কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতি কর্মসূচিতে আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন দেশের আমদানি বাণিজ্যসহ রাজস্ব খাতের কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও যশোরের বেনাপোলসহ দেশের প্রায় সব কাস্টম হাউসের পাশাপাশি শুল্ক-কর কার্যালয়গুলোতে এদিন কাজ হয়নি বললেই চলে। ফলে আমদানি–সংক্রান্ত ব্যবসা-বাণিজ্যে ভোগান্তি বেড়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে ক্যাডার ও নন–ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে রাজস্ব খাতে কলমবিরতি কর্মসূচি চলছে। দ্বিতীয় দিনে আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কলমবিরতি পালন করা হয়। আগামীকাল শনিবারও সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত একই কর্মসূচি পালন করা হবে। ঈদের ছুটি সমন্বয় করার জন্য সরকারি নির্দেশে শনিবার সব অফিস খোলা থাকবে। সে জন্য রাজস্ব কর্মকর্তা–কর্মচারীরা শনিবারও কলমবিরতি পালন করবেন।

তিন দফা দাবি

আজ বিকেলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা এক সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো রাজস্ব অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল; এনবিআর সংস্কারসংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ এবং এনবিআর, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতাসহ সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার করা।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আগামী শনিবার কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিন নতুন কর্মসূচি দেবে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত কর কমিশনার সিফাত ই মরিয়ম, উপ–কর কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান।

• তিন দফা দাবি এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের।
• চট্টগ্রাম বন্দরে দিনভর অচলাবস্থা।
• বেনাপোল স্থলবন্দরে দুপুর পর্যন্ত ভারতীয় ট্রাক আসেনি।

সারা দেশের কাস্টমস, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়গুলোয় তিন দিন কলমবিরতির সময় আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, বাজেট ও রপ্তানি—এ তিন ধরনের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।

গত সোমবার রাতে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে নতুন দুটি বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের সব কর অঞ্চল, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত মঙ্গলবার কলমবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

ঢাকায় তিনটা পর্যন্ত কাজ হয়নি

সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকায় আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনসহ কাস্টমস, ভ্যাট ও শুল্ক কার্যালয়ে কোনো কাজ হয়নি। বিমানবন্দর এলাকার ঢাকা কাস্টম হাউসে সকাল থেকে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ ছাড়া ঢাকা কর অঞ্চল-২, ১০, ১৬ ও ২৪ এবং মুন্সিগঞ্জসহ রাজধানীর আশপাশের শুল্ক, ভ্যাট ও কর কার্যালয়ে কোনো কাজ হয়নি।

বেলা দুইটার দিকে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বার্তা পাঠিয়ে জানান, এনবিআর চেয়ারম্যান এসব ইস্যুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু তিনি কথা বলেননি। এনবিআর চেয়ারম্যান সোয়া চারটার দিকে সাংবাদিকদের পাশ কাটিয়ে চলে যান। এদিকে আজ দুপুরের পর থেকে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে বহিরাগত ব্যক্তিদের আনাগোনা দেখা যায়।

চট্টগ্রাম বন্দরে দিনভর অচলাবস্থা

প্রথম আলোর চট্টগ্রাম অফিস জানায়, কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলমবিরতির কারণে আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি–সংক্রান্ত সেবা বন্ধ ছিল। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন, পরীক্ষণ ও খালাস কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

এই কর্মসূচির আগে সকাল ছয়টা থেকে কনটেইনারবাহী গাড়িচালক-শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন। অর্থাৎ দিনভর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন কার্যত বন্ধ ছিল।

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার-ট্রেইলার, কংক্রিট মিক্সার, ফ্ল্যাট বেড, ডাম্প ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম খান ও দুই শ্রমিককে পাহাড়তলী থানায় নিয়ে মারধরের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে চারটায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে প্রাইম মুভার-ট্রেইলারচালক ও শ্রমিকেরা। এরপর সাড়ে ছয়টার দিকে বন্দর ও ডিপো থেকে কনটেইনার আনা-নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।

শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি হুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বেনাপোলে দুপুর পর্যন্ত ভারতীয় ট্রাক আসেনি

প্রথম আলোর যশোর অফিস জানায়, যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের কলমবিরতির কারণে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ফলে দুপুর পর্যন্ত ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা ট্রাকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫০।

আজ বৃহস্পতিবার বেনাপোল স্থলবন্দরে কোনো ধরনের কার্যক্রম হয়নি। সকাল ৯টা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশই কার্যালয়ে বসেননি। বেলা ৩টার পর সীমিত পরিসরে কাজ শুরু হয়।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো.

কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পণ্যের যাতে কোনো জট না থাকে, সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে ৪০০-৪৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়। কর্মদিবসের ছয় ঘণ্টা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে তো পণ্যের জট হবেই।

এদিকে সিলেট, রংপুর, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শুল্ক ও কর কার্যালয়গুলোতেও আজ কলমবিরতি কর্মসূচি পালিত হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত প রথম আল ক জ হয়ন ব যবস আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আজ যারা উপহাস করে, ভবিষ্যতে তারাই ভক্ত: আরশ খান

ক্যারিয়ারে বারবার হোঁচট খেয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেতা আরশ খান। অনেকের উপহাসের পাত্রও হয়েছে। তবুও থেমে থাকেননি। নিজেকে গড়তে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। সেই চেষ্টা এখনও চলমান। সম্প্রতি কিছু ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে কটাক্ষের শিকার হচ্ছেন তিনি। তবে এগুলো মাথায় না নিয়ে ছুটে চলছেন আপন গতিতে।

এসবের মাঝে আজ সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন আরশ। সেখানে উপহাসের কথা বলেছেন তিনি। উদাহরণস্বরূপ টেনেছেন শাকিব খানকে। অন্য কারও উদাহরণ না দিয়ে নিজের সঙ্গেই উদারণ দিয়ে একরকম শিক্ষার বানী শুনিয়েছেন আরশ।

তিনি লিখেছেন, ‘উপহাসে আমার এখন আর খারাপ লাগেনা, কষ্ট হয় না। কারণ, শাকিব খান নামটা শুনলে এক সময় মজা করা আমি আজ লাইনে দাঁড়িয়ে তার সিনেমার টিকিট কাটি।’

শেষে অভিনেতা লিখেছেন, ‘মনে রাখবেন, আজ যারা আপনাকে নিয়ে উপহাসের হাসি হাসে, ভবিষ্যতে তারাই আপনার ভক্ত।’

এর আগে গেল বছর মুক্তি পাওয়া শাকিব খানের ‘রাজকুমার’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন আরশ খন। এখানে তিনি ছিলেন শাকিব খানের বাবা আব্দুল গনি চরিত্রে (ছোটবেলার)। এই সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন আরশ খান।

প্রসঙ্গত, গেল মাসেই একটি অনুষ্ঠানে নিজের কঠিন সময়ের কথা বলতে গিয়ে শাকিব খান বলেন, ‘এই চলচ্চিত্র (জগৎ) সত্যি অনেক রং দেখিয়েছে। একসময় যখন সত্যিই খুব হতাশ হয়ে যেতাম। ভাবতাম, সত্যিই হয়তো বা আমাকে দিয়ে আর কিছু হবে না। আপনাদের হয়তো কারও কারও মনে থাকতে পারে, কিছুদিন আগে আমেরিকা থেকে যখন এসেছি কিছু কারণে অনেক কাছের মানুষকেও বলতে শুনেছি, “তোমার দিন শেষ শাকিব, ইউ আর ডেড হর্স।” নিজের চেনা মুখগুলোকেই পাল্টে যেতে দেখেছি। অবাক হয়েছি, দুঃখিত হয়েছি। ভেবেছি হয়তো এখানেই শেষ। ইতি টানতে হবে। আবার ভেবেছি, যাওয়ার আগে একটা ট্রাই (চেষ্টা) তো করে যাই। এত বছর ধরে মানুষ আমাকে এত ভালোবাসল, একটা ট্রাই করে যাই। না হলে ছেড়ে দেব, ছেড়ে দেব চলচ্চিত্র। শূন্য হাতে এসেছিলাম, যা পেয়েছি তা অনেক।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ