পোষ্যকোটা ইস্যুতে শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। ক্লাস-পরীক্ষা রয়েছে বন্ধ। এ পোষ্যকোটা ব্যবস্থাকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক। 

গতকাল সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাবির শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হয়। এ কারণে ক্যাম্পাস প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর হঠাৎ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কিছু শর্তসাপেক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার নামে ফিরিয়ে দেওয়া হয় পোষ্যকোটা। এ ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন বসে যান আমরণ অনশনে। এসময় অসুস্থ হয়ে পড়ায় চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

পোষ্যকোটাকে কেন্দ্র করে গত ২০ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করে ক্যাম্পাসে। এসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।

এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে সিন্ডিকেটে সে সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ শিক্ষাবর্ষে ৪৪২ শিক্ষার্থী পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন ৯৪ জন। এ শিক্ষাবর্ষে মেধাতালিকায় ৭৭১তম হয়েও এক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেননি। অথচ পোষ্য কোটায় সাত হাজার ৭০০-এর উপরের অবস্থানে থেকেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

যে পোষ্য কোটা নিয়ে তুলকালাম সে ব্যবস্থা বিলোপের দাবি জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক। এর মধ্যে অন্যতম ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড.

মাহবুবুর রহমান বলেন, “শিক্ষা ও গবেষণা বন্ধ করে কোনোকিছুকেই সমর্থন করি না আমি। এগুলো বাদ দিয়ে কোনো শিক্ষার্থীর দাবি, এমনকি শিক্ষকদের দাবিও আমি সমর্থন করি না। আর পোষ্যকোটা কোনোকালেই যৌক্তিক ছিলো না আমার কাছে। আমি একজন শিক্ষক, আমি সবচেয়ে বড় পদে আছি। আমার সন্তানেরা সব থেকে বেশি প্রিভিলেজ পাবে পড়ালেখার ক্ষেত্রে। তারা আরো বেশি মেধাবী হবে। যদি না হয় আমার সে সামর্থ্য আছে অন্য জায়গায় পড়ানো। আমি বেসরকারিতে পড়াতে পারব বা বিদেশে পাঠাতে পারব।”

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আল মামুন বলেন, “পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের পক্ষে আমি না, আবার এভাবে রাখার পক্ষেও না। কারণ এর অপব্যবহার হয়। কিন্তু রাষ্ট্রে যারা চাকরি করে তাদের একটা অধিকারের বিষয় থাকে। এটা সবখানে থাকে প্রায় সব দেশেই থাকে। এক সময় যোগাযোগ, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ছিল না সন্তানেরা যাতে আমাদের কাছে থাকতে পারে সেজন্য পোষ্য কোটার প্রয়োজন ছিল। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থা সবকিছু উন্নত হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা যেহেতু কম স্বচ্ছল, উপযুক্ত পরিবেশ পায় না, তাদের সন্তানদের জন্য ১/২ শতাংশ বা আলাপ সাপেক্ষে কিছু কোটা রাখা যেতে পারে।”

তিনি আরো বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল কোটার ন্যায্যতা বিধান। কিন্তু শেখ হাসিনা আন্দোলনের মুখে দেমাগ দেখিয়ে ২০১৮ সালে সব কোটা বাতিল করে দিয়েছিলেন। আবার ২০২৪ সালে সব কোটা বহাল করেছিলেন। পরিণতি তো আমরা সবাই জানি! সেইভাবে, ত্যানা অনেক পেঁচিয়ে আজ যেখানে এসে আমরা পৌঁছালাম। যেভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রকাশ্যে ধস্তাধস্তি করতে দেখলাম তা খুব লজ্জার। এরকম ঘটনা আমি আগে দেখিনি দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে।”

নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাবিব জাকারিয়া বলেন, “শিক্ষার্থীরা যখন পোষ্য কোটা বাতিলের বিষয়ে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি আয়োজন করেছিল তখন আমি শিক্ষক হিসেবে প্রথম স্বাক্ষর করেছিলাম। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পরে পোষ্য কোটা থাকার কোন কারণ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন কারণ দেখি না। পোষ্য কোটার দাবিটা আমি স্বাভাবিকভাবে দেখছি না। এটার ভিতরে কী রাজনীতি চলছে এটা আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারব না। তবে যে সময়টা বেশি না হল সেটা সঠিক হয়নি। খুব সুন্দরভাবে ডাকসু, জাকসু হয়ে গেল এভাবে রাকসুও হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এটা সবার জন্য সম্মানের হতো। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও সম্মানের হত। কিন্তু যেটা ঘটছে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সম্মানের না। আমি খুবই আশাহত, এ ব্যাপারটা নিয়ে যে রাজনীতি এটা আসলে শোভন না।”

ঢাকা/ফাহিম/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

রূপগঞ্জ থেকে ছিনতাই হওয়া ব্লগার জিসানের মোটরসাইকেল গাজিপুরে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১ 

রূপগঞ্জে এশিয়ান বাইপাস সড়ক থেকে আলোচিত ব্লগার জিসানের ছিনতাই হওয়া মোটসাইকেলটি গাজিপুরে উদ্ধার করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। এসময় লিমন (২০) নামে ছিনতাইকারী চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানোর হয়। এরআগে শুক্রবার গভীর  রাতে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে গাজীপুর জেলার কাশিমপুর থানার বারেন্ডা এলাকা থেকে লিমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

শনিবার দুপুরে রূপগঞ্জ থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ’গ’ সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম  জানায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে ইউটিউব ব্লগার  জিসান (১৮) নামীয় ভুক্তভোগী ঢাকার মিরপুর থেকে মোটরসাইকেলে রূপগঞ্জ থানাধীন সদর ইউনিয়নের পূর্বাচল ৩০০ ফিট গোল চত্বর এলাকায়  তার বন্ধু ফয়সাল (২২) নিজ নিজ মালিকানাধীন মোটরসাইকেল যোগে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে আসে। 

পরবর্তীতে রাত ২টার দিকে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল যোগে রওনা হলে ঢাকা বাইপাস সড়কের কাঞ্চন পৌরসভার কুশাবো এলাকায় পৌঁছলে অজ্ঞাতনামা ৩জন দুষ্কৃতিকারী ভিকটিম জিসানের মোটসাইকেলের গতিরোধ করে থামায়। উক্ত অজ্ঞাতনামা ৩ জন দুষ্কৃতিকারীর মধ্যে ২ জন দুষ্কৃতিকারী তাদের হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাতে কোপ মেরে আঙ্গুলে কাটা রক্তাক্ত জখম করে। 

পরে ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়। শুক্রবার রাতে অভিযান পরিচালনা করে আসামি ইমতিয়াজ লিমন ওরফে রিমন (২০) কে গাজীপুরের কাশিমপুর থানার বারেন্ডা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

এসময় তার কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেল ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত  একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল নেদারল্যান্ডস, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
  • রূপগঞ্জ থেকে ছিনতাই হওয়া ব্লগার জিসানের মোটরসাইকেল গাজিপুরে উদ্ধার, গ্রেপ্তার ১