কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করেছেন। এবারের মন্ত্রিসভা নতুন পুরাতনের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। এই মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব পেয়েছেন দেশটির অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ অনিতা আনন্দ। ৫৮ বছর বয়সী এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জলি পেয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। 

ব্যক্তিগত জীবনে অনিতা আনন্দ হিন্দু ধর্মের অনুসারী। মঙ্গলবার যখন তিনি শপথ নেন, সে সময় তার হাতে ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গীতা। কানাডার ইতিহাসে অনিতা আনন্দই প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী রাজনীতিবিদ, যিনি মন্ত্রিসভার টিকিট পেয়েছেন। ২০১৯ সালে প্রথমবার কানাডার মন্ত্রিসভায় প্রবেশ করেন তিনি।

মন্ত্রিসভায় মার্ক কার্নিসহ মোট সদস্য সংখ্যা ২৯ জন। এছাড়া ‘সেক্রেটারি অফ স্টেট’ নামে আরও ১০ জনকে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁর মন্ত্রিসভায় ২৮ জনের মধ্যে ২৪ জনই নতুন মুখ। এর মধ্যে ১৩ জন প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। 

অনিতা যে এবারই প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য হলেন, এমন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন তিনি। সর্বশেষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন।

শপথগ্রহণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে অনিতা বলেন, কানাডার পররষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমাকে মনোনীত করায় আমি সম্মানিত। কানাডীয়দের জন্য একটি নিরাপদ ও অনুকূল বিশ্বের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর মার্ক কার্নির নেতৃত্বে কাজ করব।

কানাডার অন্টারিও রাজ্যের ওকভিল থেকে নির্বাচিত অনিতা আনন্দের জন্ম দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নোভা স্কটিয়াতে, ১৯৬৭ সালের ২০ মে। তার মা সরোজ ডি রাম পাঞ্জাব এবং বাবা এসভি আনন্দ তামিলনাড়ুর বাসিন্দা ছিলেন। গত শতকের ষাটের দশকের প্রথম দিকে তারা কানাডায় বসবাস শুরু করেন। 

১৯৮৫ সালে অনিতার বয়স যখন ১৮ বছর, সে সময় তার বাবা-মা নোভা স্কটিয়া থেকে অন্টারিওতে গিয়ে স্থায়ী হন। অন্টারিও’র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি নেন অনিতা। এরপর কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয় এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৯৫ সালে কানাডার আইনজীবী ও ব্যবসায়ী জন নলটনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন অনিতা। এই দম্পতির চার সন্তান। সন্তানদের নিয়ে ওকভিলেই বসবাস করছেন অনিতা-জন দম্পতি। 

প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির মন্ত্রিসভার মূল উদ্দেশ্য শক্তিশালী কানাডা গঠন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ট্যারিফ যুদ্ধের মোকাবিলা করা। মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি নতুনদেরও রেখেছেন মার্ক কার্নি। তিনি মনে করেন, কানাডার চ্যালেঞ্জের এই মুহূর্তে অভিজ্ঞদের খুব দরকার। এর মধ্যে ফ্রান্সোইস-ফিলিপি চামপেন অর্থমন্ত্রী, মিলানী জলি শিল্পমন্ত্রী, অনিতা আনন্দ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডমিনিক লি ব্লানক ইন্টার গভর্নমেন্টাল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী। এই চার মন্ত্রণালয়ে তিনি অভিজ্ঞদের রেখেছেন, যারা জাস্টিন ট্রুডো’র সরকারের মন্ত্রী সভায়ও ছিলেন। এছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে তিনি নোভাসকোশিয়ার নতুন এমপি লিনা দিয়াবকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ফেডারেল পার্লামেন্টে তিনি নতুন হলেও এর আগে তিনি প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টে ছিলেন। 

লিবারেল পার্টি ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে ১৭০টি আসন পেয়েছে যেখানে ১৭২টি আসন হলে তারা নিজেরাই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত। কিন্তু মাত্র দুটি আসনের জন্য এখন তাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে অন্য দলের উপর নির্ভর করতে হবে। তবে মার্ক কার্নি স্পষ্ট করে বলেছেন, যে যাকেই ভোট দিক না কেন, তিনি কানাডার জনগণের প্রধানমন্ত্রী, কোনো দলের নয়। এই মানসিকতা নিয়েই তিনি কাজ করবেন। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরো কানাডা তাকিয়ে আছে মার্ক কার্নির দিকে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র পরর ষ ট র আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবারের খোঁজে ৪৮ বছর পর চুনারুঘাটে

৬ বা ৭ বছর বয়সে হারিয়ে যান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থেকে। এরপর ৪২ বছর কেটে গেছে। হারিয়ে যাওয়া শিশুটির বয়স এখন ৪৮ বছর। সুনামগঞ্জে বেড়ে ওঠা এই ব্যক্তি জানেন না, তাঁর আসল নাম-পরিচয়। শুধু এটুকু মনে আছে, তাঁর জন্মভূমি চুনারুঘাট।
জাহাঙ্গীর নামের এই ব্যক্তি এখন 
চুনারুঘাটে খুঁজছেন তাঁর হারিয়ে যাওয়া শিকড়। বৃহস্পতিবার তিনি সুনামগঞ্জ থেকে চুনারুঘাট এসে ট্রাভেলস ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম শ্যামলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁর বাবা-মাকে খুঁজে পেতে সহায়তা চান।
জাহাঙ্গীর জানান, ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মাতগাঁও গ্রামের এক ব্যক্তির হাতে পড়েন। তাঁর নাম জারু মিয়া। তিনিই তাঁকে ‘ছেলে’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে লালন-পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে (জাহাঙ্গীর) বিয়ে দেন। বর্তমানে তাঁর চার সন্তান। তবে জারু মিয়া মৃত্যুর আগে তাঁর দুই সন্তানকে সম্পদ দিয়ে গেলেও তাঁকে (জাহাঙ্গীর) কিছুই দেননি। এতে তাঁর মনে সন্দেহ দেখা দেয়, জারু মিয়া হয়তো তাঁর প্রকৃত বাবা ছিলেন না। এরপর এলাকার মানুষের মুখে শুনে তিনি জানতে পারেন, তাঁর শৈশবকাল কেটেছে চুনারুঘাটে।
বর্তমানে জাহাঙ্গীর অবস্থান করছেন  মিরাশী ইউনিয়নের চামলতলী গ্রামের মিলন মিয়ার বাড়িতে। তিনি চুনারুঘাটবাসীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যদি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে কোনো পরিবার তাদের ৬/৭ বছর বয়সী ছেলে সন্তান হারিয়ে থাকে, তারা যেন যোগাযোগ করেন।
ট্রাভেলস ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম শ্যামল বলেন,  তিনি চেষ্টা করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে, যাতে জাহাঙ্গীরের পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যায়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ