প্রক্টর বদলের পর এবার প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের
Published: 22nd, September 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এর সদস্যরা এবার সম্পূর্ণ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের অপসারণের দাবি তুলেছেন। এ দাবিতে আজ সোমবার বেলা পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলার ঝুপড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারী অঙ্গনের সংগঠক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার। তিনি বলেন, সাবেক প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরীফকে অপসারণ করলেও প্রক্টরিয়াল বডিকে অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে ওই বডির নানা অসংগতি ও দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হচ্ছিল। এ কারণে শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচিতেও গিয়েছিলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, প্রক্টরের দায়িত্বে থেকে নারীবিদ্বেষী মন্তব্য, ভিকটিম ব্লেমিং, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে সাড়া না দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
শিক্ষার্থীদের লিখিত বক্তব্যে নতুন প্রক্টরের জন্য কিছু প্রত্যাশার কথা জানায় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির। সেগুলো হলো—সার্বক্ষণিক প্রক্টরের ক্যাম্পাসে অবস্থান ও আবাসিক কোয়ার্টারে থাকা বাধ্যতামূলক করা, দলকানা না হওয়া, নারীবিদ্বেষী আচরণ না করা, নিরাপত্তার প্রশ্নে পক্ষপাতহীন থাকা এবং শিক্ষার্থীদের যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত সাড়া দেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাত দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টরিয়াল বডির কাঠামো পরিবর্তনের দাবি তুলেছিলাম। এ ছাড়া আগের প্রক্টর নানা নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন, যা আমরা মেনে নিতে পারিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া, শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির, সাংগঠনিক সম্পাদক রাম্রা সাইন মারমা, রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আহমেদ মুগ্ধ, দপ্তর সম্পাদক নাইম শাহজাহান, নারী অঙ্গনের সংগঠক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (ইউপিডিএফ-সমর্থিত) সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা।
শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, ‘অনশনের পর উপাচার্য আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি জানান, শিক্ষক রাজনীতির কারণে সব দাবি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বাকি প্রক্টরদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র বলেন, ‘সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কাননসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ দিয়েছিলাম। তারপরও তাদের দায়িত্ব বাড়ানো হয়েছে। আশা করি নতুন প্রক্টর শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি শুনবেন।’
১০ সেপ্টেম্বর (বুধবার) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া, শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর জশদ জাকির, সাংগঠনিক সম্পাদক রাম্রা সাইন মারমা, রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আহমেদ মুগ্ধ, দপ্তর সম্পাদক নাইম শাহজাহান, নারী অঙ্গনের সংগঠক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (ইউপিডিএফ-সমর্থিত) সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা। এর মধ্যে জশদ জাকির বেলা তিনটার দিকে যুক্ত হয়েছিলেন।
প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ ছাড়া অনশনরত শিক্ষার্থীদের অন্য দাবির মধ্যে ছিল গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের মানসম্মত চিকিৎসার নিশ্চয়তা, ক্যাম্পাসে নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হামলার ভিডিও প্রকাশকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন।
উল্লেখ্য, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন। সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করেন ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে কাফনের কাপড় জড়িয়ে আমরণ অনশনে এক শিক্ষার্থী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মাথা ও শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন।
ওই শিক্ষার্থীর নাম আসাদুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অনশনের সময় তাঁর পেছনে রাখা ব্যানারে লেখা ছিল—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে আমরণ অনশন ধর্মঘট’।
আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোষ্য কোটা নামক বিষফোঁড়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এটাকে নির্মূল করার জন্যই আমার এ কর্মসূচি। জুলাই আন্দোলনে যে কোটার বিরুদ্ধে এত রক্তপাত, এত মৃত্যু, স্বৈরশাসকের পতন হলো, সেই কোটা আবার ফিরেছে। আমি কোটার পক্ষে নই। যদি কোটা দেওয়া হয়, সেটা কৃষক-শ্রমিক-মজুরের সন্তানদের দেওয়া হোক। এই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমার অনশন চলবে। আমি কোনো খাবার-পানি খাব না। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ আসেনি। রাতে এখানেই অবস্থান করব।’
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, পোষ্য কোটা একটি মীমাংসিত ইস্যু। এটি অন্যায্য ও অযৌক্তিক একটি কোটা। তাঁরা প্রয়োজনে রক্ত দেবেন, তবু ক্যাম্পাসে এ কোটা ফিরতে দেবেন না। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন ঘিরে যখন ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখন এ সিদ্ধান্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না বলে তাঁরা জানান।
কোটা পুনর্বহালের বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত ২১ সেপ্টেম্বরের রাকসু নির্বাচনে শাটডাউন কর্মসূচির প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। এ জন্য একাডেমিক কাউন্সিলের ভর্তি উপকমিটি এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যা চান, সেটাই হবে। কারণ, তাঁরা শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় চান।