দীর্ঘদিন ধরে থাকা বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন বহাল চান জেলার রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের নেতারা। এখান থেকে একটি আসন কেটে কমিয়ে দেওয়াকে তাঁরা ‘অধিকার থেকে বঞ্চিত করা’ এবং ‘বৈষম্য’ হিসেবে দেখছেন। বাগেরহাটে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তাঁদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।

সোমবার বাগেরহাট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় একশনএইডের সুশীল প্রকল্পের অধীন আইআরভি এই জেলা সংলাপের আয়োজন করে। আয়োজনের প্রচার সহযোগী হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো। বৈঠকে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সংস্থা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। বক্তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বাধাহীন ভোট প্রদান, ক্ষমতার সুষ্ঠু পালাবদল ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি গণমাধ্যমের শক্তিশালী ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতীয় সংসদের কয়েকটি আসনের সীমানা পুননির্ধারণ করে ৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে তিনটি করা হয়। বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না উপকূলীয় জেলাটির রাজনৈতিক নেতারা ও সাধারণ মানুষ। চারটি আসনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

গোলটেবিল বৈঠকে এসে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করলেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, নির্বাচন কমিশন চাইলেই আসন ফিরিয়ে দিতে পারে। তারা কেন যেন জনদাবিকে মানতেই চাচ্ছে না।

আরও পড়ুনসুন্দরবন এলাকার উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় দাবি২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মোশাররফ হোসাইন জানান, আসন কমলে এই জেলার মানুষকে অধিকার বঞ্চিত করা হবে। শুরু থেকেই এই জেলায় চারটি আসন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তিনি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুরও দাবি জানান।

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব গ রহ ট র জন ত ক আসন ক

এছাড়াও পড়ুন:

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ বিবেচনা করতে পারে সরকার

দুর্বল ও তারল্য সঙ্কটে ভুগতে থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে তা অকার্যকর ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা হলো। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে একটি নতুন ইসলামী ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে আমানতকারীদের পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া হলেও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়নি। ফলে ৫ ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুরোধ রাখল না বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরো পড়ুন:

ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন

৭ কোটি টাকা সংগ্রহে লিও আইসিটি ক্যাবলসের কিউআইও’র আবেদন

তবে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার বিভিন্ন খাতে আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে থাকে। সেহিসেবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি বিশেষ বিবেচনা করতে পারে সরকার।

বুধবার (৫ নভেম্বর) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই শেয়ারের ভ্যালু জিরো বিবেচনা করা হবে। কাউকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনযায়ী সব কোম্পানির মালিককে লভ্যাংশের পাশাপাশি ক্ষতির ভাগও নিতে হয়। কিন্তু আমরা এসব ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডরদের জরিমানা করছি না। শুধু শেয়ারমূল্যগুলো শূন্য বিবেচনা করছি। অন্য দেশে হলে তাদের থেকে জরিমানা আদায় করা হতো। এখন ব্যাংকগুলোর নেট এসেট ভ্যালু ঋণাত্বক ৪২০ টাকা পর্যন্ত।’’ 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘ব্যাংকগুলোর নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) পজিটিভ থাকলে শেয়ারহোল্ডাররা কিছু পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। তবে এনএভি নেতিবাচক থাকলে কিছুই পাওয়ার কথা না। তারপরও, সরকার চাইলে সাধারণ বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কথা বিবেচনা করতে পারে। কারণ ব্যাংকগুলোর এমন পরিণতির জন্য আমানতকারী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের দোষ দেওয়া যাবে না।’’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আইনগতভাবে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বিবেচনা করার সুযোগ নেই। তবে সরকার বিশেষ বিবেচনায় ভাবতে পারে। আমাদের দেশে তো সবকিছুই আইন দিয়ে চলে না। আইনের পাশাপাশি অনেক কিছুই বিবেচনায় রাখতে হয়। তাই সরকার চাইলে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে বিশেষ বিবেচনা করতে পারে।’’ 

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘‘একীভূত করতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংক; ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এবং এক্সিম ব্যাংক পিএলসির বর্তমান এই অবস্থার জন্য কোনোভাবেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দায়ী নন। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫ এর ধারা-৭৭ এ বর্ণিত দায়ী ব্যক্তিগণ ব্যাংকগুলোর এই অবস্থার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী, যা ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশে স্বীকৃত। উক্ত পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’’ 

বিবেচনার করার বিষয়গুলো হলো-

ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিটে প্রদর্শিত সম্পদ মূল্যায়নের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স, ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ক, ক্লায়েন্ট বেজ, হিউম্যান রিসোর্স বেজ, সার্ভিস ডেলিভারি মেকানিজম এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু, ইত্যাদি মূল্যায়ন করে বিক্রয় মূল্য বিবেচনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ নির্ধারণ করা।

ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিটে প্রদর্শিত সম্পদ মূল্যায়নের পাশাপাশি ব্যাংক প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে সংরক্ষিত জামানত এবং দায়ী ব্যক্তিদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে  আদায়যোগ্য অর্থ বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ নির্ধারণ করা।

ধারা-৭৭ এ বর্ধিত দায়ী ব্যক্তিরা ধারণকৃত শেয়ার ব্যতীত অন্যান্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের বা সাধারণ বিনিয়োগকারী কর্তৃক বিনিয়োগকৃত অর্থ সাধারণ বিনিয়োগকারীর ন্যূনতম স্বার্থ মূল্য বিবেচনা করে একীভূতকরণের অনুপাত নির্ধারণ করা।

উপরোউক্ত মূল্যায়ন বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক পাঁচটির সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ মূল্য অনুপাতে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা। এবং ব্যাংকগুলোতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ মূল্য অনুপাত নির্ধারণ ও তা ঘোষণা না করে অথবা সাধারণ বিনিয়োগকারী কর্তৃক ধারণকৃত শেয়ারের এক্যুইজেশন মূল্য নির্ধারণ এবং তা ঘোষণা না করে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুত না করা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৮.৭১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.৮৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৮.৯০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। 

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৩.৩৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১.২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। 

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৮.৯০ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.১৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৫.০৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। 

এক্সিম ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৭.৮০ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.৫৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৯.২১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। 

ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৩.৬৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১.৮৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
 

ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীর ক্ষতিপূরণ বিবেচনা করতে পারে সরকার
  • বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সরকার বিবেচনা করতে পারে: বাংলাদেশ ব্যাংক
  • পুঁজিবাজারে ৫ ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ
  • বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ বিবেচনা করতে পারে সরকার
  • ছয় শতাধিক উদ্যোক্তা, গাছী ও গবেষক নিয়ে রাবিতে গুড় সম্মেলন