কমিউনিটি ক্লিনিকের নাম পাল্টে ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র’ করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। মাঠপর্যায়ের কর্মীদের পদবি ও কাজের ক্ষেত্রও পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। তারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবারও একটি সংজ্ঞা ও সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন বলেছে, সংবিধানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে। দেশের সব নাগরিককে বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে আইনগতভাবে সরকার বাধ্য থাকবে। এ জন্য নতুন আইন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

৫ মে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সংজ্ঞা ও আওতা নির্ধারণ করে দিয়েছে কমিশন।

মোটাদাগে পাঁচ ধরনের সেবা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় থাকবে: যোগাযোগ সেবা; স্বাস্থ্য উন্নয়ন; সীমিত পর্যায় রোগের চিকিৎসা; পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সেবা।

তিন স্তরের সেবা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব। সব মাঠকর্মীর নাম হবে গ্রামীণ স্বাস্থ্য উন্নয়নকর্মী।

নাগরিক সংগঠন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফউদ্দীন বেননূর এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়াকে আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনার সুপারিশটি জনমুখী। প্রাথমিক স্বাস্থ্যের আওতা স্পষ্ট করেছে সংস্কার কমিশন। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগের মতো বিষয়কে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় রাখা ঠিক হবে না। এই রোগ শনাক্তে এবং চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন। এটা প্রাথমিক স্তরে করা সম্ভব নয়।

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে নামকরণের পাশাপাশি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলোর নাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রাথমিক রেফারেল স্বাস্থ্যকেন্দ্র করার প্রস্তাব করেছে কমিশন।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে ১৩ হাজার ৯২৬টি। এসব ক্লিনিক থেকে দৈনিক ছয়-সাত লাখ মানুষ সেবা নেয়। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), তিন দিন কাজ করেন স্বাস্থ্য সহকারী এবং বাকি তিন দিন কাজ করেন পরিবারকল্যাণ সহকারী। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এখন পরিচালিত হয় কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসহায়তা ট্রাস্টের আওতায়।

শুধু নাম নয়, কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে জড়িত তিন স্বাস্থ্যকর্মীর পদবি পরিবর্তনেরও সুপারিশ করেছে কমিশন। সিএইচসিপি, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী—এই তিন পদের নাম হবে একটাই, গ্রামীণ স্বাস্থ্য উন্নয়নকর্মী।

তাঁদের কাজের ক্ষেত্রও কিছুটা পরিবর্তন হবে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক মো.

সায়েদুর রহমান সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকায় সেবার দ্বৈততা আছে। একটি পরিবারে স্বাস্থ্যের কর্মী একবার সেবা দিতে যাচ্ছেন। আবার পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী সেবা দিতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আছেন সিএইচসিপি, তাঁর কাজ মূলত ওষুধ বিতরণ করা। এই তিনজনের সেবা দানের বিষয়টি সমন্বয় করার কথা ভাবছে সরকার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র আওত সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

সেই খাদিজাতুলকে জিএস প্রার্থী করে জকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের সমন্বিত প্যানেল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনে সমন্বিত প্যানেল ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। এতে জিএস পদে মনোয়ন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাইবার নিরাপত্তা মামলায় কারাগারে থাকা খাদিজাতুল কুবরাকে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং ক্যাম্পাসে পরিচিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত এই প্যানেলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’। প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়বেন ছাত্র অধিকার পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এ কে এম রাকিব। এজিএস পদে লড়বেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য আতিকুর রহমান তানজীল।

আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল ঘোষণা করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মুনতাসির মুকুল।

ঘোষিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া জিএস পদপ্রার্থী খাদিজাতুল কুবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ দেওয়া হয়েছে। এজিএস পদপ্রার্থী আতিকুর রহমান তানজীল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

সমন্বিত প্যানেলে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক পদে অনিক কুমার দাস, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে নুসরাত চৌধুরী জাফরিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মাশফিকুল ইসলাম রাইন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে আল শাহরিয়ার শাওন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে অর্ঘ্য শ্রেষ্ঠ দাস, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে অপু মুন্সী, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে তাকরিম আহমেদ ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে কামরুল হাসান নাফিজ মনোনয়ন পেয়েছেন। এ ছাড়া পরিবহন সম্পাদক পদে মাহিদ হাসান, সমাজসেবা ও শিক্ষার্থীকল্যাণ সম্পাদক পদে আনন বিন রহমান এবং পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক পদে রিয়াসাল রাকিব মনোনয়ন পেয়েছেন।

এ ছাড়া সাতটি সদস্য পদের মধ্যে ছয়টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আরেকটি সদস্যপদের প্রার্থী পরবর্তী সময়ে ঘোষণা করা হবে। সদস্য পদে লড়বেন ইমরান হাসান ইমন, সাদমান সাম্য, সুলতান মাহমুদ শুভ, মনিরুজ্জামান মনির, তৌহিদুল ইসলাম তানিম ও আরিফুল ইসলাম আরিফ।

প্যানেল ঘোষণার পর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সব অধিকার বাস্তবায়নে আমাদের এই প্যানেলে যে নাম ঘোষণা করলাম, সেই মনোনীত সদস্যরা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে প্রচেষ্টা চালাবে। আমরা যাদের প্যানেলে রেখেছি, বিগত সময়ে তারা শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ, আন্দোলনসহ সকল কর্মকাণ্ডে মেধা-মনন দিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীরা তাদের মূল্যায়ন করবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২২ ডিসেম্বর। কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের পাশাপাশি একই দিন একটি ছাত্রী হল সংসদের নির্বাচনও হবে। ফলাফল ঘোষণা হবে ২২-২৩ ডিসেম্বর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ