পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সামরিক হামলা চালিয়েছে ভারত। এর পর স্থল ও আকাশপথে ভারতে জবাবি হামলা চালায় পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি এই হামলার ঘটনায় দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। হামলা-পাল্টা হামলার পাশাপাশি দুই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে চলছে কথার লড়াই। তারা হুমকি-পাল্টা হুমকি দিচ্ছেন একে অপরকে।
ভারতের মিসাইল হামলার পরপরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘কোনো উস্কানি ছাড়া ভারতের এই হামলার সুনির্দিষ্ট জবাব দেওয়ার ও পূর্ণ প্রতিশোধ নেওয়ার সব অধিকার পাকিস্তানের আছে এবং উপযুক্ত জবাব দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানি জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনী শত্রুর মোকাবিলা করতে জানে।’
ভারত ‘আগুন নিয়ে খেলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানী খার। এ ছাড়া ভারতের এই হামলাকে তিনি ‘অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভারতের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে, তারা নিজেদের বিচারক, জুরি ও শাস্তিদাতা হিসেবে ভাবছে। পারমাণবিক শক্তিধর একটি রাষ্ট্রের ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে দ্বিধা করছে না, কারণ তারা মনে করছে কোনো ফল ভোগ না করেই পার পেয়ে যাবে।’
এদিকে হামলার পরপরই ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, বিশ্বের উচিত ‘সন্ত্রাসবাদের প্রতি কোনো সহনশীলতা’ না দেখানো। ‘অপারেশন সিঁদুর’ লেখা একটি ছবি শেয়ার করেছেন তিনি ওই পোস্টে। এই হামলার নামসহ যে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে ভারতের পক্ষ থেকে, তাতে দুটি ইংরেজি ‘ও’ রয়েছে এবং তার একটিতে আছে লাল সিঁদুরের একটি গোল কৌটো।
হিন্দু বিবাহিত নারীদের অনেকেই চুলের মাঝে সিঁথিতে এই সিঁদুর ব্যবহার করে থাকেন বিয়ের চিহ্ন হিসেবে। ঘটনাচক্রে পেহেলগামে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই হিন্দু পুরুষ।
দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানে হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, ‘ভারত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদকে ঠেকাতে পাল্টা হামলার অধিকার প্রয়োগ করেছিল। আমাদের এই হামলায় সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো ভেঙে দেওয়ার দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছিল। এটি উস্কানিমূলক নয়। পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনাকে টার্গেট করা হয়নি।’ এ হামলায় ভারতীয় সামরিক বাহিনী মাত্র ২৫ মিনিটে পাকিস্তানে অন্তত ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলেও জানান তিনি।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেশের সামরিক বাহিনীকে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পেহেলগামে আমাদের নিরীহ ভাইদের নির্মম হত্যার’ প্রতিশোধ নিতেই পাকিস্তানের ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘ভারত এবং ভারতের মানুষের ওপর যে কোনো আক্রমণের যথাযথ জবাব দেওয়ার জন্য মোদি সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল।’ সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উৎপাটিত করার জন্য ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন অমিত শাহ।
পাকিস্তানে ভারতীয় বাহিনী পরিচালিত সামরিক অভিযানকে ‘গর্বের মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মন্ত্রিসভাকে তিনি জানান, অভিযানটি পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে, ‘কোনো ভুল হয়নি’ এবং প্রতিশোধমূলক আক্রমণ ‘সফলভাবে সম্পন্ন’ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘পুরো দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমরা আমাদের সেনাবাহিনীর জন্য গর্বিত।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ছ ন মন ত র র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
তিনজনের ব্যাটে ১৫০, ৬০০ ছাড়াল নিউজিল্যান্ড
দিনের শেষ ওভারে ব্রায়ান বেনেটকে বেশ সমীহই করলেন রাচিন রবীন্দ্র ও হেনরি নিকোলস। জিম্বাবুয়ের খণ্ডকালীন স্পিনারের করা শেষ ওভারটি থেকে নিলেন মাত্র ১ রান। কতটা সমীহ করেছেন, সেটা বুঝতে চোখ রাখতে পারেন আগের ওভারগুলোতেও। ব্রেনেটের আগের ৫ ওভারে রান উঠেছে যথাক্রমে ১২, ১১, ১২, ২০ ও ৬।
বুলাওয়েতে আজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে স্বাগতিক বোলারদের ওপর রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। সারা দিনে ৯১ ওভার ব্যাট করেছে কিউইরা। মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে রান করেছে ৪২৭। আগের দিনের রান যোগ করে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের রান দাঁড়িয়েছে ৩ উইকেটে ৬০১–এ। প্রথম ইনিংসে ১২৫ রানে অলআউট হওয়া জিম্বাবুয়ে এখনই ম্যাচে ৪৭৬ রানে পিছিয়ে।
নিউজিল্যান্ডের এই বড় সংগ্রহের মূলে তিন ব্যাটসম্যানের দেড় শ ছোঁয়া ইনিংস। ১ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে দিন শুরুর সময় ডেভন কনওয়ে অপরাজিত ছিলেন ৭৪ রানে। বাঁহাতি এই ওপেনার নিজের পঞ্চম সেঞ্চুরি পূর্ণ করে আউট হয়েছেন ১৫৩ রানে। তার আগে দিনের শুরুর দিকে ফেরেন আগের বিকেলে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা জ্যাকব ডাফি। কনওয়েকে বোল্ড করেন ব্লেসিং মুজারাবানি, ডাফিকে বেনেটের ক্যাচ বানান ভিনসেন্ট মাসেকেসা।
লাঞ্চ বিরতি থেকে ফেরার কিছুক্ষণ পর কনওয়ে আউট হয়ে গেলে জুটি বাঁধেন রাচিন রবীন্দ্র ও হেনরি নিকোলস। দিনের বাকি অংশে এ দুই ব্যাটসম্যানই জিম্বাবুয়ে বোলারদের সময়টা কঠিন করে তুলেছেন। দিন শেষে অবিচ্ছিন্ন দুজনই, এরই মধ্যে যোগ করেছেন ২৫৬ রান।
এর চেয়েও বড় অর্জন দুজনই সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর দেড় শর ঘরও ছুঁয়েছেন। চারে নামা নিকোলসের অপরাজিত ২৪৫ বলে ১৫০ রান করে। আর তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি করা রবীন্দ্র অপরাজিত ১৩৯ বলে ১৬৫ রানে। যার মধ্যে ২১টি চারের সঙ্গে আছে ২টি ছক্কাও।
নিউজিল্যান্ডের তিন ব্যাটসম্যান ১৫০ স্পর্শের মাধ্যমে একটি রেকর্ডের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে এক ইনিংসে তিনটি দেড় শ দেখা গেছে দুবার। প্রথমবার ১৯৩৮ সালে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের (লিওনার্ড হাটন, মরিস লেল্যান্ড ও জো হার্ডস্টাফ), আরেকটি ১৯৮৬ সালে কানপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের (সুনীল গাভাস্কার, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও কপিল দেব)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে):জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস: ১২৫। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ১৩০ ওভারে ৬০১/৩ (রবীন্দ্র ১৬৫*, কনওয়ে ১৫৩, নিকোলস ১৫০*, ইয়াং ৭৪; মুজারাবানি ১/১০১)।