চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পাঁচ ঘণ্টা প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ ছিল। আজ সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন অনুষদের বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে এক দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের সুপারিশমালা ও রোডম্যাপ দেওয়ার জন্য বলা হয়। এ রোডম্যাপ দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস–পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আজ তাঁদের আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন ছিল। গতকাল রোববার সকালে তাঁরা মূলত ১৫টি দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তাঁদের আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো, লেট ফি বাতিল, প্রয়োজনীয় ল্যাব স্থাপন, হল রুম থেকে ক্লাসরুম সরিয়ে নেওয়া, সব সেমিস্টারে ইমপ্রুভমেন্টের সুযোগ দেওয়া, পরিবহনের আধুনিকায়ন করা ও মেডিকেল সংস্কার করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকালে তাঁদের আন্দোলন শুরু হয়। গতকাল শুধু ছাত্ররা এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলেও আজ ছাত্রীরাও আন্দোলনে শামিল হন। ছাত্র ও ছাত্রীরা পৃথকভাবে নিজ ক্যাম্পাস এলাকায় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন। পরে শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি ভবনের সামনে জড়ো হন। সেখানে দাবিদাওয়ার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর তাঁরা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন। সেখানে কাউকে প্রবেশ করতেও দেননি কিংবা বেরোতেও দেননি। পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি চলার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ১৫ প্রতিনিধি বাছাই করে আলোচনায় বসে। পরে সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠনের বিষয়টি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপ প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত তাঁদের ক্লাস–পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জনের ঘোষণা দেন।

প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কর্নেল (অব.

) মোহাম্মদ কাশেম। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আইআইইউসির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির সমাধানে ট্রেজারার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, সব অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, বিভাগীয় চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা মুনির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আগামী ৪ অক্টোবর সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হবে। যেসব শিক্ষার্থীর টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি বকেয়া রয়েছে, তাঁদের ফি পরিশোধ করার সর্বশেষ সময় ছিল ১০ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী তাঁদের বকেয়া ফি পরিশোধ করেননি। সে জন্য ২০ সেপ্টেম্বর তাঁদের ১০ দিন সময় বৃদ্ধি করে বেতন দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সঙ্গে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়। মূলত এই ১০০ টাকা জরিমানাকে কেন্দ্র করে এ আন্দোলন শুরু হয়। এরপর একে একে ১৫টি দাবি উত্থাপন করেন। আন্দোলন চলাকালে প্রশাসনিক ভবন অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মিটিং করে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে দুই ধাপে শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন করা হবে। আগামীকাল তা ঘোষণা করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ব সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিবাহে ‘মোহরে ফাতেমি‘ কী?

“মোহরে ফাতেমি” মুসলিম বিবাহে একটি বহুল আলোচিত ধারণা, যাকে মূলত নারীর অধিকার, সম্মান ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতীক বলা যায়।

‘মোহর’ বা ‘মাহর’ শব্দটি আরবি “মাহর” থেকে এসেছে, যার অর্থ, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে নির্ধারিত অর্থ বা সম্পদ, যা বিবাহের অধিকার হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হয়।

‘মোহরে ফাতেমি’ বলতে বোঝানো হয় সেই পরিমাণ মাহর, যা নবীজি (স.) তাঁর কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর বিয়েতে নির্ধারণ করেছিলেন। এটি মুসলিম ইতিহাসে আদর্শ মাহরের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।

মোহরে ফাতেমির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কন্যা ফাতিমা (রা.)-এর বিয়ে হয়েছিল আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর সঙ্গে। এই বিয়েতে নবীজি (স.) যে পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করেছিলেন, সেটিই পরে “মোহরে ফাতেমি” নামে পরিচিত হয়।

ইমাম বায়হাকি ও ইবনে মাজাহ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, মোহরে ফাতেমি ছিল ৫০০ দিরহাম রূপা (প্রায় ১.৫ কেজি রূপা)। (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৮৭; আল-বায়হাকি, আস-সুনান আল-কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ২৩৩)

আরও পড়ুনমুসলিম বিবাহে ‘কুফু’ অর্থ কী২৩ অক্টোবর ২০২৫

মোহরের গুরুত্ব

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমরা নারীদের মাহর (মোহরানা) স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান করো।” (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৪)

অর্থাৎ, এটি কোনো উপহার নয়, বরং স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার।

নবীজি (স.) বলেছেন, “সবচেয়ে উত্তম বিবাহ হলো সেই বিবাহ, যার মোহর সবচেয়ে সহজ।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৮৭)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইসলাম চায় না মোহর এমন ভারী হোক যাতে বিবাহ কঠিন হয়ে যায়। বরং, সহজ, পরিমিত ও সম্মানজনক পরিমাণ হওয়াই সুন্নাহ।

মোহরে ফাতেমির প্রতীকী অর্থ

“মোহরে ফাতেমি” কেবল একটি অর্থমূল্য নয়, বরং এটি মুসলিম সমাজে নারীর মর্যাদা ও আত্মসম্মানের প্রতীক। এর মাধ্যমে নবীজি (স.) মুসলিম সমাজকে একটি বার্তা দিয়েছেন যে, নারী কোনো বোঝা নয়, বরং মর্যাদাপূর্ণ একজন মানুষ, যার নিজের অধিকার আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন।

একইসাথে এটি ইসলামে সামাজিক ভারসাম্যের একটি নিদর্শন—যেখানে মোহর এমন নির্ধারণ করা হয়, যা গরিব ও ধনীর উভয়ের জন্যই বাস্তবসম্মত।

মোহরে ফাতেমির আর্থিক মান

ইতিহাসবিদ ইমাম নববী ও ইবনে হাজার আসকালানি উল্লেখ করেছেন, এক দিরহাম প্রায় ২.৯৭৫ গ্রাম রূপা সমান।

তাহলে ৫০০ দিরহাম × ২.৯৭৫ গ্রাম = প্রায় ১৪৮৭.৫ গ্রাম (১.৫ কেজি রূপা)।

বর্তমান সময়ের হিসাবে, বাংলাদেশে যদি প্রতি ভরি (প্রায় ১১.৬৬ গ্রাম) রূপার দাম ধরা হয় প্রায় ১৫০০ টাকা, তাহলে মোহরে ফাতেমির আর্থিক মান দাঁড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। বাজারদর অনুসারে পরিবর্তনশীল।

এই হিসাব শুধুমাত্র একটি রেফারেন্স—মূল উদ্দেশ্য হলো, মাহর যেন পরিমিত, বাস্তবসম্মত ও সম্মানজনক হয়।

আরও পড়ুননারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কী বলে ইসলাম২৮ আগস্ট ২০২৫

মোহরে ফাতেমি কি বাধ্যতামূলক?

না, মোহরে ফাতেমি বাধ্যতামূলক নয়। ইসলামি শরিয়তে প্রতিটি বিবাহের মোহর দুই পক্ষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল।

তবে নবীজি (স.)-এর কন্যার মোহরকে আদর্শ ধরা হয়, কারণ এটি বিনয়, সরলতা ও ন্যায়ের প্রতীক। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, “মোহরে ফাতেমি একটি সুন্নাহস্বরূপ নির্ধারণ। চাইলে এর কম বা বেশি নির্ধারণ করা বৈধ।” (আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া, খণ্ড ১, পৃ. ২৯৪, দারুল ইহইয়া, কায়রো সংস্করণ)

অতএব, কেউ মোহরে ফাতেমি পরিমাণ নির্ধারণ করলে তা মুস্তাহাব (পছন্দনীয়), কিন্তু তার চেয়ে কম বা বেশি করলেও বিবাহ বৈধ।

আধুনিক প্রেক্ষাপটে মোহরে ফাতেমির তাৎপর্য

বর্তমান সমাজে অনেকেই মোহরকে “আনুষ্ঠানিকতা” মনে করেন, আবার কেউ কেউ মোহরকে “চাপ বা মূল্য” হিসেবে বিবেচনা করেন—যা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভুল।

মোহর নারীর আত্মসম্মানের প্রতীক, পুরুষের দায়িত্ববোধের প্রকাশ এবং বিবাহ বন্ধনের আর্থিক নিশ্চয়তা।

একজন আধুনিক মুসলিম নারী হিসেবে ফাতিমা (রা.) ছিলেন নবীজির গৃহের মর্যাদার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর নামেই নির্ধারিত এই মোহর আজও মুসলিম সমাজে “সুন্নাহ মোহর” হিসেবে সম্মানিত।

সমাজে বিবাহ সহজ করা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকে, মোহরে ফাতেমি আমাদের সামনে এক সমতা ও সংযমের মডেল হিসেবে দাঁড়ায়।

অতএব, মুসলিম সমাজের উচিত মোহরকে বোঝা নয়, বরং ভালোবাসা, দায়িত্ব ও সম্মানের প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখা।

আরও পড়ুনবিবাহের সুন্নত 'ওয়ালিমা'১২ জানুয়ারি ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ