ইলিশ বিক্রির চটকদার বিজ্ঞাপন, বিকাশে টাকা নিয়েই দেয় ব্লক
Published: 8th, May 2025 GMT
চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা না মিললেও দেখা মিলছে ভুয়া ফেসবুক পেজে। অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।
ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে চাঁদপুরের বড় বড় ও তাজা ইলিশের ছবি কিংবা ভিডিও তৈরি করে ফাঁদ পেতেছে চক্রের সদস্যরা। অন্য লোকের বিকাশ নম্বর, মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত ইলিশ পাচ্ছেন না ক্রেতারা। বিকাশে টাকাপয়সা নিয়ে এক সময় মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেয়। পরে বার বার যোগাযোগ করেও সাড়া না পেলে বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছে।
ভুক্তভোগী, মাছ ব্যবসায়ী ও মাছঘাটের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রমে মৎস্য শিকারে গত ৩০ এপ্রিল দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারির পর আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। চাঁদপুরের বৈধ কিছু অনলাইন ইলিশ বিক্রেতার লগো, পুরোনো ভিডিও যুক্ত করে অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে প্রতারণা করেই যাচ্ছে চক্রের সদস্যরা। তাদের ফাঁদ থেকে বাদ পড়ছেন না চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।
প্রতারকদের তৎপরতার বিষয়টি এখন আর গোপন নেই। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সবারই জানা। এর পরও ধরা পড়ছে না কেউ।
গত সোমবার নরসিংদীর একটি উপজেলায় কর্মরত কলেজ শিক্ষক এবং সংবাদকর্মী জানালেন, ১০-১২ দিন ধরেই অনলাইনে ডিসকাউন্টের (মূল্যছাড়) অফার দেখিয়ে প্রতারক চক্রের একজন তাঁর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত মঙ্গলবার ইলিশ আনতে গিয়ে দেখেন, ওই পরিবহনের অস্তিত্বই নেই। প্রতারক যে পরিবহনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছে, সেটিও হ্যাক করা হয়েছে এবং সেই ব্যক্তিও প্রতারিত হয়েছেন। ওই শিক্ষক জানান, প্রতারক তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম, বাবার নামসহ সব তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছে। পাঠিয়েছে তরতাজা বড় বড় ইলিশ মাছের ভিডিও, ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স। অফার দিয়েছে দুই কেজি ওজনের ইলিশ মাত্র ৬০০ টাকা কেজি। অথচ এই দামে ১৫ বছর আগেও ইলিশ বিক্রি হয়েছে কিনা মনে করতে পারেন না জেলা শহরের মানুষ। আর এই ওজনের ইলিশ ভরা মৌসুমেও (আগস্ট-অক্টোবর) জেলের জালে ধরা পড়ে না।
এর আগে মার্চ-এপ্রিলে মাসে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার দুই-তিন দিন আগে অনলাইনে ইলিশ কিনতে গিয়ে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে অর্থকড়ি হারিয়েছেন পাবনার একজন। ফোন করে তিনি সাহায্য চাইলেন, প্রতারকদের ধরা বা শনাক্ত করার ব্যাপারে। সে সময় বৈধ অনলাইন বিক্রেতাদের কাছে খবর নিয়ে জানা গেল, তারা মাছঘাটে চড়া মূল্যের কারণে ইলিশ বিক্রি শুরু করেনি তখনও।
এ নিয়ে গতকাল বুধবার কথা হয় চাঁদপুরের তালিকাভুক্ত অনলাইন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দুই ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাদের একজন চাঁদপুরের ইলিশ ডট কম প্রতিষ্ঠানের নাজমুল হোসেন নাঈম। সমকালকে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও অনলাইনে ইলিশ বিক্রি শুরুই করিনি। অথচ অভিনব কায়দায় আমাদের পেজ ব্যবহার করে ইলিশ বিক্রির প্রতারণা করছে প্রতারকরা। এসব আমাদের কানে আসছে, আমরা নিজেরাও দেখছি। কিন্তু এসব ভুয়া।’ তাঁর ভাষ্য, চাঁদপুর মাছঘাটেই এক কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
চাঁদপুর ইলিশ বাজার নামে তালিকাভুক্ত অনলাইন মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হিমেল মিয়া ও সুলতান মাহমুদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে রিসিভ করেন মোজাম্মেল হোসেন নামে একজন। তিনি বলেন, ‘চাঁদপুর ইলিশ বাজারের স্বত্বাধিকারী এখন আমি। আগের ওনারা চলে গেছেন।’ তাঁর দাবি, গত ১ মে থেকে এ পর্যন্ত বা এর কয়েকদিন আগেও অনলাইনে কোনো ক্রেতার কাছে ইলিশ বিক্রয় করেননি তিনি। কারণ একটাই চাঁদপুরে ইলিশের দাম আকাশচুম্বী এবং সংকট। তিনি বলেন, ‘আমরাও শুনছি, দেখছি যে, আমাদের প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো তালিকাভুক্ত অনলাইন ব্যবসায়ীদের লগো ও তাজা ইলিশের ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা করা হচ্ছে। গত বছরও এরকম প্রতারণার ঘটনা ঘটলে আমরা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বিষয়টি জানাই, কিন্তু কেউ ধরা পড়েনি।’
কথা হয় চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর মাছঘাটের ব্যবসায়ী শবেবরাতের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, তাদের কাছেও প্রতারণার সংবাদ আসে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এতে চাঁদপুরের বদনাম হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে আমি শুধু প্রতারকদেরই দোষ দেব না, যারা কন্ট্রাক (যোগাযোগ) করছেন তাদেরও দোষ, এতগুলো টাকা বিকাশে বা অন্য কোনো উপায়ে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, টাকা দেওয়ার আগে অন্তত চাঁদপুর মাছঘাটে একটু খোঁজ-খবরা নেওয়া উচিত।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আমিন সমকালকে জানান, তাদের কাছেও প্রায়ই অনলাইনে ইলিশ মাছ বিক্রিসংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগ আসছে। অনলাইনে বিশেষ করে ফেসবুক ঘাটতে গিয়ে প্রতারণার বিষয়টি তাদেরও নজরে এসেছে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ভোক্তা সাধারণের উচিত বাজারদর যাচাই-বাছাই করে ইলিশ মাছ ক্রয় করা। আগে টাকা না পাঠিয়ে মাছ হাতে পাওয়ার পর পাঠানো। প্রয়োজনে ভোক্তা অধিকার হটলাইন ১৬১২১ নম্বরে ফোন করে সত্যতা যাচাই করে নিতে পারবেন।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছেও অভিযোগ আসে। প্রতারণা যারা করছে, তারা চাঁদপুরের বাইরের লোক হতে পারে। কারণ এখানে তালিকাভুক্ত যারা রয়েছেন, আমরা যতটুকু জানি– তারা এটি করছেন না। কেউ করলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তাঁর ভাষ্য, যারা চাঁদপুরের ইলিশ মাছ কেনার জন্য এ রকম অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে ঝুঁকে পড়েন, তাদের অধিকতর সচেতন হওয়া উচিত।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ব যবস য় আম দ র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’ না হয়ে প্রভাবমুক্ত হোক পুলিশ
ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা—এই প্রবণতা স্বাধীনতার পর থেকেই দেখা গেছে। যখন যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে কাজে লাগিয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের অনেক সদস্য রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়েছেন। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে দেশে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন বা স্বায়ত্তশাসিত পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
‘পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা: নাগরিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনদের আলোচনায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত এই বৈঠকে আলোচকদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পুলিশের বর্তমান ও সাবেক আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজীবীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ছিলেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ। তিনি বলেন, পুলিশের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করার জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠা করা উচিত। সাবেক ও বর্তমান বিচারপতি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৯-১১ সদস্যের এই কমিশন হতে পারে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, চীন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে এমন কমিশন আছে।
সাবেক এই অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৪০০ মানুষের বিপরীতে একজন পুলিশ থাকার কথা। বাংলাদেশে ৮৪৩ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এমনকি এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়েও বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। ভারতে ৬৬৭ জনের বিপরীতে একজন, পাকিস্তানে ৫৫২, থাইল্যান্ডে ২৯৭ এবং মালয়েশিয়ায় ৩১৩ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য আছেন।
বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, সব প্রতিষ্ঠানের আগে পুলিশ সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রের উপস্থিতি প্রথমেই পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে শুরু হয়। অথচ যুগ যুগ ধরে পুলিশকে অপব্যবহার করা হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় এই বাহিনীর যে ভূমিকা দেখা গেছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের কারণেই ঘটেছে। দেশ পরিচালনার অংশ না হয়ে পুলিশ দল চালানোর জন্য কাজ করেছে। তখন যে দল ক্ষমতাসীন ছিল, তারা মনে করত পুলিশ তাদের দলেরই একটি বর্ধিত অংশ।
মাহ্ফুজ আনাম বলেন, কাজের স্বাধীনতা দিতে হবে পুলিশকে। রাজনৈতিক কারণে পুলিশকে যেন অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা না যায়, সেই সংস্কার করতে হবে। এ জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে পুলিশকে ব্যবহারবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে যারাই সরকারের এসেছি, তারাই এই পুলিশকে বিনষ্ট করেছি। সবাই রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত বা শক্তিশালী করতে অথবা পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পুলিশকে ব্যবহার করেছি। এতে কমবেশি অসত্য কিছু নেই। কিন্তু পুলিশ ব্যবহৃত হয়েছে, এটাও সত্য। নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতি পর্যন্ত সব জায়গায় যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে, সেই পুলিশ দিয়ে কী আশা করা যায়?’
জনমুখী পুলিশ করতে চাইলে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা দিতে হবে। বাহারুল আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শকবিএনপির এই নেতা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর যত মামলা হয়েছে এবং মব ক্রাইসিস হয়েছে, এই দুটো জিনিস এই সরকার এবং জনগণের সবচেয়ে বেশি ড্যামেজ করেছে। একটি মামলায় দুই হাজার, পাঁচ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলো নিয়েছে পুলিশ।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি, যারাই সরকারে যাক, তাদের মধ্যে যেন এমন বদ্ধমূল ধারণা না থেকে যে আগামীবার তারা বিরোধী দলে যাবে না। বিরোধী দলে যাওয়ার মানসিকতা থাকলে রাষ্ট্রে সুশাসন জারি হবে। তাহলেই পুলিশ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হবে না। প্রশাসন স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারবে।’
পুলিশকে নির্যাতকের ভূমিকায় মানুষ আর দেখতে চায় না বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মো. মোবারক হোসাইন। তিনি বলেন, জনবান্ধব করতে পুলিশকে নৈতিক প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের সময় পুলিশের কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র থাকা উচিত নয় বলেও মনে করেন তিনি।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকারবৈঠকে হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, মামলার তদন্তে বিলম্বের অন্যতম কারণ ক্ষমতাসীনদের নির্দেশ পুলিশ পরিচালিত হয়। ধীরে চলার নির্দেশনা এলে পুলিশের তদন্তের গতিও কমে যায়। রাজনৈতিক প্রভাব ও হস্তক্ষেপের বাইরে আসতে হবে পুলিশকে। একই সঙ্গে পুলিশের নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার পাশাপাশি স্বচ্ছ হতে হবে।
স্বাধীন পুলিশ কমিশনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিরোধিতা করা হয়েছে বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে কোনো কিছুই কার্যত কাজে আসবে না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আরেকজন সদস্য ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিগত সময়ে পুলিশের মূল কর্তৃত্বের অধিকারী যাঁরা ছিলেন, তাঁরা এমন কোনো অপরাধ বাকি রাখেননি, যেটা অপরাধ বইয়ে নেই। এটা কেবল রাজনৈতিক কারণে হয়েছে—এমন ন্যায্যতা দেওয়ার সুযোগ নেই।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন শেষ সময় পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনে আলোচিত হয়নি। এর কারণ পরিষ্কার। রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক এবং পুলিশ নিজেই সেটি হতে দেয়নি। ক্ষমতাকে জবাবদিহির জায়গায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক শক্তি যেমন চায় না, তেমনি আমলাতন্ত্র এবং পুলিশও চায় না।
ক্ষমতা ধরে রাখার মানসিকতাপুলিশ সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি দরকার বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বৈঠকে বলেন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন পরিবর্তন করতে হবে। এই আইন পরিবর্তন হয় না ক্ষমতা ধরে রাখার মানসিকতা থেকে। যতগুলো পুলিশ কমিশন হয়েছে, এর মধ্যে এবারের কমিশন সবচেয়ে আশাহীন এবং অকার্যকর কমিশন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘আমরা ভালো হতে চাই’বৈঠকে পুলিশের বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘পুলিশের তরফ থেকে ২০০৬-০৭ সাল থেকেই বলছিলাম, আমাদের সংস্কার হোক। আমরা ভালো হতে চাই। প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করেন। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন পরিবর্তন করতে বলেছিলাম। কিন্তু ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের দেওয়া সেই প্রস্তাবনা ঘুমন্ত অবস্থাতেই আছে।’
বাহারুল আলম বলেন, জনমুখী পুলিশ করতে চাইলে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা দিতে হবে। পুলিশকে মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। পুলিশ একটি স্বাধীন সংস্থার কাছে থাকুক। তিনি বলেন, মামলায় কাকে গ্রেপ্তার করা হবে, কার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে—সেটা যেন কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাপিয়ে দিতে না পারে। এই জায়গাটা পুলিশ চেয়েছে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পুলিশ অনেক কাজ সঠিকভাবে করতে পারছে না বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মো. ছিবগাত উল্লাহ।
বৈঠকে বক্তব্য দেন সাবেক পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ ইকবাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিজওয়ানুল ইসলাম, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজির (প্রশাসন) দায়িত্বে থাকা কাজী মো. ফজলুল করিম, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও ফাহমিদা আক্তার, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন প্রমুখ।