কুমিল্লা বিমানবন্দর দেখলে বোঝার উপায় নেই, এক সময় এখানে বিমান ওঠানামা করত। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় সুবিশাল রানওয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে পিচ ঢালাই ও ব্লক। এখন সেখানে উড়ছে ধুলাবালি। বিমানবন্দরের সংরক্ষিত অধিকাংশ এলাকায় ঘাস ও ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। অনেক জমি বেদখল হয়ে গেছে। তবে এখানকার সিগন্যাল যন্ত্র ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫ থেকে ৪০টি ফ্লাইট থেকে প্রতি মাসে সরকার আয় করছে প্রায় আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব।

কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দরে এখনও ২৪ জনশক্তি কাজ করেন। বিমাবন্দরের দায়িত্বরত প্রকৌশলী মনে করেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অল্প জনবল নিয়োগ ও রানওয়ে মেরামত করলেই বিমানবন্দরটি চালু করা সম্ভব। এই বিমানবন্দরের সিগন্যাল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের উড়োজাহাজ।

সম্প্রতি দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলের জন্য পরিত্যক্ত সাতটি বিমানবন্দর চালু করার কথা জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। বিমানবন্দরগুলো হলো– বগুড়া, লালমনিরহাট, শমশেরনগর, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা ও রাজধানীর তেজগাঁও  বিমানবন্দর। এগুলো চালু হলে পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে বলে মনে করেন বেবিচক চেয়ার‌ম্যান।

জানা যায়, কুমিল্লা শহরতলির দক্ষিণে তিন কিলোমিটার দূরে নেউরা, ঢুলিপাড়া, রাজাপাড়া, দিশাবন্দসহ কয়েকটি এলাকার ৭৭ একর জমিতে বিমানবন্দরটি স্থাপন করে যুক্তরাজ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে (১৯৪১-৪২) অনেকটা তড়িঘড়ি করেই এটি নির্মাণ করা হয়। তবে বিমানবন্দরটি ১৯৯৪ সালে যাত্রী সংকটে বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে কুমিল্লার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলের জন্য বেশ কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স আগ্রহী। ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, দেশের অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা কুমিল্লা। এখানকার ইপিজেড, বিসিক, কয়েকশ শিল্পকারখানার সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ রাখতে হয়। এ ছাড়া কক্সবাজারের কাছে হওয়ায় পর্যটক যাতায়াতের সম্ভাবনাও রয়েছে। বিমানবন্দরটি চালু চলে ২৫ মিনিটে ঢাকা ও ৪০ মিনিটে কক্সবাজার যাতায়াত সম্ভব। বিমানবন্দরটি চালু করতে তারা বেশ কয়েক বছর যাবৎ সরকারের সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানালেন তিনি।

কুমিল্লা বিমানবন্দরের সিএনএস প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে এখানে নেভিগেশন ফ্যাসিলিটিজ, ডিভিওআর, ডিএমই, ভিসেট, এয়ার কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর, যাত্রীদের জন্য আলাদা কক্ষও আছে। শুধু উদ্যোগ নিয়ে রানওয়ে মেরামত ও কিছু যন্ত্রপাতি আনা হলেই অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল শুরু করা যাবে।

কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ডা.

আজম খান নোমান জানান, বিমানবন্দরটি চালু হলে কুমিল্লার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন মাত্রা। কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব সমকালকে জানান, প্রাচীন জেলা কুমিল্লায় ক্রমেই ব্যবসা-বাণিজ্যের সমৃদ্ধি ঘটছে। বিমানবন্দর চালু হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আসবে।

একটি সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের পুরো জমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তাই বিমানবন্দর চালু করতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেবিচককে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে। কুমিল্লা বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এ বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো চিঠি এখনও আসেনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ম নবন দরট ব যবস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ১১৪, জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা

চলতি বছরের অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় কালমেগির তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ফিলিপাইন। দেশটির মধ্যাঞ্চলে কালমেগির আঘাতে ভয়াবহ বন্য দেখা দিয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে ১১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করেছেন। 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

আরো পড়ুন:

ঘূর্ণিঝড় মন্থা, বন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা

‘সঠিক স্থান নির্ধারণ না হওয়া আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে’

প্রতিবেদনে বলা হয়, কালমেগির প্রভাবে ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলীয় সেবু দ্বীপের সব শহর প্লাবিত হয়েছে। কর্দমাক্ত বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে গাড়ি, ট্রাক এমনকি বিশাল আকারের কনটেইনারও।

সেবুর প্রতিরক্ষা অফিসের ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাফায়েলিটো আলেজান্দ্রো জানান, কেবল সেবুতেই এখন পর্যন্ত ৯৯ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, কালমেগির প্রভাবে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ জনে। আহত হয়েছে ৮২ জন। এছাড়া ১২৭ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট মার্কোস বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ ঘূর্ণিঝড় কালমেগির আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং সপ্তাহান্তে দেশটিতে আরেকটি ঝড় ‘উওয়ান’ আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রায় ১০ থেকে ১২টি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যদি এতগুলো অঞ্চল এই ধরনের প্রভাবের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে এটি একটি জাতীয় দুর্যোগ।” 

জাতীয় দুর্যোগের মানে হলো, এমন এক পরিস্থিতি যেখানে ব্যাপক হতাহত, সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

এটি সরকারি সংস্থাগুলোকে জরুরি তহবিল সংগ্রহ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবা ক্রয় এবং সরবরাহ দ্রুত করার জন্য আরও ক্ষমতা দেয়।

স্থানীয়ভাবে ‘টিনো’ নামে পরিচিত ঘূর্ণিঝড় কালমেগি মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে ফিলিপাইনের স্থলভাগে আঘাত হানে। এতে সেবুর আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ছোট অনেক বাড়িঘর বন্যার পানিতে ভেসে গেছে, শহরজুড়ে কাদার ঘন স্তুর পড়েছে। উদ্ধারকারী দল ঘরের ভেতরে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে নৌকা ব্যবহার করছে।

ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। পরপর দুটি টাইফুনে এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অবকাঠামো ও ফসলের ক্ষতি হওয়ার মাত্র এক মাস পরই সর্বশেষ এই ঘটনাটি ঘটল।

সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন রাগাসা আঘাত হেনেছিল এবং তার পরেই আসে টাইফুন বুয়ালোই।

আগের মাসগুলোতে, বর্ষা মৌসুমে দেশটি ব্যাপকভাবে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় নিম্নমানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর, মধ্য ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর কয়েক ডজন মানুষ নিহত ও আহত হয়েছিল, যার ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল সেবুতে।

ঘূর্ণিঝড় কালমেগি আজ বৃহস্পতিবার ফিলিপাইন ছেড়ে মধ্য ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে ইতিমধ্যেই রেকর্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ভিয়েতনামে প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছিলেন।

পূর্বাভাস অনুসারে, ঘূর্ণিঝড় কালমেগি শুক্রবার সকালে মধ্য ভিয়েতনামে আঘাত হানবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেখানকার ৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল অথবা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।

ভিয়েতনাম ইতিমধ্যেই এক সপ্তাহ ধরে বন্যা ও রেকর্ড বৃষ্টিপাতের সাথে লড়াই করছে। দেশটির বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এখনও বন্যার কবলে রয়েছে।

থাইল্যান্ডও ঝড়ের প্রভাবের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা কালমেগির প্রভাবে সম্ভাব্য আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের সতর্কতা জারি করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে নিহত বেড়ে ১১৪, জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা