‘আব্বুরে জড়িয়ে ধরার সময়ও বুঝি নাই পিঠে ছুরি মারা’
Published: 7th, May 2025 GMT
‘আব্বুরে জড়িয়ে ধরার সময়ও বুঝতে পারি নাই আব্বুকে ছুরি মেরে দিছে, পিঠে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেছে। আব্বু তখন আমাকে বলে, মারে ওতো আমারে চাক্কু মারছে...’ বুধবার এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে বাবার নির্মম হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিচ্ছিলেন সুনামগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী আল মোবিনের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে উম্মে সানজিদা।
বুধবার মেয়ের চোখের সামনে দুষ্কৃতকারীর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত ব্যবসায়ী আল মোবিনের মৃত্যু হয়। শহরের নতুনপাড়ায় মঙ্গলবার বিকেলে ওই ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে স্থানীয় রবি বণিকের ২৫ বছর বয়সী ছেলে হৃদয় বণিক।
হৃদয়বিদারক ওই ঘটনায় পুরো মহল্লায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনার পর রাতেই খুনি হৃদয়কে তার নতুনপাড়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় মোবিনের মেয়ে উম্মে সানজিদা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিন দুপুরে নতুনপাড়ায় মোবিনের বাড়ির আশপাশে ছিল সুনসান নীরবতা। পরিচিত একজন জানালেন, মোবিনের ঘর তালা দেওয়া। তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে মহল্লায় থাকা মোবিনের শ্বশুরবাড়ির স্বজনরা তাদের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। সেখানে গিয়ে কথা হয় মোবিনের মেয়ে সানজিদার সঙ্গে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে বাবার বাঁচার আকুতি আর কাতর চেহারা মনে করে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন সানজিদা।
তিনি জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ির পাশে চিৎকার চেচামেচি শুনে ঘর থেকে বের হন তিনি। পাশের সড়কে দাঁড়ানো আরেকজন বললেন, তোমার বাবার সঙ্গে এক ছেলে ঝগড়া করছে। দৌড়ে কাছাকাছি যেত বালুর স্তূপ থেকে উঠে তাঁর বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, হৃদয় নামের এক ছেলে তাঁকে ছুরি মেরেছে। সানজিদা তখনও বুঝতে পারেননি বাবার পিঠে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তিনি কেবল হাতের রক্ত দেখেছেন। এক মোটরসাইকেল আরোহীর সহায়তায় হাসপাতালে যান বাবাকে নিয়ে। সেখানে কোনো সহযোগিতা পাননি।
তাঁর অভিযোগ, রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে তেমন কোনো ব্যবস্থা না করে, তাঁকে সিলেটে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মুমূর্ষু একজন মানুষের প্রতি সুনামগঞ্জ হাসপাতালের দায়িত্বশীলদের এমন অবহেলায় ক্ষিপ্ত তিনি।
সানজিদার খালু জিল্লুর রহমান সোহাগ জানান, খুনের ঘটনায় পরিবারটি একেবারে তছনছ হয়ে গেছে। হৃদয় পাড়ার মাস্তান। মাদকাসক্ত।
সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি আবুল কালাম জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামি হৃদয়কে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ হত য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
‘ট্রাম্প-মোদি ব্রোমান্স’ সত্ত্বেও ভারত–মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে কেন, সামনে কী
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে ফিরে এলে ভারতের অনেক বিশ্লেষক স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন। তাঁদের আশা ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক (ব্রোমান্স) মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে তৈরি হওয়া যেকোনো অস্থিরতা থেকে ভারতকে রক্ষা করবে।
অতীতে ট্রাম্প ও মোদি একে অপরের পক্ষে সক্রিয় প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন, যৌথ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। একে অপরকে বন্ধু বলেও অভিহিত করেছেন। এমনকি ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মোদি বিশ্বের প্রথম নেতাদের একজন হিসেবে হোয়াইট হাউসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।
কিন্তু মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে দিল্লি এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গত জুলাইয়ের শেষ দিকে ট্রাম্প প্রথমে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেন। এরপর রাশিয়া থেকে ভারতের অপরিশোধিত তেল কেনার কারণে গতকাল বুধবার তা দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেন। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হতে মস্কোকে চাপে ফেলার চেষ্টার মধ্যে ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিলেন।
ভারত ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি না করলে বর্ধিত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ বর্ধিত শুল্কের খড়্গ এড়ানোর চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন দিল্লির কর্মকর্তারা। ভারত কয়েকটি মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমায়ও। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি হয়নি। আলোচনা চলমান থাকার মধ্যেই দেশটির ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প।ট্রাম্পের গতকালের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এদিন বলেন, ‘আমরা আগেই স্পষ্ট করে জানিয়েছি, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী এবং দেশের ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘তাই, এমন সময় ভারতের পদক্ষেপের (রাশিয়া থেকে তেল আমদানি) জন্য তার ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, যখন অনেক দেশই নিজেদের স্বার্থে ওই একই কাজ করছে। আমরা আবারও বলছি, এ পদক্ষেপ অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অসংগত। ভারত তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
কিছু বিশ্লেষকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যচুক্তি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্রমেই টালমাটাল হচ্ছে। বাণিজ্য অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ ধর আল–জাজিরাকে বলেন, ‘গত কয়েক দশকে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এতটা নিচে নামেনি।’
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশ, যাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ, তারাসহ কয়েক ডজন দেশ তুলনামূলক কম শুল্কের শিকার।
গত শনিবার এক জনসভায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পার হচ্ছে। সেখানে অস্থিরতার পরিবেশ বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের একটাই মানদণ্ড হওয়া উচিত, যা কিছু কিনব, তা যেন ভারতীয়ের ঘামে তৈরি হয়।’
এ বক্তব্য মোদি এমন একসময় দিয়েছেন, যখন ভারতীয় কর্মকর্তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
ট্রাম্পের অভিযোগ, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা ইউক্রেন যুদ্ধে আর্থিকভাবে মস্কোকে সহায়তা করছে। গত সোমবার তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে কত মানুষ রাশিয়ার অস্ত্রে মরছে, তার তোয়াক্কা ভারতীয়রা করছেন না। এ কারণে আমি ভারতের ওপর শুল্ক আরও বাড়াব।’
নরেন্দ্র মোদিকে মস্কোর ক্রেমলিন প্রাসাদে রাশিয়ার সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘অর্ডার অব সেন্ট অ্যান্ড্রু দ্য অ্যাপোস্টল দ্য ফার্স্ট-কলড’ প্রদান করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ৯ জুলাই ২০২৪