কানাডার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত অনিতা আনন্দ
Published: 16th, May 2025 GMT
কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করেছেন। এবারের মন্ত্রিসভা নতুন পুরাতনের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। এই মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব পেয়েছেন দেশটির অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ অনিতা আনন্দ। ৫৮ বছর বয়সী এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জলি পেয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
ব্যক্তিগত জীবনে অনিতা আনন্দ হিন্দু ধর্মের অনুসারী। মঙ্গলবার যখন তিনি শপথ নেন, সে সময় তার হাতে ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গীতা। কানাডার ইতিহাসে অনিতা আনন্দই প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বী রাজনীতিবিদ, যিনি মন্ত্রিসভার টিকিট পেয়েছেন। ২০১৯ সালে প্রথমবার কানাডার মন্ত্রিসভায় প্রবেশ করেন তিনি।
মন্ত্রিসভায় মার্ক কার্নিসহ মোট সদস্য সংখ্যা ২৯ জন। এছাড়া ‘সেক্রেটারি অফ স্টেট’ নামে আরও ১০ জনকে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁর মন্ত্রিসভায় ২৮ জনের মধ্যে ২৪ জনই নতুন মুখ। এর মধ্যে ১৩ জন প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
অনিতা যে এবারই প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য হলেন, এমন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন তিনি। সর্বশেষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন।
শপথগ্রহণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে অনিতা বলেন, কানাডার পররষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমাকে মনোনীত করায় আমি সম্মানিত। কানাডীয়দের জন্য একটি নিরাপদ ও অনুকূল বিশ্বের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর মার্ক কার্নির নেতৃত্বে কাজ করব।
কানাডার অন্টারিও রাজ্যের ওকভিল থেকে নির্বাচিত অনিতা আনন্দের জন্ম দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নোভা স্কটিয়াতে, ১৯৬৭ সালের ২০ মে। তার মা সরোজ ডি রাম পাঞ্জাব এবং বাবা এসভি আনন্দ তামিলনাড়ুর বাসিন্দা ছিলেন। গত শতকের ষাটের দশকের প্রথম দিকে তারা কানাডায় বসবাস শুরু করেন।
১৯৮৫ সালে অনিতার বয়স যখন ১৮ বছর, সে সময় তার বাবা-মা নোভা স্কটিয়া থেকে অন্টারিওতে গিয়ে স্থায়ী হন। অন্টারিও’র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি নেন অনিতা। এরপর কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয় এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৯৫ সালে কানাডার আইনজীবী ও ব্যবসায়ী জন নলটনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন অনিতা। এই দম্পতির চার সন্তান। সন্তানদের নিয়ে ওকভিলেই বসবাস করছেন অনিতা-জন দম্পতি।
প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির মন্ত্রিসভার মূল উদ্দেশ্য শক্তিশালী কানাডা গঠন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ট্যারিফ যুদ্ধের মোকাবিলা করা। মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞদের পাশাপাশি নতুনদেরও রেখেছেন মার্ক কার্নি। তিনি মনে করেন, কানাডার চ্যালেঞ্জের এই মুহূর্তে অভিজ্ঞদের খুব দরকার। এর মধ্যে ফ্রান্সোইস-ফিলিপি চামপেন অর্থমন্ত্রী, মিলানী জলি শিল্পমন্ত্রী, অনিতা আনন্দ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডমিনিক লি ব্লানক ইন্টার গভর্নমেন্টাল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী। এই চার মন্ত্রণালয়ে তিনি অভিজ্ঞদের রেখেছেন, যারা জাস্টিন ট্রুডো’র সরকারের মন্ত্রী সভায়ও ছিলেন। এছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে তিনি নোভাসকোশিয়ার নতুন এমপি লিনা দিয়াবকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ফেডারেল পার্লামেন্টে তিনি নতুন হলেও এর আগে তিনি প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টে ছিলেন।
লিবারেল পার্টি ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে ১৭০টি আসন পেয়েছে যেখানে ১৭২টি আসন হলে তারা নিজেরাই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত। কিন্তু মাত্র দুটি আসনের জন্য এখন তাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে অন্য দলের উপর নির্ভর করতে হবে। তবে মার্ক কার্নি স্পষ্ট করে বলেছেন, যে যাকেই ভোট দিক না কেন, তিনি কানাডার জনগণের প্রধানমন্ত্রী, কোনো দলের নয়। এই মানসিকতা নিয়েই তিনি কাজ করবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরো কানাডা তাকিয়ে আছে মার্ক কার্নির দিকে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র পরর ষ ট র আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়: হাসনাত আব্দুল্লাহ
বিএনপির রাজনীতি এখন আওয়ামী লীগের টাকায় চলে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে পেরেছি, কিন্তু দলটির অর্থ ব্যবস্থা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুমিল্লায় আহত, শহীদ ও বীর সন্তানদের সম্মানে জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, কুমিল্লায় অনেক উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতি যেমন আওয়ামী লীগের টাকায় চলে, তেমনি বিএনপির রাজনীতিও আওয়ামী লীগের টাকায় চলে। এখানে যারা বিএনপির নেতা রয়েছেন আপনারা আমাদের শত্রু মনে করবেন না। এটা আপনাদের ভালোর জন্য বলছি। কুমিল্লায় অনেক উপজেলা আছে, যেখানে সব দলের রাজনীতি এখন আওয়ামী লীগের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তারা যখন কোর্টে যায় কোন বিচারক জামিন দেয়, সেগুলোর পেছনে কাদের ইন্ধন রয়েছে সেগুলো আপনি আমাদের সামনে প্রকাশ করুন। আপনি বারবার বলছেন- আপনাকে ভিলেন বানানো হচ্ছে, আপনাকে যদি কেউ কাজ করতে না দেয়, কেউ বাধা দেয়, কোনো ধরনের প্রেশারে রাখে সেটা আপনি জাতির সামনে উপস্থাপন করুন।
এনসিপির এ নেতা বলেন, হত্যাকাণ্ডের যারা জড়িত, তারা জামিনে বের হয়ে শহীদদের বাড়ির সামনে ঘুরাফেরা করছে। শহীদের পরিবার এসে এমন অভিযোগ করেছেন। এটা যেমন আমাদের ব্যর্থতা, তেমনি আসিফ নজরুল স্যারেরও ব্যর্থতা। আমরা আপনার ( আসিফ নজরুল) কাছে জানতে চাই, কথা ছিল জানুয়ারি মাসেই দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। এখন পর্যন্ত কেন ট্রাইবুনাল গঠন হয়নি?
হাসনাত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি মনে করে খুনিদের বিচার ও আওয়ামী লীগের বিচারের চেয়ে অন্য কোনো বড় সংস্কার রয়েছে তাহলে ভুলের মধ্যে রয়েছেন। খুনিদের বিচার হচ্ছে এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান ও প্রথম সংস্কার।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংস্কার ও নির্বাচন দুইটাই চাই। এই সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী ১৪ দলের বিষয়েও অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ১৪ দলের বিষয়ে এ সরকার কী চিন্তা করছে সেটি স্পষ্ট করতে হবে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু আমরা আশাহত। অনেক কাজে আমরা এখনও বিচার দেখছি না, আহতদের এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন-কর্মসংস্থান হয়নি, বিচারের কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না রাস্তায় না নামছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের কোনো পদক্ষেপ দেখি নেই।
কুমিল্লা জেলা ও মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে জুলাই সমাবেশে যোগ দেন এনসিপি, বিএনপি, খেলাফতে মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
জুলাই সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- ফেস দ্য পিপলের সম্পাদক সাইফুর রহমান সাগর, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান ওয়াসিম, সচেতন রাজনৈতিক ফোরাম কুমিল্লার প্রধান সমন্বয়ক ড. শাহ মো. সেলিম, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব রিফাত রশিদ, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ, জয়নাল আবেদীন শিশির, এবি পার্টি কুমিল্লা মহানগরের সভাপতি জিএম গোলাম সামদানী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক সাকিব হোসাইন, মহানগরীর আহ্বায়ক আবু রায়হান, সদস্য সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান। সমাবেশ সঞ্চালনা কুমিল্লা মহানগরের মুখ্য সংগঠক আরাফ ভূইয়া।