লন্ডনে চ্যাটজিপিটি থেকে নেওয়া ভুয়া মামলা উদ্ধৃত করায় তদন্তের মুখে বাংলাদেশি আইনজীবী
Published: 22nd, September 2025 GMT
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন আইনজীবী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টুল চ্যাটজিপিটি থেকে নেওয়া ভুয়া মামলা উদ্ধৃত করে অপেশাদার আচরণ করেছেন বলে রায় দিয়েছেন লন্ডনের আপার ট্রাইব্যুনাল (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাসাইলাম চেম্বার)। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আদালত থেকে বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
মামলাটি যুক্তরাজ্যে প্রথম বড় কোনো উদাহরণ, যেখানে একজন আইনজীবী চ্যাটজিপিটি দ্বারা তৈরি ভুয়া রায় আদালতে ব্যবহার করেছেন। ফলে এটি পুরো আইন পেশায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের ঝুঁকি ও নৈতিকতা নিয়ে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মামলার শুনানি হয় চলতি বছরের ২৩ জুলাই এবং রায় প্রকাশিত হয় ১২ আগস্ট। রায়ে বলা হয়, ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমান তাঁর আপিলের খসড়ায় ‘Y (China) [2010] EWCA Civ 116’ নামে একটি মামলা উদ্ধৃত করেন। কিন্তু বাস্তবে এই মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও আদালতে জেরার মুখে এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে এই মামলার উদ্ধৃতি এসেছে চ্যাটজিপিটি নামক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল থেকে। তবে আদালতে জমা দেওয়ার আগে তিনি এর সত্যতা যাচাই করেননি।
আদালতের বিচারপতি জাস্টিস ডভ ও জজ লিন্ডসলি বলেন, যেকোনো আইনজীবীর প্রথম দায়িত্ব হলো আদালতকে সত্য ও সঠিক তথ্য প্রদান করা। যাচাই ছাড়া এআই-সৃষ্ট কনটেন্ট ব্যবহার করা বিপজ্জনক ও অপেশাদার আচরণ। এ ঘটনায় একাধিকবার মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়ে ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমান সততা ও পেশাদারত্বের মানদণ্ড ভঙ্গ করেছেন।
ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, এটি ইচ্ছাকৃত ভুয়া মামলা তৈরি করার ঘটনা নয়। তাই পুলিশি তদন্ত বা আদালত অবমাননা প্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এ ধরনের আচরণ আদালত ও পেশার প্রতি আস্থাকে ক্ষুণ্ন করে। এ জন্য বিষয়টি বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডের কাছে পাঠানো হলো, যাতে তারা তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। বিচারপতিরা আরও উল্লেখ করেন, আদালতকে বিভ্রান্ত করার মতো শর্টকাট কোনো পথ বেছে নেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড হলো যুক্তরাজ্যের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটি আইনজীবীদের পেশাগত নীতি, আচরণবিধি ও মানদণ্ড নির্ধারণ করে এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান তদারক করে। কোনো আইনজীবী যদি আদালতে ভুয়া তথ্য দেন, অনৈতিক আচরণ করেন অথবা তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করেন, তাহলে বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, যেমন সতর্কীকরণ, জরিমানা, সাসপেনশন বা চূড়ান্তভাবে ব্যারিস্টারি লাইসেন্স বাতিল করা।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ মামলায় তিনি আদালতে যথেষ্ট পরিমাণ নথিপত্র (সাবমিশন) জমা দিয়েছেন। কিন্তু আদালত সেগুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তাঁর আইনজীবী আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ ব র রহম ন আইনজ ব ন ত কর উদ ধ ত প রথম তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী: কে কেন কীভাবে
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে মো. আমির হোসেনের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন তিনি। ভিডিওতে ট্রাইব্যুনাল ও আমির হোসেনের একটি কথোপকথন রয়েছে, তাঁকে হাসতেও দেখা যাচ্ছিল। তা দেখে তাঁর সমালোচনা করেন অনেকে।
আমির হোসেন দাবি করেন, মামলার বিচার কার্যক্রমের একটি অংশকে অসাধু ইউটিউবাররা বাজেভাবে উপস্থাপন করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ (নিয়ন্ত্রিত আদালত) তিনি মনে করেন না এবং এই ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নিরপেক্ষতা নিয়েও তাঁর মধ্যে কোনো সংশয় নেই, এমনটাও বলেন এই আইনজীবী।
আমির হোসেনকে নিয়ে এই আলোচনা অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি করেছে, জুলাই অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়ে দেশছাড়া শেখ হাসিনার পক্ষে এই আইনজীবী কীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন? আসামি শেখ হাসিনা কোন প্রক্রিয়ায় এই আইনি সুবিধা পেলেন? এই আইনজীবীর কাজ কী? তাঁর খরচই–বা কে জোগাচ্ছে?
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনা, তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের বিচার চলছে।
তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার আছেন কেবল চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন। তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। নিজের অর্থে যায়েদ বিন আমজাদকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আমির হোসেন। শেখ হাসিনা কিংবা আসাদুজ্জামান তাঁকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেননি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এই দুই পলাতক আসামির পক্ষে তাঁকে ‘ডিফেন্স কাউন্সেল’ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর এটিই একমাত্র মামলা, যেটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে। ১৩ নভেম্বর জানা যাবে এ মামলার রায় কবে হবে। প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া হয়েছে এবং সাবেক আইজিপি মামুনের বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানকে খালাস দিতে আবেদন করেন তাঁদের পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী আমির।
শেখ হাসিনা