গ্রাফিতিতে ভুল প্রত্যাশা প্রকাশ করা হয়েছিল!
Published: 7th, May 2025 GMT
পরপর তিনটি নির্বাচনী তামাশার মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার পর রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের ৯ মাস পূর্ণ হলো। ১৯৬৯ বা ১৯৯০-এর মতো এবারের গণ-অভ্যুত্থানেও কোনো দলীয় নেতৃত্ব ছিল না। ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি, ধর্ম, জাতি, পেশা, বয়সের নারীর অংশগ্রহণ এই আন্দোলনকে অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়েছিল।
দেয়ালের গ্রাফিতিতে সমাজের বিক্ষুব্ধ মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, দাবি ও প্রত্যাশা প্রকাশিত হয়েছিল, সেটাই ঘোষণাপত্রের কাজ করেছে। সেখানে কথা, স্লোগান, ছবি, কার্টুনে জাতিগত, লিঙ্গীয়, শ্রেণিগত বৈষম্য এবং নিপীড়ন আধিপত্য স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত এক দেশের প্রত্যাশা প্রকাশিত হয়েছিল।
কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে এর উল্টো তৎপরতা ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। বৈষম্যবাদীদের দাপট বাড়তে থাকে। মাজার-মসজিদ, মন্দির, নারী, শিল্পকর্ম, ভিন্নমতাবলম্বীদের প্রতি বিদ্বেষী ও আক্রমণাত্মক তৎপরতা বাড়ে। ভাস্কর্য, নাটক, গান, মেলা, গ্রন্থাগার ও শিল্প-সংস্কৃতির কেন্দ্র বহুবার আক্রমণের শিকার হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জোরজবরদস্তি করে কাউকে বসানো কাউকে নামানো।
নারী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হিংসা-বিদ্বেষ, মব সহিংসতা চলতেই থাকে। আগের মতো চাঁদাবাজি দখল আবার শুরু হয়। শ্রমিক আন্দোলনে হামলা-মামলা, এমনকি গুলিও চলেছে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে ধরপাকড় চলছে। শ্রমিক স্বার্থ রক্ষায় সরকার ১৮ দফা চুক্তি করলেও তা বাস্তবায়ন করেনি।
নিহত ও আহত ব্যক্তিদের নিয়ে এখনো যথাযথ তালিকা, পুনর্বাসন, চিকিৎসা সম্পন্ন হয়নি। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে যে টালবাহানা চলছে। তার প্রমাণ বাছবিচারহীনভাবে শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা পাইকারি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা। আর সঙ্গে অজ্ঞাতনামা শত শত আসামি।
এগুলোতে লাভ হচ্ছে গ্রেপ্তার ও আটক বাণিজ্যে নিয়োজিত ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত লোকজনের। লাভ হচ্ছে আসল খুনি লুটেরাদের এবং শেষমেশ আওয়ামী লীগেরও। ত্রাস ছড়ানোর ফলে বহু শিক্ষা–সংস্কৃতির তৎপরতা বন্ধ হয়ে গেছে।
অনেক মামলায় খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু বহুল আলোচিত ত্বকী, তনু, সাগর-রুনি, মুনিয়াসহ বহু মামলার সমাধান হয় না। ফুলবাড়ীতে ১২ বছরের পুরোনো হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার হয় না। শিশুসহ বম মানুষদের ভয়ংকর মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।
মিথ্যা মামলায় আটক দলিত-হরিজনদের জামিনের শুনানি পর্যন্ত হচ্ছে না। হাসিনা আমলে আদালতে বিচারের রায় কী হবে আমরা বুঝতাম। এখনো কে জামিন পাবে, কে আটকে থাকবে আগেই বোঝা যায়। এই সরকার যে সংস্কার বা পরিবর্তন করতে আগ্রহী, তার প্রকাশটা কোথায়?
বর্তমানে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভেনেজুয়েলা, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়ার মতো বহু দেশে বামপন্থী/সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচিত দলগুলো নির্বাচন করছে, ক্ষমতায়ও যাচ্ছে। ইউরোপের বহু দেশে ডানপন্থী আক্রমণের মুখে প্রবাসী মানুষ এ রকম দলের ভরসাতেই থাকেন।সংস্কার আর নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তোলা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারগুলো করতে পারে, সেগুলো করতে বাধা কোথায়? ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যা বেড়ে গেছে। হিমাগার, কিংবা সরকারি ক্রয়ের মতো সাধারণ কাজগুলো করলে কৃষকের জন্য বড় একটা পরিবর্তন হয়।
মার্কিন কোম্পানি থেকে এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়েছে পেট্রোবাংলাকে না জানিয়েই। অথচ আমাদের দরকার এলএনজি আমদানি, কয়লামুখী নীতি থেকে বের হয়ে আসা। তাই গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ক্ষেত্রে জাতীয় সক্ষমতা বাড়িয়ে এই সম্পদ আমরা যাতে পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারি, সেই উদ্যোগ ছিল জরুরি। দরকার ছিল আদানি-রামপাল-রূপপুর চুক্তি বাতিলের রাস্তা তৈরি। ৯ মাসে এসবে সরকারের উদ্যোগ দেখা যায়নি। তারা গত সরকারের নীতিমালা অনুযায়ীই কাজ করে যাচ্ছে।
স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। রাখাইনে করিডর এখন উদ্বেগ আর আলোচনার বিষয়। লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার বন্দোবস্ত হচ্ছে। দেশের মানুষ কিছুই জানে না। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বা বিশেষ সহকারীরা বললেই তো হবে না। দেশের মানুষকে তো জানতে হবে, তাদের জীবন–সম্পদ নিয়ে আসলে কী করা হচ্ছে। স্বচ্ছতা আর জবাবদিহির ব্যবস্থা না করে পুরোনো পথই কেন সরকারের পছন্দ?
এর মধ্যে ভালো কাজ হয়েছে ১১টা বিষয়ে কমিশন গঠন। সেগুলোর রিপোর্টও এসেছে। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন, গণমাধ্যম, প্রশাসন, নারী ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেদনগুলোতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ আছে, যেগুলো ৫ আগস্টের পর আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটিরও বক্তব্য ছিল।
যেমন বলেছিলাম, ‘উত্তরাধিকার সূত্রে জমি-সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা এবং সব কাজে সমশ্রমে সমমজুরি নিশ্চিত করার কথা। যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে ২০০৯ সালের হাইকোর্ট নির্দেশনা অবলম্বন করে কারখানা-সচিবালয়সহ সব প্রতিষ্ঠানে “যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা” কার্যকর করা।’ শ্রমিক বিষয়ে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, নিয়মিত মজুরি পরিশোধের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ইত্যাদি অন্যতম। এ রকম অনেক সুপারিশই বর্তমান সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারে।
সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট নিয়ে সমাজে যথেষ্ট আলোচনা নেই। তবে ধর্মীয় দল-গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে। উত্তরাধিকার প্রশ্ন কিংবা নারীর অধিকার প্রশ্ন এলেই বাংলাদেশের বৈষম্যবাদী রাজনীতি বা মতাদর্শ ধারণকারীদের ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
কোনো যুক্তিযুক্ত আলোচনা নয়, ধর্ম আর সংস্কৃতির নামে হুংকার শোনা যায়, উন্মাদনা ও সহিংসতা তৈরি করার চেষ্টা চলে। এবারও তাই হচ্ছে। নারীকে প্রতিপক্ষ ধরে তাদের সক্রিয়তা হুংকার যত আওয়াজ দেয়, সমাজের বৈষম্য, নিপীড়ন, জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের অনেকগুলোর সঙ্গে আমরা একমত। তবে দুটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। মূলনীতি নতুনভাবে দাঁড় করাতে গিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর যুক্তিটাই সমস্যাজনক।
বলা হয়েছে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি সমাজ ও রাষ্ট্রে বিভক্তি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে.
শুধু অন্য ধর্মের মানুষ নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যেও বহু সংখ্যালঘু থাকে। তাদের জন্যও নীতি–বিধিব্যবস্থা প্রণয়নে রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। কমিশনের আরও দাবি—এটি ‘অতীতে ফ্যাসিবাদী শাসনের আদর্শিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে’। বস্তুত, উল্টো সেই শাসন তৈরি হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে প্রতারণা করে, ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে, নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা জারি করে, মুক্তিযুদ্ধকে অপব্যবহার করে এবং জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচারের ব্যবস্থা করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার উদগ্র বাসনায়।
সংবিধানের মূলনীতিতে ‘সমাজতন্ত্র’ ছিল অলংকার হিসেবে। তবে এটি বাদ দেওয়ার যুক্তিটিও ভুল। বলা হয়েছে, ‘সমাজতন্ত্র মূলত গণতন্ত্রবিরোধী শাসনব্যবস্থা।’ সমাজতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করতে হবে পুঁজিবাদ আর গণতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করতে হবে স্বৈরতন্ত্রকে। পুঁজিবাদের মতো সমাজতন্ত্রেরও বিভিন্ন ধরন আছে।
বর্তমানে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভেনেজুয়েলা, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়ার মতো বহু দেশে বামপন্থী/সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচিত দলগুলো নির্বাচন করছে, ক্ষমতায়ও যাচ্ছে। ইউরোপের বহু দেশে ডানপন্থী আক্রমণের মুখে প্রবাসী মানুষ এ রকম দলের ভরসাতেই থাকেন।
কমিশন ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’র কথা বলেছে। আসলে এটি কতিপয় গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত প্রাণবিনাশী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। সেই পন্থী কিছু গোষ্ঠী ছাড়া দুনিয়ার কেউ এটাকে আর কাঙ্ক্ষিত পথ বলে মনে করে না; ইউরোপ-আমেরিকাতেও নয়।
এই পথ ধরলে এটাও বলতে হবে—‘সাম্য’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ কথাগুলো আমরা রেখেছি অলংকার হিসেবে। আর এটাও বলতে হবে যে বৈষম্যহীনতার দিকে যাওয়ার পরিবর্তে বৈষম্য বৃদ্ধির দিকে যাওয়ার অর্থনীতিই অব্যাহত থাকবে। বলতে হবে এটাই ‘বৈশ্বিক এবং জাতীয় প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক’। মানতে হবে যে দেয়ালের গ্রাফিতিতে ভুল প্রত্যাশা প্রকাশ করা হয়েছিল!
● আনু মুহাম্মদ শিক্ষক, লেখক এবং ত্রৈমাসিক জার্নাল সর্বজনকথার সম্পাদক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ব যবস থ সরক র র হয় ছ ল ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন
আজ মহালয়া। সনাতন ধর্মের ভাষ্যমতে, দিনটি পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনার প্রতীক। মহালয়ায় হিন্দু সম্প্রদায় তাঁদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করেন, তাঁদের শান্তি কামনা করেন এবং একই সঙ্গে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানান।
মহালয়াকে কেবল আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান নয়; বরং সনাতনী সমাজের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং সামাজিক সংহতির এক গভীর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ভোরের আলো আর শিশিরসিক্ত প্রভাতে এ মহালয়ার আচার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রত্যেক প্রজন্মকে অতীতের শিক্ষার আলো ধরে সমাজের নৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রতিবছরের মতো এবারও ভক্তি, সংস্কৃতি ও সামাজিক সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র হিসেবে উদ্যাপিত হবে। এ উৎসবের মর্যাদা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব।
দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অশুভ চক্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে প্রতিমা ভাঙচুরের মাধ্যমে অনৈতিক প্ররোচনা সৃষ্টি করছে। গত কয়েক দিনে কুষ্টিয়া, গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে, যেটি উদ্বেগজনক। এ কর্মকাণ্ড শুধু ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে না; বরং সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংহতিতেও ক্ষতি করে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের ৫টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৪টি জেলাকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। তাই দুর্গাপূজায় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়াই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎপরতা এ প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। কমিশনারের নেতৃত্বে ডিএমপি ইতিমধ্যে ২৫৮টি মণ্ডপে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে মণ্ডপভিত্তিক পাহারা, পৃথক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, প্রতিমা বিসর্জনের দিন সার্বিক তৎপরতা, সিসিটিভি স্থাপন, অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রতিরোধে নজরদারি। এটি প্রমাণ করে, সামাজিক ন্যায় ও আইনশৃঙ্খলার অটল ভিত্তি রক্ষায় রাষ্ট্র সচেতন ও সংবেদনশীল ভূমিকা গ্রহণ করছে।
একইভাবে সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার মণ্ডপে নিরাপত্তার আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত পুলিশি পাহারা, সিসিটিভি নজরদারি, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, জরুরি সেবা সংযোগ ও দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। তবে সরকারের একক তৎপরতা যথেষ্ট নয়, স্থানীয় কমিউনিটি, পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং সাধারণ নাগরিকদের সচেতন অংশগ্রহণ সমানভাবে অপরিহার্য। প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।
দার্শনিকভাবে ভাবলে দুর্গাপূজা কেবল দেবীর আরাধনা নয়, এটি মানবসমাজের নৈতিক সংহতি ও সাম্প্রদায়িক ঐক্যের এক জীবন্ত প্রতীক। প্রতিমা ভাঙচুর বা অশুভ প্ররোচনার বিরুদ্ধে সক্রিয় তৎপরতা মানে কেবল আইন রক্ষা নয়; বরং সমাজের নৈতিক ক্ষেত্রও রক্ষা করা। নাগরিকের সচেতনতা ও রাষ্ট্রের সংহত তত্ত্বাবধানের সমন্বয় নিশ্চিত করলে উৎসবের মর্যাদা ও সামাজিক সম্প্রীতি অটুট থাকবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব সুস্পষ্ট। সেটি হলো কেউ যেন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পবিত্রতা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সূক্ষ্ম সূত্রকে বিপন্ন করতে না পারে। রাষ্ট্রের নীতি ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম যদি জনগণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার সঙ্গে মিলিত হয়, তবেই আমরা দেখতে পাব উৎসবমুখর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজার চিত্র। তখন এটি কেবল ধর্মীয় উৎসবের মহিমা বহন করবে না; বরং মানবসমাজের নৈতিক সংহতি, সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সামাজিক সুষমতার স্থায়ী প্রতীক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবে।