জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি দৃশ্যমান বিচার ও মৌলিক সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চায়। তবে তা অবশ্যই হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন। গণপরিষদ ছাড়া নতুন সংবিধান ও সংবিধানের মৌলিক সংস্কার হয় না। সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার ইফতারের আগে বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে দলটির নেতাকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, অনেকে নূন্যতম সংস্কার করে নির্বাচন দাবি করছেন। নূন্যতম সংস্কার করে কিছু হয় না। আমাদের মৌলিক ও গুণগত সংস্কার করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রজনতা রক্ত দিয়ে এই সরকার এনেছে রাষ্ট্রের পরিবর্তনের জন্য এবং গণহত্যার বিচারের জন্য।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই ঐক্য আমরা ধরে রাখবো। তবে গণআন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে আপোস করে আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্যে যাব না। গণআন্দোলনে পুরনো বন্দোবস্ত পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন বন্দোবস্তের যাত্রা শুরু হয়েছে। পুরনো বন্দোবস্তের অনেক উপাদান বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের মধ্যে রয়েছে। পরিবর্তনের সঙ্গে যারা তাল মেলাতে পারবে না তারা হারিয়ে যাবেন। পরিবর্তন, সংস্কার ও বিচারের মধ্যে দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যারা বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ আছেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন সেই সব দলের নেতারা জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিল রয়েছে- এমন বক্তব্য দেবেন বলে প্রত্যাশা করেন নাহিদ।

তিনি বলেন, সারাদেশে ছাত্র সমন্বয়কদের চরিত্রহননের চেষ্টা করা হচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আসছে আর মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হচ্ছে। তাই সকলকে সচেতন থাকতে হবে। তবে দলের কেউ অন্যায়ের সাথে আপোস করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। দখল কিংবা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকলে বরদাশত করা হবে না।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা.

তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম এনস প জ ত য় ন গর ক প র ট র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে