নিউইয়র্কে বিমানবন্দরে এনসিপি নেতা আখতার হোসেনকে ডিম ছোড়া হলো
Published: 23rd, September 2025 GMT
ছবি: সংগৃহীত
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ইতালিতে লাখো মানুষের বিক্ষোভ
গাজায় চলমান জাতিগত নিধন (জেনোসাইড) বন্ধে ইসরায়েলকে চাপ এবং ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে সোমবার ইতালির রাজধানী রোমসহ দেশটির কয়েকটি বড় শহরে আড়াই লাখের বেশি মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। কয়েকটি বন্দরে শ্রমিকেরা ধর্মঘট করেছেন।
সোমবার ২৪ ঘণ্টা সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয় ইতালির শ্রমিকদের সংগঠন ইউএসবি ইউনিয়ন। তাঁরা ইতালির সরকারকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান। কোনো কোনো স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের খবর জানা যায়নি।
রোম পুলিশ জানিয়েছে, শহরটির প্রধান টার্মিনি রেলস্টেশনের সামনে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেন। অনেকের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ছিল। তাঁরা ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’-সহ নানা স্লোগান দেন। বিক্ষোভের কারণে বাস ও মেট্রো সেবা ব্যাহত হয়। অভ্যন্তরীণ রেল সংস্থাগুলো যাত্রা বিলম্ব ও বাতিলের সতর্কবার্তা জারি করে।
আয়োজকদের দাবি, মিলানের বিক্ষোভে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেন। বোলোনিয়ায় স্থানীয় পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, শহরটির বিভিন্ন সড়কে ১০ হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভ করেছেন।
তা ছাড়া দেশটির তুরিন, ফ্লোরেন্স, নেপলস ও সিসিলিতে বিক্ষোভ হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, জেনোয়া ও লিভর্নোতে বন্দরকর্মীরা বন্দরের প্রবেশপথ অবরোধ করেছেন।
এরই মধ্যে ইউরোপের অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গতকাল যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের স্বীকৃতির পর ফ্রান্সসহ আরও পাঁচ দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। এখন ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে বাকি আছে কেবল জার্মানি ও ইতালি। এ পরিস্থিতিতে আজ ইতালিতে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির অতি ডানপন্থী সরকার বলেছে, এখনই তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে না। দেশটির সরকার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের পর থেকে তারা ইসরায়েলের কাছে কোনো অস্ত্র বিক্রি করেনি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ইতালি সরকার ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির প্রায় ৪১ শতাংশ মানুষ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের ওপর গণহত্যা (হলোকাস্ট) চালানো জার্মানি ইসরায়েলের অন্যতম বিশ্বস্ত মিত্র। তারা বলেছে, স্বীকৃতির আগে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনকে শান্তিপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে। আজ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল বলেন, ‘আগে প্রক্রিয়া শেষ হোক। এরপর আমরা স্বীকৃতি দেব। প্রক্রিয়াটা এখনই শুরু করতে হবে।’
দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে এগিয়ে নিতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে যৌথভাবে সম্মেলনের আয়োজন করছে ফ্রান্স ও সৌদি আরব। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার বেলা তিনটায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা) শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সরাসরি উপস্থিত থাকবেন। ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অংশ নেবেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
এ সম্মেলন থেকেই ফ্রান্স, মাল্টা, লুক্সেমবার্গ, বেলজিয়াম, অ্যান্ডোরা ও সান ম্যারিনো একযোগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে করে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে মোট ১৫৭ দেশের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে ফিলিস্তিন। প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বর্জনযুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ তাদের কিছু মিত্রদেশ ফ্রান্স-সৌদি আরবের শীর্ষ সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। ইসরায়েলের জাতিসংঘবিষয়ক দূত ড্যানি ড্যানন এ সম্মেলনকে ‘সার্কাস’ ও ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত’ করা বলে মন্তব্য করেছেন।
এর আগে রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতির সমালোচনা করে দম্ভভরে বলেন, ‘জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে না।’ আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হওয়া সাধারণ পরিষদের ৮০তম বার্ষিক অধিবেশনে এ স্বীকৃতির বিরোধিতা করারও ঘোষণা দেন তিনি।
আগামীকাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে উদ্বোধনী বক্তৃতা করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে গাজা প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফ্রান্স-সৌদির যৌথ সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বর্জন করলেও তা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির প্রত্যাশা, এ সম্মেলন দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের পথনকশা তৈরির প্রচেষ্টায় নতুন গতি আনতে পারে।
জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রজাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ চলতি মাসে সাত পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্র অনুমোদন করেছে। ঘোষণাপত্রে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে ‘স্পষ্ট, সময়সীমা নির্ধারিত ও অপরিবর্তনযোগ্য পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ওই ঘোষণাপত্রে হামাসের নিন্দা জানানো হয়েছে এবং তাদের আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকালের সম্মেলনে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণাপত্র’ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। ফ্রান্স ও সৌদি আরব গত জুলাইয়ে নিউইয়র্কে এক সম্মেলনে এ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছিল। ঘোষণাপত্রটি চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের সাধারণ বিশেষ বৈঠকে গৃহীত হয়েছে।
দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক আলাপের সূচনা১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি হয়। এটাই ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ভিত্তি। ১৯৯৫ সালে অসলো চুক্তির দ্বিতীয় পর্ব সম্পন্ন হয়। শক্তিধর কয়েকটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও এই শান্তিচুক্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল।
এ চুক্তির অধীনে ১৯৯৪ সালে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা হয়। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে আলোচনা বন্ধ রয়েছে। নতুন করে পশ্চিমা প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের স্বীকৃতি এবং ফ্রান্স-সৌদির সম্মেলন দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দাবিকে আবার জোরালো করে তুলল।