গ্রাহকদের দ্রুত, নিরাপদ ও সার্বক্ষণিক নিরবচ্ছিন্ন কার্ড লেনদেনের সুবিধা দিতে নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ বাস্তবায়ন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এই সুইচ বাস্তবায়নের ফলে ডেবিট, ক্রেডিট, প্রিপেইড বা ভার্চ্যুয়াল কার্ডে লেনদেন আরও নির্ভরযোগ্য হবে। তৃতীয় পক্ষের সহযোগিতা ছাড়া স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

এ ছাড়া নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ চালুর মাধ্যমে লেনদেনের তথ্য অধিকতর সুরক্ষিত থাকবে। সেই সঙ্গে ব্যাংক ও গ্রাহকের খরচ সাশ্রয় হবে এবং ব্যাংক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কম সময়ের মধ্যে কার্ড ইস্যু ও প্রক্রিয়াকরণ করতে পারবে। খবর বিজ্ঞপ্তি।

সোনালী ব্যাংকের কার্ড ব্যবহারের মাশুল দেশের অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় সাশ্রয়ী। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের প্রায় ১৪ লাখ ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক আছে। এত দিন গ্রাহকদের এসব সেবা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিচালনা করা হতো। এতে ব্যাংকের কার্ড সেবা দিতে সময় বেশি লাগত এবং খরচও হতো বেশি। এখন নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ চালুর মাধ্যমে সময় ও খরচ কমে যাবে এবং গ্রাহককে কম সময়ে কার্ড সেবা দিতে পারবে ব্যাংক।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

শওকত আলী খান বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ বাস্তবায়ন করেছি। ফলে আমাদের গ্রাহকেরা খুব সহজেই অতি দ্রুত ও নিরাপদ কার্ড সেবা পাবেন। এই পেমেন্ট সুইচ গ্রাহকসেবায় যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে।’

মো. শওকত আলী খান আরও বলেন, ডিজিটালাইজেশন ব্যাংকিং খাতকে আরও উন্নত, নিরাপদ, টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। তাই এমন গ্রাহকবান্ধব নিজস্ব ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, যাতে গ্রাহক ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড ও বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে দ্রুত লেনদেন করতে পারেন। তা ছাড়া গ্রাহককে তাঁর চাহিদা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্ড দেওয়া যাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ ছাড়া গ্রাহকদের ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সারা দেশে এটিএম বুথ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ বছর বিভিন্ন স্থানে আরও ১৫৫টি এটিএম বুথ স্থাপন করা হচ্ছে। ২০২৩ সাল থেকে চালু হওয়া বাংলা কিউআর কোড ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে নগদবিহীন লেনদেনে অগ্রগতি হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র হক ল নদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শওকত ওসমান: অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর

বাংলা সাহিত্যে এমন অনেক নাম আছে, যারা সময়কে ছাপিয়ে গিয়ে হয়ে উঠেছেন চিরন্তন। তাদের মধ্যে শওকত ওসমান ছিলেন এমন এক বিরল ব্যক্তিত্ব, যিনি শুধু সাহিত্যিক নন, ছিলেন দার্শনিক, সমাজ-সমালোচক এবং প্রতিবাদী চেতনার এক জ্যোতিষ্ক। সাহিত্যের অঙ্গনে তিনি বিপ্লব এনেছিলেন কলমের মাধ্যমে, আর নৈতিক অবস্থানে ছিলেন আপসহীন।

তাঁর লেখনীতে যেমন ছিল ভাষার কারুকার্য, তেমনি ছিল সত্য বলার সাহস, সমাজের গভীর অসুখ নির্ণয়ের ক্ষমতা। তিনি ছিলেন নিপীড়িতের কণ্ঠস্বর, ধর্মান্ধতা ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক অটল মেধাবী যোদ্ধা।

শওকত ওসমানের জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি, পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সবলসিংহপুর গ্রামে। প্রকৃত নাম শেখ আজিজুর রহমান। স্কুলজীবনে সংস্কৃত ভাষায় দক্ষতা, পরবর্তী সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ এবং পরে পূর্ববঙ্গে চলে আসার মাধ্যমে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়।

দেশভাগ, দাঙ্গা, অভিবাসন এবং এক নতুন রাষ্ট্রের জন্ম–এই জটিল ইতিহাসের মধ্যে তিনি নিজেকে নির্মাণ করেছেন। তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনের শেষ সময়ে, পূর্ণতা পায় পাকিস্তান আমলের শোষণ ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে এবং অগ্নিস্নাত মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের আশা-নৈরাশ্যের দ্বন্দ্বে।

শওকত ওসমানের সাহিত্যচর্চা ছিল বহুমাত্রিক। উপন্যাস, গল্প, নাটক, রম্যরচনা, প্রবন্ধ–প্রতিটি শাখায় তিনি রেখেছেন উজ্জ্বল স্বাক্ষর। তাঁর লেখার কেন্দ্রে ছিল মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক, শোষণের রূপ, নৈতিক সংকট এবং মানবিক প্রতিরোধ। লেখনীতে তিনি রাজনৈতিক বন্দির মনোজগৎ ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের করালচিত্র তুলে ধরেন। লেখক শুধু একজন সাহিত্যিক নন–একজন অন্তর্দর্শী সমাজবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও মনোবিদ।

 ‘ক্রীতদাসের হাসি’ (১৯৬২) উপন্যাসে পাকিস্তান রাষ্ট্রের দমননীতি ও ভণ্ড রাজনীতির বিরুদ্ধে রূপকের আশ্রয়ে রচনা করেন এক অসাধারণ প্রতিরোধ-সাহিত্য। একজন ভাঁড়কে কেন্দ্রে রেখে লেখা হলেও এটি একটি রাষ্ট্র ও জাতিসত্তার গল্প; যেখানে প্রতিটি বাক্য হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ছুরি।

শওকত ওসমানের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল স্পষ্ট–তিনি ছিলেন অস্তিত্ববাদ ও মানবতাবাদের সমর্থক। তাঁর চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মানুষ এবং মানুষের নৈতিক বোধ।

তিনি বারবার বলেছেন, ‘সাহিত্য শুধু বিনোদন নয়, এটা সমাজের আয়না এবং বিবেক। লেখকের দায়িত্ব সত্যকে নির্ভীকভাবে তুলে ধরা।’ পাকিস্তানি সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ‘ক্রীতদাসের হাসি’ একটি তির্যক প্রতিবাদ। তিনি ছিলেন আপসহীন। তাঁর লেখনীতে বারবার ফুটে উঠেছে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহতা, ধর্মান্ধতার হুমকি এবং চিন্তার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় শওকত ওসমান কলকাতা থেকে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। তাঁর লেখা কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক ও ভাষণ প্রচারিত হয়েছে দেশের অভ্যন্তরে ও সীমান্তে। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা শুধু একটি রাষ্ট্রের জন্ম নয়, এটি একটি মানবিক বোধের জয়। যারা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য জীবন দেয়, তাদের পথ চিরকাল আলোকময়।’

বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২), একুশে পদক (১৯৮৩) এবং স্বাধীনতা পদক (১৯৯৭) প্রাপ্ত শওকত ওসমান প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিকে অতিক্রম করে গেছেন পাঠকের চেতনায়।

যখন চিন্তার স্বাধীনতা সংকুচিত, যখন সাহিত্যকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রলেপ দেওয়ার অস্ত্র হিসেবে, তখন শওকত ওসমান হয়ে ওঠেন আমাদের বিবেক, সাহস এবং নৈতিকতার শিক্ষক। তাঁর কলম যেমন সময়ের সঙ্গে কথা বলেছে, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য রেখে গেছে প্রশ্ন ও নির্দেশনা।তাঁকে স্মরণ করা মানে শুধু একজন লেখককে স্মরণ করা নয়; বরং সত্যের পক্ষ, মানবতার পক্ষ এবং চিন্তার মুক্তির পক্ষে দাঁড়ানো। শওকত ওসমান আজও বলেন, ‘লেখক যদি না জাগে, জাতি ঘুমিয়ে থাকে।’

 

অধ্যাপক ড. দিপু সিদ্দিকী: ডিন, কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ, রয়্যাল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা; সাধারণ সম্পাদক, শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ

 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বাহে আছ, দরজাটা খোলো’
  • শওকত ওসমান: অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর
  • আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধার অভিযোগের মামলায় আসামি অন্তঃসত্ত্বা নারী ও সাংবাদিক
  • আইভীকে গ্রেপ্তারে বাধার ঘটনায় মামলা, ‘ফুড ভ্লগার’ মিথুনসহ গ্রেপ্তার ৩
  • ‘ফুড ভ্লগার’ মিথুনসহ গ্রেপ্তার ৩
  • বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্ব ১৭ মে