রাবিতে কমপ্লিট শাটডাউনে ইবির জিয়া পরিষদের সংহতি
Published: 22nd, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্যকে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন জিয়া পরিষদ। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের স্থায়ী বহিষ্কারসহ শাস্তি দাবি ও শিক্ষকদের চলমান কমপ্লিট শাটডাউনসহ সব আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ওপেনার স্মিথ, পেয়েছেন ওয়ানডের নেতৃত্ব
করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিলেন পলক
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) দাফতরিক কাজ শেষে বাসায় যাওয়ার সময় ছাত্র নামধারী কিছু দুষ্কৃতকারীর হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। আক্রমণ থেকে বাঁচতে জুবেরি ভবনে গেলে সেখানেও তাকে ঘিরে দুষ্কৃতকারীরা নানা ধরনের কটূক্তি ও ধস্তাধস্তি করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা উপ-উপাচার্যের গলা চেপে ধরে ও ধাক্কা মেরে সিঁড়িতে ফেলে নির্যাতন করতে থাকে।
তাকে রক্ষা করতে গিয়ে অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা আহত হন। বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়ায় একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারের দাঁড়ি ধরে টানাটানি করতেও দেখা যায়। বিশেষ করে রাকসুর নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এনামুল হক সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাকে হাসপাতালে নিতে হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুবেরি ভবন একটি আবাসিক ও ক্লাব ভবন। এখানে অনেক পরিবার বাস করে, যার মধ্যে নারী ও শিশুরাও আছে। জুবেরি ভবনের অবস্থানরত শিক্ষকদের কক্ষে বিদ্যুৎ সংযোগ ও খাবার পানির ব্যবস্থাও অমানবিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভবনের পরিবারগুলো এখনো আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় আছে। আমরা মনে করি— এ ধরনের নারকীয় ঘটনা শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠকেই কলঙ্কিতই করেনি; বরং শিক্ষা, শিক্ষকতা এবং মানুষ গড়ার মহান কাজটিকেই কলুষিত ও লাঞ্ছিত করেছে।
এই কুচক্রী মহল বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে দেশটিকে আবারো গহিন অন্ধকারে নিয়ে যেতে চায়।
আমরা এই ঘটনাকেন্দ্রিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান কমপ্লিট শাটডাউনসহ সকল আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের পাশাপাশি প্রচলিত আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপ-উপাচার্যসহ শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপ উপ চ র য শ ক ষকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উচ্চ ঝুঁকিতে ৫ জেলা: সম্প্রীতি যাত্রা
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঝুঁকিতে আছে ২৯টি জেলা। এর মধ্যে ৫টি জেলা আছে উচ্চ ঝুঁকিতে। সেগুলো হলো—ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুর ও যশোর। মাঝারি ঝুঁকিতে আছে ২৪ জেলা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ আয়োজিত ‘মসজিদ, মন্দির, মাজার, আখড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় সম্প্রীতি যাত্রার ডাক এবং আসন্ন দুর্গাপূজায় ঝুঁকি পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য জানিয়েছেন লেখক ও গবেষক মীর হুযাইফা আল-মামদূহ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ফেরদৌস আরা রুমী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সংগীতশিল্পী অরূপ রাহী এবং সাংস্কৃতিক কর্মী বীথি ঘোষ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দশ বছর (২০১৪ থেকে ২০২৫) ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পূজামণ্ডপ, শোভাযাত্রার রুট এবং সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে যেসব হামলা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে ২৯টি জেলাকে ঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি জেলা উচ্চ ঝুঁকিতে। ২৪টি জেলা মাঝারি ঝুঁকিতে আছে।
লিখিত বক্তব্যে সম্প্রীতি যাত্রার পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাষ্ট্রচেতনার ভিত্তি গড়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সহাবস্থান এবং আধ্যাত্মিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর। আখড়া, বাউল আসর, দরগাহ ও সুফি মাজার যুগে যুগে মানুষের মন ও সমাজকে আলোকিত করেছে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এই ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রগুলো ক্রমাগত সহিংসতার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এসব হামলা কোনো একক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং বাংলাদেশের সামাজিক সংহতি ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলার ওপর সরাসরি আঘাত।
সম্প্রীতি যাত্রা জানায়, পূজার প্রস্তুতির মধ্যেই মণিপুরে প্রতিমা ভাঙচুর এবং কুমিল্লায় চারটি মাজারে হামলা হয়েছে। রাজবাড়ীতে এক ব্যক্তির লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলার মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে।
একটি জাতীয় পত্রিকার বরাত দিয়ে জানানো হয়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসেই ৮০টি মাজার ও দরগায় হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘু, সুফি, বাউল এবং আদিবাসীসহ সব ধরনের প্রান্তিক গোষ্ঠী আজ ঝুঁকির মুখে।
সংগঠনটি জানায়, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ৬ হাজার ৬০০টি সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এর কোনোটির বিচার হয়নি। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও তাদের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো খুবই উদাসীন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাড়তি শঙ্কার কথা তুলে ধরে সংগঠনটি জানায়, নির্বাচনের আগমুহূর্তে সহিংসতার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ভোটের আগে-পরে সংখ্যালঘুদের আবাসিক এলাকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ও দরবারগুলো সহজে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
সম্প্রীতি রক্ষায় সংগঠনটি বেশকিছু পদক্ষেপ নেবে বলে জানায়। সেগুলোর মধ্যে স্থানীয় সম্প্রীতি কমিটি গঠন, মনিটরিং ও নথিভুক্তি, গুজব প্রতিরোধে তথ্য প্রবাহ, দ্রুত সহায়তা কাঠামো, প্রতিবেদন ও নীতি প্রস্তাব।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সম্প্রীতি রক্ষায় সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনগণ। তাই, আপনার এলাকায় কোনো হুমকি, উসকানি বা গুজব বা আক্রমনের আশঙ্কা দেখা দিলে অবিলম্বে নির্ধারিত চ্যানেলে রিপোর্ট করুন, প্রমাণ সংরক্ষণ করুন, কমিটিতে সক্রিয় হোন, গুজব প্রতিরোধ করুন।
নাগরিকদের জীবন, সম্পদ, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সম্প্রীতি যাত্রা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক