতে শেখাতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। ছোটবেলা থেকেই ছেলে-মেয়েকে সমান মর্যাদায় গড়ে তোলা প্রয়োজন। ছেলেদের অধিক স্বাধীনতা তাদের মনে নারীর ওপর আধিপত্য স্থাপনের মনমানসিকতার জন্ম দেয়। দ্রুত বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষকদের জন্য সময়োপযোগী ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ধর্ষণের চিন্তা মাথায় এলেও রুহ কাঁপে।
সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। মিডিয়া, সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে আমাদের সমাজে নতুন করে ধর্ষকের সৃষ্টি না হয়। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের আর্থিক, সামাজিক ও আত্মরক্ষামূলক ক্ষমতা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, নারী দুর্বল নয়। সমাজে সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। নারীকে শুধুই মা-বোন হিসেবে নয়, একজন পূর্ণ মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে হবে।
রাষ্ট্রে বসবাসরত প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ। হোক সে নারী কিংবা পুরুষ। রাষ্ট্রের কোনো নিরীহ নাগরিকের সঙ্গে অন্যায়-অত্যাচার মানে সরকার এবং রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রতিনিয়ত ঘটে চলা ধর্ষণ রোধে সরকারের উচিত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কেননা, নারীরা আমাদের রাষ্ট্রের মানবসম্পদ। তাদের ক্ষতি হওয়া মানে রাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়া।
ধর্ষণের দায় নারীর পোশাকে চাপানো কেবল ভুক্তভোগীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ নয়, বরং অপরাধীকেও উৎসাহিত করে। আমাদের আসল দায়িত্ব হওয়া উচিত ধর্ষকদের এবং সমাজের মানুষদের মানসিকতা বদলানো এবং আইনকে আরও শক্তিশালী করা। কারণ, নারীর পোশাক নয়, বিকৃত মানসিকতাই ধর্ষণের জন্ম দেয়।
নুসরাত জাহান স্মরনীকা
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর দ র বল অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ক্রিকেটারের সঙ্গে প্রেম, গোপনে পাইলটকে নায়িকার বিয়ে!
ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সোনম বাজওয়া। দক্ষিণী সিনেমায় অভিনয় করে অধিক খ্যাতি কুড়ালেও হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে খুব একটা শক্ত জায়গা করতে পারেননি এই অভিনেত্রী। বলিউডে পরিচিতি না পেলেও ব্যক্তিগত কারণে নানা সময়ে চর্চায় থেকেছেন সোনম। হিন্দি চলচ্চিত্রজগতে হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে পঞ্জাবি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি নামকরা অভিনেত্রী। বলিউডে পরিচিতি তৈরি করতে না পারলেও ব্যক্তিগত জীবনের কারণে সব সময় চর্চায় থেকেছেন অভিনেত্রী সোনম বাজওয়া। একাধিক ক্রিকেটারের সঙ্গে যেমন নাম জড়িয়েছে, তেমনি বলিউড বাদশা শাহরুখের ‘প্রেমিকা’ হতে চেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
১৯৮৯ সালের ১৬ আগস্ট ভারতের উত্তরাখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন সোনম। বাবা-মা, জমজ ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। তার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শৈশব থেকেই মডেলিংয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল সোনমের। সেরা সুন্দরী প্রতিযোগিতা জিততে চেয়েছিলেন। স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, সেখান স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে বিমানসেবিকা হিসেবে কিছু দিন কাজ করেন সোনম।
২০১২ সালে ‘মিস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন সোনম। বিজয়ী হতে না পারলেও সেই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছান। সেখান থেকে সোনমের জীবনের মোড় অন্যদিকে ঘুরে যায়। ২০১৩ সালে পাঞ্জাবি ভাষার একটি সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পান। পাঞ্জাবি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তারপর তামিল, তেলুগু ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেন সোনম। পাঞ্জাবি ভাষার একাধিক মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন।
বলিপাড়ায় কাজের সুযোগ পেতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয় সোনমকে। আশাভঙ্গও হয়েছিল তার। এক সাক্ষাৎকারে সোনম জানিয়েছিলেন, বলিউডের বড় একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনটি হিন্দি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন। পরে পরিচালক বেঁকে বসেন। চুক্তির সঙ্গে জড়িত প্রথম সিনেমার শুটিং শুরুর আগেই বাধার মুখে পড়েন। শুটিং শুরুর ছয় দিন আগে পরিচালক জানান, তিনি সোনমের উপর ভরসা করতে পারছেন না। পরে সোনমের তিনটি সিনেমার চুক্তি বাতিল হয়।
২০১৪ সালে মুক্তি পায় ফারাহ খান নির্মিত ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সিনেমাটির মোহিনী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিয়ে সুযোগ পাননি সোনম। শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেতে পারেন বলে অডিশন দিয়েছিলেন সোনম। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন দীপিকা পাড়ুকোন। শাহরুখের ‘প্রেমিকা’ হতে চেয়েও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি সোনমের।
ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের ভয় থেকে বলিউডের বেশ কিছু সিনেমার প্রস্তাব ফেরান সোনম। ফিল্ম কম্পানিয়নকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী বলেন, “ঘনিষ্ঠ দৃশে অভিনয় করতে হবে, এজন্য বলিউডের একাধিক সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়েছি। কারণ পাঞ্জাবি সিনেমার দর্শকরা আহত হতে পারেন। পরে বুঝতে পারি সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল।” ২০১৯ সালে আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত ‘বালা’ সিনেমার একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করেন সোনম। তাছাড়া ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্ট্রিট ড্যান্সার থ্রিডি’ সিনেমার একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। গানের দৃশ্যটি সিনেমায় না থাকলেও তা আলাদাভাবে ইউটিউবে মুক্তি পায়।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে রক্ষিত অগ্নিহোত্রী নামে এক পাইলটকে গোপনে বিয়ে করেন সোনম। দিল্লির বাসিন্দা রক্ষিতের সঙ্গে তিন বছরের সম্পর্ক ছিল তার। পরে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি সোনম। এর আগে সোনমের ব্যক্তিগত জীবন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ক্রিকেটার কেএল রাহুলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সোনম। ২০১৮ সালে ইনস্টাগ্রামে সোনম ও কেএল রাহুল পরস্পরের পোস্টে কমেন্ট চালাচালি করেন। এ নিয়ে নেটিজেনরাও চর্চা কম করেননি। পরে বলিউড অভিনেত্রী আথিয়া শেঠির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান এবং বিয়ে করেন কেএল রাহুল।
সোনমের নাম জড়িয়েছিল ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক শুভমন গিলের সঙ্গে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচে দুর্দান্ত দ্বিশতরান করেন শুভমন। বার বার বড় ইনিংস খেলে শিরোনামে এসে শুভমন যে সাফল্য অর্জন করেছিলেন, তার নেপথ্যে ছিলেন সোনম। পাঞ্জাবি ভাষার একটি চ্যাট শো সঞ্চালনা করতেন সোনম। সেই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় শুভমনকে। শুভমনের সঙ্গে হাত মেলান সোনম। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তা দেখেই গুঞ্জন চাউর হয়, সোনমের কারণেই শুভমনের পেশাগত জীবনে সাফল্য এসেছে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে সোনম লিখেছিলেন—“এসবই মিথ্যা।”
নতুন করে গুঞ্জন রয়েছে, নতুন করে সম্পর্কে জড়িয়েছেন সোনম কাপুর। তবে তার প্রেমিক পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রজগতের তারকা নন। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা তিনি। কিন্তু বলিপাড়ার সঙ্গেও তার কোনো যোগসূত্র নেই। যদিও এ নিয়ে টুঁ-শব্দ করেননি সোনম।
চলতি বছরে সোনম অভিনীত চারটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে তিনটি হিন্দি ভাষার সিনেমা। এগুলো হলো—‘হাউজফুল ৫’, ‘বাঘী ৪’, ‘এক দিওয়ানে কি দিওয়ানিয়ত’। বর্তমানে ‘বর্ডার টু’ সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সোনম। হিন্দি ভাষার এ সিনেমা ২০২৬ সালে মুক্তির কথা রয়েছে।
ঢাকা/শান্ত