চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা না মিললেও দেখা মিলছে ভুয়া ফেসবুক পেজে। অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

ভুয়া ফেসবুক পেজ খুলে চাঁদপুরের বড় বড় ও তাজা ইলিশের ছবি কিংবা ভিডিও তৈরি করে ফাঁদ পেতেছে চক্রের সদস্যরা। অন্য লোকের বিকাশ নম্বর, মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিলেও শেষ পর্যন্ত ইলিশ পাচ্ছেন না ক্রেতারা। বিকাশে টাকাপয়সা নিয়ে এক সময় মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেয়। পরে বার বার যোগাযোগ করেও সাড়া না পেলে বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছে।

ভুক্তভোগী, মাছ ব্যবসায়ী ও মাছঘাটের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রমে মৎস্য শিকারে গত ৩০ এপ্রিল দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারির পর আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। চাঁদপুরের বৈধ কিছু অনলাইন ইলিশ বিক্রেতার লগো, পুরোনো ভিডিও যুক্ত করে অনলাইনে ইলিশ বিক্রির নামে প্রতারণা করেই যাচ্ছে চক্রের সদস্যরা। তাদের ফাঁদ থেকে বাদ পড়ছেন না চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।

প্রতারকদের তৎপরতার বিষয়টি এখন আর গোপন নেই। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সবারই জানা। এর পরও ধরা পড়ছে না কেউ।

গত সোমবার নরসিংদীর একটি উপজেলায় কর্মরত কলেজ শিক্ষক এবং সংবাদকর্মী জানালেন, ১০-১২ দিন ধরেই অনলাইনে ডিসকাউন্টের (মূল্যছাড়) অফার দেখিয়ে প্রতারক চক্রের একজন তাঁর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত মঙ্গলবার ইলিশ আনতে গিয়ে দেখেন, ওই পরিবহনের অস্তিত্বই নেই। প্রতারক যে পরিবহনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেছে, সেটিও হ্যাক করা হয়েছে এবং সেই ব্যক্তিও প্রতারিত হয়েছেন। ওই শিক্ষক জানান, প্রতারক তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, নাম, বাবার নামসহ সব তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছে। পাঠিয়েছে তরতাজা বড় বড় ইলিশ মাছের ভিডিও, ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স। অফার দিয়েছে দুই কেজি ওজনের ইলিশ মাত্র ৬০০ টাকা কেজি। অথচ এই দামে ১৫ বছর আগেও ইলিশ বিক্রি হয়েছে কিনা মনে করতে পারেন না জেলা শহরের মানুষ। আর এই ওজনের ইলিশ ভরা মৌসুমেও (আগস্ট-অক্টোবর) জেলের জালে ধরা পড়ে না।

এর আগে মার্চ-এপ্রিলে মাসে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার দুই-তিন দিন আগে অনলাইনে ইলিশ কিনতে গিয়ে প্রতারকের খপ্পরে পড়ে অর্থকড়ি হারিয়েছেন পাবনার একজন। ফোন করে তিনি সাহায্য চাইলেন, প্রতারকদের ধরা বা শনাক্ত করার ব্যাপারে। সে সময় বৈধ অনলাইন বিক্রেতাদের কাছে খবর নিয়ে জানা গেল, তারা মাছঘাটে চড়া মূল্যের কারণে ইলিশ বিক্রি শুরু করেনি তখনও।

এ নিয়ে গতকাল বুধবার কথা হয় চাঁদপুরের তালিকাভুক্ত অনলাইন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দুই ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাদের একজন চাঁদপুরের ইলিশ ডট কম প্রতিষ্ঠানের নাজমুল হোসেন নাঈম। সমকালকে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও অনলাইনে ইলিশ বিক্রি শুরুই করিনি। অথচ অভিনব কায়দায় আমাদের পেজ ব্যবহার করে ইলিশ বিক্রির প্রতারণা করছে প্রতারকরা। এসব আমাদের কানে আসছে, আমরা নিজেরাও দেখছি। কিন্তু এসব ভুয়া।’ তাঁর ভাষ্য, চাঁদপুর মাছঘাটেই এক কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

চাঁদপুর ইলিশ বাজার নামে তালিকাভুক্ত অনলাইন মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হিমেল মিয়া ও সুলতান মাহমুদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে রিসিভ করেন মোজাম্মেল হোসেন নামে একজন।  তিনি বলেন, ‘চাঁদপুর ইলিশ বাজারের স্বত্বাধিকারী এখন আমি। আগের ওনারা চলে গেছেন।’ তাঁর দাবি, গত ১ মে থেকে এ পর্যন্ত বা এর কয়েকদিন আগেও অনলাইনে কোনো ক্রেতার কাছে ইলিশ বিক্রয় করেননি তিনি। কারণ একটাই চাঁদপুরে ইলিশের দাম আকাশচুম্বী এবং সংকট। তিনি বলেন, ‘আমরাও শুনছি, দেখছি যে, আমাদের প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো তালিকাভুক্ত অনলাইন ব্যবসায়ীদের লগো ও তাজা ইলিশের ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা করা হচ্ছে। গত বছরও এরকম প্রতারণার ঘটনা ঘটলে আমরা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বিষয়টি জানাই, কিন্তু কেউ ধরা পড়েনি।’

কথা হয় চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর মাছঘাটের ব্যবসায়ী শবেবরাতের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, তাদের কাছেও প্রতারণার সংবাদ আসে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এতে চাঁদপুরের বদনাম হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে আমি শুধু প্রতারকদেরই দোষ দেব না, যারা কন্ট্রাক (যোগাযোগ) করছেন তাদেরও দোষ, এতগুলো টাকা বিকাশে বা অন্য কোনো উপায়ে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, টাকা দেওয়ার আগে অন্তত চাঁদপুর মাছঘাটে একটু খোঁজ-খবরা নেওয়া উচিত।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আমিন সমকালকে জানান, তাদের কাছেও প্রায়ই অনলাইনে ইলিশ মাছ বিক্রিসংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগ আসছে। অনলাইনে বিশেষ করে ফেসবুক ঘাটতে গিয়ে প্রতারণার বিষয়টি তাদেরও নজরে এসেছে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ভোক্তা সাধারণের উচিত বাজারদর যাচাই-বাছাই করে ইলিশ মাছ ক্রয় করা। আগে টাকা না পাঠিয়ে মাছ হাতে পাওয়ার পর পাঠানো। প্রয়োজনে ভোক্তা অধিকার হটলাইন ১৬১২১ নম্বরে ফোন করে সত্যতা যাচাই করে নিতে পারবেন।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছেও অভিযোগ আসে। প্রতারণা যারা করছে, তারা চাঁদপুরের বাইরের লোক হতে পারে। কারণ এখানে তালিকাভুক্ত যারা রয়েছেন, আমরা যতটুকু জানি– তারা এটি করছেন না। কেউ করলে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তাঁর ভাষ্য, যারা চাঁদপুরের ইলিশ মাছ কেনার জন্য এ রকম অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে ঝুঁকে পড়েন, তাদের অধিকতর সচেতন হওয়া উচিত। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ব যবস য় আম দ র ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও নারী কেন ন্যায্য হিস্যা পাবে না

সাধারণভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনকেই গণতন্ত্র বলে। কোনো একটি বৃহৎ পরিসরে, যেমন রাষ্ট্রে জনমতের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মাপা সহজ নয়। তাই বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে মানুষ। মাপার নিক্তি যেমনই হোক না কেন, মূল প্রতিপাদ্য থাকে সবচেয়ে বেশি মানুষের মত ও তাঁদের প্রতিনিধি বেছে নেওয়া। এর আলোকে সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো দেশকে সংসদীয় আসনে বিভক্ত করে তাতে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের চর্চা।

সাধারণ হিসাবে যাদের কোনো কিছু পাওয়ার কথা নয়, সেটা তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখাকেই কোটা বা ইতিবাচক বৈষম্য বলে। আর যেটা স্বাভাবিকভাবেই পাওয়ার কথা, সেটাকে বলে ন্যায্য হিস্যা। মোটকথা, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য যা বরাদ্দ থাকে, তাকে কেউ কোটা বলে না, বলে অধিকার।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ জনশুমারি অনুসারে দেশের নারী-পুরুষের অনুপাত হলো ৫০ দশমিক ৯৩ ও ৪৯ দশমিক শূন্য ৭। নিকটতম পূর্ণ সংখ্যায় দেখালে জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী ও ৪৯ শতাংশ পুরুষ। সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন, ন্যায্য হিস্যা আর দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাধিক্য—সবকিছু একত্রে বিবেচনায় নিলে দেশের ৫১ শতাংশ সংসদ সদস্য নারী হওয়াই স্বাভাবিক। সে হিসাবে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ সংসদ সদস্য নারী হওয়া উচিত ছিল!

সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনৈতিক আধিপত্য ফলানোর রীতি অনুসারে যেহেতু জনসংখ্যায় নারী বেশি, সেহেতু কিছু ব্যতিক্রম বাদে ৩০০ আসনেই নারী ভোটারও বেশি হওয়ার কথা। এমন একটা দৃশ্যের কথা ভাবা যাক: কোনো এক ‘স্নিগ্ধ’ নির্বাচনী ভোরে দেশের নারীরা যদি নিজেদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত বর্গ হিসেবে ধরে এই বলে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন যে তাঁরা কেবল একজন নারীকেই ভোট দেবেন। তাহলে আক্ষরিক অর্থেই পুরুষদের ‘হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়ে’ ৩০০ জন এমপিই নারী নির্বাচিত হবেন!

কিন্তু রাষ্ট্রের এই সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে বাস্তবে কীভাবে দেখা হয় বা কতটুকু স্থান দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পরিসরে? সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে জাতীয় সংসদে নারীদের সরাসরি নির্বাচন বা প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে যা হলো, সেটাকে অনেকে উল্টো যাত্রার সঙ্গে তুলনা করেছেন। জাতীয় সংসদে শুধু পুরুষদের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয় না, নারী-পুরুষনির্বিশেষে সব মানুষের জন্য। অথচ সেসব আইনে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, অর্থাৎ নারীর মতামত দেওয়ার সুযোগ না থাকা কোনো ইতিবাচক ঘটনা নয়।

সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করেছিল, স্থানীয় সরকারব্যবস্থার আদলে প্রতি তিনটি সাধারণ আসনের জন্য একটি নারী আসন নির্ধারণ করে তা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের মতে, প্রতিটি আসনে একজন পুরুষের পাশাপাশি একজন নারীও নির্বাচিত হওয়া উচিত। অন্যদিকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সংসদে অতিরিক্ত ১০০ আসন সংযোজন করে সেগুলো নারীদের জন্য ঘূর্ণমানভাবে সংরক্ষণের প্রস্তাব দেয়।

সংসদে নারী আসনের ব্যাপারে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত যা চলছে, তা হলো ‘সংরক্ষিত আসন’, যা ক্রমে ক্রমে বেড়ে বর্তমানে ৫০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে মনোনীত হন। এতে জনগণ সরাসরি ভোট দিয়ে এই নারী সদস্যদের নির্বাচিত করতে পারেন না। এটাকে নাগরিক সমাজ ও নারী অধিকারকর্মীরা বহুদিন ধরেই অগণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমূলক বলে আসছেন। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যধারায় এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রশ্নে মতৈক্য তো দূরে থাক, এতই মতভিন্নতা দেখা গেল যে শেষে নারীদের পক্ষ থেকে জানাতে হয়, এই মতভেদের তোড়ে যেন বিদ্যমান সংরক্ষণব্যবস্থাও ভেস্তে না যায়!

এরপর কমিশন সর্বশেষ যে প্রস্তাব দেয়, তা হলো আগের ৫০ সংরক্ষিত আসন রেখেই সাধারণ আসনে আগামী নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ ভাগ আসনে নারীকে মনোনয়ন দেওয়া এবং এভাবে তা ৩৩ ভাগে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত ৫ ভাগ হারে বাড়াতে হবে। কিন্তু এতেও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা আপত্তি দেওয়া হয়েছে। এটা নাগরিক ও নারী সমাজে গভীর ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়। নারীনেত্রীরা ‘ভোট দেবেন না’ বলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ‘ভোট দেব না’কে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করার পরামর্শ দিতে দেখা গেছে। (প্রথম আলো, ২ আগস্ট ২০২৫)

এ ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বে আইনসভায় নারীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী প্রথম দেশ রুয়ান্ডার অভিজ্ঞতা থেকে পাঠ নিতে পারি। সর্বশেষ নির্বাচনে সে দেশের নিম্নকক্ষ চেম্বার অব ডেপুটিজে ৬৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং উচ্চকক্ষ সিনেটে ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ আসনে নারী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ প্রশ্নে এমা রুবাগুমিয়া ফুরাহা নামের রুয়ান্ডার একজন নারী আইনপ্রণেতা বলেন, ‘পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমরা নারীরা রুয়ান্ডার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি। এখন যদি আমাদের বাদ দেওয়া হতো, তবে কীভাবে আমরা উন্নয়ন নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলতাম? আজ আমরা যে আইনই বিবেচনা করি, তাতে লিঙ্গসমতার বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়—পরিবার–সংক্রান্ত বিষয়ে তো বটেই, বাজেট ও দরপত্র আহ্বানেও।’ (ফরাসি সাময়িকী লা মদে, ২০২৪)

সাংবিধানিক সংরক্ষণের ভেতর দিয়েই এটা সম্ভব হয়েছে। হুতু-তুতসিদের মধ্যে সংঘটিত ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ও গণহত্যার পর ২০০৩ সালে গৃহীত রুয়ান্ডার সংবিধানে সংসদীয় আসনসহ সব রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী পদে নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়। ২০০৩ সালের নির্বাচনে নারীরা সংসদের ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ আসন পেয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ এবং ২০১৩ সালে এটি বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করে, যা ছিল ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ। একটি প্রবলভাবে হিংসাবিদীর্ণ ও রক্ষণশীল রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করে একটি স্থিতিশীল, লিঙ্গসাম্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উন্নীত করার অভিযাত্রায় দেশটির নারীরাই প্রধান ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।

নারীদের সরাসরি জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টি দয়াদাক্ষিণ্য বা অনুরোধ-উপরোধের বিষয় নয়, গুরুতর রাজনৈতিক বিষয়। তাই এ প্রশ্নের ফয়সালা রাজনৈতিকভাবেই হতে হবে। এখানে ন্যায্যতা কোনো গ্যারান্টি দিতে পারে না। কিন্তু রাজনীতি তো ক্ষমতা আর ক্ষমতা তো যুক্তি বা ন্যায্যতা দিয়ে চলে না। এখানে রাজপথে ক্ষমতা দেখাতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলো কেবল রাজপথ থেকে দেখানো শক্তি বা শোডাউন আর ক্ষমতাকাঠামোর চাপ—এ দুই ক্ষমতাকেই পরোয়া করে। তাই প্রাথমিকভাব এ বিষয়ে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা পাওয়ার প্রশ্নে নারীদের রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হওয়া ভিন্ন কোনো পথ নেই।

এ ক্ষেত্রে একটি ন্যায্য প্রস্তাব এমন হতে পারে যে সংসদীয় আসনের মধ্যে নারী ভোটারসংখ্যা বিবেচনায় শীর্ষ ১০০ আসনে শুধু নারীরাই প্রার্থী হতে পারবেন। যেকোনো জাতীয় নির্বাচনের মৌসুমে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে সব আসনের নারী ভোটারদের একটা সারণি করলেই বেরিয়ে আসবে, কোন ১০০ আসনে নারী ভোটার বেশি। পরবর্তী নির্বাচনী মৌসুমে একইভাবে তালিকা করে ১০০ নারী আসন চিহ্নিত হবে।

নারী আসন নিয়ে চলমান তর্কবিতর্কে সীমিত হলেও নারীদের যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তাতে একটি ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে—দেশে গণতন্ত্রের পরিসর বাড়ছে এবং প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীদের জন্য সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করা হলে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নারীদের ভূমিকা আরও স্বীকৃতি পাবে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী ও টেকসই করবে। সংসদে নারীদের নিছক হাজির থাকা নয়; বরং সরাসরি নির্বাচিত, প্রকৃতভাবে ক্ষমতায়িত আইনপ্রণেতার সরব উপস্থিতি কাম্য; যাঁরা জবাবদিহি করবেন শুধু দল বা নেতৃত্বের কাছে নয়, সরাসরি নাগরিকদের কাছে।

মিল্লাত হোসেন আইন ও সংবিধানবিষয়ক লেখক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টের স্টেগেনের অধিনায়কত্ব কেড়ে নিল বার্সা, নতুন অধিনায়ক কে
  • সাংবাদিক ভাইদের জীবনের নিরাপত্তা কে দিবে, প্রশ্ন তমা মির্জার
  • কমল হাসানের পায়ের ধুলোরও যোগ্য নন শাহরুখ: লিলিপুট
  • যুদ্ধের মধ্যেও কোন গোপন ব্যবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছে হামাস
  • কামাল ও তাঁর তিন সন্তান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, প্রতিদিন ‘যুদ্ধ করেও’ কূল খুঁজে পান না
  • আজমেরী বেগমের দুটি কিডনিই বিকল, চান সহায়তা
  • কুয়েত থেকে হুইলচেয়ারে ফিরছেন কর্মক্ষমতা হারানো প্রবাসীরা
  • হৃতিকের ছেলেকে পাপারাজ্জিদের তাড়া, ভিডিও ভাইরাল
  • ‘ট্রাম্প-মোদি ব্রোমান্স’ সত্ত্বেও ভারত–মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে কেন, সামনে কী
  • সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও নারী কেন ন্যায্য হিস্যা পাবে না