চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনে ২৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। চাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, এর মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং ২১ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) চাকসুর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত চাকসু এবং হল ও হোস্টেল সংসদের প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিষয়টি জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

ডাকসু নির্বাচনে ১১ অনিয়মের অভিযোগ ছাত্রদলের 

রাকসুু ভোট পেছানোয় ক্ষুব্ধ শিবির, স্লোগানে উত্তাল রাতের ক্যাম্পাস

প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ছেলেদের একমাত্র শাহজালাল হলে রিডিং রুম, ডাইনিং ও হল লাইব্রেরি সম্পাদক পদে মোহাম্মদ তানভীর হাসান প্রান্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।

অন্যদিকে, মেয়েদের বিজয় ২৪ হলে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে অন্তরা সাহা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে পারমিতা চাকমা; খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ইতি চাকমা; সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে প্রত্যাশা চাকমা, দফতর সম্পাদক পদে অপরাজিতা বড়ুয়া তিন্নি; রিডিং রুম, ডাইনিং ও লাইব্রেরি সম্পাদক পদে খিং খিং ছেন; সমাজসেবা, গবেষণা ও আইসিটি সম্পাদক পদে মোনালিসা চাকমা; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে সুরঞ্জনা ত্রিপুরা; যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে শ্রেয়া তালুকদার এবং নির্বাহী সদস্য পদে অনন্যা চাকমা, প্রমিতা চাকমা ও শিপ্রা তঞ্চঙ্গা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।

প্রীতিলতা হলে খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে অন্তরা চাকমা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে সিরাজুম মুনিরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যাচ্ছেন।

শামসুন্নাহার হলে দপ্তর সম্পাদক পদে সাইমুন সাদিয়া; রিডিং রুম, ডাইনিং ও লাইব্রেরি সম্পাদক পদে নিশাদ জান্নাত; সমাজসেবা, পরিবেশ ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ইফফাত আরা জুই; যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে কানিজ ফাতেমা সিফাত এবং নির্বাহী সদস্য পদে নাইমা তাসফিয়া, মিফতাহুল জান্নাত ও আফিয়া জাহিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।

এছাড়া, একমাত্র মাস্টার দ্য সূর্যসেন হোস্টেল সংসদে দুজন নির্বাহী সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। তারা হলেন মাহমুদুল হাসান মিনহাজ ও মো.

আবু বকর সিদ্দিক।

আগামীকাল মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) প্রার্থীদের বিষয়ে আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তির শেষ দিন। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ এবং আগামী ১২ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স প ট ম বর প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

এ গ্যাদা, এবার আমার সিরিয়াল

সপ্তাহের রোববার ও বুধবার আমাদের স্কুলের মাঠে হাট বসে। দুপুর গড়িয়ে গেলেই শুরু হতো কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক। সময়ের সঙ্গে স্কুল মাঠে ব্যস্ততা বাড়ত। দুই হাটের দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাঠদান চলত। জানুয়ারি মাসের এমন এক রোববারের হাটের দিন আমার  জীবনের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো।  

মাত্র কদিন হলো উচ্চমাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পা রেখেছি। পাঠ্যবই, শিক্ষকদের নিয়ে নতুন কৌতূহল। নতুন বইয়ের গন্ধ তখনো মনোমুগ্ধকর। এমন এক সকালে আমাদের গণিত শিক্ষক ইয়াকুব আলী স্যার হঠাৎ এলেন ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ক্লাস নিতে। উত্তম কুমার স্যার সেদিন আসেননি। যে কারণে ইয়াকুব স্যারের আগমন। এখন মনে পড়লে বুঝি, ভাগ্যিস সেদিন উত্তম স্যার আসেননি। কেন সেই ঘটনা বলছি।

ইয়াকুব স্যার এসেই জানতে চাইলেন, ‘আজকে রুটিনে কী পড়ানো হবে?’ আমরা সবাই একসঙ্গে বলে উঠলাম, স্যার, আজ প্যারাগ্রাফ পড়ানোর দিন। সিলেবাসে অনুযায়ী সেদিন ছিল ‘দ্য নিউজপেপার’ প্যারাগ্রাফ বা অনুচ্ছেদ। স্যার শুরুতেই বললেন, ‘তোমরা কে কে খবরের কাগজ পড়ো?’ দেখা গেল একজন বাদে সবাই না সূচক মাথা নাড়ল। পত্রিকা, আমাদের বাজারের বেশ কয়েকজনকে মাঝেমধ্যে পড়তে দেখলেও তখনো আমি কোনো পত্রিকা সেই অর্থে পড়িনি। অতটা গুরুত্ব দিইনি। কখনো পত্রিকায় নায়িকাদের ছবি ছাপা হলে সেটা দেখতাম, এই যা। পারিবারিকভাবেও পত্রিকা পড়ার চল খুব একটা ছিল না। সময়টা ২০০০ সাল।

তখন স্যার পত্রিকা পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে বললেন। কেন জীবনে বড় হওয়ার জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়া দরকার, সেটা বোঝালেন। জীবনের ভালো কিছু করার কৌতূহল ছিল। যে কারণে আমার কাছে সেদিনই মনে হলো পত্রিকা তাহলে পড়তে হবে। এবার স্যার জানালেন, পারলে প্রথম আলো পত্রিকা পড়তে পারো। এই পত্রিকায় দেশ–বিদেশের সবচেয়ে ভালো, নির্ভরযোগ্য খবর ছাপায়। সেই প্রথম শুনলাম প্রথম আলো পত্রিকার নাম। অজপাড়াগাঁয়ের কে এই পত্রিকাটি পড়েন, খোঁজা শুরু করি।

আমার গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার আটঘড়িয়া থানার একদন্ত বাড়ইপাড়া গ্রামে। আমার স্কুলের নাম আশরাফ উচ্চবিদ্যালয়। শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। যেতে হয় বেশির ভাগ কাঁচা পথ পেরিয়ে। সেই শহর থেকে একজন বয়স্ক হকার সাইকেল চালিয়ে আসতেন গ্রামে পত্রিকা দিতে। বিভিন্ন এলাকায় পত্রিকা দিয়ে বিকেল চারটার দিকে আসতেন আমাদের শিবপুর বাজারে। সেখানে বেশির ভাগই চলত করতোয়া নামে একটি পত্রিকা। কিন্তু প্রথম আলো তখনো কেউ রাখেন না। অবশেষে সেই হকারের কাছে একদিন জানতে চাইলাম, প্রথম আলো পত্রিকা কে রাখেন? শুনে বেশ অবাক হয়ে গেলেন। জানতে চাইলেন, ‘তুমি প্রথম আলো পড়তে চাও।’ আমি তাঁকে আগ্রহের কথা জানালাম। তিনি আমাকে পত্রিকার একটি কপি হাতে দিয়ে বললেন, ‘এটাই প্রথম আলো। তুমি পড়তে থাকো। আর আমার সাইকেল দেখে রেখো। আমি বিএসসি স্যারকে একটি পত্রিকা দিয়ে আসি।’ শাহাবুদ্দিন বিএসসি স্যার আমাদের গণিতের শিক্ষক ছিলেন। তিনিও পাবনার আঞ্চলিক একটি পত্রিকা পড়তেন। নাম আজ আর মনে নেই।

সেই প্রথম আমার প্রথম আলো পত্রিকা দেখা ও পড়া। তারপর হকারের সঙ্গে বেশ খাতির জমে গেল। কিন্তু সমস্যা একটাই, পত্রিকাটি পড়ার জন্য ১০ মিনিট সময় পাওয়া যায়। এতে মন ভরে না। এর মধ্যেই একদিন খুশির খবর শোনালেন। জানালেন, আমাদের বাজারের এক পাশে এখন থেকে নিয়মিত প্রথম আলো পত্রিকা রাখা হচ্ছে। কোনো একটি উদ্যোগে সেখানে বেশ কটি পত্রিকা রাখা হতো। হাতের কাছে প্রথম আলো পাওয়া যাবে ভেবে মনটা আনন্দ নেচে উঠল।

আমাদের বাজারের ইছামতি নদী ঘেঁষে একটি ছোট দোকানের পাশে পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা হলো। সেখানে নিয়মিত পত্রিকা দেখি। কিন্তু সমস্যা একটাই। আমি ছিলাম পত্রিকা পড়ার দলে বলা যায় সবার ছোট। যে কারণে প্রথম আলো হাতে নিলেই দেখা যেত বয়সে বড়রা এসে বলতেন, ‘প্রথম আলোটা কার কাছে দেখি’—এই বলে নিয়ে নিতেন।

একসময় প্রথম আলো পড়াটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু সিরিয়াল ধরে পড়ার সময় মেলানো কঠিন হয়ে যায়। কারণ, চারটার পরে পত্রিকা দিয়ে যেতেন। সেই সময়ে অনেকেই আমার মতো অপেক্ষায় বসে থাকতেন। অপেক্ষায় থাকতে হতো কখন আমার পত্রিকা পড়ার পালা আসে। এভাবে কখনো কখনো সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। তখনো ছোট দেখে অনেকে বলতেন, ‘গ্যাদা, বাড়ি যাও। রাত হয়ে গেছে।’ সবাই জানত আমাদের বাড়ি অনেকটা দূরে। ঝোপঝাড় পেরিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমার কাছে এটাই মনে হতো, পত্রিকা আমাকে পড়তেই হবে। প্রথম আলো না পড়লে আমি জীবনে বড় কিছু হতে পারব না।

যে কারণে ভয় উপেক্ষা করে কখনো কখনো সন্ধ্যার পরও অপেক্ষা করতাম পত্রিকা পড়তে। তারপরই পথচারি খুঁজে তার পিছু নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতাম। কখনো কাউকে না পেলে ভয় নিয়ে বাড়ি ফিরতে হতো। তখন বাড়ি এসে লবণ দিয়ে পানি খেয়েছি এমন ঘটনাও বহুবার ঘটেছে। বাজারে বাবার দোকান ছিল, কখনো বাবার সঙ্গেও আসা হতো। কিন্তু বাবার সঙ্গে আসার অপেক্ষায় থাকলে অনেক রাত হতো। যে কারণে বহুবার পত্রিকা পড়ার জন্য সিরিয়াল ব্রেক করেছি। দেখা গেল কেউ একজন পড়া শেষ করলেই দ্রুত প্রথম আলো হাতে নিয়ে পড়া শুরু করতাম। তবে বেশির ভাগই শুনতে হতো, ‘এ গ্যাদা, এবার আমার সিরিয়াল।’ তখন মুখ কালো করে পত্রিকাটি দিয়ে দিতে হতো। প্রথম আলোর শুরু থেকে সবচেয়ে ভালো লাগত তারকাখচিত বিনোদন পাতা। এখন ভাবতে বেশ গর্ব লাগে। সেই বিনোদন পাতার একজন কর্মী আমি।

মো. মনজুরুল আলম, নিজস্ব প্রতিবেদক, কালচার অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট

সম্পর্কিত নিবন্ধ