গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের নজরুল ইসলাম (৬৫) মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি মায়ের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। অসুস্থ মায়ের গোসল করানো থেকে শুরু করে প্রস্রাব–পায়খানা পরিষ্কার, খাওয়ানো— সবকিছুই করেছেন নিজ হাতে। ২০১৭ সালে মা মারা যাওয়ার পর নিজের জীবন উৎসর্গ করেন অসুস্থ, অসহায় ও বৃদ্ধ বাবা–মায়েদের সেবায়। 

মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে জন্ম নেয় ‘মা–বাবার সেবাকেন্দ্র’। এ কেন্দ্রের মাধ্যমে তিনি আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়ান প্রায় ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে সঙ্গে নিয়ে। সেবাদান কার্যক্রমে তিনি নিজের উপার্জন এবং বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ ব্যয় করছেন।

বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে রবিবার (১১ মে) নান্দিয়া সাঙ্গুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত ফ্রি চিকিৎসাসেবাকেন্দ্রে ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিভিন্ন বয়সী রোগীদের সেবা দিয়েছেন। চিকিৎসা পেয়েছেন অন্তত ৩ হাজার মানুষ। বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে ওষুধও।

নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, নাটোর, নেত্রকোনা, গফরগাঁও, নরসিংদী, শেরপুর, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১০ হাজার বৃদ্ধ বাবা–মাকে সেবা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ ঘরছাড়া ছিলেন, কেউ অতি মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিলেন। চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, “মায়ের মৃত্যুর পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম— এই দেশের আর কোনো বৃদ্ধ বাবা–মা অবহেলার শিকার হবেন না, যতটুকু পারি পাশে থাকব। এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার বৃদ্ধ মা–বাবার সেবা করতে পেরেছি।”

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, “নজরুল ভাইয়ের কাজ দেখে আমিও মায়ের সেবায় মনোনিবেশ করেছি। তিনি শুধু আমাদের গ্রামের নয়, সারা দেশের অনুপ্রেরণা।”

মাওনার আলহেরা হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো.

আফজাল হোসেন জানান, নজরুল ইসলামের এই মহৎ উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে মা দিবসে আয়োজন করা হয় ফ্রি চিকিৎসাসেবার। এতে মেডিসিন, গাইনি, শিশু, কিডনি, বক্ষব্যাধীসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা সেবা দেন। 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, “নজরুল ইসলাম যে কাজ করছেন, তা সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তার কাজকে অব্যাহত রাখতে সরকারি সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে।”
 

ঢাকা/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নজর ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বিটিভিতে আবার শোনা যাবে, ‘আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি...’

প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ বিরতির পর আবারও ফিরছে নতুন কুঁড়ি। গত মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজস্ব পেজে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। এই খবর শুনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়েছেন—কারও মনে পড়েছে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার স্মৃতি, কারও মনে ভেসে উঠেছে শৈশবের প্রিয় অনুষ্ঠানটির দৃশ্য। ফেসবুকে অনেকে ছবিও শেয়ার করেছেন।
১৯৬৬ সালে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রথম প্রচারিত হয় ‘নতুন কুঁড়ি’। অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছিল কবি গোলাম মোস্তফার ‘কিশোর’ কবিতা থেকে। যার প্রথম ১৫ লাইন অনুষ্ঠানের সূচনাসংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে মোস্তফা মনোয়ারের প্রযোজনায় আবার শুরু হয় ‘নতুন কুঁড়ি’। সে সময় বিটিভির অন্যতম আলোচিত এই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে শিশু-কিশোরদের স্বপ্নের মঞ্চ। নানা প্রান্ত থেকে উঠে আসা তরুণেরা গান, নাচ, অভিনয়, আবৃত্তি, গল্পবলা, কৌতুকসহ বিভিন্ন শাখায় নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পান। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চলে এ অনুষ্ঠান। পরে নানা কারণে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয় বিটিভি। ২০২০ সালে অনুষ্ঠানটি আবার শুরু করার খবর শোনা গিয়েছিল। কিন্তু পরে বলা হয়, কোভিড মহামারির কারণে সেটা আর সম্ভব হয়নি।
তিন দশকে নতুন অনেক তারকার জন্ম দিয়েছে নতুন কুঁড়ি। অনেকে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, নাট্যাঙ্গন ও সংগীতজগতে নিজস্ব অবস্থান গড়ে তুলেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন তারানা হালিম, রুমানা রশিদ ঈশিতা, তারিন জাহান, মেহের আফরোজ শাওন, নুসরাত ইমরোজ তিশাসহ আরও অনেকে। এ তালিকায় আছেন সামিনা চৌধুরীসহ অনেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীও।

নতুন কুঁড়ির এ ছবিটি অভিনেত্রী শাওন ফেসবুকে শেয়ার করেছেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ