বাংলাদেশি এক কিশোরীকে পাচারের অভিযোগে দুই ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন আমির আলী শেখ এবং অমল কৃষ্ণ মন্ডল। তাদের উভয়েরই বাড়ি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। 

গত রবিবার এনআইএ-এর তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই বাংলাদেশি কিশোরীকে কাজের লোভ দেখিয়ে অবৈধভাবে ভারতে আনা হয়। এরপরে তাকে জোর করে দেহব্যবসায় নামতে বাধ্য করা হয়।  

আরো পড়ুন:

নজিরবিহীন বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কলকাতা

আপনি যা ভাবেন, তাই হয়ে উঠতে পারেন: ধানুশ

শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর গাইঘাটা ও পেট্রাপোলে একযোগে অভিযান চালায় এনআইএ। অমল কৃষ্ণ মণ্ডল ও আমির আলি শেখের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ভারতীয় ও বাংলাদেশি মুদ্রা এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়। পরে তাদের পেট্রাপোল থানায় নিয়ে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে মানব পাচারের তথ্য উঠে আসে। নয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জেরা শেষে বিকেলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এনআইএ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক মানুষের গ্রেপ্তার এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের জব্দের মাধ্যমে এনআইএ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশি নারীদের ভারতে পাচারের সঙ্গে জড়িত মানব পাচারকারী নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। 

কয়েক মাস আগে ভারতের ওড়িশার ভুবনেশ্বর থেকে ওই বাংলাদেশি কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে, ওই কিশোরীকে বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁওয়ে পাচার করা হয়েছিল এবং তারপর কলকাতা হয়ে ওড়িশার কটকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে এনআইএ-এর। 

ওই তরুণীর মামলাটি তদন্ত করে, এনআইএ বাংলাদেশে বসবাসকারী এক দম্পতির জড়িত থাকার বিষয়টি জানতে পারে। পরে মানবপাচার চক্রে দম্পতির সঙ্গে অনলাইন আর্থিক লেনদেনের সাথে দুই ভারতীয় নাগরিক আমির আলী শেখ এবং অমল কৃষ্ণ মন্ডল-এর সম্পৃক্ততার বিষয়টি কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে আসে। তারই ভিত্তিতে এই দুই ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গত রবিবার তাদের উভয়কেই স্থানীয় আদালতে তোলা হয়। আদালত অভিযুক্তদের ট্রানজিট রিমান্ডে ওড়িশায় নেওয়ার অনুমতি দেয়। 

এ ব্যাপারে গতকাল সোমবার আমির আলী শেখের চাচা সাহেব আলী বলেন, “আমার ভাতিজা মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করে। কিন্তু কোনো দুই নম্বরি ব্যবসা করে না। শনিবার ভোর চারটা থেকে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু কী কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা আমি জানি না।”

অন্যদিকে অমল মন্ডলের স্ত্রী মিনি মন্ডল জানান, গত শনিবার ভোর বেলায় স্বামীকে তাদের বাড়ি থেকে পেট্রাপোল থানাতে আনা হয়। তার স্বামী কোনো কাজ করে না। আগে মাঠে চাষ করত, জামা কাপড়ের ব্যবসা করত। কেন তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তিনি জানেন না।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা

‘নিউইয়র্ককে যেন আবার নিউইয়র্ক বলে মনে হচ্ছে। এটা শুধু একটা নির্বাচন ছিল না। সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন, যেন বহুদিন ধরে লাখ লাখ মানুষ তাঁদের শ্বাস আটকে রেখেছিলেন।’ কথাগুলো বলছিলেন নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটান এলাকার বাসিন্দা কেইথ অ্যালান ওয়াটস। শহরের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয়ে যারপরনাই খুশি তিনি।

নিউইয়র্কের বাসিন্দারা মামদানির জয়ে খুশি হবেন—এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের সমর্থনেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে মেয়র পদে জিতেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রার্থী। তবে নিউইয়র্কের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরের বাসিন্দারাও মামদানিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাঁর ওপর ভরসা করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘মামদানির জয় নির্মল বাতাসে নতুন করে শ্বাস নেওয়ার মতো।’

গত মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে টপকে বিজয়ী হন ৩৪ বছর বয়সী মামদানি। এ নিয়ে পাঠকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এর জবাবে নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের শত শত পাঠক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার গার্ডিয়ানের ওয়েবসাইটে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।

তরুণদের আস্থা

নির্বাচনী প্রচারে নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মামদানি। ম্যানহাটানের বাসিন্দা অ্যালান ওয়াটস দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে নিউইয়র্কবাসী একধরনের গ্লানির মধ্যে ছিলেন। বাড়িভাড়া বাড়ছিল, বেতন বৃদ্ধি থমকে ছিল, আশা হারিয়ে গিয়েছিল। তবে মামদানি যখন মুখ খুললেন, মনে হলো তিনি মানুষের জন্যই কথা বলছেন।’

মামদানিকে নিয়ে একই ধারণা নিউইয়র্কের বাসিন্দা মার্গারেট কোগানের। ৮১ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা এখন অবসর যাপন করছেন। তাঁর আশা—মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করাটা আরও সাশ্রয়ী হবে; বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণি সুবিধা পাবেন, যাঁদের ওপর সবাইকে নির্ভর করতে হয়। মামদানির জয় ‘ঘুমিয়ে থাকা’ ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি জাগরণের বার্তা বলে মনে করেন তিনি।

মার্গারেট কোগানের বয়স হয়েছে। মার্কিন রাজনীতির বহু কিছু দেখেছেন তিনি। সেদিক দিয়ে ৩২ বছর বয়সী ডিলান এখন তরুণ। তিনি রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। তবে মামদানির প্রচারে মুগ্ধ ডিলান বলেন, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি বা প্রার্থী বাছাইপর্বে ভোট দেননি। শেষ পর্যন্ত প্রচারে মামদানির উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখে মেয়র নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।

নিউইয়র্কের বাইরেও আনন্দের ছোঁয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল রাজনীতির মুখে মামদানির এই জয়ের আনন্দে ভাগ বসিয়েছেন নিউইয়র্কের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা। যেমন ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা স্কট রিচিংয়ের কথা বলা যায়। ‘মেধাবী তরুণ’ মামদানি যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে ট্রাম্প ও ধনকুবেরদের একহাত নিয়েছেন, তা মন জয় করে নিয়েছে ৭৪ বছর বয়সী এই নারীর। রিচিংয়ের এখন নজর নিউইয়র্কের ভবিষ্যতের দিকে।

স্কট রিচিং বলেন, ‘আমি জানি, প্রচারে মামদানি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার সব কটি পূরণ করতে পারবেন না। তবে আশা করি, নিউইয়র্কের যোগাযোগব্যবস্থা ও খাদ্যস্বল্পতার সমস্য নিয়ে কিছু করবেন। পাশাপাশি ধনীদের ওপর কর আরোপ করতে পারবেন। তিনি এগুলো করতে পারলে, আশা করা যায় তা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্যান্য নির্বাচনী প্রার্থীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’

মামদানির জয়ের খবরে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি টেনেসি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা কেফিয়াস স্ট্রাচান (৫৪)। তিনি বলেন, বহু বছরের মধ্যে এই প্রথম ঘুম থেকে উঠে কোনো ভালো খবর পেয়েছেন। আর মিশিগানের বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী ডেভন বলেন, ‘মামদানিকে কেন্দ্রীয় সরকার নানাভাবে বাধা দেবে জানি। আশা করি, ভোটাররা তা বুঝতে পারবেন এবং বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আশা হারাবেন না।’

আরও পড়ুনপ্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থীরা কীভাবে মামদানিকে আইএসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন৭ ঘণ্টা আগেউদ্বিগ্ন অনেকে

মামদানিকে নিয়ে আশাবাদের পাশাপাশি তাঁর সামনে থাকা কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন অনেকে। ফ্লোরিডার বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী ব্রুস ওয়েকস বলেন, মামদানির জয় নিউইয়র্ক ও পুরো দেশের জন্য বড় একটি মোড়বদল। তাঁকে এখন বড় লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেকোনো উপায়ে মেয়র হিসেবে তাঁর যাত্রায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।

মেয়র হিসেবে মামদানির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই—এ বিষয় নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন বলেন, মামদানি নিউইয়র্ক নিয়ে যেসব পরিকল্পনা করেছেন, তার অনেকগুলো ‘অবাস্তব’। তাই ভবিষ্যতে সেগুলো কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে তাঁর।

তবে উদ্বেগ ও শঙ্কার মধ্যেও সবশেষে নিউইয়র্কের জন্য ভালোটাই হবে বলে গার্ডিয়ান–এর কাছে আশা প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ নিউইয়র্কবাসী। আগামী জানুয়ারিতে মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন মামদানি। শহরটির বাসিন্দা, ৩৩ বছর বয়সী কিম্বারলি মাইকেল বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ভালো কিছু হবে। এখন যেটি দরকার, তা হলো আমাদের সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকা।’

আরও পড়ুনমামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ