আওয়ামী লীগের পুড়িয়ে দেওয়া কার্যালয়ে ‘জুলাই যোদ্ধা’দের সাইনবোর্ড
Published: 14th, May 2025 GMT
ঠাকুরগাঁওয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুড়িয়ে দেওয়ার পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। আজ বুধবার দুপুরে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ওই কার্যালয়ে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামের একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ঠাকুরগাঁও শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশের খাস জমিতে কার্যালয় স্থাপন করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচনে সরকার গঠনের পর সেখানে তিনতলা কার্যালয় নির্মাণ করা হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট স্থানীয় কয়েকজন নেতার বাড়িঘরের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের আসবাব ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেই থেকে পোড়া অবস্থাতেই পড়ে ছিল কার্যালয়টি।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আজ দুপুরে হঠাৎ একদল যুবক এসে কার্যালয়টিতে অবস্থান নেন। পরে তাঁরা শ্রমিক নিয়োগ করে কার্যালয়টিতে পড়ে থাকা আসবাবের পোড়া অংশ, ছাই, জানালার ভাঙা কাচ ও ময়লা অপসারণের কাজ শুরু করেন। পরে তাঁরা কার্যালয়ের দেয়ালে ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিনতলা ওই ভবনের নিচতলায় দোকানপাট। দোতলার বারান্দার গ্রিলে সাঁটানো হয়েছে পিভিসির সাইনবোর্ড। তাতে লেখা ‘জুলাই যোদ্ধা, ঠাকুরগাঁও’। ভবনের একপাশে তখনো আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পুড়ে যাওয়া সাইনবোর্ডটি ঝুলছিল। ভবনের ভেতরে চলছে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ। তিনতলায় জনা দশেক তরুণ–যুবককে দেখা গেল। তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন।
সে সময় নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধার’ আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে রায়হান অপু নামের এক যুবক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি খাস জমিতে অবস্থিত। আওয়ামী লীগ জায়গাটি দখল করে সেখানে দলীয় কার্যালয় তৈরি করে। গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে কার্যালয়টি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন ছাত্র-জনতা। এর পর থেকে ওই কার্যালয় পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ এর মধ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে।
আরও পড়ুনসমালোচনার মুখে আ.লীগ কার্যালয় থেকে সরানো হলো চর উন্নয়ন কমিটির সাইনবোর্ড২১ ঘণ্টা আগে
রায়হান অপু বলেন, ‘আমরা যাঁরা জুলাই-আগস্টের ওই অভ্যুত্থানে আহত হয়েছি, তাঁদের সংগঠন জুলাই যোদ্ধা এখন থেকে সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের এই কার্যালয় ব্যবহার করতে সাইনবোর্ড লাগিয়েছি। এখানে একটি যুব ক্লাব গড়ে তোলা হবে। সেই ক্লাবের অধীনে একটি জিমনেসিয়ামও থাকবে। সেখানে এলাকার সব যুবক অংশ নিতে পারবেন।’
হাসান আলী নামের এক যুবক নিজের জুলাই যোদ্ধার স্বাস্থ্য কার্ডটি এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরা সবাই অভ্যুত্থানে আহত হয়েছি। আহত ব্যক্তিদের নিয়ে জুলাই যোদ্ধা সংগঠন গড়ে তোলা হয়েছে। আজ থেকে এই ভবনে আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হবে। সে জন্য রাতে ভোজের আয়োজন করা হয়েছে। সেই ভোজে সব সাংবাদিকদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। ভোজের মাধ্যমেই আমাদের যাত্রা শুরুর বিষয়টি জানান দেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠাকুরগাঁওয়ের এক আইনজীবী বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি খাস জমিটি বন্দোবস্ত পায়। এখন এই সরকারি জায়গায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়াকে দখল বলা যেতেই পারে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলেও বন্দোবস্ত তো আর বাতিল করা হয়নি। কোনো সংগঠন সেই কার্যালয়ের অবকাঠামো ব্যবহার করতে হলে সরকারের কাছ থেকে বৈধ প্রক্রিয়ায় বন্দোবস্ত নিতে হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
আরও পড়ুনচরফ্যাশনে এনসিপির ব্যানার টাঙানো আওয়ামী লীগের সেই কার্যালয়ের সংস্কার চলছে১২ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স ইনব র ড ক র য লয়ট ঠ ক রগ স গঠন গঠন র সরক র আওয় ম অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক সেনা সদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছে সেনাবাহিনী
সাবেক সেনা সদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে ধৈর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাহিনীর পক্ষ থেকে।
বুধবার (১৪ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার গৌরবময় ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের পেশাদারিত্ব, নিরলস পরিশ্রম এবং শৃঙ্খলার মাধ্যমে অর্জন করেছে। এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের প্রশ্নাতীত আনুগত্য, সততা ও আত্মত্যাগই আজকের এই সাফল্যের মূল ভিত্তি। সামরিক শৃঙ্খলা একটি পেশাদার সেনাবাহিনীর মূল চালিকাশক্তি। সামরিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযোগ্য পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানের বিধান রয়েছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে ডিপ্লোমা-বিএসসি নার্সিং শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ১০
যেসব নম্বরে ফোন করলে মিলবে সেনাবাহিনীর সহায়তা
আইএসপিআর আরো জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে কতিপয় সাবেক সেনা সদস্যের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কিছু আবেদন উত্থাপিত হয়েছে যা সেনাসদর সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। মানবিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এসব আবেদনগুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে সেনা সদরে উচ্চপর্যায়ের একটি পর্ষদ গঠিত হয়েছে এবং এই পর্ষদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অদ্যাবধি, এ সংক্রান্ত মোট ৮০২টি আবেদন গৃহীত হয়েছে, যার মধ্যে ১০৬টি আবেদন চূড়ান্ত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ৬৯৬টি আবেদন পর্যায়ক্রমে যাচাই-বাছাই এবং মূল্যায়ন সাপেক্ষে নিষ্পত্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হলেও সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং দায়িত্ববোধের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সব সদস্যদের অবদান অনস্বীকার্য এবং জাতি তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সাবেক সেনা সদস্যদের প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও ন্যায্য দাবিসমূহের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বাস করে—পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে চলার মাধ্যমেই প্রতিটি সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব। এ ব্যাপারে যেকোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে, যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও সহনশীলতা বজায় রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা/হাসান/সাইফ