যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক থেকে রেহাই পেতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি বাড়াবে সরকার। একই সঙ্গে উড়োজাহাজ, তুলা, সয়াবিন তেলসহ আরও কিছু পণ্য আমদানি বাড়ানো হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের যেসব ব্র্যান্ডের পণ্য অন্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়, সেগুলো সরাসরি দেশটি থেকে আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর বিষয়টি মাথায় রেখে আরও ১০০ পণ্যও শূন্য শুল্কের তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব প্রস্তাব দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পণ্যের তালিকাসহ চিঠি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বাণিজ্য ঘাটতি নির্ধারণের সেবা আমদানিকেও অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করা হয়েছে।      
বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে দু’দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ  আগ্রহী এবং এ লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির চুক্তি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বাড়তি এক বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের এলএনজি আমদানি করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলার জন্য বাংলাদেশে ওয়ারহাউস স্থাপনের কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ওয়ারহাউসে ৪৫ দিন  পর্যন্ত তুলা সংরক্ষণ করা যাবে।  

বাণিজ্য সচিব জানান, বাংলাদেশের সামরিক কেনাকাটার মূল উৎস হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ বিমানের বোয়িংয়ের প্রায় সবগুলো যুক্তরাষ্ট্রের। সে দেশ থেকে আরও কিছু উড়োজাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কেনাকাটায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। 
পাল্টা শুল্ক আরোপ নিয়ে দরকষাকষি করতে গত ৭ মে লিখিত প্রস্তাব চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে চিঠি দেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব পেলে আনুষ্ঠানিক দরকষাকষি শুরু হবে। এ প্রেক্ষিতেই এই চিঠি দেওয়া হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে এমন অন্তত ৪১ পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি আনার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোলিয়াম পণ্য, এলএনজি, এলপিজি, সয়াবিন তেল, গম ইত্যাদি  উল্লেখযোগ্য। এদিকে বাংলাদেশের শুল্ক তালিকায় বর্তমানে ১৯০টি পণ্যের ওপর শুল্কহার শূন্য অর্থাৎ কোনো শুল্ক নেই। বাংলাদেশের ট্যারিফ লাইনের আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।  

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী শূন্য শুল্ক বা শুল্ক কমানো  হচ্ছে; যা অন্যান্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য হবে। এসআরও জারির মাধ্যমে বাংলাদেশের অনেক পণ্য প্রকৃত অর্থে শূন্য শুল্কে আমদানি হয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কেউ শুল্ক দিয়ে যন্ত্রণাংশ আমদানি করেনি। এ ধরনের আরও কিছু পণ্য শূন্য শুল্কের আওতায় আনা হচ্ছে। 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চিঠিতে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ জেনারেল মোটরস থেকে গাড়ি এবং এলজি পণ্য কোরিয়া এবং ভারত থেকে আমদানি করে। এগুলো আমেরিকান ব্র্যান্ড। এ ছাড়া আরও কিছু আমেরিকান মেশিনারিজ ও ইলেকট্রনিকস পণ্য সিঙ্গাপুর, দুবাই ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এসব পণ্য আমেরিকান হিসেবে গণ্য করে বাণিজ্য ঘাটতি নির্ধারণে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবে রাজি না হলে পরে বাংলাদেশ আমদানিনীতি সংশোধন করে আমেরিকান ব্র্যান্ড অন্য কোনো দেশ থেকে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেবে। অর্থাৎ এসব পণ্য সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আমদানি করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যবসা সহজ করার জন্য বাংলাদেশ অ-শুল্ক বাধা দূর করা এবং বিভিন্ন অফিসে ‘কপি সফটওয়্যার’ ব্যবহার থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব আম র ক ন আরও ক ছ ক ত কর আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আমিরাত থেকে আমদানি হবে ১৭ কার্গো এলএনজি

সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ‘সরকার টু সরকার’ পদ্ধতিতে দুই বছরে ১৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করতে চায় সরকার। এ জন্য দেশটির সঙ্গে চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকের অনুমোদিত প্রস্তাবের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জিটুজি ভিত্তিতে ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড, ইউএই থেকে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এলএনজি ক্রয়ের দরপ্রস্তাব ও ড্রাফট এলএনজি সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এসপিএ) অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। চুক্তির আওতায় স্বল্প মেয়াদে চলতি বছরে ৫ কার্গো এবং আগামী বছর ১২ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। 

বৈঠকে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় ১ লাখ ১০ হাজার টন সার আমদানি করার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া এবং ৮০ হাজার টন ডিএপি সার রয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৫০ কোটি ৫০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) জন্য পাঁচটি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়। এ ছয় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা। 
এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তিনটি প্রস্তাবে অনুমোদন হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৪০৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। বিদ্যুতের ১০ সাবস্টেশন নির্মাণে ২৩৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে কমিটি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমিরাত থেকে আমদানি হবে ১৭ কার্গো এলএনজি
  • সংসদ নির্বাচনের বাজেটে কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা 
  • নির্বাচনী বাজেটে কার্পণ্য করা হবে না : অর্থ উপদেষ্টা
  • নির্বাচনে অর্থ বরাদ্দে কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
  • নির্বাচনী বাজেটে কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
  • নির্বাচনী বাজেটে কোনো কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
  • বাংলাদেশি পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ক কমার আশা
  • শুল্ক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈঠক বৃহস্পতিবার, বাড়তি শুল্ক কমার আশা