পঞ্চগড়ে ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগে চিকিৎসক সাময়িক বরখাস্ত
Published: 22nd, September 2025 GMT
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করার অভিযোগে চিকিৎসক আবুল কাশেমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
আজ সোমবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। বেলা তিনটার দিকে ই-মেইলের মাধ্যমে বরখাস্তের আদেশ পেয়েছেন বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান। আবুল কাশেম পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আদেশে বলা হয়, চিকিৎসক আবুল কাশেমের এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির পরিপন্থী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হবে।
প্রসঙ্গত, দেবীগঞ্জ উপজেলায় ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছর বয়সী ওই শিশুকে গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে ওই শিশুর বাবার কাছ থেকে মামলাসংক্রান্ত কাগজপত্র না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন চিকিৎসক আবুল কাশেম। পরে শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ৩ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই চিকিৎসক শিশুটির বাবাকে মারধর (ঘুষি দেওয়া) করতে চাওয়ার পাশাপাশি গালাগাল দিতে থাকেন।
ঘটনার পর সিভিল সার্জন সেদিন রাতেই আবুল কাশেমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেন এবং গত শনিবার পর্যন্ত তাঁকে নোটিশের জবাব দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া ওই দিনই আরএমও পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত শনিবার চিকিৎসক আবুল কাশেম শোকজের জবাব দিয়েছেন। পরে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। আজ মন্ত্রাণালয়ের আদেশে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দেবীগঞ্জ পৌরসভার একটি মহল্লায় পাঁচ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী এক কিশোরের (১৭) বিরুদ্ধে। পরদিন সোমবার শিশুটিকে প্রথমে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে দেবীগঞ্জ থানায় ওই কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের দাবিতে দেবীগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন স্থানীয়রা।
দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বরখ স ত
এছাড়াও পড়ুন:
ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবার সঙ্গে অশালীন আচরণ, ভিডিও ভাইরাল
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবুল কাশেমের একটি বিতর্কিত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা গেছে- চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার এক শিশুর বাবা-স্বজনের সঙ্গে ওই চিকিৎসকের কুরুচিপূর্ণ, অপমানজনক এবং হুমকিমূলক আচরণ ও কটুক্তি।
ভিডিওটিতে ডাক্তার আক্রমণাত্মক ভাষায় বলছেন, ‘‘এই ব্যাটা থানা যায় পড়ে রহিবো। বুঝিন নাই। কাগজ খান নিয়ে থানা যায় পরে রহিস। কি বালটা করিব করিস। হাসপাতালটা তোমরা চিড়িয়াখানা পাইছো। চিড়িয়াখানার মতো ভর্তি হবা। বেলেট কিনে নিয়ে যায় বাল কামাবা। মান সম্মান তোমাদের কিছু নাই রে! একবারে নাক ফাটায় দিবো। থতমা উড়াই দেবো। নিজে মারামারি করার চিকিৎসাও করো। মুই মাইরা দিবা পারো। একদম থতমা উল্টায় দিম।’’
ভিডিওটি ভাইরালের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। অনেকে এ ধরনের আচরণে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
মোজাম্মেল হক নাহিদ নামে একজন লিখেছেন, “মেডিকেল সাইন্সের সব থেকে বড় বিদ্যা হলো কাউন্সিল, রোগীর এবং রোগীর স্বজনদের সাথে ভাল ব্যাবহার, প্রপার কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রায় ৭০-৭৫% পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট করা যায়। একজন BCS সিনিয়র চিকিৎসক হয় পেশেন্টের সাথে মোটেও এই ধরনের লেংগুয়েজ এ কথা বলা উচিত হয়নি। আপনার মতন এমন গুটি কয়েকজন এর জন্য আমাদের গোটা চিকিৎসক সমাজ এর উপর ব্লেইম উঠে। সংশোধন হউন, সন্মান এমনি ই আসবে।”
রাজাবুল ইসলাম রাজা লিখেছেন, “এই ডাক্তারের ভাষা খুবই নগ্ন। আমি একজন উপ সহকারী কৃষি অফিসার পরিচয় দেওয়ার পরেও আমার সাথে উনি একটা সময় খুব খারাপ ব্যবহার করছেন। একটা ডাক্তারের এরকম মুখের ভাষা থাকতে পারে না।”
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপার পঞ্চগড়ের সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল বলেন, “একজন চিকিৎসকের মূল দায়িত্ব হলো রোগীর সেবা করা। কিন্তু তার ভাষা, জ্ঞান এবং আচরণ সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। একজন ডাক্তারের জন্য ধৈর্য একটি বড় গুণ। যেমন শিক্ষকের মধ্যে কিছু গুণ থাকা উচিত, তেমনি চিকিৎসকেরও রোগীর প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতিশীল ব্যবহার থাকা আবশ্যক। তাই তার ব্যবহৃত ভাষা কোনোভাবেই সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।”
এদিকে, চিকিৎসকের বিতর্কিত ভিডিওটি নজরে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্ট- এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের।
তিনি পঞ্চগড়ের একটি ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘‘পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে একজন ডাক্তার একজন রোগী কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যে ভাষা ব্যবহার করেছেন এবং যে আচরণ করেছেন সেটা সুস্থ মস্তিষ্কের কোন ডাক্তার সভ্য সমাজে করতে পারেন না। জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান করা হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
ঘটনা সম্পর্কে জানতে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও ডা. আবুল কাশেমের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বলেন, “ভিডিওটি আমার নজরে আসার পরপরই ওই চিকিৎসককে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/নাঈম/এস