এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এবারও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রায় অনিশ্চিত। এমন বাস্তবতায় ভ্যাট আদায় বাড়াতে অতিরিক্ত জনবল চেয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে তারা কাস্টম হাউস, কমিশনারেটসহ বিশেষায়িত দপ্তর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।
এনবিআরের এমন প্রস্তাবে সায় দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ। নতুনভাবে ৩৫৯৭টি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ক্যাডার ৩৭৩টি এবং অন্যান্য ৩২২৪টি পদ। এসব পদ সৃষ্টির প্রস্তাব আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উঠতে যাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে এই বৈঠক হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ২০২২ সালের শুরুতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ১১ হাজার ৯২১টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই শেষে ৬ হাজার ১৯৬টি পদ সৃষ্টির অনুমোদন দেয়। এর পর অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে ৩ হাজার ৫৯৭টি পদ। সচিব কমিটির অনুমোদনের পর প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পেলে পদ সৃষ্টির প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর পর জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
প্রস্তাবের যৌক্তিকতায় এনবিআর ও আইআরডি জানিয়েছে, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অনুবিভাগের কাঠামো ২০০৯-১০ অর্থবছরে অনুমোদিত। বর্তমানে সারাদেশে ৬টি কাস্টম হাউস, ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট, দুটি বন্ড কমিশনারেট, চারটি আপিল কমিশনারেট, একটি এলটিইউ (মূসক), দুটি অধিদপ্তর, একটি পরিদপ্তর, একটি শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটের মাধ্যমে পরোক্ষ কর আহরণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ কাঠামো রাজস্ব আহরণের কাজের পরিধি হিসেবে খুবই অপ্রতুল। কারণ, বিগত প্রায় দুই দশকে রাজস্ব আহরণ ৭২৮ শতাংশ বাড়লেও নিবন্ধিত মূসক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১৫ শতাংশ, মূসক রিটার্ন দাখিলকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৬ শতাংশ, আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ ৫ গুণ, রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ দুই গুণের বেশি, বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৬ শতাংশ, আগমন ও বহির্গমন যাত্রীর সংখ্যা ৬ গুণ বেড়েছে।
জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, এনবিআরে কাজের পরিধি অনেক বাড়লেও জনবল বাড়েনি। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ভ্যাট দেওয়ার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও সেখানে ভ্যাট আদায়ের কোনো অফিস নেই। চট্টগ্রামেও অনেক প্রতিষ্ঠান বেড়েছে; কিন্তু জনবল বাড়েনি। এক্সাইজ ও ভ্যাট অনুবিভাগের জনবল বাড়লে সারাদেশে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ অনেক বাড়বে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, এনবিআরের পদ সৃষ্টির অনুমোদন এখন সচিব কমিটির ওপর নির্ভর করছে। সচিব কমিটি অনুমোদন পেলে অন্যান্য কাজ দ্রুত হবে। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, আদায় প্রক্রিয়ার জটিলতা দূর করতে পারলেই বাড়বে ভ্যাটের পরিমাণ। ভ্যাট সরাসরি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইনে ভ্যাট আদায়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাড়ছে কাস্টম হাউস ও কমিশনারেট
বর্তমানে কাস্টম হাউস ছয়টি, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ১২টি, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেট চারটি এবং বিশেষায়িত অফিস রয়েছে চারটি। নতুন করে কাস্টম হাউস চারটি, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট পাঁচটি এবং বিশেষায়িত অফিস পাঁচটি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে কার, জিপ, মাইক্রোবাস, মিনিবাস, বাসসহ বিভিন্ন ধাপের ৩ হাজার ৫৮৭টি পরিবহন কেনা হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনব আর পদ স ষ ট র র প রস ত ব র পর ম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা আনতে ৮টি পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা আনতে আটটি পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। মার্কিন সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রকাশিত ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট বা আর্থিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের তৈরি বাজেট কাঠামোই মূলত অনুসরণ করছে। আগের সরকারের বাজেট কাঠামো বদলায়নি অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সরকার অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বাড়াতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।
এবার দেখা যাক আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা আনতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কী কী পরামর্শ দিয়েছে।
১. বছরের শেষ হিসাব প্রতিবেদন যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রকাশ করা।
২. বাজেট নথি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রস্তুত করা।
৩. নির্বাহী কার্যালয়ের ব্যয় আলাদাভাবে দেখানো।
৪. বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রকাশ করা।
৫. আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সর্বোচ্চ নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। বাজেটের পূর্ণাঙ্গ তথ্য যেন তারা পায়, সেই ব্যবস্থা করা।
৬. নিরীক্ষা প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশ করা, যেখানে প্রস্তাবনা ও বিস্তারিত তথ্য থাকবে।
৭. প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ–সংক্রান্ত চুক্তির মূল তথ্য প্রকাশ করা।
৮. সরকারি ক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করা।
প্রতিবেদনে আরও যা আছেমার্কিন সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরের আর্থিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের সরকার নির্বাহী বাজেট প্রস্তাব ও প্রণীত বাজেট অনলাইনে সাধারণ জনগণের জন্য প্রকাশ করেছে। তবে বছরের শেষ হিসাব প্রতিবেদন যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রকাশ করেনি। তারা মনে করছে, বাজেটের তথ্য সাধারণভাবে নির্ভরযোগ্য হলেও আন্তর্জাতিক মান অনুসারে হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের ঋণ বা দেনার পরিমাণ কত, তা বাজেটে প্রকাশ করা হতো। বাজেট নথিতে সরকারের পরিকল্পিত ব্যয়, রাজস্ব আয়সহ প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে অর্জিত আয় দেখানো হলেও একাধিক দিক থেকে তথ্য অসম্পূর্ণ ছিল। বিশেষ করে নির্বাহী বিভাগের ব্যয় আলাদা করে দেখানো হয়নি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বরাদ্দ ও আয় প্রকাশ করা হলেও রাজস্ব ও ব্যয়ের সম্পূর্ণ হিসাব পাওয়া যায়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, সরকারি নিরীক্ষক সংস্থা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পুরো হিসাব যাচাই করতে পারেনি। কিছু সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মনে করছে, প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বতন্ত্র নয়।
প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের চুক্তি ও লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত মানদণ্ড অনুসরণ করা হলেও সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সীমিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের সব প্রক্রিয়া উন্মুক্ত ও স্বচ্ছভাবে করেছে। সেই সঙ্গে আগের সরকারের নেওয়া চলমান ও আগের সব সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি স্থগিত করেছে।