চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের চারটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চিকিৎসার জন্য যেতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কাগজে-কলমে এই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, কিন্তু কোনো ভৌত অবকাঠামো নেই। এ কারণে নিজ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

জেলা সিভিল সার্জন জানান, নাচোল উপজেলায় তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, কিন্তু এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো অবকাঠামো নেই। এর মধ্যে দুইটিতে জনবল নেই। একটিতে থাকলেও অবকাঠামো না থাকায় তারা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।

আরো পড়ুন:

সাবেক স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে স্বামীর আত্মহত্যা

ধর্ষিত শিশুর স্বজনের সঙ্গে অশালীন আচরণ করা চিকিৎসক বরখাস্ত

স্থানীয়রা জানান, চিকিৎসার জন্য বারবার উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে গিয়ে আর্থিক চাপ বাড়ছে, যা গরিব মানুষের জন্য বড় বোঝা। দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নগুলোয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি গভীর অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের দুর্ভোগের বিষয়ে উদাসীন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিয়নগুলোয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। 

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নাচোল উপজেলার কসবা, ফতেপুর ও নেজামপুর ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে শুধু কাগজে-কলমে। সেখানে কোনো ভৌত অবকাঠামো নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অফিসার ও স্যাকমো দিয়ে মোট মঞ্জুরী পদের সংখ্যা ছয়টি। ফতেপুর ও নেজামপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো জনবলই নেই। শুধুমাত্র কসবা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওইসব পদে দুইজন আছেন, কিন্তু স্থাপনা না থাকায় তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেন। তারা সেখানেই রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর নাচোল অঞ্চলটি ‘উপজেলা’ হিসেবে মনোনীত হয়। পরের বছর এ উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন গঠিত হয়। সেগুলো হলো- নাচোল ইউনিয়ন, কসবা ইউনিয়ন, ফতেপুর ইউনিয়ন ও নেজামপুর ইউনিয়ন। সাধারণত প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারিভাবে একটি করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকার কথা, যেখানে একজন করে মেডিকলে অফিসার ও স্যাকমো থাকেন। নাচোল উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে এমন কোনো কেন্দ্র না থাকায় হাজারো মানুষ উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

কসবা ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ‍“আমাদের এলাকায় কোনো উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। আমাদের চিকিৎসা নিতে যেতে হয় উপজেলা সদরে। ফলে ওষুধ কেনার সঙ্গে যাতায়াত ভাড়ার চাপ বাড়ে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আমার ইউনিয়নে এমনটি আশা করছি।”

নাচোল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো.

কামাল উদ্দিন বলেন, “তিনটি ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। এই তিনটি সাবসেন্টারে মুঞ্জরী পদের সংখ্যা দুটি করে মোট ছয়টি। নেজামপুর ও ফতেপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো জনবল নেই। শুধুমাত্রা কসবা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রয়েছে দুইজন। তারা এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বসেন।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এ কে এম শাহাব উদ্দিন বলেন, “কাগজে-কলমে নাচোল উপজেলায় তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে, কিন্তু এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোনো অবকাঠামো নেই। এর মধ্যে দুইটি জনবল শূন্য। আরেকটিতে থাকলেও তারা বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।”

তিনি আরো বলেন, “এখন পর্যন্ত ওইসব জায়গায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়নি বলে আমরা জানতে পেরেছি। আগামীতে ওই ইউনিয়নগুলোতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হবে। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যখাত বিষয়ে বেশ উৎপর। আশা করছি, সংকট নিরসন হবে।”

ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অভ য গ উপস ব স থ য ক ন দ র ন র ম ণ ন উপস ব স থ য ক ন দ র স ব স থ য কমপ ল ক স ন চ ল উপজ ল উপজ ল র অবক ঠ ম স র জন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার যেভাবে পুলিশ কমিশন করতে চাইছে, তাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি থাকবে

প্রস্তাবিত ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ’–এর খসড়াটি ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। নইলে পুলিশ কমিশনের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি থাকবে বলে আশঙ্কা করেছে সংস্থাটি।

আজ বুধবার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো প্রকাশিত না হলেও ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রে’ প্রাপ্ত পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়াটি সম্পর্কে জেনে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, পুলিশ কমিশন হয়ে যাবে।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল টিআইবি। এবার পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ নিয়েও তাদের একই ধরনের প্রতিক্রিয়া এল।

প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের বাছাই কমিটি ও কমিশন গঠন, জনবল নিয়োগ, আর্থিক স্বাধীনতা ইত্যাদি বিভিন্ন ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, ‘সাতজন সদস্যের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত একজন আমলা ও দুজন পুলিশ সদস্যের সমন্বয়ে যেভাবে কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, এতে কমিশন সাবেকদের আনুগত্যের প্রতিদানকেন্দ্রে পরিণত হওয়াসহ সরকারের নির্বাহী বিভাগের অধীন একটি সংস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।’

টিআইবি সাবেক ও বর্তমান আমলা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ বাতিল করে বিচার, আইন, আইনপ্রয়োগ, মানবাধিকার ও সুশাসন–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষকের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘স্বাধীনতা ও কার্যকারিতার স্বার্থে কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে সরকারের অনুমোদনের বিধান বাতিল করে এ ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কমিশনের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। এ ছাড়া প্রেষণে নিয়োগের ব্যাপারে সরকার নয়, বরং কমিশনের সুপারিশ ও অনুমোদনের বিধান, যা ১০ শতাংশের বেশি হবে না এবং সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত কোনো সরকারি কর্মচারীর কমিশনে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের দ্বিমত থাকলে সে ক্ষেত্রে কমিশনের অভিমত প্রাধান্য পাবে—এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে পেশাগত জীবনে দলনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার রক্ষা, সততা ও শুদ্ধাচার চর্চার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, এমন ব্যক্তিকে মনোনীত করার সুপারিশ করেছে টিআইবি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে কমিশনের সদস্যসচিব নিয়োগের বিধান বাতিল করে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সচিবসহ সব জনবল নিয়োগের ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকবে এবং পদমর্যাদা ও বেতন-ভাতা সরকারের সচিবের সমান হবে, এই বিধান করতে হবে।

টিআইবি পরামর্শ দিয়েছে, সচিব কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তার দায়িত্বের পাশাপাশি পদাধিকার বলে কমিশনের নন-ভোটিং সদস্যের দায়িত্ব পালন করবেন, এই মর্মে বিধান রাখা যৌক্তিক হবে। এ ছাড়া বাছাই কমিটির সদস্যদের বিশেষ করে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন নাগরিক কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা সুস্পষ্ট করতে হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা, গোয়েন্দা ও নজরদারি সংস্থার পেশাগত উৎকর্ষ ও কার্যপরিধি স্পষ্টকরণ, মানবাধিকার ও সংবেদনশীলতা নিশ্চিতে এ–সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতি প্রণয়ন বা সংস্কারে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও নির্দেশনা প্রদানের ক্ষমতা কমিশনের হাতে অর্পণের একটি দফা সংযুক্ত করা জরুরি। কমিশন প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশ আইনের স্থলে ‘খসড়া পুলিশ আইন, ২০০৭’–এর ইতিবাচক বিষয় বিবেচনায় রেখে নতুন পুলিশ আইনের খসড়া প্রণয়ন ও পাস করানোর জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করার জন্য দফা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এ ছাড়া কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতার স্বার্থে সরকার কমিশন কর্তৃক চাহিত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত এবং এর বার্ষিক নিরীক্ষিত ব্যয়বিবরণী প্রতিবেদন প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে, এমন ধারা সংযোজনের সুপারিশও করেছে টিআইবি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রোগী সেজে সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান দুদকের 
  • পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের দায়িত্ব নিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা
  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ: ঢেলে সাজাতে সরকারের প্রতি টিআই‌বির আহ্বান
  • সরকার যেভাবে পুলিশ কমিশন করতে চাইছে, তাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি থাকবে