ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর ভাঙচুর-লুটপাটের কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। সম্প্রতি শহরের থানা সড়কের টাউন হলের নিচতলার ওই কার্যালয়ের সামনে ‘আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি ব্যানার লাগানো হয়েছে।

সংগঠনটির কমিটিতে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদধারী নেতা-কর্মী আছেন। তাঁরা ব্যানার লাগানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সব কর্মকাণ্ড শহরের আমতলা সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সাইনবোর্ড (ব্যানার) লাগানোর বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ঝালকাঠি শহরের থানা সড়কের পৌরসভার মালিকানাধীন টাউন হল দখল করে দলীয় কার্যালয় স্থাপন করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর ২০১৫ সালে কার্যালয়টি সংস্কার করে আধুনিকায়ন করা হয়। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের দিন স্থানীয় কয়েকজন নেতার বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে কার্যালয়টি। মাঝে কয়েক দিন জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা কার্যালয়টিকে তাঁদের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন। সম্প্রতি কার্যালয়ের সামনের দেয়ালে ‘আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, টাউন হলের জরাজীর্ণ ভবনের নিচতলায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের প্রধান দরজায় তালা লাগানো। ভাঙা জানালা দিয়ে ভেতরে বড় দুটি টেবিল ছাড়া অন্য কোনো আসবাব দেখা যায়নি। কার্যালয়ের সামনের দেয়ালে সাইনবোর্ডের মতো একটি ব্যানার লাগানো। সেটিতে লেখা আছে, ‘আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদ, ঝালকাঠি জেলা কার্যালয়।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঝালকাঠিতে ‘আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের’ আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক মাকসুদুল ইসলামের উদ্যোগে সম্প্রতি ওই ব্যানার লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ। গত ২১ এপ্রিল দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর থেকে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে মাকসুদুল ইসলামের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সাইনবোর্ড (ব্যানার) লাগানোর বিষয়ে তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ফ ত রহম ন ক ক স গঠন র ঝ লক ঠ ব এনপ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে ১০ দিনের ছুটির ভালো-মন্দ

এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি অফিসে ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এর পর থেকে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এক পক্ষ ঈদে যানজট এড়ানোসহ নানা যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে। আরেক পক্ষ বলছে, শুধু ঈদযাত্রায় স্বস্তি দিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাসের তিনভাগের একভাগ সময় বন্ধ রাখা সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। রোজার ঈদ উপলক্ষে দুই মাস আগে ৯ দিন বন্ধ ছিল সব কিছু।
জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আমাদের দেশে মানুষ এত বেশি গ্রামে যায় যে, সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তিন দিনের ঈদের ছুটিতে এক দিনে অনেক মানুষ বের হওয়ার চেষ্টা করলে, যাত্রাপথে ভোগান্তি হবেই। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দে বাধা হওয়া উচিত নয়। বিষয়টি যেন সহজ হয়, সে চেষ্টা করতে উপদেষ্টা পরিষদ ঈদের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছুটি একটু বেশি হলে মানুষের হাতে বিকল্প থাকবে। তখন যার যার সুবিধা মতো আসা-যাওয়া করতে পারবে। টানা বেশি দিন বন্ধ থাকলেও লাভ আছে। প্রত্যেক পেশাজীবীর বিশ্রাম প্রয়োজন। বিশ্রাম নিয়ে তারা নবউদ্যমে কাজে নামতে পারে। 

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ঈদুল আজহা হতে পারে ৭ জুন, শনিবার। সরকারি ছুটি শুরু হবে ৫ জুন বৃহস্পতিবার, শেষ হবে ১৪ জুন শনিবার। ঈদুল আজহায় সাধারণত তিন দিন ছুটি থাকত। অন্তর্বর্তী সরকার ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ছুটি বাড়িয়ে দেয়। সে অনুযায়ী এবারের ঈদুল আজহায় ছুটি হওয়ার কথা ছিল ছয় দিন। সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তা বাড়িয়ে ১০ দিন করা হয়েছে। অবশ্য ঈদের ছুটি শুরুর আগে আজ শনিবার ও ২৪ মে শনিবার সব সরকারি অফিস খোলা থাকছে।

যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাড়ানো হয়েছে ছুটি
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সমকালকে বলেন, কোরবানির ঈদে একটি অতিরিক্ত সমস্যা আছে। রাস্তার পাশে গরুর হাট বসে। দেশের সব মানুষের সুবিধার জন্য এবার ঈদের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। তবে ঈদের আগে দুই শনিবার অফিস খোলা থাকবে। তিনি আরও বলেন, ঈদে ছুটি না থাকলেও অনেকে অফিসে আসেন না। অযথা অফিস খোলা থাকে। জনগণও সেবা পায় না। তিনি বলেন, তবে জরুরি সব সেবা খোলা থাকবে। যেমন– কোরবানির সময় যারা কাজ করেন, তারা সবাই কাজে থাকবেন। অফিস বন্ধ থাকবে; কিন্তু মাঠে কাজ করবেন। আসলে তারা বাইরে অফিস করবেন। যাত্রা নির্বিঘ্ন ও দুর্ঘটনা কমাতে আগেই এমন প্রস্তাব ছিল। সেই প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন, ঈদে দীর্ঘ ছুটিতে অসুবিধার চেয়ে সুবিধা বেশি। তবে নিশ্চিত করতে হবে, সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকদের যেন কোনো সমস্যা না হয়। আর ছুটি থাকলেও জরুরি কাজ চলবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও বন্দর খোলা থাকবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জরুরি প্রয়োজনে ঈদের দিনেও কাজ করে। তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকায় ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনে প্রায় ১৫ দিন ছুটি থাকে। ওই সময় জরুরি কাজ ছাড়া অন্য কিছু করা হয় না। আমাদের দেশের মানুষও ঈদের ছুটিতে গ্রামে যেতে চায়।

ছুটি বাড়ানোর আলোচনা ছিল ২০১৫ সালে
ঈদের ছুটি নিয়ে গত ১০ বছর ধরে আলোচনা চলছে। ২০১৫ সালের ২ নভেম্বরের মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। এজেন্ডায় ছিল পরের বছরের ছুটির তালিকা অনুমোদনের বিষয়টি। এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। ২০১৬ সালের ছুটির তালিকা অনুমোদন করার আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের কোনো বক্তব্য আছে কিনা জানতে চান। তখন প্রায় সব মন্ত্রী ছুটি বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। যুক্তি ছিল, মানুষ শহর ছেড়ে বের হওয়ার ঝক্কিঝামেলা থেকে রক্ষা পাবে। সড়কের ওপর চাপ কমবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। মানুষও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করে কর্মস্থলে ফিরতে পারবে। তিন দিনের ছুটি বাড়িতে যেতে-আসতে শেষ হয়ে যায়। ওই সময় আলোচনায় উঠে আসে চীনের বসন্ত উৎসবের কথা। চীনা নববর্ষ এবং বসন্ত উৎসবে টানা ১৫ দিন ছুটি দেওয়া হয়। আর ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে ক্রিসমাসের ছুটিও প্রায় দুই সপ্তাহের।

এর পরও একাধিকবার ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, নৈমিত্তিক ছুটি ২০ থেকে কমিয়ে ১৪ দিন করে বাকি ছয় দিন দুই ঈদের ছুটির সঙ্গে তিন দিন করে সমন্বয় করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঈদের সঙ্গে ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল হবে। 

এ ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবে সরকারি ছুটির সঙ্গে দু’দিন করে চার দিন ঐচ্ছিক ছুটির প্রস্তাব করা হয়। ঈদে ছুটি বাড়ানো হলে মোট ছুটির সময় ঠিক থাকবে। ফলে সরকারি কাজের জন্য সময় কমবে না। এতে সরকারি কাজেরও ক্ষতি হবে না। অন্য ধর্মের মানুষের জন্যও ছুটির ভারসাম্য থাকবে।

সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবীর বলেন, লম্বা ছুটি সবার জন্য ভালো। কর্মমুখী মানুষের যাতায়াতে সুবিধা হবে। কম ছুটিতে অনেকের কষ্ট হয়। ছুটি বাড়ানোর দাবি অনেক দিনের।

১০ দিনের ছুটি ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে
এসিআই মোটরস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এইচ আনসারী সমকালকে বলেন, ছুটির ১০ দিন যদি ব্যাংক বন্ধ থাকে, সেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। সেটা হলে সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। এ ছাড়া আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান। কৃষিপণ্য সরবরাহ করতেও সমস্যা হবে। ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, গতবার ঈদের আগেই পণ্যগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। কর্মীরা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিল, সে জন্য পুনরুদ্ধার করা গেছে।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ