পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করার অভিযোগে চিকিৎসক আবুল কাশেমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

আজ সোমবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। বেলা তিনটার দিকে ই-মেইলের মাধ্যমে বরখাস্তের আদেশ পেয়েছেন বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান। আবুল কাশেম পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আদেশে বলা হয়, চিকিৎসক আবুল কাশেমের এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির পরিপন্থী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হবে।

প্রসঙ্গত, দেবীগঞ্জ উপজেলায় ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছর বয়সী ওই শিশুকে গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে ওই শিশুর বাবার কাছ থেকে মামলাসংক্রান্ত কাগজপত্র না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চিকিৎসক আবুল কাশেম। পরে শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ৩ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই চিকিৎসক শিশুটির বাবাকে মারধর (ঘুষি দেওয়া) করতে চাওয়ার পাশাপাশি গালাগাল দিতে থাকেন।

ঘটনার পর সিভিল সার্জন সেদিন রাতেই আবুল কাশেমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেন এবং গত শনিবার পর্যন্ত তাঁকে নোটিশের জবাব দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া ওই দিনই আরএমও পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার চিকিৎসক আবুল কাশেম শোকজের জবাব দিয়েছেন। পরে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। আজ মন্ত্রাণালয়ের আদেশে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দেবীগঞ্জ পৌরসভার একটি মহল্লায় পাঁচ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী এক কিশোরের (১৭) বিরুদ্ধে। পরদিন সোমবার শিশুটিকে প্রথমে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে দেবীগঞ্জ থানায় ওই কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের দাবিতে দেবীগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন স্থানীয়রা।

দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

সোয়েল রানা বলেন, গতকাল রোববার দুপুরে অভিযুক্ত কিশোর আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। পরে পঞ্চগড়ের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক তাকে যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বরখ স ত

এছাড়াও পড়ুন:

এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন

এশিয়া কাপ-২০২৫ এ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা কেবল মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, পৌঁছে গেছে শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থাতেও। খেলোয়াড়দের আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনায় এবার শাস্তির মুখে পড়েছেন দুই দেশের কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সূর্যকুমার যাদব ও হারিস রউফের ওপর জরিমানা ও ‘ডিমেরিট পয়েন্ট’ আরোপ করেছে। আর ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ পেয়েছেন আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা।

আইসিসির এলিট প্যানেল অব ম্যাচ রেফারিরা সেপ্টেম্বর ১৪, ২১ ও ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোর কয়েকটি ঘটনার তদন্ত করেন।

প্রথমবার, সেপ্টেম্বর ১৪:
প্রথম ম্যাচেই মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ম্যাচে ভারতের সূর্যকুমার যাদব এবং পাকিস্তানের হারিস রউফ ও সাহিবজাদা ফারহানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় আইসিসির আচরণবিধির ২.২১ অনুচ্ছেদ ভঙ্গের দায়ে। যেখানে বলা আছে, এমন আচরণ যা খেলাটির সুনাম ক্ষুণ্ন করে।

ফলাফল হিসেবে সূর্যকুমারকে জরিমানা করা হয় ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং দেওয়া হয় দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। ফারহান পান আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা ও এক ডিমেরিট পয়েন্ট। রউফের শাস্তিও একই; ৩০ শতাংশ জরিমানা ও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট।

দ্বিতীয়বার, সেপ্টেম্বর ২১:
এক সপ্তাহ পরের ম্যাচে আবার বিতর্ক। ভারতীয় পেসার অর্শদীপ সিং অভিযুক্ত হন আইসিসির ২.৬ অনুচ্ছেদে, “অপমানজনক ভঙ্গি প্রদর্শনের” অভিযোগে। তবে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের শুনানিতে প্রমাণ না মেলায় তিনি মুক্তি পান। কোনো শাস্তি হয়নি তার।

ফাইনালের উত্তেজনা, সেপ্টেম্বর ২৮:
এশিয়া কাপের ফাইনালও ছাড় পায়নি শৃঙ্খলাভঙ্গের ছোঁয়া থেকে। ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ স্বীকার করেন যে তিনি খেলাটির মর্যাদাবিরোধী আচরণ করেছেন। ফলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করা হয় ও দেওয়া হয় এক ডিমেরিট পয়েন্ট। যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করেছিলেন, তাই আলাদা শুনানির প্রয়োজন হয়নি।

অন্যদিকে, হারিস রউফ আবারও জড়িয়ে পড়েন একই ধরনের ঘটনায়। ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসনের শুনানিতে দোষী প্রমাণিত হয়ে তিনি আবার জরিমানা পান ম্যাচ ফি’র ৩০ শতাংশ এবং আরও দুই ডিমেরিট পয়েন্ট। এতে তার মোট ডিমেরিট পয়েন্ট দাঁড়ায় চার। যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় ফেলে। ফলে নভেম্বর ৪ ও ৬ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের দুইটি ওয়ানডে থেকে ছিটকে গেলেন তিনি।

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, লেভেল–১ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা এবং দুই ডিমেরিট পয়েন্ট পর্যন্ত দেওয়া যায়। কোনো খেলোয়াড় যদি ২৪ মাসের মধ্যে চার বা তার বেশি ডিমেরিট পয়েন্ট পান, তবে তা রূপান্তরিত হয় সাসপেনশন পয়েন্টে। অর্থাৎ পরবর্তী ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা অবশ্যম্ভাবী।

এশিয়া কাপে শাস্তিপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের তালিকা:

সূর্যকুমার যাদব (ভারত): ম্যাচ ফি’র ৩০% জরিমানা, ২ ডিমেরিট পয়েন্ট।

সাহিবজাদা ফারহান (পাকিস্তান): আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।

হারিস রউফ (পাকিস্তান): দুই আলাদা অপরাধে দু’বার জরিমানা, মোট ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট ও ২ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা।

জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত): সতর্কবার্তা, ১ ডিমেরিট পয়েন্ট।

অর্শদীপ সিং (ভারত): অভিযোগ থেকে মুক্ত, কোনো শাস্তি নয়।

এশিয়া কাপের মাঠে যেমন ব্যাট-বল লড়াই জমেছিল, মাঠের বাইরে ঠিক তেমনই শৃঙ্খলাভঙ্গের নাটকও কম আলোচনার জন্ম দেয়নি। ক্রিকেটের সৌন্দর্য রক্ষায় এবার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে আইসিসি- “খেলা উত্তেজনার হতে পারে, কিন্তু সীমা অতিক্রম নয়।”

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু দেওয়ার চেষ্টা, একজন গ্রেপ্তার
  • চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক সমস্যা
  • এশিয়া কাপে আচরণবিধি ভঙ্গের শাস্তি পেলেন রউফ-সূর্যকুমারসহ পাঁচজন
  • তালেবান এই ‘সুযোগ’ কেন হাতছাড়া করল
  • নিফাক শব্দের অর্থ কী এবং মুনাফিকের লক্ষণগুলো কী
  • বৈষম্যের খাঁচা আদৌ কি আমরা ভাঙতে চাই