মঙ্গাপীড়িত ‘গাড়িয়াল ভাই’
আবিদ আনোয়ার
পদ্মা নদীর ঢেউ নিয়ে আর গাইবে না কোনো কাজী নজরুল!
আমাদের জল মোদিজিরা খায়,
মমতা দিদিরা তার ভাগ পায়,
আমরা কেবল বালুচরে বসে চোখের জলেই ভাসাই দু’কূল।
লোকে বলে জল ভাটিতে গড়ায়,
দেশ ভরে গেছে খরা ও চরায়,
মরু-সাহারার হাহাকারে-বাঁচা বৃক্ষের মূলে মাটি-জল নাই–
চিকচিক করে বালি আর বালি,
গেয়ে দুঃখের মৃত ভাটিয়ালি
নদী পাড়ি দেয় গরুর গাড়িতে মঙ্গাপীড়িত ‘গাড়িয়াল ভাই’!
অনুগল্প
সমর চক্রবর্তী
যথারীতি
ভুল মানুষগুলোর নির্ভুল উপস্থিতি
যেন যথার্থই অনুগত, ভালোবাসার উপমা।
এইসব লোকেরা কুয়াশার মতো
বরফের মতো লেগে থাকে বাঘের দাঁতে,
হরিণগুলো দ্যাখে স্বপ্নভাঙার আয়না;
যেন জিপসিদের জাদুঘরে গোলকধাঁধা!
তারপর
বনভূমি জুড়ে এক মহা-আড়ম্বর
পাতাঝরা গাছের মতো জীবনের ছায়া পড়ে
নদীর বুকে হিজলের ডাল যেমন ছুঁয়ে থাকে জল।
নিভে যাচ্ছে
নাসরীন জাহান
কোথাও পাখিদের ডানার শব্দ নিভে যাচ্ছে,
আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে যে শিশু জীবন্ত কবরস্থানের ওপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল,
রহম ঝরেনি আসমান থেকে।
পৃথিবীর মানুষ দিকে তাকিয়েছিল, তাকে দ্যাখেনি।
দুইশো কোটি উম্মাহ নিজেদের উল্লাসে বুঁদ!
চারপাশে ধর্ম ধর্ম তোলপাড়!
গাজার গমগাছগুলোয় এবার কোন গম ধরেনি,
প্রতিটি গমের খোসা ঝরে
রক্ত ঝরছে!
আমার ক্যান্সার আমার নয়, বিশ্বনেতাদের মগজের ভ্রুণ!
কোথাও প্রস্ফুটিত আলোগুলোর জানাজা হচ্ছে!
কোথাও আবাবিল পাখির প্রেতাত্মা উড়ে উড়ে যাচ্ছে,
কোথাও জলপাই গাছগুলো শেষচিহ্নের ডানায়
পেঁচিয়ে রেখেছে লাশের ইতিহাস!
প্রেমপুরাণ
আফরোজা চৈতী
হাজার বছর আগের আমি
প্রাগৈতিহাসিক এক শিলাখণ্ডের
প্রেমে পড়লাম!
শিলাখণ্ডের গায়ে হরফে হরফে
স্তুতির সবুজ কাব্য!
মনে পড়লো সেই যে প্রস্তর যুগে
একটুকরো পাথর জ্বেলে
প্রথম যে নারীপুরুষ আগুন জ্বেলেছিলো
তারাতো আমরাই!!
সেই অবিনশ্বর আমরা ঘুরেফিরে
হাজার বছর বাদে আবার দেখা!
শিলাখণ্ডের ওপর নুয়ে পড়া প্রাচীন গাছ আমি
কি পরম মমতায় তাকিয়ে থাকি শিলাখণ্ডের
নরম সবুজের আঁকিবুঁকিতে!
আপ্রাণ চেষ্টা করে যাই,
সেখানে হায়ারোগ্লিফিক্স প্রেমলিপিতে
বিগত দিনের অবিনশ্বর স্মৃতিকথা জানতে!!
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিটিভিতে আবার শোনা যাবে, ‘আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি...’
প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ফিরছে নতুন কুঁড়ি। গত মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজস্ব পেজে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। এই খবর শুনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়েছেন—কারও মনে পড়েছে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার স্মৃতি, কারও মনে ভেসে উঠেছে শৈশবের প্রিয় অনুষ্ঠানটির দৃশ্য। ফেসবুকে অনেকে ছবিও শেয়ার করেছেন।
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রথম প্রচারিত হয় ‘নতুন কুঁড়ি’। অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছিল কবি গোলাম মোস্তফার ‘কিশোর’ কবিতা থেকে। যার প্রথম ১৫ লাইন অনুষ্ঠানের সূচনাসংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে মোস্তফা মনোয়ারের প্রযোজনায় আবার শুরু হয় ‘নতুন কুঁড়ি’। সে সময় বিটিভির অন্যতম আলোচিত এই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে শিশু-কিশোরদের স্বপ্নের মঞ্চ। নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসা তরুণেরা গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি, গল্পবলা, কৌতুকসহ বিভিন্ন শাখায় নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পান। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চলে এ অনুষ্ঠান। পরে নানা কারণে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয় বিটিভি। ২০২০ সালে অনুষ্ঠানটি আবার শুরু করার খবর শোনা গিয়েছিল। কিন্তু পরে বলা হয়, কোভিড মহামারির কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি।
তিন দশকে নতুন অনেক তারকার জন্ম দিয়েছে নতুন কুঁড়ি। অনেকে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, নাট্যাঙ্গন ও সংগীতজগতে নিজস্ব অবস্থান গড়ে তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন তারানা হালিম, রুমানা রশিদ ঈশিতা, তারিন জাহান, মেহের আফরোজ শাওন, নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ আরও অনেকে। এ তালিকায় আছেন সামিনা চৌধুরীসহ অনেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীও।