বজ্রপাতে মৃত্যু: ওরা গরিব, তাই কি আমাদের গড়িমসি
Published: 8th, May 2025 GMT
২৮ এপ্রিল ছিলাম খুলনায়। উপকূলের শিশুদের সঙ্গে ভালোই সময় কাটছিল। এর মধ্যে ফোনের পর ফোন; মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে। বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর খবরে দিশাহারা গণমাধ্যম; কেউ প্রকৃত সংখ্যা জানতে চায়, কেউ চায় একটা বাইট; সংশ্লিষ্টদের কড়া সমালোচনা থাকতে হবে সেই বাইটে।
বৈশাখ শুরু হলেই ভয় বাড়ে কালবৈশাখী আর বজ্রপাতের। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে গড়ে ৩০০ মানুষ মারা যান, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতের কারণে বছরে ২০ জনেরও কম মৃত্যু ঘটে। চলতি বছর (২০২৫) জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৭ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। এর মধ্যে শিশু ৬ জন, নারী ১৪ এবং পুরুষ ৪৭ জন। আহত হয়েছেন ৩৪ জন। (মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ৬ জন, মার্চে ২ এবং ৩০ এপ্রিল বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৫৯ জন)। গত বছর (২০২৪) নিহত হয়েছে ২৮৮ জন। শিশু ৪৮, নারী ৩৩ ও পুরুষ ২০৭ জন। আহত ১৩৯ জন।
প্রতিবছর বজ্রপাতে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ৭০ শতাংশই মাঠে কাজ করার সময়। বাকি সাড়ে ১৪ শতাংশ খেতখামার থেকে বাড়ি ফেরার পথে আর ১৩ শতাংশ মারা যান গোসল কিংবা মাছ ধরার সময়। মাসের হিসাবে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় এপ্রিল থেকে জুনে অর্থাৎ বর্ষা–পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষায়।
হাওরে কি বজ্রপাত বেশি হয়আবহাওয়াবিদদের মতে, বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা। বজ্রপাতে হতাহত বেশি ঘটে হাওরাঞ্চলে। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, টাঙ্গাইল, জামালপুর ও ময়মনসিংহকে বজ্রপাত-ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আবহাওয়াবিদেরা চিহ্নিত করেছেন। ২০২৪ সালে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন সিলেট জেলায়। নিহতের সংখ্যা ২১ জন, যা অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো.
২০২৪ সালের মার্চ মাসে ‘পিয়ার-রিভিউ’ জার্নাল হেলিয়ন-এ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে বজ্রপাত পরিস্থিতির ওপর জিআইএস-ভিত্তিক স্থানিক বিশ্লেষণ’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতের ফলে ২ হাজার ১৪২ জন মারা যান। আহত হন ৫৩৮ জন।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। বর্ষা–পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষাকালে তীব্র সৌর বিকিরণ থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন বজ্রপাত হয়ে থাকে। এ সময়ই মেঘ থেকে মাটিতে বজ্রপাতের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয়। অন্যদিকে সময়টি চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় কৃষক ও জেলেরা বজ্রপাতের হতাহতের বিশেষ ঝুঁকিতে থাকেন।
কর্মক্ষম পুরুষেরাই প্রধান শিকারপরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত পাঁচ বছরের বজ্রপাতে দুর্ঘটনার শিকার মোট ২ হাজার ২৭০ জনের মধ্যে মোট ১ হাজার ৬২৪ জন মারা যান, যার মধ্যে পুরুষ ছিলেন ১ হাজার ১৬৬ এবং আহত হন ৬৪৬। গত ২০২৪ সালে মোট ২৮৫ নিহত ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ছিলেন ২০৫ জন, শিশু ৪৭ এবং নারী ৩৩। নিহতের পাশাপাশি বহু মানুষ আহত হয়। এদের বেঁচে থাকতে হয় নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে। স্মৃতিশক্তি হ্রাস, শ্রবণশক্তি হারানো, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, কর্মক্ষমতা হ্রাস, ক্লান্তি বা অবসাদ বোধ, মাথা ঘোরা অথবা ঝিমঝিম করা, শরীরব্যথা, মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যাজনিত বিভিন্ন ধরনের স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
আরও পড়ুন‘মাঠে গেছে যারা তারা ফিরিছে কি’১৮ মার্চ ২০২৩বজ্রপাতে নিহতদের ভাগ্যে কী ঘটেরংপুরের পীরগঞ্জের দুই ভাই আরও অনেকের সঙ্গে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বীর বাসিন্দা ইউনিয়নের নোয়াবাড়ী গ্রামে এসেছিলেন ধান কাটতে। ধানকাটা শ্রমিক আফজাল আর আমির ২০২৪ সালের ১৮ মে বজ্রপাতে আহত হন। হাসপাতালে নিলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। লাশ পড়ে থাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সংবাদমাধ্যমকে জানান, নিহত দুজনের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এলে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
২৮ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ১৩ মে কালিহাতী, গোপালপুর, বাসাইল, ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার ৪০টি গ্রাম টর্নেডো ও বজ্রপাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই বিভীষিকাময় ঘটনায় ধান কাটতে আসা রংপুর অঞ্চলের অনেক শ্রমিক নিহত হন। দুই দিন পর তাঁদের লাশ এক গর্তে কবর দেওয়া হয়। সেই শ্রমিকদের নাম আমরা কেউ জানি না। আফজাল-আমিরের নাম জানি, তাঁদের লাশ প্রমাণ সাপেক্ষে আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস মেলে। গত ২৮ বছরে পরিবর্তন শুধু এটুকুই। গরিব মানুষের জন্য এটাই-বা কম কী!
বজ্রপাত প্রতিরোধে উদ্যোগবজ্রপাত থেকে মানুষের প্রাণ রক্ষার জন্য প্রথমে নেওয়া হয়েছিল তালগাছ সৃজন প্রকল্প। কথা ছিল, সারা দেশে ৪০ লাখ তালগাছ লাগিয়ে তাক লাগিয়ে দেওয়া হবে। তাক লাগানো দূরে থাক, ব্যবস্থাপনার তালগোলে প্রায় শতকোটি টাকা পানির মতো বেরিয়ে যেতে বোঝা গেল, চারদিকে ‘গায়েবি’ গাছের ছড়াছড়ি।
পরিকল্পনা কমিশন জানাল, ‘তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া। কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাও হয়নি।’ তবে কি এটা ঝোঁকের মাথায়? ঝোঁকের ঝাঁকিতে টাকা ঝরেছে, কিন্তু মানুষের ঝুঁকি কমেনি। এখন তাল কর্মসূচির বাতিল করে শুরু হয়েছে বজ্রপাত প্রতিরোধক বা লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপনের কাজ।
লাইটনিং অ্যারেস্টার কীতামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুর বৈদ্যুতিক রোধের মাত্রা অনেক কম। তাই সাধারণত এ ধরনের ধাতু দিয়ে বজ্রনিরোধক দণ্ড তৈরি করা হয়। এটি উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎকে সহজে নিরাপদে মাটিতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। ৩০ থেকে ৪০ ফুট লম্বা দণ্ডে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি জিআইপি পাইপ এবং তামার তার থাকে। বজ্রনিরোধক দণ্ডের ওপর বসানো লাইটনিং অ্যারেস্টার ডিভাইসের মূল কাজ, নির্ধারিত ব্যাসের মধ্যে বজ্রপাত হলে তা টেনে মাটিতে নামিয়ে আনা। এতে মিটারের মতো কাউন্টার রয়েছে, কয়টি বজ্রপাত হলো, তার হিসাব সেখানে থাকবে। যন্ত্রটিকে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় রাখতে হয়।
অ্যারেস্টার কত দূর পর্যন্ত কার্যকরযে ধরনের অ্যারেস্টার এখন ব্যবহৃত হচ্ছে, তাতে ১০০ মিটার ব্যাসের মধ্যে এটা কার্যকর হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মতো দণ্ড বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়ও। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার এক মেগা বাজেট নিয়ে এগিয়ে আসছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সেখানেও বজ্রনিরোধক দণ্ডের হিস্যা আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ২০১৮ সালে বজ্রপাতের আগাম সংকেত দিতে ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি জায়গায় লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর (সংকেতব্যবস্থা) বসিয়েছিল, যা এখন বেকার।
এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে যেসব অবৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, তা দেখে আমি হতাশ। এ ধরনের চিন্তা কীভাবে আসে? অর্থের অপচয়মাত্র…’
কেমন আছে দণ্ডগুলো২০২৪ সালের ১০ মে পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র (লাইটনিং অ্যারেস্টার মেশিন) বসানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওরে যন্ত্রগুলো বসানোর পর আর কেউ খোঁজ নেননি, অকেজো হয়ে পড়ে আছে।’ লেখকের সরেজমিন পরিদর্শন একই ছবি পেয়েছে।
বজ্রপাত থেকে প্রাণ রক্ষার সাশ্রয়ী পথকৃষিজমির উর্বরতা আর মাছের বংশ বৃদ্ধিতে বজ্রপাতের ভূমিকা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। সাইবেরিয়ান সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব জিওলজির কর্মকর্তা ভি বেগাটভ সুন্দর করে বলেছেন, ‘যদি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বজ্রপাতের না হতো, তবে বিশ্বের সব কারখানাকে নাইট্রোজেন সার কারখানায় পরিণত করতে হতো।’
এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এই উপকারী প্রাকৃতিক ব্যবস্থা থেকে জানমালের সুরক্ষা। কৃষিজমির চকে আগে যেমন বাবলা, খেজুরগাছের সমারোহ ছিল, সেটা আবার আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। গাছ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। গত ২৮ জানুয়ারি আদালত গাছ কাটার আগে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে বলে রায় দিয়েছেন।
এক নড়াইলের জেলা প্রশাসক ইচ্ছা করলেই বছরে হাজার ছয়েক তালগাছ বাঁচাতে পারেন। নড়াইল জেলার চাচুড়ী, তুলারামপুর, দিঘলিয়াসহ বিভিন্ন হাটে ডোঙা বিক্রি শুরু হয় জুন মাসে, চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নড়াইল-যশোর সড়কে তুলারামপুরের হাট দেশের সবচেয়ে বড় ডোঙার হাট। এখানে সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার হাট বসে। এখানকার প্রতিটি হাটে কয়েক শ ডোঙা বেচাকেনা হয়। জনস্বার্থে তুলারামপুরের ডোঙার হাট বন্ধ করা উচিত।
নেপাল ও ভারতে বজ্রপাতে বেঁচে যাওয়া কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন, এমন সব মাঠকর্মী দেখেছেন, যেসব খেতমজুরের পায়ে রাবারের জুতা ছিল, তাঁদের বেঁচে যাওয়ার সংখ্যা খালি পায়ে থাকাদের চেয়ে অনেক বেশি। তা-ই যদি হয়, তবে ব্যয়বহুল দণ্ড স্থাপনের চেয়ে জুতার দিকে মন দিতে বাধা কোথায়?
ক্ষতিপূরণ ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাবজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করলেও সরকার এখন পর্যন্ত আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে আলাদা তহবিল গঠন করেনি। আগে বলা হয়েছিল, বজ্রপাতে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা গেলে ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে তাঁর পরিবারকে চাল ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। সেটা হয়নি।
ভারতে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ মৃত ব্যক্তির জন্য ২ লাখ এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য ৫০ হাজার রুপি। বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতি মনে করে, বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারপ্রতি কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।
দেশে এখনো বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার কোনো নির্দেশিকা বা ‘প্রটোকল’ তৈরি হয়নি। বিজ্ঞানসম্মত এক কার্যকর ‘প্রটোকল’ তৈরি এখন সময়ের দাবি। তবে একটা জবাবদিহি আর অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে অথবা সেই ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজটি ত্বরান্বিত করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, বস্তুত এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত যে বায়ুমণ্ডলে ধাতব উপাদান বেড়ে গেলে তা বজ্রপাতের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণ–সম্পর্কিত সূচকগুলোয় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম দিকে থাকছে। বজ্রপাতে রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি প্রচুর গাছ লাগিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে এবং জনসাধারণের মধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণই বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে।
গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক। ই–মেইল: [email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল ব যবস থ পর ব র র জন য ধরন র ল ইটন সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঢাবির ৭৪ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের শিক্ষার্থীদের তিন বছরের (২০২১, ২০২২ ও ২০২৩) এবং শিক্ষকদের পাঁচ বছরের (২০২১, ২০২২, ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫) ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে।
অনুষদের ৫টি বিভাগের মোট ৪৪ জন শিক্ষার্থী ডিনস অ্যাওয়ার্ড পান। এছাড়া দেশে-বিদেশে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থ এবং স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত মৌলিক প্রবন্ধের জন্য ৩০ জন শিক্ষককে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
ঢাবিতে শুরু হচ্ছে ইকবাল ও নজরুলকে নিয়ে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স
ঢাবি প্রক্টরকে হুমকি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হাতে এ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়।
ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. উপমা কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সোনালী ব্যাগের উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের সাবেক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমেদ খান ডিনস অ্যাওয়ার্ড স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম ঘোষণা করেন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. উপমা কবির।
এ সময় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রাধ্যক্ষ, অনুষদের শিক্ষক ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করা হয়।
ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন-জগন্নাথ বিশ্বাস, মো. নিজাম উদ্দিন তানিম, শ্রাবণী সরকার, নাজমুল হাসান নাঈম, আফসানা আনজুম আঁখি, নুসাইবা এহসান, আসমা ইয়াসমিন খান রিমু, মেহরিন ফাত্তাহা, কায়সারী ফেরদৌস, মোহাম্মদ আজমাঈন ফাতিন (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং), নিশাত তামান্না আদিবা, এহসানুল হক, মো. শাহিদুল ইসলাম, মো. আহসানুল হক মামুন, মো. আব্দুল হাসনাত, সাহাল জুবায়ের, তাইমিমা মাহবুব, ফাইরুজ তাহিয়া, ফাতেমা-তুজ-জহুরা (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল), মো. আমিনুল কাদের বুলবুল, শাবাব মুর্শেদ, রাহিব হাসান, জহির সাদিক মনন, তাহমিদ মোসাদ্দেক, মহিদুল হক মৃদুল, আবদুল্লাহ ইবনে হানিফ আরিয়ান, মাবসুর ফাতিন বিন হোসাইন, ইত্তেহাদ সালেহ চৌধুরী, সৌমিক শাফকাত অভ্র (কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল), এইচ রাইনাদ খান রোহান, কে. এম. সৌরভ, মো. নবীর হোসেন, মো. ফাহিম ফরায়েজি, তাসফিয়া রহমান রিভা, মাহমুদুল হাসান তামিম, জেরিন তাহসিন আনজুম, তাসনুভা তামিসা অর্পি, ফারহান লাবিব অর্ণব (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং), মিকদাম-আল-মাদ রৌন, আব্দুল মোনাফ চৌধুরী, হুমায়রা রশিদ, সানিয়া কায়েনাত চৌধুরী, মো. এহতেশামুল হক, আতিক তাজওয়ার (রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং)।
ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক (২০২১, ২০২৩, ২০২৫), মো. তানভীর আলম (২০২৪) (কম্পিউটার বিজ্ঞান অ্যান্ড প্রকৌশল), ড. আবুল খায়ের মল্লিক (২০২১, ২০২৩), অধ্যাপক ড. মো. নুরনবী (২০২৪), ড. তাসলিম উর রশিদ (২০২২, ২০২৩), অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল ইসলাম মোল্লা (২০২৪), সাদিত বিহঙ্গ মালিথা (২০২১) (ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল), ড. সেঁজুতি রহমান (২০২১, ২০২৩, ২০২৪) (রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং), মো. আরিফুল ইসলাম (২০২৩), মো. সিফাত-ই-আরমান ভূঁইয়া (২০২৩, ২০২৫), ড. মো. মেহেদী হাসান (২০২৪), মো. হোসাইন শাহাদাত (২০২১), ড. অনিমেষ পাল (২০২১, ২০২৫), অধ্যাপক ড. আফরোজা শেলি (২০২২, ২০২৫) (নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং), ড. মাইনুল হোসেন (২০২২, ২০২৪, ২০২৫), ড. শেখ মো. মাহমুদুল ইসলাম (২০২২, ২০২৩), ড. মো. আহসান হাবীব (২০২৫), ইমতিয়াজ আহমেদ (২০২৪) (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “মেধাকে মূল্যায়ন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও আমরা সঙ্গে রাখতে পেরেছি। আসলে আপনারাও আমাদেরই অংশ।”
উপাচার্য বলেন, “মেধার অন্যতম ভিত্তি হলো পরিশ্রম। মনে রাখতে হবে, সাফল্যের পেছনে অনেকের অবদান থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের যে পরম্পরা তা তোমরা ধরে রেখেছো। এটাই আমাদের গর্ব। তবে মনে রাখতে হবে অহংবোধ যেন আমাদের মধ্যে জাগ্রত না হয়।”
ঢাকা/সৌরভ/সাইফ