চিকন চাল। ভাত খেতে সুস্বাদু। একই চাল দিয়ে রান্না করা যায় ভাত, পোলাও, পায়েস, বিরিয়ানি ইত্যাদি। এমনকি এই চালের পান্তা ভাতও ভালো হয়। আমন ও বোরো দুই মৌসুমেই চাষ করা যায় এই ধান। রাজশাহীর তানোর পৌরসভার গোল্লাপাড়া মহল্লার নূর মোহাম্মদ তিন বছর আগে এই ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। নিজের নামানুসারে তিনি জাতটির নাম দিয়েছেন ‘নূর ধান-২’।
নূর মোহাম্মদ কৃষকপর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে কৃষির উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। মূলত খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের অভাবে ধানখেত নষ্ট হতে দেখে গবেষণায় আগ্রহী হন তিনি। দীর্ঘদিন অক্লান্ত পরিশ্রম এবং একাগ্রতার সঙ্গে গবেষণা করে উদ্ভাবন করেছেন আউশ, আমন ও বোরো ধানের প্রায় ২০০ কৌলিক সারি। স্বশিক্ষিত এই কৃষিবিজ্ঞানীর দাবি, তার উদ্ভাবিত সারিগুলোর জীবনকাল অন্যান্য জাতের তুলনায় উচ্চফলনশীল, সরু, সুগন্ধিযুক্ত এবং খরাসহিষ্ণু।
কৃষিতে এমন অবদানের জন্য নূর মোহাম্মদ ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। গত বছর নভেম্বরে মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে কৃষক-বিজ্ঞানী সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি। পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক আয়োজিত এ সম্মেলনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন।
গত ৭ মে নূর মোহাম্মদের জমি থেকে নূর ধান-২ কাটা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত সালমান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেনসহ এলাকার কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন। এ দিন নূর মোহাম্মদ কৃষি পরিষেবা ফার্মে গবেষণা প্লটের ৩৩টি সারি ও জাতের মধ্যে শুধু নূর ধান-২ কাটা হয়। মাড়াই শেষে বিঘাপ্রতি ২৬ মণ ধান পাওয়া যায়। চালের হিসেবে বিঘাপ্রতি ১৬ দশমিক ৬ মণ। কাটার সময় পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ছিল ১১৩ সেন্টিমিটার। কুশির সংখ্যা ছিল গড়ে ১১টি। ছড়ার গড় দৈর্ঘ্য ২৬ সেন্টিমিটার। এক হাজার পুষ্টদানার ওজন ১২ দশমিক ৭০ গ্রাম। গাছের জীবনকাল ১৪০ দিন।
নূর মোহাম্মদ জানান, আমন ও বোরো দুই মৌসুমেই এই ধান চাষ হয়। আমনে বিঘাপ্রতি গড় ফলন পাওয়া যাবে ১৯ মণ। সেই তুলনায় বোরো মৌসুমে ফলন অনেক বেশি। এবার বোরো মৌসুমে রাজশাহীর কিছু চাষী তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে এই ধান চাষ করেছেন। এছাড়া নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, মাগুরা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার ও খুলনায় তার বীজে এই ধান চাষ হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রসারণের জন্য অল্প মূল্যে তিনি সবাইকে বীজ সরবরাহ করেন।
নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘‘গত বছর অনেকে আমার কাছ থেকে বীজ নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। তাদের কাছ থেকে এবার কেউ কেউ বীজ নিয়েছেন। এভাবে জাতটি ছড়িয়ে পড়ছে দেশে। এই চালে ভাত দিয়ে পান্তা ও খিচুড়ি যেমন খাওয়া যায়, তেমনি পায়েস, বিরিয়ানি, তেহারি, পোলাও ভালো হয়।’’
নূর মোহাম্মদের দাবি, নতুন এই ধানের গাছ মজবুত, সহজে হেলে পড়ে না। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অন্যান্য জাতের তুলনায় কম। স্বল্প জীবনকাল, উচ্চ ফলনশীল, সরু চিকন, সুগন্ধিযুক্ত ও খরাসহিষ্ণু। ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সেচ বা বৃষ্টি না পেলেও খরা মোকাবিলা করে ভালো ফলন দিতে সক্ষম এই জাত। এক চালেই সব হওয়ায় বাজারে ভালো দামও পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘‘ধান কাটার দিন আমি খেতে ছিলাম। ধানের সব কিছু ভালোই মনে হয়েছে। নূর মোহাম্মদ এক কেজি চাল অফিসে পাঠিয়েছিলেন। চাল খুব সরু। বাজারে যে জিরা ধানের চাল পাওয়া যায়, এটি তার চেয়েও সরু এবং মানের দিক থেকেও ভালো। ফলে এই চাল দিয়ে সব কিছুই খাওয়া যাবে।’’
কেয়া//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ম হ ম মদ কর মকর ত এই ধ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আজ সোমবার সকাল ৯টা থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে।
এর আগে গত ১০ আগস্ট রাতে খসড়া ভোটার তালিকা ও খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে যেসব শিক্ষার্থীর নাম তালিকায় আসেনি তাঁদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়। যাচাই–বাছাই শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ও চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করেছে কমিশন।
কোন হলে কত ভোটার
চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী ২১টি আবাসিক হলে মোট ভোটার ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ৫ হাজার ৮৬০, আর ছাত্রী ভোটার ৬ হাজার ০৫৯।
ছাত্র হল
আলবেরুনী হলে ২১১, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৩৪১, শহীদ সালাম–বরকত হলে ২৯৯, মওলানা ভাসানী হলে ৫২১, ১০ নম্বর হলে ৫৪০, শহীদ রফিক–জব্বার হলে ৬৫৬, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫৭, ২১ নম্বর হলে ৭৫২, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৯৯৪, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হলে ৯৫৪, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৭৭ জন।
ছাত্রী হল
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৮২, জাহানারা ইমাম হলে ৪০০, প্রীতিলতা হলে ৪০২, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪১৭, সুফিয়া কামাল হলে ৪৬০, ১৩ নম্বর হলে ৫৩২, ১৫ নম্বর হলে ৫৭৬, রোকেয়া হলে ৯৫৭, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৮০৮, বীর প্রতীক তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন।
আজ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
তফসিল অনুযায়ী আজ সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এবং আগামীকাল মঙ্গলবার একই সময়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। তবে প্রার্থীকে নিজে উপস্থিত হয়ে মনোনয়ন জমা দিতে হবে।
মনোনয়নপত্রের নির্দেশনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সাত দফা নির্দেশনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে—
১. একজন প্রার্থী একাধিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
২. প্রতিটি মনোনয়নপত্রে একজন প্রস্তাবক ও একজন সমর্থকের স্বাক্ষর, শিক্ষাবর্ষ ও বিভাগ উল্লেখ করতে হবে।
৩. একই ব্যক্তি একাধিক প্রার্থীর প্রস্তাবক বা সমর্থক হতে পারবেন না (কার্যকরী সদস্য পদ ছাড়া)। কার্যকরী সদস্য পদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয়জনের (তিন নারী, তিন পুরুষ) প্রস্তাবক বা সমর্থক হওয়া যাবে।
৪. মনোনয়ন জমার সময় শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র বা ছবিযুক্ত লাইব্রেরি কার্ড/ইনডেক্স কার্ড প্রদর্শন করতে হবে।
৫. প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে সব পাওনা পরিশোধের প্রমাণ দিতে হবে।
৬. মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে (দুই মাসের বেশি পুরোনো ছবি গ্রহণযোগ্য নয়)।
৭. প্রতিটি হলে মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমাদানের জন্য পৃথক রেজিস্ট্রার খাতা সংরক্ষণ করতে হবে।