‘আব্বুরে জড়িয়ে ধরার সময়ও বুঝতে পারি নাই আব্বুকে ছুরি মেরে দিছে, পিঠে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেছে। আব্বু তখন আমাকে বলে, মারে ওতো আমারে চাক্কু মারছে...’ বুধবার এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে বাবার নির্মম হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিচ্ছিলেন সুনামগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী আল মোবিনের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে উম্মে সানজিদা।

বুধবার মেয়ের চোখের সামনে দুষ্কৃতকারীর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত ব্যবসায়ী আল মোবিনের মৃত্যু হয়। শহরের নতুনপাড়ায় মঙ্গলবার বিকেলে ওই ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে স্থানীয় রবি বণিকের ২৫ বছর বয়সী ছেলে হৃদয় বণিক।

হৃদয়বিদারক ওই ঘটনায় পুরো মহল্লায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনার পর রাতেই খুনি হৃদয়কে তার নতুনপাড়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় মোবিনের মেয়ে উম্মে সানজিদা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

এদিন দুপুরে নতুনপাড়ায় মোবিনের বাড়ির আশপাশে ছিল সুনসান নীরবতা। পরিচিত একজন জানালেন, মোবিনের ঘর তালা দেওয়া। তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে মহল্লায় থাকা মোবিনের শ্বশুরবাড়ির স্বজনরা তাদের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। সেখানে গিয়ে কথা হয় মোবিনের মেয়ে সানজিদার সঙ্গে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে বাবার বাঁচার আকুতি আর কাতর চেহারা মনে করে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন সানজিদা। 
তিনি জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ির পাশে চিৎকার চেচামেচি শুনে ঘর থেকে বের হন তিনি। পাশের সড়কে দাঁড়ানো আরেকজন বললেন, তোমার বাবার সঙ্গে এক ছেলে ঝগড়া করছে। দৌড়ে কাছাকাছি যেত বালুর স্তূপ থেকে উঠে তাঁর বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, হৃদয় নামের এক ছেলে তাঁকে ছুরি মেরেছে। সানজিদা তখনও বুঝতে পারেননি বাবার পিঠে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তিনি কেবল হাতের রক্ত দেখেছেন। এক মোটরসাইকেল আরোহীর সহায়তায় হাসপাতালে যান বাবাকে নিয়ে। সেখানে কোনো সহযোগিতা পাননি। 

তাঁর অভিযোগ, রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে তেমন কোনো ব্যবস্থা না করে, তাঁকে সিলেটে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মুমূর্ষু একজন মানুষের প্রতি সুনামগঞ্জ হাসপাতালের দায়িত্বশীলদের এমন অবহেলায় ক্ষিপ্ত তিনি।

সানজিদার খালু জিল্লুর রহমান সোহাগ জানান, খুনের ঘটনায় পরিবারটি একেবারে তছনছ হয়ে গেছে। হৃদয় পাড়ার মাস্তান। মাদকাসক্ত। 

সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি আবুল কালাম জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামি হৃদয়কে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ হত য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ

চট্টগ্রাম নগরীর অলিগলিতে প্রতিদিন জমে ওঠা প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের অজান্তেই হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের সম্পদ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উঠলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে দুর্গন্ধযুক্ত ডাস্টবিন বা বিশাল ল্যান্ডফিলের ছবি। অথচ সে চিত্রটাই বদলে দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার সমন্বিত উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি নতুন মডেল, যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য রূপ নিচ্ছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যে।
এই উদ্যোগের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো– ‘সার্কুলার ইকোনমি’র ধারণা প্রতিষ্ঠা, অর্থাৎ একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে অর্থনৈতিক চক্রে ফিরিয়ে আনা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন একটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা হুসনেআরা একজন সক্রিয় রিসাইকলার। প্রতিদিন সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন থেকে গড়ে ৭০-১৫০ কেজি প্লাস্টিক, পলিথিন ও ধাতব বর্জ্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তিনি সরবরাহ করেন স্থানীয় ডিলারদের কাছে। এ কাজ থেকে মাসে আয় হয় প্রায় ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। উদ্যোগের আওতায় কাজ করে হুসনেআরা শুধু নিজের জীবিকা নির্বাহই করছেন না, বরং অপচনশীল কঠিন বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখছেন।
‘আগে লোকজন বলত, এসব কুড়িয়ে কী হবে? এখন বোঝে, আমি পরিবেশও বাঁচাই, ঘরও চালাই’– বলেন হুসনেআরা। সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করতে খানিকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমি চাই না ওদের ওপর ভর করে চলি, যতদিন পারি নিজে কষ্ট করে খাই।’
হুসনেআরার এই নিষ্ঠা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি তাঁকে চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠ ভাঙারিওয়ালা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে, যা তাঁর মতো আরও অনেককেই কঠোর পরিশ্রম ও পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহ ও মর্যাদা দিয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে হুসনেআরার মতো প্রায় তিন হাজার বর্জ্য সংগ্রাহক প্রতিদিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত আছেন, যা এ উদ্যোগটিকে একটি সফল পরিবেশ-অর্থনীতি সম্মিলিত মডেলে রূপ দিয়েছে।
চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ২০২২ সাল থেকে চালু হওয়া ‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ উদ্যোগের আওতায় এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ হাজার টনের বেশি কঠিন বর্জ্য, যার মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ প্লাস্টিক এবং ৭০ শতাংশ সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক। 
আমাদের দেশের প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এ শিল্পে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিয়োজিত। এটি দেশের ১২তম বৃহৎ রপ্তানি খাত, যেখান থেকে প্রতিবছর ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় হয়। তাছাড়া সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে এ খাত থেকে। 
একজন বর্জ্য সংগ্রাহক মাসে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন, যা একদিকে তাদের জীবিকা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে শহরকে করে তুলছে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য। 

শিক্ষার্থী
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম কলেজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযানে গোলাগুলি, একজনের মরদেহ উদ্ধার 
  • ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩২৯ জন
  • করোনাভাইরাস: ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৫
  • ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩২৯
  • কুমিল্লায় করোনায় একজনের মৃত্যু
  • সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফফার মারা গেছেন
  • একটানা ৩৭ ঘণ্টা উড়ে ইরানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমান
  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ার পথে
  • বড় হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারকেও ভূমিকা রাখতে হয়
  • একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ