নিউজিল্যান্ড বলতে আমাদের অনেকের তুষারঢাকা পর্বতের পেছনে সবুজ মাঠে ঘুরে বেড়ানো ভেড়ার ছবি বা চলচ্চিত্র সিরিজ ‘লর্ড অব দ্য রিংস’–এর কথা মনে পড়ে। প্রশান্ত মহাসাগরের দেশটি অনেকাংশে এখনো তা–ই। দেশটিতে এখনো মানুষের চেয়ে ভেড়ার সংখ্যা বেশি। তবে মানুষ ও ভেড়ার ব্যবধান কমতে শুরু করেছে।
সাম্প্রতিক সরকারি তথ্য বলছে, নিউজিল্যান্ডে বর্তমানে ভেড়ার সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৩৬ লাখ। মানুষের সংখ্যা ৫৩ লাখের মতো। মানে, গড়ে প্রত্যেক নিউজিল্যান্ডবাসীর জন্য এখনো ৪ দশমিক ৫টি করে ভেড়া আছে। তবে একসময় তা অনেক বেশি ছিল।
সময়টা ছিল ১৯৮২ সাল। তখন একেকজন মানুষের বিপরীতে ভেড়া ছিল ২২টি। ভেড়া পালন, বিশেষ করে পশম ও মাংস রপ্তানি ছিল দেশটির অর্থনীতির প্রধান ভরসা। তখন সাত কোটির বেশি ভেড়ার বিপরীতে মাত্র ৩২ লাখ মানুষ হওয়ায় অনেকে দেশটিকে বিশাল খামার বলে মজা করতেন।
কিন্তু সময় বদলেছে। বদলেছে মানুষের চাহিদাও। সারা বিশ্বে পশমের দাম পড়ে গেছে। কৃত্রিম তন্তুর (সিনথেটিক ফাইবার) চাহিদা বেড়েছে। নিউজিল্যান্ডেও এসবের প্রভাব পড়েছে। তাই দেশটির একসময়ের ‘সাদা সোনা’ এখন আর ততটা দামে কেউ কেনে না। ফলে অনেক খামারিই ভেড়া ছেড়ে অন্যদিকে ঝুঁকছেন। এখন দেশটির প্রধান রপ্তানি খাত হয়ে উঠেছে দুগ্ধজাত পণ্য ও ফুল-ফল-সবজির চাষ।
ভেড়ার সংখ্যা কমে যাওয়া ঠেকাতে নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে নিউজিল্যান্ড সরকার। ২০২৪ সালে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে কার্বন ফরেস্ট্রি (জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বনায়ন) সীমিত করার জন্য জমির ব্যবহারে নতুন নিয়ম আসছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সরকারি ভবনে স্থানীয় পশমজাত পণ্য ব্যবহারের নির্দেশনা চালু হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞের মতে এসব উদ্যোগ খুব একটা ফলপ্রসূ না–ও হতে পারে।
শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ায়ও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই দেশেও মানুষের চেয়ে ভেড়া বেশি। তবে সেখানেও ভেড়ার সংখ্যা কমছে। অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে মাথাপিছু নাগরিকের জন্য প্রায় তিনটি ভেড়া আছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চারদিন পর কাপ্তাই হ্রদে স্পিডবোট চলাচল শুরু
চারদিন বন্ধ থাকার পর রাঙামাটি জেলা সদর থেকে কাপ্তাই হ্রদ হয়ে বিভিন্ন উপজেলায় স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়েছে।
শনিবার (১০ মে) সকালে শহরের ফিসারী ঘাট থেকে আবারও আগের মত স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়।
এর আগে গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন (নৌরুট, পারমিট, সময়সূচি ও ভাড়া নির্ধারণ) বিধিমালা, ২০১৯ এর বিধি ২৭ মোতাবেক স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনের জন্য কিলোমিটার প্রতি এবং নৌরুট ভিত্তিক যাত্রীভাড়া নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। যেখানে রাঙামাটি-মারিশ্যা রুটে জনপ্রতি ৮০০ টাকা, রাঙামাটি-মাইনি রুটে জনপ্রতি ৪৫০ টাকা, রাঙামাটি জুরাছড়ি রুটে জনপ্রতি ৩২০ টাকা এবং রাঙামাটি বরকল রুটে জনপ্রতি ৩৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
স্পিডবোট মালিকপক্ষ জানায়, নতুন ভাড়ার হার নির্ধারণে রাঙামাটি থেকে মাইনির দূরত্ব সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়নি। তাদের দাবি রাঙামাটি থেকে মাইনির নৌপথে দূরত্ব কমপক্ষে ৭০ কিলোমিটার। যেখানে নতুন ভাড়া নির্ধারণে দূরত্ব বিবেচনা করা হয়েছে ৪৬.২৫ কিলোমিটার। নতুন ভাড়ায় স্পিডবোট চালালে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এবং পুরনো ভাড়ায় চালিয়ে যাত্রীদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে বিধায় তারা মঙ্গলবার (৬ মে) থেকে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখেন।
শুক্রবার (৯ মে) রাতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এ নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পাঠান মো. সাইফুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিআইডব্লিউটিএ-এর টিআই মো. জাহিদুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিএ-এর ট্রাফিক সুপার ভাইজার মো. আকবর হোসেন, স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কুদ্দুছসহ সমিতির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ভাড়ার হার নতুনভাবে বিবেচনার আশ্বাসে আজ (শনিবার) থেকে স্পিডবোট চলাচলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পার্বত্য স্পিডবোট মালিক সমিতির লাইনম্যান মো. মহিউদ্দিন জানান, আজ (শনিবার) সকালে আমাদের কাউন্টার থেকে মাইনির উদ্দেশ্যে স্পিডবোট ছেড়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে ৭-৮টি বোট ছেড়ে গেছে। জনপ্রতি ভাড়া আগের মত ৬৫০ টাকা রাখা হচ্ছে।
চারদিন পর স্পিডবোট চলাচল শুরু হওয়াতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। মাইনিগামী যাত্রী সুশোভন চাকমা বলেন, “গ্রীষ্মকালে হ্রদের পানি শুকিয়ে গেছে। ফলে বড় লঞ্চগুলো চলাচল করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। স্পিডবোটগুলো ভালোভাবে চলাচল করতে পারে, পাশাপাশি সময়ও বাঁচে। আবার যে স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়েছে এতে আমরা খুশি। তবে ভাড়া পুর্নবিবেচনা করা যেতে পারে।”
পার্বত্য স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, “গতরাতে জেলা প্রশাসনের সভায় ভাড়া নিয়ে আবারও আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের অসুবিধার কথা জানিয়েছি। প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তারা ভাড়ার বিষয়টা পুনঃবিবেচনা করবেন। তাই আজ সকাল থেকে পূর্বের ভাড়ায় স্পিডবোট চলাচল শুরু করেছি আমরা।”
ঢাকা/শংকর/টিপু