এবার ১৫ মে থেকে নাটোরের বাজারে উঠবে মৌসুমের প্রথম পাকা আম ও লিচু। ওই দিন বাজারে আসবে গুটি আম ও মোজাফফর জাতের লিচু। এরপর ২৫ মে গোপালভোগ, ৩০ মে রাণীপছন্দ্, খিরসাপাত বা হিমসাগর, ২ জুন লখনা, ২০ জুন হাড়িভাঙ্গা, ৩০ জুন আম্রপালি, ১৫ জুলাই বারি আম-৪, ২০ জুলাই আশ্বিনা ও ২৫ আগস্ট গৌরমতি আম বাজারে আসবে।
আজ বৃহস্পতিবার নিরাপদ আম ও লিচু আহরণ সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে প্রস্তুতিসভায় আম ও লিচু বাজারজাত করার বিষয়টি জানানো হয়। এদিন বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নাটোর জেলা প্রশাসক মিজ আসমা শাহীনের সভাপতিত্বে সভায় জানানো হয়, জেলায় ১৫ মে থেকে গুটি আম ও লিচু আহরণ করা যাবে। এর পরে ২৫ মে গোপালভোগ আম, ৩০ মে রাণীপছন্দ ও খিরসাপাত আম, ২ জুন, লক্ষণভোগ, ১২ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন আম্রপালি, ২৫ জুন মোহনভোগ, ২৫ জুন ফজলী ও হাড়িভাঙ্গা, ৫ জুলাই মল্লিকা, ১০ জুলাই বারি আম-৪, ২০ জুলাই আশ্বিনা ও ১০ আগস্ট গৌরমতি আম আম আহরণ ও বাজারজাতকরণ করতে পারবেন আম চাষি, বাগান মালিকসহ আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও সভায় ১৫ থেকে মোজাফফর জাতের লিচু এবং ২৫ মে থেকে বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু আহরণের সময় নির্ধারণ করা হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, অসময়ে সংগ্রহ বন্ধ ও কেমিক্যালমুক্ত নিরাপদ ফল নিশ্চিতে নাটোরে গাছ থেকে আম ও লিচু সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করা হলো। অপরিপক্ব আম নামানো, রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আম বা লিচু বাজারজাত করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবুল হায়াত, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ হাসিবুর রহমানসহ বিভিন্ন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, আম ও লিচু বাগান মালিক এবং ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
এবার জেলায় ৫ হাজার ৬৯৪ হেক্টর আমবাগান থেকে ৭২ হাজার ৮৬ মেট্রিকটন আম এবং ৮৮৭ হেক্টর জমিতে ৬৫০৮ মেট্রিক টন লিচু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম ও ল চ
এছাড়াও পড়ুন:
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ বিবেচনা করতে পারে সরকার
দুর্বল ও তারল্য সঙ্কটে ভুগতে থাকা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে তা অকার্যকর ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা হলো। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে একটি নতুন ইসলামী ব্যাংক।
ব্যাংকগুলোকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে আমানতকারীদের পূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া হলেও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়নি। ফলে ৫ ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুরোধ রাখল না বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরো পড়ুন:
ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন
৭ কোটি টাকা সংগ্রহে লিও আইসিটি ক্যাবলসের কিউআইও’র আবেদন
তবে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার বিভিন্ন খাতে আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে থাকে। সেহিসেবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বা শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি বিশেষ বিবেচনা করতে পারে সরকার।
বুধবার (৫ নভেম্বর) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই শেয়ারের ভ্যালু জিরো বিবেচনা করা হবে। কাউকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনযায়ী সব কোম্পানির মালিককে লভ্যাংশের পাশাপাশি ক্ষতির ভাগও নিতে হয়। কিন্তু আমরা এসব ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডরদের জরিমানা করছি না। শুধু শেয়ারমূল্যগুলো শূন্য বিবেচনা করছি। অন্য দেশে হলে তাদের থেকে জরিমানা আদায় করা হতো। এখন ব্যাংকগুলোর নেট এসেট ভ্যালু ঋণাত্বক ৪২০ টাকা পর্যন্ত।’’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘ব্যাংকগুলোর নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) পজিটিভ থাকলে শেয়ারহোল্ডাররা কিছু পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। তবে এনএভি নেতিবাচক থাকলে কিছুই পাওয়ার কথা না। তারপরও, সরকার চাইলে সাধারণ বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কথা বিবেচনা করতে পারে। কারণ ব্যাংকগুলোর এমন পরিণতির জন্য আমানতকারী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের দোষ দেওয়া যাবে না।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘আইনগতভাবে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বিবেচনা করার সুযোগ নেই। তবে সরকার বিশেষ বিবেচনায় ভাবতে পারে। আমাদের দেশে তো সবকিছুই আইন দিয়ে চলে না। আইনের পাশাপাশি অনেক কিছুই বিবেচনায় রাখতে হয়। তাই সরকার চাইলে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে বিশেষ বিবেচনা করতে পারে।’’
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘‘একীভূত করতে যাওয়া পাঁচটি ব্যাংক; ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এবং এক্সিম ব্যাংক পিএলসির বর্তমান এই অবস্থার জন্য কোনোভাবেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দায়ী নন। ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫ এর ধারা-৭৭ এ বর্ণিত দায়ী ব্যক্তিগণ ব্যাংকগুলোর এই অবস্থার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী, যা ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশে স্বীকৃত। উক্ত পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’’
বিবেচনার করার বিষয়গুলো হলো-
ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিটে প্রদর্শিত সম্পদ মূল্যায়নের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স, ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্ক, ক্লায়েন্ট বেজ, হিউম্যান রিসোর্স বেজ, সার্ভিস ডেলিভারি মেকানিজম এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু, ইত্যাদি মূল্যায়ন করে বিক্রয় মূল্য বিবেচনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ নির্ধারণ করা।
ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিটে প্রদর্শিত সম্পদ মূল্যায়নের পাশাপাশি ব্যাংক প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে সংরক্ষিত জামানত এবং দায়ী ব্যক্তিদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে আদায়যোগ্য অর্থ বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ নির্ধারণ করা।
ধারা-৭৭ এ বর্ধিত দায়ী ব্যক্তিরা ধারণকৃত শেয়ার ব্যতীত অন্যান্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের বা সাধারণ বিনিয়োগকারী কর্তৃক বিনিয়োগকৃত অর্থ সাধারণ বিনিয়োগকারীর ন্যূনতম স্বার্থ মূল্য বিবেচনা করে একীভূতকরণের অনুপাত নির্ধারণ করা।
উপরোউক্ত মূল্যায়ন বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক পাঁচটির সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ মূল্য অনুপাতে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা। এবং ব্যাংকগুলোতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ মূল্য অনুপাত নির্ধারণ ও তা ঘোষণা না করে অথবা সাধারণ বিনিয়োগকারী কর্তৃক ধারণকৃত শেয়ারের এক্যুইজেশন মূল্য নির্ধারণ এবং তা ঘোষণা না করে স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুত না করা
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৮.৭১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.৮৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৮.৯০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৩.৩৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১.২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৮.৯০ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.১৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৫.০৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
এক্সিম ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৭.৮০ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.৫৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৯.২১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৩.৬৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩১.৮৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল