বজ্রপাতে মৃত্যু: ওরা গরিব, তাই কি আমাদের গড়িমসি
Published: 8th, May 2025 GMT
২৮ এপ্রিল ছিলাম খুলনায়। উপকূলের শিশুদের সঙ্গে ভালোই সময় কাটছিল। এর মধ্যে ফোনের পর ফোন; মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে। বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর খবরে দিশাহারা গণমাধ্যম; কেউ প্রকৃত সংখ্যা জানতে চায়, কেউ চায় একটা বাইট; সংশ্লিষ্টদের কড়া সমালোচনা থাকতে হবে সেই বাইটে।
বৈশাখ শুরু হলেই ভয় বাড়ে কালবৈশাখী আর বজ্রপাতের। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে গড়ে ৩০০ মানুষ মারা যান, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতের কারণে বছরে ২০ জনেরও কম মৃত্যু ঘটে। চলতি বছর (২০২৫) জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৭ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। এর মধ্যে শিশু ৬ জন, নারী ১৪ এবং পুরুষ ৪৭ জন। আহত হয়েছেন ৩৪ জন। (মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ৬ জন, মার্চে ২ এবং ৩০ এপ্রিল বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৫৯ জন)। গত বছর (২০২৪) নিহত হয়েছে ২৮৮ জন। শিশু ৪৮, নারী ৩৩ ও পুরুষ ২০৭ জন। আহত ১৩৯ জন।
প্রতিবছর বজ্রপাতে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ৭০ শতাংশই মাঠে কাজ করার সময়। বাকি সাড়ে ১৪ শতাংশ খেতখামার থেকে বাড়ি ফেরার পথে আর ১৩ শতাংশ মারা যান গোসল কিংবা মাছ ধরার সময়। মাসের হিসাবে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় এপ্রিল থেকে জুনে অর্থাৎ বর্ষা–পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষায়।
হাওরে কি বজ্রপাত বেশি হয়আবহাওয়াবিদদের মতে, বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা। বজ্রপাতে হতাহত বেশি ঘটে হাওরাঞ্চলে। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, টাঙ্গাইল, জামালপুর ও ময়মনসিংহকে বজ্রপাত-ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আবহাওয়াবিদেরা চিহ্নিত করেছেন। ২০২৪ সালে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন সিলেট জেলায়। নিহতের সংখ্যা ২১ জন, যা অন্যান্য জেলার তুলনায় অনেক বেশি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো.
২০২৪ সালের মার্চ মাসে ‘পিয়ার-রিভিউ’ জার্নাল হেলিয়ন-এ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে বজ্রপাত পরিস্থিতির ওপর জিআইএস-ভিত্তিক স্থানিক বিশ্লেষণ’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতের ফলে ২ হাজার ১৪২ জন মারা যান। আহত হন ৫৩৮ জন।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। বর্ষা–পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষাকালে তীব্র সৌর বিকিরণ থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন বজ্রপাত হয়ে থাকে। এ সময়ই মেঘ থেকে মাটিতে বজ্রপাতের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয়। অন্যদিকে সময়টি চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় কৃষক ও জেলেরা বজ্রপাতের হতাহতের বিশেষ ঝুঁকিতে থাকেন।
কর্মক্ষম পুরুষেরাই প্রধান শিকারপরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিগত পাঁচ বছরের বজ্রপাতে দুর্ঘটনার শিকার মোট ২ হাজার ২৭০ জনের মধ্যে মোট ১ হাজার ৬২৪ জন মারা যান, যার মধ্যে পুরুষ ছিলেন ১ হাজার ১৬৬ এবং আহত হন ৬৪৬। গত ২০২৪ সালে মোট ২৮৫ নিহত ব্যক্তির মধ্যে পুরুষ ছিলেন ২০৫ জন, শিশু ৪৭ এবং নারী ৩৩। নিহতের পাশাপাশি বহু মানুষ আহত হয়। এদের বেঁচে থাকতে হয় নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে। স্মৃতিশক্তি হ্রাস, শ্রবণশক্তি হারানো, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, কর্মক্ষমতা হ্রাস, ক্লান্তি বা অবসাদ বোধ, মাথা ঘোরা অথবা ঝিমঝিম করা, শরীরব্যথা, মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যাজনিত বিভিন্ন ধরনের স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
আরও পড়ুন‘মাঠে গেছে যারা তারা ফিরিছে কি’১৮ মার্চ ২০২৩বজ্রপাতে নিহতদের ভাগ্যে কী ঘটেরংপুরের পীরগঞ্জের দুই ভাই আরও অনেকের সঙ্গে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বীর বাসিন্দা ইউনিয়নের নোয়াবাড়ী গ্রামে এসেছিলেন ধান কাটতে। ধানকাটা শ্রমিক আফজাল আর আমির ২০২৪ সালের ১৮ মে বজ্রপাতে আহত হন। হাসপাতালে নিলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। লাশ পড়ে থাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সংবাদমাধ্যমকে জানান, নিহত দুজনের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এলে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
২৮ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ১৩ মে কালিহাতী, গোপালপুর, বাসাইল, ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার ৪০টি গ্রাম টর্নেডো ও বজ্রপাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই বিভীষিকাময় ঘটনায় ধান কাটতে আসা রংপুর অঞ্চলের অনেক শ্রমিক নিহত হন। দুই দিন পর তাঁদের লাশ এক গর্তে কবর দেওয়া হয়। সেই শ্রমিকদের নাম আমরা কেউ জানি না। আফজাল-আমিরের নাম জানি, তাঁদের লাশ প্রমাণ সাপেক্ষে আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস মেলে। গত ২৮ বছরে পরিবর্তন শুধু এটুকুই। গরিব মানুষের জন্য এটাই-বা কম কী!
বজ্রপাত প্রতিরোধে উদ্যোগবজ্রপাত থেকে মানুষের প্রাণ রক্ষার জন্য প্রথমে নেওয়া হয়েছিল তালগাছ সৃজন প্রকল্প। কথা ছিল, সারা দেশে ৪০ লাখ তালগাছ লাগিয়ে তাক লাগিয়ে দেওয়া হবে। তাক লাগানো দূরে থাক, ব্যবস্থাপনার তালগোলে প্রায় শতকোটি টাকা পানির মতো বেরিয়ে যেতে বোঝা গেল, চারদিকে ‘গায়েবি’ গাছের ছড়াছড়ি।
পরিকল্পনা কমিশন জানাল, ‘তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া। কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাও হয়নি।’ তবে কি এটা ঝোঁকের মাথায়? ঝোঁকের ঝাঁকিতে টাকা ঝরেছে, কিন্তু মানুষের ঝুঁকি কমেনি। এখন তাল কর্মসূচির বাতিল করে শুরু হয়েছে বজ্রপাত প্রতিরোধক বা লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপনের কাজ।
লাইটনিং অ্যারেস্টার কীতামা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুর বৈদ্যুতিক রোধের মাত্রা অনেক কম। তাই সাধারণত এ ধরনের ধাতু দিয়ে বজ্রনিরোধক দণ্ড তৈরি করা হয়। এটি উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎকে সহজে নিরাপদে মাটিতে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। ৩০ থেকে ৪০ ফুট লম্বা দণ্ডে ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি জিআইপি পাইপ এবং তামার তার থাকে। বজ্রনিরোধক দণ্ডের ওপর বসানো লাইটনিং অ্যারেস্টার ডিভাইসের মূল কাজ, নির্ধারিত ব্যাসের মধ্যে বজ্রপাত হলে তা টেনে মাটিতে নামিয়ে আনা। এতে মিটারের মতো কাউন্টার রয়েছে, কয়টি বজ্রপাত হলো, তার হিসাব সেখানে থাকবে। যন্ত্রটিকে ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় রাখতে হয়।
অ্যারেস্টার কত দূর পর্যন্ত কার্যকরযে ধরনের অ্যারেস্টার এখন ব্যবহৃত হচ্ছে, তাতে ১০০ মিটার ব্যাসের মধ্যে এটা কার্যকর হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মতো দণ্ড বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়ও। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার এক মেগা বাজেট নিয়ে এগিয়ে আসছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। সেখানেও বজ্রনিরোধক দণ্ডের হিস্যা আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ২০১৮ সালে বজ্রপাতের আগাম সংকেত দিতে ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি জায়গায় লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর (সংকেতব্যবস্থা) বসিয়েছিল, যা এখন বেকার।
এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে যেসব অবৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, তা দেখে আমি হতাশ। এ ধরনের চিন্তা কীভাবে আসে? অর্থের অপচয়মাত্র…’
কেমন আছে দণ্ডগুলো২০২৪ সালের ১০ মে পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র (লাইটনিং অ্যারেস্টার মেশিন) বসানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওরে যন্ত্রগুলো বসানোর পর আর কেউ খোঁজ নেননি, অকেজো হয়ে পড়ে আছে।’ লেখকের সরেজমিন পরিদর্শন একই ছবি পেয়েছে।
বজ্রপাত থেকে প্রাণ রক্ষার সাশ্রয়ী পথকৃষিজমির উর্বরতা আর মাছের বংশ বৃদ্ধিতে বজ্রপাতের ভূমিকা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। সাইবেরিয়ান সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব জিওলজির কর্মকর্তা ভি বেগাটভ সুন্দর করে বলেছেন, ‘যদি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বজ্রপাতের না হতো, তবে বিশ্বের সব কারখানাকে নাইট্রোজেন সার কারখানায় পরিণত করতে হতো।’
এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এই উপকারী প্রাকৃতিক ব্যবস্থা থেকে জানমালের সুরক্ষা। কৃষিজমির চকে আগে যেমন বাবলা, খেজুরগাছের সমারোহ ছিল, সেটা আবার আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। গাছ লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। গত ২৮ জানুয়ারি আদালত গাছ কাটার আগে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে বলে রায় দিয়েছেন।
এক নড়াইলের জেলা প্রশাসক ইচ্ছা করলেই বছরে হাজার ছয়েক তালগাছ বাঁচাতে পারেন। নড়াইল জেলার চাচুড়ী, তুলারামপুর, দিঘলিয়াসহ বিভিন্ন হাটে ডোঙা বিক্রি শুরু হয় জুন মাসে, চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নড়াইল-যশোর সড়কে তুলারামপুরের হাট দেশের সবচেয়ে বড় ডোঙার হাট। এখানে সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার হাট বসে। এখানকার প্রতিটি হাটে কয়েক শ ডোঙা বেচাকেনা হয়। জনস্বার্থে তুলারামপুরের ডোঙার হাট বন্ধ করা উচিত।
নেপাল ও ভারতে বজ্রপাতে বেঁচে যাওয়া কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন, এমন সব মাঠকর্মী দেখেছেন, যেসব খেতমজুরের পায়ে রাবারের জুতা ছিল, তাঁদের বেঁচে যাওয়ার সংখ্যা খালি পায়ে থাকাদের চেয়ে অনেক বেশি। তা-ই যদি হয়, তবে ব্যয়বহুল দণ্ড স্থাপনের চেয়ে জুতার দিকে মন দিতে বাধা কোথায়?
ক্ষতিপূরণ ও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাবজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করলেও সরকার এখন পর্যন্ত আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে আলাদা তহবিল গঠন করেনি। আগে বলা হয়েছিল, বজ্রপাতে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মারা গেলে ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে প্রতি মাসে তাঁর পরিবারকে চাল ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। সেটা হয়নি।
ভারতে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ মৃত ব্যক্তির জন্য ২ লাখ এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য ৫০ হাজার রুপি। বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতি মনে করে, বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারপ্রতি কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।
দেশে এখনো বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার কোনো নির্দেশিকা বা ‘প্রটোকল’ তৈরি হয়নি। বিজ্ঞানসম্মত এক কার্যকর ‘প্রটোকল’ তৈরি এখন সময়ের দাবি। তবে একটা জবাবদিহি আর অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে অথবা সেই ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজটি ত্বরান্বিত করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, বস্তুত এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত যে বায়ুমণ্ডলে ধাতব উপাদান বেড়ে গেলে তা বজ্রপাতের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণ–সম্পর্কিত সূচকগুলোয় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম দিকে থাকছে। বজ্রপাতে রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি প্রচুর গাছ লাগিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে এবং জনসাধারণের মধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণই বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে।
গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক। ই–মেইল: [email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল ব যবস থ পর ব র র জন য ধরন র ল ইটন সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে প্রতি বর্গকিলোমিটার দখল করার দাম দাঁড়াচ্ছে ২৭ রুশ সেনার প্রাণ
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রুশ বাহিনীর জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী সময় ছিল গত বছর। এ বছর অন্তত ৪৫ হাজার ২৮৭ জন নিহত হয়েছেন।
নিহতের এ সংখ্যা যুদ্ধের প্রথম বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ এবং ২০২৩ সালে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও অনেক বেশি। এ যুদ্ধে ২০২৩-এ বাখমুতে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও প্রাণঘাতী লড়াই হয়।
যুদ্ধের শুরুতে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখলের একেকটি লড়াইয়ে ধাপে ধাপে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে ২০২৪ সালে যুদ্ধের সম্মুখভাগ ধীরগতিতে এগোতে থাকায় নিহতের সংখ্যা মাসে মাসে বাড়তে থেকেছে। আর এটাই বিবিসিকে ইউক্রেনে কিলোমিটারপ্রতি ২৭ প্রাণহানির হিসাব প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছে। [এ হিসাব করা হয়েছে গত বছরের অনুমিত মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজারের ভিত্তিতে]
স্বতন্ত্র গণমাধ্যম মিডিয়াজোনা আর একদল স্বেচ্ছাসেবকের সহযোগিতায় বিবিসি রুশ সার্ভিস ওপেন সোর্স বা উন্মুক্ত সূত্রে প্রাপ্ত রাশিয়ার কবরস্থান, স্মৃতিসৌধ এবং শোক সংবাদের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে।
এ পর্যন্ত ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার অভিযানে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৪৫ জন নিহত রুশ সেনার নাম শনাক্ত করেছে বিবিসি।
তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা স্পষ্টতই আরও অনেক বেশি। সামরিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিবিসি নিহত সেনাদের যে সংখ্যা পেয়েছে, সেটা মোট নিহতের মাত্র ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রকৃত নিহতের সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার ২২৩ থেকে ২ লাখ ৩৭ হাজার ২১১ জনের মধ্যে হতে পারে।
২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারির দিনটি রুশ বাহিনীর জন্য সে বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন ছিল।
ওই দিন দখলকৃত দোনেৎস্কের ভলনোভাখা শহরের কাছে একটি প্রশিক্ষণ ভূমি ইউক্রেনের দূরপাল্লার এইচআইএমআরএএস (উচ্চ গতিসম্পন্ন আর্টিলারি রকেট সিস্টেম) মিসাইল হামলায় ৩৬তম মোটরাইজড রাইফেল ব্রিগেডের সদস্য আলদার বাইরভ, ইগর বাবিচ, ওখুঞ্জন রুস্তামভসহ বহু সৈন্য নিহত হন।
একটি মেডেল প্রদান অনুষ্ঠানের জন্য তাঁদের লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল। কমান্ডার কর্নেল মুসায়েভসহ এই হামলায় ৬৫ জন সৈন্য নিহত হন, আহত হন আরও অনেকে।
সাইবেরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল বারিশিয়া থেকে আসা ২২ বছর বয়সী বাইরভ খাদ্যের মান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হওয়ার লক্ষ্যে পড়াশোনা করছিলেন। কিন্তু সামরিক চাকরিতে বাধ্যতামূলক ডাক পড়ায় তিনি পেশাদার সৈনিক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে যান। রুশ সেনারা সে বছরের মার্চে কিয়েভের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় বোরোদিয়াঙ্কার যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। যুদ্ধে শহরটি প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এ সময় রুশ সৈনারা বেসামরিক নাগরিকদের হত্যায় জড়িত ছিলেন বলে ইউক্রেনীয় বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে।
সাইবেরিয়ার চিতা শহরের ৩১ বছর বয়সী ওখুঞ্জন রুস্তামভ বিশেষ বাহিনীতে বাধ্যতামূলক চাকরি শেষে ঢালাইকর (ওয়েল্ডার) হিসেবে কাজ করতেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে রুশ বাহিনী আংশিক সেনা সংগ্রহের সময় তাঁকে সামরিক বাহিনীতে ডাকা হয়।
৩২ বছর বয়সী ইগর বাবিচ অবশ্য স্বেচ্ছায় যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি সেরিব্রাল পালসিতে (জটিল স্নায়বিক রোগ) আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের ফিজিওথেরাপি দিতেন।
বিবিসির সংগৃহীত উপাত্ত অনুযায়ী, ওই দিন মোট ২০১ জন রাশিয়ান সৈন্য প্রাণ হারান।
প্রশিক্ষণ ভূমিতে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর রাশিয়ার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করে যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক সাফল্যের খবর দেন।
কিন্তু এতে প্রশিক্ষণ ভূমিতে হামলার কোনো উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের রোজকার প্রতিবেদনে এ বিষয়ে একটি শব্দও ছিল না।
ওখুঞ্জন রুস্তামভের এক আত্মীয় জানান, যুদ্ধ চলার সময় ইতিমধ্যে তিনি পরিবারের ঘনিষ্ঠ তিন সদস্যকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের ডিসেম্বরে আমার স্বামী মারা যান। ১০ ফেব্রুয়ারিতে আমার ধর্মপিতা (গডফাদার) এবং ২০ ফেব্রুয়ারিতে নিহত হন আমার সৎভাই। এক শবযাত্রা থেকে আরেক শবযাত্রা।’
বিশ্লেষণে বিবিসি সৈন্যদের মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তারিখকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। যখন তা পাওয়া যায়নি, তখন তারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার তারিখ বা মৃত্যুর খবর প্রকাশের তারিখ ব্যবহার করেছে।
যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে অর্থাৎ ২০২২ ও ২০২৩ সালে, রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতি ঢেউয়ের মতো ওঠানামা করেছে। কখনো প্রচণ্ড যুদ্ধে অনেক মানুষ নিহত হতো, কখনো আবার পরিস্থিতি শান্ত থাকাত।
২০২৩-২৪ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চুক্তিবদ্ধ হওয়া হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবককে ১০ থেকে ১৫ দিনের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ যোদ্ধাদের বেঁচে ফেরার সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিয়েছে।উদাহরণস্বরূপ ২০২৩ সালের কথা ধরা যায়। বেশির ভাগ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। এ সময় রুশ বাহিনী দোনেৎস্ক অঞ্চলের ভুহলেদার ও বাখমুত শহর দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল।
বিবিসির হিসাব অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ আক্রমণের প্রথম বছরে রাশিয়া কমপক্ষে ১৭ হাজার ৮৯০ জন সৈন্য হারিয়েছে। এ হিসাবে দখলকৃত পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার দুই বদলি বাহিনী বা অনিয়মিত যোদ্ধাদলের ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করা হয়নি।
২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ হাজার ৬৩৩।
২০২৪ সালের কখনো হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমতে দেখা যায়নি। এ সময় আভদিভকা ও রোবোটাইনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পোক্রোভস্ক ও তোরেতস্কের দিকে তীব্র আক্রমণ চালানো হয়।
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ইউক্রেনীয় বাহিনী কুরস্ক অঞ্চলে সীমান্ত পেরিয়ে আক্রমণ চালালে সেখানেও বাধ্যতামূলকভাবে নিযুক্ত রুশ সেনারা নিহত হন। শুধু আগস্টের ৬ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে আনুমানিক ১ হাজার ২২৬ জন রুশ সেনা প্রাণ হারান।
তবে শীর্ষ পর্যায়ের মার্কিন সামরিক বিশ্লেষক মাইকেল কফম্যানের মতে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে পূর্ব দিকে ধীর অগ্রগতির সময় রুশ বাহিনীর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।
মাইকেল কফম্যান ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এ সময় সাঁজোয়া গোলন্দাজ আক্রমণকারীদের বিক্ষিপ্ত দল নিয়ে অবিরত আক্রমণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে রুশদের দখলে নেওয়া নতুন ভূখণ্ডের তুলনায় সামগ্রিক হতাহতের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।’
প্রায় দুই বছর তীব্র যুদ্ধের পর ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর রাশিয়ান বাহিনী দোনেৎস্কের ভুহলেদার সামরিক সরঞ্জামের ঘাঁটি দখল করে নেয়।
যুদ্ধ-গবেষণা প্রতিষ্ঠান আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারের (আইএসডব্লিউ) অনুমান, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের ২ হাজার ৩৫৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে।
এমনকি তখনো যুদ্ধের সম্মুখভাগে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পতন ঘটেনি।
এই অভিযানে অন্তত ১১ হাজার ৬৭৮ রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।
ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিবিসি শুধু সেসব সেনাসদস্য ও কর্মকর্তা নিহত হওয়ার হিসাব করেছে, যাঁদের নাম প্রকাশ্য শোক সংবাদে ছিল এবং যাঁদের নিহত হওয়ার বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার তারিখ এ সময়সীমার মধ্যে পড়েছে।
আইএসডব্লিউর তথ্যমতে, ২০২৪ সালে রাশিয়া সামগ্রিকভাবে ৪ হাজার ১৬৮ বর্গকিলোমিটার জমি দখল করেছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, প্রতি বর্গকিলোমিটার দখলকৃত ভূখণ্ডের জন্য ২৭ জন রুশ সেনা নিহত হয়েছেন। তবু তো এখানে আহতের হিসাবে করা হয়নি।
যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে রুশ বাহিনীতে নিয়োগকে প্রভাবিত করছে
রাশিয়া বিভিন্ন উপায়ে নিজের কমতে থাকা সেনাবল বাড়ানোর পথ খুঁজে বের করেছে।
বিশ্লেষক মাইকেল কফম্যান বলেন, ‘২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়া সেনা নিয়োগ বাড়ায়। নিয়োগপ্রাপ্তদের সংখ্যা নিহতদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। ফলে মস্কো নতুন করে বহর সাজানোর সুযোগ পায়।
রাশিয়ার তিনটি অঞ্চলে নতুন নিয়োগ চুক্তিতে সই করা সেনাদের এককালীন প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সেনারা যে যুদ্ধভাতা পান, তা স্থানীয় গড় আয়ের তুলনায় পাঁচ থেকে সাত গুণ বেশি।
যাঁরা ২০২৪ সালে কার্যকর হওয়া একটি আইনের বলে ফৌজদারি মামলার হাত থেকে বাঁচতে সেনাবাহিনীতে নাম লিখিয়েছিলেন, বিবিসি তাঁদেরও ‘স্বেচ্ছাসেবী’ হিসেবে গণ্য করেছে।
বিবিসির হিসাবে দেখা যাচ্ছে, নিহতদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক সৈন্যদের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এ পর্যন্ত শনাক্তকৃত মোট নিহত সেনাদের চার ভাগের এক ভাগই স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধা।
২০২৩-২৪ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চুক্তিবদ্ধ হওয়া হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবককে মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ যোদ্ধাদের বেঁচে ফেরার সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
হতাহতের সংখ্যার বিবেচনায় রাশিয়ার বাশখোর্তোস্তান প্রজাতন্ত্র শীর্ষে রয়েছে। এ পর্যন্ত সেখানে ৪ হাজার ৮৩৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা, যাঁদের ৩৮ শতাংশ কোনো সামরিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই যুদ্ধে গিয়েছিলেন।
রুশ শহর উফায় রাশিয়ান সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষর করার এককালীন প্রণোদনা স্থানীয় গড় [মাসিক] বেতন ৬৭ হাজার ৫৭৫ রুবেলের (৬০০ পাউন্ড) ৩৪ গুণ।
উন্মুক্ত তথ্যসূত্র থেকে সংগৃহীত মৃত্যুর হিসাব সব সময়ই অসম্পূর্ণ থাকবে।
কেননা গত কয়েক মাসে নিহত সেনাদের বড় অংশের মরদেহ এখনো যুদ্ধক্ষেত্রেই পড়ে থাকতে পারে। সেগুলো উদ্ধার করাও মাঠে সক্রিয় সেনাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
যদি দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রগুলোর যোদ্ধাদের হতাহতের চিত্র আমলে নেওয়া হয়, তাহলে রুশ সেনাদের প্রাণক্ষয়ের প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ।
শোক সংবাদ ও নিখোঁজ যোদ্ধাদের অনুসন্ধান-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ ২১ হাজার থেকে ২৩ হাজার ৫০০ জন নিহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এভাবে হিসাব করলে মোট নিহত সেনার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৫ হাজার থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার ৭০০।
আরও পড়ুনজেলেনস্কির বিদায় চান ট্রাম্প-পুতিন দুজনই, তা কি সম্ভব১১ এপ্রিল ২০২৫