সিরিয়ায় আগামী ৫ অক্টোবর পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রোববার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সানার এক প্রতিবেদনে এই খবর জানানো হয়েছে। নতুন প্রশাসনের অধীনে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে এটি হবে প্রথম নির্বাচন। সানার প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন পার্লামেন্ট গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও বিস্তৃত করার ভিত্তি গড়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের পর গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার।

বাশারের উৎখাতে নেতৃত্ব দেয় হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। এর নেতা আহমেদ আল-শারাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। সমালোচকেরা বলছেন, বর্তমান সরকারে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর পর্যাপ্ত অংশগ্রহণ নেই। তাই আসন্ন নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।

নতুন পার্লামেন্টের মূল কাজ হবে সিরিয়ার কয়েক দশকের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক নীতি সংস্কার উপযোগী আইন প্রণয়ন করা। আর এমন কিছু চুক্তির অনুমোদন দেওয়া, যাতে করে পররাষ্ট্রনীতিকে ঢেলে সাজানো যায়।

সানার প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সব নির্বাচনী এলাকায় একযোগে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এবার ২১০টি আসনে ভোট হবে। বাকি এক-তৃতীয়াংশ আসনে প্রেসিডেন্ট আল-শারা সরাসরি পার্লামেন্ট সদস্য নিয়োগ দেবেন।

গত মাসে সিরিয়ার নির্বাচনী কমিশন জানিয়েছিল, নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে তিনটি প্রদেশে ভোট গ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হবে। সানার রোববারের প্রতিবেদন এই বিষয়ে কোনো উল্লেখ দেখা যায়নি।

নির্বাচন কমিশনের আগের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর (চলতি) মাসেই পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে সুয়েইদা প্রদেশে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গত জুলাই মাসে এই প্রদেশে স্থানীয় দ্রুজ ও সুন্নি বেদুইন যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। পাশাপাশি হাসাকা ও রাকা প্রদেশেও ভোট গ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই দুই প্রদেশ আংশিকভাবে কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রণে।

গত মার্চ মাসে সিরিয়ায় একটি সাংবিধানিক ঘোষণা জারি করা হয়। এতে আল-শারার নেতৃত্বাধীন সরকার কীভাবে চলছে, তার কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। ঘোষণায় ইসলামি আইনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে নারীর অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমালোচকদের আশঙ্কা, এতে করে এইচটিএস ও অন্যান্য কট্টরপন্থীদের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা চলে যেতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে ১০ মাসে ২৮ এইডস রোগী শনাক্ত, ওষুধের জন্য যেতে হয় বগুড়া

রাজশাহীতে চলতি বছরের ১০ মাসে নতুন করে আরো ২৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস (এইডস) শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গের। এ সময়ের মধ্যে একজন মারাও গেছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। 

আক্রান্তদের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে একটি এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং (এইচটিসি) সেন্টার রয়েছে। তবে, এখানে কাউন্সেলিং ছাড়া ওষুধ মেলে না। রোগীদের ওষুধ আনতে যেতে হয় বগুড়া। এ অবস্থায় রামেক হাসপাতালে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি চালু হতে পারে।

রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের তথ্য বলছে, ২০১৯ সাল থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত রাজশাহীতে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ জন। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন আটজন। চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৫ জন পুরুষ, দুইজন নারী ও একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষে শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। 

এইচটিসি সেন্টারে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন আসেন পরীক্ষা করাতে। সেখানে পজিটিভ ফল এলে রোগীদের কাউন্সেলিং দেওয়া হয়। বলা হয়, এইচআইভি পুরোপুরি নিরাময় না হলেও এটি এখন নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ সেবনে আক্রান্তরা স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।

এদিকে, রাজশাহীতে এইচআইভির ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) যেতে হয়। সেখানে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। রাজশাহীতে একটি এআরটি সেন্টার (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এইচটিসি সেন্টারে গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে গিয়ে দেখা যায়, এক কিশোরসহ চারজন পরীক্ষা করাতে এসেছেন। তাদের মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গর। সবার ফলাফল নেগেটিভ আসে।

২০১৯ সাল থেকে রামেক হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম বছর ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও কারো দেহে ভাইরাস পাওয়া যায়নি। পরের বছর দুইজন আক্রান্ত হন। ২০২১ সালে ৮ জন, ২০২২ সালে ৮ জন, ২০২৩ সালে ২৪ জন, ২০২৪ সালে ২৭ জন এবং ২০২৫ সালে অক্টোবর পর্যন্ত ২৮ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়।

হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে আক্রান্ত ২৭ জনের মধ্যে সমকামিতার মাধ্যমে সংক্রমিত হন ১৬ জন, যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ জন এবং রক্ত থেকে একজন। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত শনাক্ত ২৮ জনের মধ্যে সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হন ১৭ জন। এছাড়া যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ জন ও রক্ত থেকে একজন আক্রান্ত হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এইচআইভি আক্রান্ত এক ব্যক্তি বলেন, “রোগটি জানার পর প্রথমে মনে হয়েছিল সব শেষ। পরে রামেকে কাউন্সেলিংয়ে এসে বুঝলাম, এটা এখন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত ওষুধ নিলে ভালো থাকা যায়। তবে, রাজশাহীতে ওষুধের ব্যবস্থা না থাকায় বগুড়ায় যাওয়া কষ্টকর। এখানেই যদি ওষুধ পাওয়া যেত, আমরা অনেকটা স্বস্তি পেতাম।”

রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, “২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ জন এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। তাদের নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।”

এইচটিসি সেন্টারের ফোকাল পারসন ডা. ইবরাহীম মো. শরফ বলেন, “অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, হোক নারী-পুরুষের মধ্যে বা পুরুষ-পুরুষের মধ্যে, এইচআইভি ছড়ানোর সবচেয়ে বড় কারণ এটি। এছাড়া গর্ভকালীন সময়, সন্তান জন্ম ও দুধ পান করানোর মাধ্যমেও মা থেকে শিশুর দেহে সংক্রমণ যেতে পারে।”

তিনি বলেন, “সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিবার যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করা, একাধিক যৌনসঙ্গী এড়িয়ে চলা, রক্ত বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগে পরীক্ষা করা এবং ব্যবহৃত সুচ পুনরায় ব্যবহার না করাই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।”

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, “আমাদের এখানে এইচআইভি টেস্ট হয়। রোগীদের কাউন্সিলিং করা হয়। এখানেই যেন চিকিৎসা হয়, তার জন্য আমরা একটি ট্রিটমেন্ট সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছি। রুম রেনোভেশন হচ্ছে। খুব শিগগির হবে। আগামী একমাসের মধ্যেই হতে পারে। তখন আক্রান্তদের বগুড়া যেতে হবে না।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শারার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল জাতিসংঘ
  • রাজশাহীতে ১০ মাসে ২৮ এইডস রোগী শনাক্ত, ওষুধের জন্য যেতে হয় বগুড়া
  • যে অপারেটিং সিস্টেম সাড়ে ৩০০ কোটি ব্যবহারকারীর হাতে আছে