প্রাণীদের মতো না হোক, জড় পদার্থও কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। যেমন পানি কেন ১০০ ডিগ্রিতে ফোটে? লোহার টুকরা কীভাবে বোঝে চুম্বকের আকর্ষণে ছুটে যেতে হবে?
জড় পদার্থগুলো এসব নিয়মের বেড়াজালে কেন বাঁধা পড়ল?
আসলে প্রকৃতির এই নীতিগুলোই পদার্থবিদ্যার সূত্র ‘ফিজিক্যাল ল’। এগুলোরও সুনির্দিষ্ট চরিত্র বা ধর্ম আছে। সেই ধর্মই ঠিক করে দেয় প্রাকৃতিক বস্তুগুলো কেমন আচরণ করবে।
পদার্থবিজ্ঞান অত্যন্ত জটিল, কিন্তু এর মূল কাজ সরলীকরণ করা। অর্থাৎ প্রকৃতির জটিল সূত্রগুলোর মধ্যে যোগসাজশ খুঁজে একটা সরল উপসংহারে পৌঁছানো। প্রকৃতি আসলে সরলীকরণ ভালোবাসে। পদার্থবিজ্ঞানের মাধ্যমেই সরলীকরণের সেই পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
শিক্ষার্থীদের কাছে পদার্থবিজ্ঞানের জগৎটা অনুভব করা অতটা সহজ নয়। কিন্তু শিক্ষক যদি নিজেই বিজ্ঞানী হন, তাঁর জন্য পদার্থবিজ্ঞানের সেই জটিল জগতের ছবি শিক্ষার্থীদের এঁকে দেখানো সহজ হয়ে ওঠে অনেকটাই। আর এ কাজে সবচেয়ে বড় মুনশিয়ানাটা দেখিয়েছেন বিখ্যাত মার্কিন বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক রিচার্ড ফাইনম্যান।
পদার্থবিজ্ঞানের এই মহান শিক্ষক তাঁর ক্যারিশমেটিক ব্যক্তিত্ব ও ম্যাজিক্যাল শিক্ষণপদ্ধতির জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানের ওপর তাঁর লেকচার সিরিজগুলো বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর কাছে আজও আস্থার প্রতীক।
১৯৬৪ সালে রিচার্ড ফাইনম্যান যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মেসেঞ্জার লেকচার’ শিরোনামে একটা সিরিজ বক্তব্য দেন। সেই সিরিজের সাতটি লেকচার ঠাঁই পেয়েছে দ্য ক্যারেক্টার অব দ্য ফিজিক্যাল ল বইয়ের সাতটি অধ্যায়ে। মহাকর্ষ সূত্র যে একটিমাত্র সূত্রে সীমাবদ্ধ নয়, এর বহুমাত্রিক ব্যাখ্যা ও ব্যবহার রয়েছে—তার ফিরিস্তি ফাইনম্যান এই বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে দেখিয়েছেন। মহাকর্ষ সূত্রের সঙ্গে সাধারণ বলসূত্রের যে সম্বন্ধ আছে, সম্বন্ধ আছে কেপলারের সূত্রাবলির সঙ্গেও—এসব নিয়ে করেছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ। মহাকর্ষ সূত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি নক্ষত্রের জন্ম-মৃত্যুর প্রক্রিয়া এবং সেই প্রক্রিয়ায় এই সূত্রের ভূমিকার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন।
আদি যুগের মানুষ তির ছুড়ে পশু শিকার করতে জানত। জানত তির কোন কোণে কোন গতিতে ছুড়লে ঠিকঠাক লক্ষ্য ভেদ করবে, সেটাও। কিন্তু গতি কিংবা কোণের ব্যাপারটা তারা অনুমান করে নিত শক্তির ওপর নির্ভর করে। নিখুঁত হিসাব তারা জানত না। নিখুঁত হিসাব কষতে দরকার গণিত। সেকালের মানুষ এই গাণিতিক ভাষা আয়ত্ত করতে পারেনি। তাই পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করলেও, এর অস্তিত্ব সম্পর্কে তারা অজ্ঞ ছিল।
শুধু আদিম যুগ নয়, আজ থেকে চার শ বছর আগেও প্রকৃতির সূত্রগুলো সুনির্দিষ্ট কাঠামোতে ব্যাখ্যা করতে জানতেন না বিজ্ঞানীরা। সপ্তদশ শতাব্দীতে আইজ্যাক নিউটন পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র ব্যাখ্যা করতে গাণিতিক ভাষা ব্যবহার করলেন। তৈরি হলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সঙ্গে গণিতের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর গণিত কীভাবে ভৌত সূত্রের চরিত্র ব্যাখ্যা করে, ফাইনম্যান সে বিষয়গুলো উদাহরণ আর চমৎকার বর্ণনার সাহায্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে।
এভাবে ফাইনম্যান একে একে সংরক্ষণশীলতার নীতি, ভৌত সূত্রের প্রতিসাম্য, অতীত ও ভবিষ্যতের পার্থক্য, প্রকৃতির কোয়ান্টাম রূপ কিংবা অনিশ্চয়তার বিশ্লেষণ এবং নতুন তত্ত্বের সন্ধানের রূপরেখা দেখিয়েছেন এই বইয়ে।
সব মিলিয়ে সত্যিকার অর্থেই যাঁরা পদার্থবিজ্ঞানের মূল মর্ম বুঝতে চান, ধারণ করতে চান পদার্থবিজ্ঞানের সৌন্দর্য, তাঁদের জন্য এই বই অবশ্যপাঠ্য।
এই বই পপুলার সায়েন্স বা জনপ্রিয় বিজ্ঞানের বই নয়। তবে বইয়ের ভাষা কঠিন বা অনুবাদ জটিল নয়, বরং বেশ প্রাঞ্জল। কিন্তু এই বই পড়তে পড়তে আপনাকে বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো বুঝতে হবে, আত্মস্থ করতে হবে। তাই পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই চলে যাবেন পদার্থবিজ্ঞানের গভীর থেকে গভীরে, ভাবনা-চিন্তার জন্য বারবার থামতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানেরে আসল সৌন্দর্যটা আপনি অনুভব করতে পারবেন।
দ্য ক্যারেক্টর অব ফিজিক্যাল ল
রিচার্ড ফাইনম্যান
অনুবাদ: উচ্ছ্বাস তৌসিফ
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
প্রকাশ: ডিসেম্বর ২০২৪
পৃষ্ঠা: ২১৬; মূল্য: ৪৫০ টাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ইনম য ন প রক ত র র জন য বইয় র
এছাড়াও পড়ুন:
এলাকার নামেই সিনেমা—আবেগে ভাসলেন পাইকগাছার মানুষ
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের দারুণ মল্লিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে সিনেমা ‘দেলুপি’র জমজমাট প্রিমিয়ার প্রদর্শনী। বুধবার বিকেলে শুরু হওয়া এই আয়োজনে স্কুলমাঠ যেন পরিণত হয় এক উৎসবে।
বুধবার প্রিমিয়ার হলেও সিনেমা হলে ‘দেলুপি’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। সারা দেশে মুক্তি পাবে ১৪ নভেম্বর। প্রিমিয়ার প্রদর্শনী ঘিরে স্থানীয় মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকেল থেকেই মাঠে ভিড় করেন শত শত দর্শক। অনেকের হাতে সিনেমার পোস্টার, কেউ–বা পরিবার–বন্ধুদের সঙ্গে অপেক্ষায় পর্দা ওঠার। চারপাশে তখন উৎসবের আবহ, আনন্দের কোলাহল। সিনেমা শেষে দর্শকদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস। নিজেদের জীবনের গল্প বড় পর্দায় দেখে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
দেলুটি গ্রামের বাসিন্দা শামীমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের এলাকার নামেই সিনেমা—এটা ভাবতেই গর্ব লাগে। গল্পটা এত বাস্তব, যেন আমাদের জীবনেরই কথা বলা হয়েছে।’ স্থানীয় ৫ নম্বর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বদিয়ার রহমান বলেন, ‘ভাঙন ছিল আমাদের জীবনের অংশ। সেই কষ্টই এ সিনেমায় উঠে এসেছে। “দেলুপি” শুধু আমাদের গল্প নয়, অন্য উপকূলের অনেক মানুষের গল্পও বটে। আশা করি এই সিনেমা আমাদের দুর্দশার কথা আরও দূরে পৌঁছে দেবে।’
বুধবার প্রিমিয়ার হলেও সিনেমা হলে ‘দেলুপি’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার