স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা প্রকল্পের ফাইল (নথি) বাসায় নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। কোনো প্রকল্পের ফাইল সিটি করপোরেশন থেকে মন্ত্রণালয়ে গেলে তা আর অনুমোদন হয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র।

আজ সোমবার চট্টগ্রাম ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে (সিআইইউ) পরিচ্ছন্নতা সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন এ অভিযোগ করেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় এবং সিআইইউ ও ইয়াংওয়ান করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘তিনটি প্রকল্প এখনো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আছে। উপদেষ্টা সাহেব যখন দেখেন, এটা একটা প্রজেক্ট (প্রকল্প), উনি ফাইলটা মিনিস্ট্রিতে রাখেন না। ঘরে নিয়ে চলে যান। দিস ইজ দ্য প্যাথেটিক সিনারিও দ্যাট উই আর ফেসিং নাউ আ ডেইজ (এটাই এখনকার হতাশাজনক বাস্তবতা)। ফাইল আছে, সবই আছে। খুব চমৎকারভাবে ওনারা বাসায় নিয়ে যান। মিনিস্ট্রি থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যায়। এটা আমার গত ১১ মাসের অভিজ্ঞতা।’

ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যায় না উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমার ফাইল কই? বলে, ফাইল তো বাসায় নিয়ে গেছে। এখন বাসা থেকে ওটা আর পরে সিগনেচার হয় না। ওটা আর আসে না। এই ইউকের(যুক্তরাজ্যের) প্রজেক্টটা আমি আর করতে পারিনি। জাপান অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ কোরিয়ার প্রজেক্টও। আজ এগুলো যদি আমি অনেক দ্রুত পেতাম, তাহলে চট্টগ্রাম শহর অনেক সুন্দর করে দিতে পারতাম।’

অনুষ্ঠানে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এটা শুধু চট্টগ্রাম সিটির ব্যর্থতা নয়, এটা রাষ্ট্র ও সরকারের ব্যর্থতা। চার শ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সংগ্রহের প্রকল্প, সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হয়ে গেল ২৯৮ কোটি টাকা। প্রায় ১০০ কোটি টাকা কেটে দিল। কেটে দিয়ে সেখানে বলে দিল, ১৬০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে ৫ শতাংশ সুদে। সিটি করপোরেশন একটা সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। শুধু ৬০ কোটি টাকা তারা সিটি করপোরেশনকে বরাদ্দ দেবে। বাকিটা সিটি করপোরেশন থেকে দিতে হবে।

এখনো এই প্রকল্পের ফাইল ওই জায়গায় রয়ে গেছে উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি এখনো দৌড়াচ্ছি, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমি আর কোথায় যাব? এর ওপর আর কেউ আছে? উনি চট্টগ্রামের মানুষ। ওনাকে বলেছি, ওনার পিএসকে বারবার বলেছি যে কাজটা করে দেন। আমার মেশিনারিজ (যন্ত্রপাতি) খুব দরকার। আমার আসলে মেশিনারিজ নেই। যে যন্ত্রপাতিগুলো আছে, সেগুলো ১৫-২০ বছরের পুরোনো। গত সরকার একটা ড্রেনেজ সিস্টেম করতে গিয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো প্রায় খরচ করেছে। আর এটা যন্ত্রপাতি কেনার জন্য তিন শ কোটি টাকার খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। কিন্তু সেখানে গিয়ে ফেল করলাম।’

মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি ফেল করলাম মানে রাষ্ট্র ফেল করল। একদম স্টেট ফেল করল। একটা সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকে দিতে কার্পণ্য করল যে আমি এটা দিতে পারছি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। জলাবদ্ধতা একটা বড় সমস্যা। আমি এটা সমাধান করতে চাই। কিন্তু এখানে যে উপদেষ্টাকে পাঠানো হলো, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আমি ওনার সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। অনুরোধ করলাম। সবশেষে তিনি বললেন, প্রথমে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হয়ে যাক, তারপর আপনি সেটা পাবেন। আমার ৫০-৬০ শতাংশ জলাবদ্ধতার সমস্যা ইতিমধ্যে সমাধান হয়েছে। এখনো আমি সেটা পাচ্ছি না। কাজেই কথা আমরা বলি, কিন্তু এখানে কথার পেছনে কথা থাকে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম এম নুরুল আবসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, পরিচ্ছন্নতা শুধু সিটি করপোরেশন বা সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি সবার। তরুণ প্রজন্মকে এ উদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে এবং পরিচ্ছন্ন নগর গঠনে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের কার্যক্রম সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সুং। উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার রুমা দাশের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল করিম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ফ ল করল উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা প্রকল্পের ফাইল বাসায় নিয়ে যান: চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা প্রকল্পের ফাইল (নথি) বাসায় নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। কোনো প্রকল্পের ফাইল সিটি করপোরেশন থেকে মন্ত্রণালয়ে গেলে তা আর অনুমোদন হয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র।

আজ সোমবার চট্টগ্রাম ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে (সিআইইউ) পরিচ্ছন্নতা সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন এ অভিযোগ করেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় এবং সিআইইউ ও ইয়াংওয়ান করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘তিনটি প্রকল্প এখনো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আছে। উপদেষ্টা সাহেব যখন দেখেন, এটা একটা প্রজেক্ট (প্রকল্প), উনি ফাইলটা মিনিস্ট্রিতে রাখেন না। ঘরে নিয়ে চলে যান। দিস ইজ দ্য প্যাথেটিক সিনারিও দ্যাট উই আর ফেসিং নাউ আ ডেইজ (এটাই এখনকার হতাশাজনক বাস্তবতা)। ফাইল আছে, সবই আছে। খুব চমৎকারভাবে ওনারা বাসায় নিয়ে যান। মিনিস্ট্রি থেকে ফাইল গায়েব হয়ে যায়। এটা আমার গত ১১ মাসের অভিজ্ঞতা।’

ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাওয়া যায় না উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমার ফাইল কই? বলে, ফাইল তো বাসায় নিয়ে গেছে। এখন বাসা থেকে ওটা আর পরে সিগনেচার হয় না। ওটা আর আসে না। এই ইউকের(যুক্তরাজ্যের) প্রজেক্টটা আমি আর করতে পারিনি। জাপান অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ কোরিয়ার প্রজেক্টও। আজ এগুলো যদি আমি অনেক দ্রুত পেতাম, তাহলে চট্টগ্রাম শহর অনেক সুন্দর করে দিতে পারতাম।’

অনুষ্ঠানে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এটা শুধু চট্টগ্রাম সিটির ব্যর্থতা নয়, এটা রাষ্ট্র ও সরকারের ব্যর্থতা। চার শ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সংগ্রহের প্রকল্প, সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হয়ে গেল ২৯৮ কোটি টাকা। প্রায় ১০০ কোটি টাকা কেটে দিল। কেটে দিয়ে সেখানে বলে দিল, ১৬০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে ৫ শতাংশ সুদে। সিটি করপোরেশন একটা সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। শুধু ৬০ কোটি টাকা তারা সিটি করপোরেশনকে বরাদ্দ দেবে। বাকিটা সিটি করপোরেশন থেকে দিতে হবে।

এখনো এই প্রকল্পের ফাইল ওই জায়গায় রয়ে গেছে উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি এখনো দৌড়াচ্ছি, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমি আর কোথায় যাব? এর ওপর আর কেউ আছে? উনি চট্টগ্রামের মানুষ। ওনাকে বলেছি, ওনার পিএসকে বারবার বলেছি যে কাজটা করে দেন। আমার মেশিনারিজ (যন্ত্রপাতি) খুব দরকার। আমার আসলে মেশিনারিজ নেই। যে যন্ত্রপাতিগুলো আছে, সেগুলো ১৫-২০ বছরের পুরোনো। গত সরকার একটা ড্রেনেজ সিস্টেম করতে গিয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো প্রায় খরচ করেছে। আর এটা যন্ত্রপাতি কেনার জন্য তিন শ কোটি টাকার খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। কিন্তু সেখানে গিয়ে ফেল করলাম।’

মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি ফেল করলাম মানে রাষ্ট্র ফেল করল। একদম স্টেট ফেল করল। একটা সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকে দিতে কার্পণ্য করল যে আমি এটা দিতে পারছি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। জলাবদ্ধতা একটা বড় সমস্যা। আমি এটা সমাধান করতে চাই। কিন্তু এখানে যে উপদেষ্টাকে পাঠানো হলো, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আমি ওনার সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। অনুরোধ করলাম। সবশেষে তিনি বললেন, প্রথমে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হয়ে যাক, তারপর আপনি সেটা পাবেন। আমার ৫০-৬০ শতাংশ জলাবদ্ধতার সমস্যা ইতিমধ্যে সমাধান হয়েছে। এখনো আমি সেটা পাচ্ছি না। কাজেই কথা আমরা বলি, কিন্তু এখানে কথার পেছনে কথা থাকে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম এম নুরুল আবসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি বলেছেন, পরিচ্ছন্নতা শুধু সিটি করপোরেশন বা সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি সবার। তরুণ প্রজন্মকে এ উদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে এবং পরিচ্ছন্ন নগর গঠনে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের কার্যক্রম সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সুং। উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার রুমা দাশের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল করিম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ